নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

‘মানুষ তার স্বপ্নের চাইতেও বড়’

কাছের-মানুষ

মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে বদলায়, অকারণেও বদলায় । তবে আমি মনে হয় আগের মতই আছি , কখনও বদলাবওনা মনে হয় ! !

কাছের-মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমেরিকার ৯০০০ ফুট উচু পাহাড় মাউন্ট লেমনে একদিন

২৮ শে অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৩:১২


এমিলি তার প্রেমিকের সাথে ড্রাইভ করে পাহাড়টিতে উঠেছিল। কে জানতো এই যাত্রাই শেষ যাত্রা এমিলির। যাত্রা পথে প্রেমিকের সাথে কথা কাটাকাটি হয় এবং এমিলি তেজ দেখিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গহীন পাহাড়ে বেরিয়ে পরে। এর পর থেকে আর এমিলিকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারপর পেরিয়ে গেছে বহু বছর, এখনো প্রচলিত আছে সাধা ধবধবে পোশাকে পাহাড়ের রাস্তায় এখনো এমিলির ভাটাকতে হুয়ে আতমাকে দেখতে পাওয়া যায়। কোন পর্যটক মানুষ ভেবে পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে গেলে আবার অদৃশ্য হয়ে যায় এমিলি। এটি একটি লোককথা, এরকম অজস্র লোককথা প্রচলিত আছে মাউন্ট লেমনকে ঘিরে। মাউন্ট লেমন আমেরিকার এরিজোনার বিখ্যাত এক পাহাড়, পাহাড়টি অদ্ভুত সুন্দর এবং ভৌতিক, ভূমি থেকে এর উচ্চতা গড় উচ্চতা ৯০০০ ফুটের বেশী। আমি প্রায় প্রতি সপ্তাহেই বেরিয়ে পরি কোথাও না কথাও। সপ্তাহ দুয়েক আগের রবিবার ঘুরে এলাম এই মাউন্ট লেমনে। আমি সাধারণত রবিবারে ঘুরাঘুরি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি যেহেতু সোমবারে অফিস শুরু আবার তবে সেই সপ্তাহের শনিবারে বাসায় দুটি ফ্যামিলিকে ভূরিভোজের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম বিদায় রবিবারেই বেরিয়ে এসেছিলাম মাউন্ট লেমনে।




যাত্রা পথে গাড়ি থামিয়ে ছেলের একটি ছবি।

আমি আমেরিকার এরিজোনার টুসন শহরে থাকি আর এই পাহাড়টিও এই শহরেই অবস্থিত। সেই হিসেবে আমার বাসা থেকে প্রায় ৪০ মাইল দূরে অবস্থিত মাউন্ট লেমন। আমেরিকায় এই দুরুত্ব খুবই মামুলি ব্যাপার। আমি মাউন্ট লেমনের কথা প্রথম শুনি আমার বসের মুখে, আমি এরিজোনায় মুভ করার পরে তার সাথে প্রথম আড্ডায় তিনি আমাকে জানালেন আমার নাকি মাউন্ট লেমনে যাওয়া ফরজ বাকি সব নফল। তবে এই কয়েকমাস এই ফরজ কাজটি ফেলে রেখে আশেপাশের লেইক, ষ্টেট পার্ক-সহ পুরো শহর ঘুরে ঘুরে তেজপাতা বানিয়ে ফেলেছি। ভাবছিলাম একটু ঠাণ্ডা পরলেই মাউন্ট লেমন গিয়ে ফরজ কর্মটি সম্পাধান করব। এই মাসের তাপমাত্রা কমেছে, আবহাওয়াও এখন দারুণ সহনশীল থাকছে, একেবারে যাকে বলে খাপে-খাপ।


