নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Sometimes people dont want to hear the truth because they dont want their illusions destroyed. Friedrich Nietzsche
মাশরাফি আগামী নির্বাচনের জন্য আওয়ামীলীগের নমিনেশন কিনেছে। মাশরাফির মত মানুষের রাজনীতিতে আশা উচিত সেটা আমরা সবাই বিশ্বাস করি কিন্তু কথা হচ্ছে এটা কি তার নির্বাচনে আসার সঠিক সময়? জানি, অনেকে অনেক রকম উদাহরণ টানবেন। সিধু, রানাতুঙ্গা এবং সাম্প্রতিক কালে ইমরান খান। তারা কেউ কিন্তু খেলোয়াড় থাকা অবস্থায় নির্বাচন করেন নি। আর রাজনীতি করলেই যে নির্বাচন করতে হবে এমন কোন কথা আছে? সবার একটা রাজনৈতিক ক্যারিয়ার থাকা উচিত। কেউ কোন এলাকায় নির্বাচন করলে তাকে অবশ্যই ওই এলাকায় একটিভ রাজনীতিতে ৫ বছর সময় দেয়া উচিত, এ ছাড়া কাউকেই নমিনেশন দেয়া উচিত না। এভাবে রেডিমেড কাউকে এনে যদি বলা হয় এই লোক তোমাদের নেতা, আগামী নির্বাচনে তাকে দলের পক্ষ থেকে নমিনেশন দেয়া হয়েছে, তোমরা তাকে নির্বাচনে জয়ী করার জন্য চেষ্টা করবে, তখন অন্য সব নেতা, তারা দিনের পর দিন এলাকায় রাজনীতি করেছে, তাদের প্রতি একটা অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হয়।
যারা সরকারি চাকরি করেন বা যাদের মন্ত্রি এমপিদের সাথে উঠা-বসা আছে, তারা সবাই জানেন যে আমাদের দেশে কোন রাজনৈতিক নেতা ফোন দেয়া মানে সেই কাজ করে দিতেই হবে। এমনকি সেই নেতা ফোন না দিলেও তার চ্যালা-চামুন্ডাদের নানান কাজ বাধ্য হয়ে করে দিতে হয়। এখন আসেন মাশরাফি এমপি হয়ে যাবার পরের কথা চিন্তা করি। মাশরাফি যদি এবার এমপি হয়, তাদের সে ক্রিকেটের একাদশ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না? আপনার কী মনে হয় আমাদের দেশের মানুষ এতই ভাল!
আমাদের দেশ একটা গরীব দেশ। এ দেশের মানুষের কাছে ক্ষমতার সর্বোচ্চ অবস্থান হচ্ছে এমপি/ মন্ত্রি হওয়া। এই জন্য দেখবেন সবাই মন্ত্রি/ এমপি হতে চায়। কেউ ব্যবসা করে একটু টাকা ইনকাম করল, সে চায় এমপি হতে। কেউ ভাল পরিচিত ডাক্তার, সে চায় এমপি হতে। কেউ ইঞ্জিনিয়ার, সেও চায় এমপি হতে। কেউ ব্যরিস্টার, সেও চায় এমপি হতে। কেউ সরকারে আমলা ছিল, সেও চায় এমপি হতে। কেউ আর্মিতে ছিল, সেও চায় এমপি হতে। আসলে সবাই চায়, ক্ষমতা। আর ক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখর এখন মন্ত্রি/ এমপি হওয়া। আমাদের দেশে সরকারি চাকরিজীবি, জজ, আর্মি অফিসার বা অন্য কোন রাষ্ট্রীয় পদে নিয়োজিত থাকা অবস্থায় কেউ নির্বাচন করতে পারে না। এর কারণ হল, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে নির্বাচন করলে আপনি পরে সে সম্পর্কীয় বিষয়গুলোতে আপনার প্রভাব খাটাতে পারেন যেটা শোভনীয় হবে না। কিন্তু দেখা গেল মাশরাফি এবং সাকিব ক্রিকেটের জাতীয় দলে থাকা অবস্থাতেই নমিনেশন কিনতে চাইল! মাশরাফিকে তো নমিনেশন দিয়ে দেয়াই হয়েছে।
