নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Sometimes people dont want to hear the truth because they dont want their illusions destroyed. Friedrich Nietzsche
এখন শুরু হয়েছে শো-অফের যুগ। আপনি কিছু করতে পারুন আর না পারুন কিছু ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড দিলেই মানুষের লাইক, কমেন্ট, বাহবা দিয়ে ভরে যাবে। আপনি একজন সরকারি চাকুরিজীবি। আপনি আপনার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছেন, সেটা ফেসবুকে ছবি তুলে দেয়ার প্রয়োজনীয়তা কী?
গত বছরের ছোট একটা ঘটনা দিয়ে শুরু করি। কোভিডের মাঝে সারাদেশে আন্তঃজেলা বাস চালু হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেসব বাস চলবে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে বিভিন্ন জায়গায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা জরিমানা করছেন, এসব ছবি দিয়ে ফেসবুক সয়লাব। কোভিডের মধ্যেই সন্তানের পিতা হই, এর মাঝে আমাকে দুই তিনবার ঢাকা যেতে হয়েছে। প্রতিবার ৫-৬ হাজার টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে যেতে হয়েছে। এত টাকা খরচ করা তো সম্ভব না, কয় টাকাই বা ইনকাম করি! রাতের বাসে ঢাকা যাব সিদ্ধান্ত নেই। বাসা কাউন্টারে এসে দেখি এলাহি কাণ্ড! সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রতি দুই সিটে একজন যাত্রী উঠবে। এই জন্য যাত্রীদের ৬০% অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হবে। আমি সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ভাড়া দিতে প্রস্তুত। কিন্তু তারা সরকারি নিয়মে চলে না, তারা চলে তাদের নিজেদের নিয়মে। আগে এক সিটের ভাড়া ছিল ৩০০ টাকা, তাহলে দুই সিটের ভাড়া ধরলাম ৪৮০ টাকা। আর যদি তারা কোন নিয়ম মেনে চলতে না চায় তাহলে দুই সিটের ভাড়া হবার কথা ৩০০+৩০০= ৬০০। কিন্তু তারা চাইছে দুই সিটের ভাড়া ১০০০ টাকা! এত টাকা দিয়ে তো মানুষের পক্ষে যাওয়া সম্ভব না, তাই স্বাস্থ্যবিধি না মেনে সবাই বেশি ভাড়া দিয়েই এক সিটে একজন করে উঠছেন। বাস ভর্তি করে লোক নেয়া হচ্ছে, সবাই বেশি ভাড়া দিয়েই উঠছেন। সকাল বেলা দেখলাম বিভিন্ন জায়গায় নাকি জরিমানা করা হয়েছে, তাই সরাসরি ডিসি মহোদয়ের নিকট ফোন করে পুরো বিষয়টা জানালাম। তিনি আমাকে যে উত্তর দিলেন সেটাতে আমি বিস্মিত হলাম! সারাদিন তো আর এসব খেয়াল রাখা সম্ভব না। বাস মালিকদের বললে তারা কথা শুনে না। আপনারা আন্দোলন করে দেখুন কিছু করতে পারেন কিনা! অদ্ভুত! একটা জেলার ডিসিকে বলা হয় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ওনারা চাইলেই বাস মালিকদের সাথে বসে, এমপিকে সাথে নিয়ে বসে এটার একটা সুরাহা করতে পারেন। খুব সহজ ব্যাপার। আমি নিজেই এমন বিভিন্ন মিটিং এ উপস্থিত ছিলাম। সেটা না করে দুই এক জায়গাতে ১০ হাজার, ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করে ফেসবুকে ছবি দিয়ে নিজেদের দায়িত্ব শেষ বলে মনে করেন। ফেসবুকে ছবি এসেছে, বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকাতে নিউজ হয়েছে, টিভিতেও প্রচার হচ্ছে কিন্তু আসলে কাজের কাজ কিছুই হয় নি। কথা বলে আমার মনে হল না যে কাজের কাজ কিছু হতে পারে। সবই শো-অফ!
এরপর আমি আমার পরিচিত একজন এডিসি মহোদয়কে ফোন করে বিষয়টা জানালাম যে, স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না, প্রতি সিটেই যাত্রী নেয়া হচ্ছে উপরন্তু স্বাভাবিক সময় থেকে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। উনি আমাকে বাস কাউন্টারে ফোনটা দিতে বললেন। আমি ফোন দেয়ার পর, উনি আমার হয়ে রিকোয়েস্ট করলেন যাতে আমার থেকে কম ভাড়া রাখা হয়! আমি এবার লজ্জায় হতবাক হয়ে গেলাম! ১০০০ টাকা ভাড়া দেয়ার ক্ষমতা আমার আছে। আমি আমার নিজের ভাড়া কমাতে ফোন করিনি। আমি চাইছিলাম যাতে জনগণের উপকার হয়, এ কারণে তাদেরকে বিষয়টা অবহিত করার জন্য ফোন করেছিলাম। কোভিডের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য এনারাও কি কোন অংশে কম দায়ী? আমি ভেবেছিলাম তারা জরিমানা করছেন কিন্তু এরা যে নিয়ম মানছে না, সে বিষয়ে তারা অবগত নন! কিন্তু আসলে তারা সব কিছুই অবগত আছেন, তারা জানেন সব কিছুই এভাবে চলছে। এসব পরিবর্তনের কোন ইচ্ছা, দেশের জন্য কাজ করার কোন ইচ্ছা কারো নেই। শুধু কোন মতে চেয়ারে বসে সময় পার করে, ফেসবুকে ছবি দিয়ে নিজের কৃতিত্ব প্রচার করছেন। কোন কিছুই পরিবর্তন হচ্ছে না। এক সময় তাদের মেয়াদ শেষে অটো প্রমোশন পেয়ে জায়গা ছেড়ে অন্য কোথাও যাবেন, তাদের পরিবর্তে অন্য কেউ আসবে। কিন্তু তারাও একইভাবে সময় পার করে যাবেন। জনগণের কোন উপকার হবে না।
দেশের জন্য কাজ করতে চাইলে অনেক কিছু করা যায়। প্রশাসনের একজন সৎ ও যোগ্য অফিসার চাইলে নিজ এলাকার চেহারা পরিবর্তন করে দিতে পারেন।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ১১:৪৬
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: সমাজ সচেতনতামুলক পোস্টে এটা। ভালো লেগেছে। শো অফ করার জন্য কিছু ভালো কাজ করে ফেইসবুকে দেয়া এটা এখন আমাদের একটা রেওয়াজ হয়ে গেছে মনে হয়। ঐ এডিসি সাহেব আসলে আপনার উপকার করতে গিয়ে আপনাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছেন। উনি যে কাজটা করেছেন এটা এক ধরণের স্বজনপ্রীতি। আপনি না চাইলেও উনি বুঝে বা না বুঝে তাই করেছেন। এতো বড় পদে আছেন অথচ ওনাদের ক্ষমতা ও দায়িত্ব সম্পর্কে মনে হয় পরিষ্কার ধারণা ওনাদের নাই।