পাহাড়ের সরু রাস্তা।

আমি পরিবার-সহ রোববার সকাল সকাল বেরিয়ে পরলাম। আমাদের বাসা থেকে ১০-১৫ মাইল গাড়ি চালানোর পরই এই পাহাড় শুরু, বাকি পঁচিশ মাইল আসতে আসতে উপরে উঠতে হয় পাহাড় বেয়ে। ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে মাইলের পর মাইল ড্রাইভ করে এর চূড়ায় উঠতে হয়। আমরা দুপুর ১ টার দিকে রওনা দিয়েছিলাম, রাস্তা যেন শেষ হয় না। পাহাড়ের বুক বেয়ে এগিয়ে চলছি, উঁচু নিচু পাহাড়, বেয়ে উঠে চলছি পাহাড়ে, নীরব রাস্তা, গাড়ি খুব একটা দেখা যাচ্ছিল না। আকা-বাঁকা গহীন রাস্তা, গাড়ির গতি বেশী বাড়ানো যায় না, তার উপর একটু চালানোর পর দেখি গাড়ি স্পিড বারে না, খাড়া পাহাড়। আমার গাড়ি যে ছোট তেমন না। আমার SUV বড় গাড়ি, তারপরও গাড়ি উঠার সময় মনে হয় গাড়ির অবস্থা হালুয়া টাইট হয়ে যাচ্ছে! ভাবতে অবাক লাগে এই বিশাল ভৌতিক পাহাড়টি সারা প্লামপার লেমন ( botanist Sara Plummer Lemmon) নামক মহিলাটি পায়ে হেটে পারি দিয়েছিল! সারা লেমন পেশায় একজন উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ছিলেন, এই মহীয়সী নারী ১৮৮০ সালে তার স্বামীকে নিয়ে সর্বপ্রথম এই পাহাড় জয় করেন! অথচ সেই সময় না ছিল গাড়ি, না পাহাড়ে কোন রাস্তা। তার উপর বিষাক্ত সাপ, পাহাড়ি সিংহ এবং ভাল্লুকের ভয়তো ছিল, এখনো পাহাড়ী ভাল্লুক এবং পাহাড়ী সিংহ আছে এখানে! এই সব বাধা পেরিয়ে কয়েক দিন সফর করে সাঁরা এবং তার স্বামী প্রথম এই পাহাড় জয় করেন। তাই সারা লেমনের নাম অনুসারেই এই পাহাড়ের নাম করন করা হয় মাউন্ট লেমন।


আমরা দুজন।

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্য

"লেডি অব লেইক" বাংলায় তর্জমা করলে যার অর্থ দাঁড়ায় লেইকের মহিলা, তবে এটা সাধারণ কোন মহিলা নন, ভাটাকতে হুয়ে আতমা। মাউন্ট লেমনের উঠার সময় ছোট বড় অসংখ্য পাহাড় পারি দিয়ে যেতে হয়, রাস্তায় পরে কিছু লেইক। প্রচলিত লোককথা অনুসারে এই লেইক গুলোর কোন এক লেইকে থাকে এই মহিলার আতমা। কথিত আছে এই লেডি অব লেইকের ভবলীলা সাঙ্গ হয়েছিল এখানকার কোন এক লেইকে ডুবে। কথিত আছে মাঝে মাঝেই এই ভাটাকতে হুয়ে মহিলার আতমাকে লেইকেই পাশে দেখা যায়। তবে আমাদের ভাগ্য ভাল বলতে হয়, লেইকের পাশ দিয়ে ড্রাইভ করে যাবার সময় কোন আতমা-মাতমা আমার চোখে পরেনি। এরিজোনা তাপমাত্রা অনেক গরম এবং শুষ্ক তবে এই পাহাড়ের উপরের তাপমাত্রা নীচের তুলনায় ১৫ ডিগ্রির-মত কম। তাছাড়া মরুভূমির এই এখানেও এই পাহাড়ের উপর শিতের সময় বরফ পরে, এখানে স্কি করা যায়। এরিজোনায় এমন কোন জায়গা থাকতে পারে এখানে আসার আগে আমার ধারনাই ছিল না। আমরা যাত্রা পথে জায়গায় জায়গায় ব্রেক দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য ভক্ষন করছিলাম।


এই ছবিটি পাহাড়ের একেবারে চূড়ায় উঠে তুলেছিলাম। যখন পৌছালাম প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসছিল।

আমরা সারাদিন ঘুরাঘুরি করে সন্ধ্যার দিকে বাসায় রওনা দিলাম। আসার সময় সুপার মার্কেট হয়ে কিছু কেনাকাটা করে পৌছে গেলাম বাসায়। এই ভ্রমনটি অনেকদিন স্মৃতিতে রয়ে যাবে।


আরো কিছু ছবিঃ




মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৫:৩৫

সোনাগাজী বলেছেন:



নামার সময় ঢালু পথে কেমন লেগেছে?