রাজনীতি করে নেতা হবার সব পথ বাংলাদেশে বন্ধ হয়ে গেছে। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। ডাকসু নির্বাচন হয় না কত বছর? ডাকসু মানে কী অনেকে তাই জানে না! আগে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হত। সেখান থেকে নেতা উঠে আসত, সেই পথ তো বন্ধ। নেতা তৈরি হবে কিভাবে? এখন যেটা হয় সেটা হল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় হলে সিট পাবার জন্য আপনাকে ক্ষমতাশীন দলের ছাত্র সংগঠন করতে হবে, বর্তমান সময়ে যেটা ছাত্রলীগ। সমস্যা হল, আপনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী নাও হতে পারেন, তবুও আপনাকে ছাত্রলীগ করতে হবে হলে থাকতে গেলে। এমনকি ঠিকমত পা চাটার অভ্যাস থাকলে অনেক বড় পোস্টেও চলে যাবেন। অথচ যে ছেলেটা সত্যিকার অর্থ বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসে সে হয়ত রাজনীতিতেই আসল না বা আসলেও পা-চাটাদের ভিড়ে হারিয়ে গেল! এ জন্য নেতা হবার পরে সবাই ছাত্রদের জন্য রাজনীতি না করে উপরের নির্দেশ পালন করতেই ব্যস্ত থাকে। ছাত্রদের দাবি-দাওয়া আদায়ে তাদের আগ্রহ থাকে না, উলটা ছাত্রদের যে কোন আন্দোলনে তারা সরকারের পক্ষ নিয়ে সাধারণ ছাত্রদের উপর নির্যাতন চালায়। মুখ ফুটে কিছু বলার কোন সুযোগ নেই তো! একবার ব্ল্যাক লিস্টেড হয়ে গেলে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ! একবার এক ছাত্রনেতাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোমরা ছাত্র সংসদ নির্বাচন দাও না কেন? তার উত্তর ছিল, ছাত্র সংসদ যা করতে পারবে, ছাত্রলীগ তা করতে পারবে না কেন? তার মানে হচ্ছে সে সিলেকশনে বিশ্বাসী, ইলেকশনে নয়! এই যে তার মাঝে একটা ধারণা ঢুকে যাওয়া যে সাধারণ ছাত্রদের মতামত দেয়ার কী দরকার, ছাত্র সংসদের কী দরকার, আমাকে উপরের লেভেল থেকে নেতা বানিয়ে দেয়া হয়েছে, তাই সবাই আমাকে মানতে বাধ্য! এটা আসলে ভয়ঙ্কর ব্যাপার। সবাই বুঝে গেছে যে টিকে থাকতে হলে চামচামি করতে হবে, সাধারণ ছাত্রদের পক্ষে কথা বলে লাভ নাই! ভবিষ্যতে মন্ত্রি/ এমপি তারাই হবে যাদের টাকা আছে, যাদের উপরের লেভেলের নেতাদের সাথে ভাল খাতির আছে। তৃণমূল রাজনীতি, ছাত্র রাজনীতি এসবের কোন ভ্যালু আদৌ নেই। নির্বাচনের আগে একজনকে রেডিমেড এনে বলা হবে এটা তোমাদের নেতা, তাকে তোমরা নির্বাচনে জয়ী করাবা!
বাংলাদেশ আপনি কোন কিছু নিয়ে কোনদিন গঠনমূলক আলোচনা করতে পারবেন না। আপনি যেটা নিয়েই কথা বলতে যান শেষ পর্যন্ত মানুষ দুইভাগ হয়ে যাবে এবং তর্কে জেতার জন্য উদ্ভট কথা-বার্তা শুরু করবে। সে নিজেও জানে যে সে যা বলছে সেটা সত্য না, তারপরেও সে তর্ক করে যাবে। গত কয়েকদিন ফেসবুকে মাশরাফি সম্পর্কিত পোস্ট দেখে সেটাই মনে হল। যারা আওয়ামীলীগ করে তারা এটাকে স্বাগত জানিয়েছে, যদিও তারা জানে ক্রিকেট একাদশে থাকা অবস্থায় জাতীয় নির্বাচন করা নজিরবিহীন এবং এটা সমীচীনও হবে না। তারপরেও তারা এটার পক্ষে নানান যুক্তি দেখাচ্ছে। মাশরাফির মত সৎ মানুষের নাকি রাজনীতিতে আসার দরকার আছে! তার মানে কি আপনারা বলতে চাচ্ছেন, আপনাদের দলের বাকি এমপিরা অসৎ! যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে এমন দল সমর্থন করেন কেন? এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ দলের বাজে পারফর্মেন্সের সময় কয়েকজন মাশরাফির সমালোচনাও করেছে কিন্তু শুধুমাত্র আওয়ামীলীগের নমিনেশন কেনার কারণে তারা এখন মাশরাফির অনেক বড় সমর্থক। অন্য দিকে বিএনপি সমর্থকরা দেখা যাচ্ছে মাশরাফিকে যাচ্ছে তাই বলে যাচ্ছে, যেসব তার প্রাপ্য না।
মাশরাফি দেশের জন্য একটা বড় সম্পদ। আমরা মাশরাফিকে ভালবাসি। এমপি মাশরাফি থেকে আমাদের দেশে খেলোয়াড় মাশরাফিকে আরো বেশি দরকার ছিল। দেশে রাজনীতিবিদ অনেক আছে কিন্তু খেলোয়াড় মাশরাফি কিন্তু একটাই আছে। সে রাজনীতিতে আসাটা কোন সমস্যা না। সে আসুক এটাই চেয়েছিলাম কিন্তু এখন না! তার হাতে অনেক সময় ছিল, সে রিটায়ার করার পরে নির্বাচন করতে পারত। সেটাই তার জন্য উপযুক্ত হত এবং সব মানুষের সমর্থন না পেলেও তার প্রতি তাদের আগের ভালবাসা অটুট থাকত। এই বিতর্কিত সময়ে দলে থাকা অবস্থায় নির্বাচনের নমিনেশন নিয়ে মাশরাফি আরো বেশি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
২| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ ভোর ৬:৪৩
ওসেল মাহমুদ বলেছেন: স্বাভাবিকভাবে রাজনীতি করার আগ্রহ এখন কারো আছে কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন ! ভদ্রঘরের সন্তানেরা,মেধাবী ছাত্রদের মাঝে এ প্রবণতা আর দেখা যায় না ! ইদানীং লোভী আর স্বার্থান্বেষী কি ছাত্র ,কি যুবক তথাকথিত নেতা ,ব্যবসায়ী বা পেশাজীবি, এই পাচাটা গোস্ঠীরাই রাজনীতিতে আসে ! সেখনে মাশরাফি ব্যতিক্রম !
৩| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৩০
সনেট কবি বলেছেন: তাঁর জন্য শুভ কামনা।
৪| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:১৭
সজিব আহমেদ আরিয়ান বলেছেন: সবাইকে একটা সুযোগ দেওয়া দরকার আর এইবার নাহয় তার মতো একজন ভদ্রলোককে একটা সুযোগ দিলেন! এমপি হলেই বা রাজনীতিতে গেলেই খারাপ হয়ে যায়?
৫| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৩১
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর আলোচনা করেছেন।
৬| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৩
হাসান মাহবুব বলেছেন: মাশরাফির জন্যে এটাই সেরা সময়। এখন মাশরাফি যে অবস্থায় আছে, নমিনেশন পেলে শিওর উইন। ৫ বছর পর তাকে নিয়ে এই উন্মাদনা থাকবে না। সে নমিনেশন পাবে কি না তাও সন্দেহ। তার কাছে হয়তো ক্রিকেটের চেয়ে রাজনীতিটাই গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিকেটে আর অল্প কিছুদিন। এটা এখন তার মেইন প্রায়োরিটি না।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:১৫
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনার মতে, একজন এমপি'র কাজ কি?