২৮ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৯:৪২

কাছের-মানুষ বলেছেন: নামার সময়টা এক্সাইটিং ছিল তবে কিছু জায়গায় কান আটকে যাচ্ছিল, সম্ভবত অক্সিজেনের তারতম্যের জন্য।

২| ২৮ শে অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৫:৪০

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ছবিগুলো দুর্দান্ত হয়েছে। আপনার বর্ণনাও সুন্দর।

২৮ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৯:৪৩

কাছের-মানুষ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। আমি চেষ্টা করেছি ভাল কিছু ছবি ধারণ করতে।

৩| ২৮ শে অক্টোবর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩৭

মিরোরডডল বলেছেন:




প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্য

এই ছবিটা দারুণ!
এখান থেকে একটা ভিডিও নিলে সেরকম হতো!
ছবির চেয়ে ভিডিওতে সৌন্দর্যটা বেশি বোঝা যায়।
নেচারের একটা নিজস্ব শব্দ আছে, সেটাও শোনা যেতো।

আমরা দুজন।

এই ছবিটাও খুব সুন্দর।

এরকম ড্রাইভ আর লোকেশন হলে আর কি চাই!


২৮ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৯:৪৩

কাছের-মানুষ বলেছেন: আসলে এখানে অসংখ্য পাহাড়, সর্বোচ্চ উঁচু পাহাড়টির নাম লেমন। যাবার পথে অসংখ্য পাহাড়, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা পেরিয়ে যেতে হয়েছিল। ড্রাইভিং করাটাও এক্সাইটিং ছিল, একেবারে নেচারে হারিয়ে যাওয়া যাকে বলে।

ভাল কিছু ছবি তোলার চেষ্টা করেছিলাম, ভিডিও সেভাবে করা হয়নি। আপনার ভাল লাগাতে ভাল লাগছে।

৪| ২৮ শে অক্টোবর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:২৭

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: ছবিগুলো অনেক সুন্দর। আপনার বর্ণনাও সুন্দর।

২৮ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৯:৪৪

কাছের-মানুষ বলেছেন: চেষ্টা করেছি ভাল কিছু ছবি ধারণ করতে। পাঠ ও মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা রইল।

৫| ২৮ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১০:০৮

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: দারুন!! এই অভিযানের কোন ভিডিও পাবলিশ করেননি ইউটিউবে?

২৮ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১০:১২

কাছের-মানুষ বলেছেন: বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু ভিডিও ধারন করেছিলাম তবে পাবলিশ করা হয়নি।

৬| ২৮ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১১:২০

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লেখা। সুন্দর সব ছবি।

২৮ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১১:৫৪

কাছের-মানুষ বলেছেন: আপনি ঠিকই বলেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।

৭| ২৯ শে অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ২:৩৬

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- চমৎকার সব ছবি। যায়গাটা খুবই সুন্দর!!

২৯ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১১:০৩

কাছের-মানুষ বলেছেন: আপনি সঠিক বলেছেন। জায়গাটি সত্যিই সুন্দর ছিল।

৮| ২৯ শে অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৩:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: বউ বাচ্চা নিয়ে আমেরিকা বেড়াতে যাবো।
পুরো আমেরিকা ঘুরে দেখতে কয় মাস লাগবে?

২৯ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১১:০৪

কাছের-মানুষ বলেছেন: আমেরিকা অনেক বড় দেশ, হাজার হাজার লেইক, পাহাড় পর্বত, ন্যাশনাল পার্ক, স্টেট পার্ক-সহ টুরিস্ট স্পটের অভাব নেই। যে কোন বিজি শহর থেকেও ২০-২৫ মাইল ড্রাইভ করলেও টুরিস্ট আছে অনেক।

ভাল করে দেখতে চাই কয়েক বছরও লাগবে। তবে ৩-মাস আর সাথে পকেটে মালপানি থাকলে সিলেকটিভ কিছু আকর্ষণীয় টুরিস্ট স্পট ভ্রমণ করা যায়।

৯| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১২:৪১

খায়রুল আহসান বলেছেন: পাহাড়ি পথ এবং পাহাড়ের ছবিগুলো সুন্দর। +
সবচেয়ে ভালো লাগল "আমরা দুজন" ছবিটা। "প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্য"টাও খুব ভালো লেগেছে। আপনার ছেলের অন্যান্য ছবি দেখে মনে হচ্ছে সে খুব শান্ত শিষ্ট এবং বুদ্ধি্মান বালক। আশাকরি বড় হয়ে একদিন সে আপনারই মত সভ্য ভব্য ও বিদ্বান হবে।

পোস্টে ষষ্ঠ প্লাস। + +



১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ভোর ৫:২০

কাছের-মানুষ বলেছেন: পাহাড়টি বেশ উঁচু ছিল, তবে দৃশ্যগুলো বেশ আকর্ষণীয় আর তাপমাত্রাও বেশ মানান সই ছিল।

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।

পাঠ, মন্তব্য এবং লাইকের জন্য কৃতজ্ঞতা রইল অনেক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.