![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ছেলেটির সাথে আমার নামের কোন মিল নেই।এমনকি আমার লিখার সাথেও নেই।আমি আমার মত।আমার লিখারা তাদের মত..
আমাদের বাবারা জীবনে বিরাট কিছু করতে পারেনি। জীবনের প্রায় অর্ধেকটুকু ক্ষয় করে পাঁচটা সার্টিফিকেট জোগাড় করলেও সেগুলো বেশীরভাগ সময়েই ১০ হাজার টাকার বেশী বেতনের একটি জব আনতে সক্ষম হয়না । কয়েক বছরে সে অংকটি বেড়ে হয়তো ১৫ হাজারে গিয়ে দাঁড়ায়, কিন্তু আকাশছোঁয়া দামের বাজারে সেটি দিয়ে খুব একটা সুবিধে হয়না।
আমরা থাকি ভাড়া বাসায়। গ্রামের বাড়িতে দু খন্ড জমির বাইরে আমাদের মাথা গোজার ঠাইটুকু ভাড়া বাসাগুলোতেই খুঁজি। সবুজ কালারের বাজারের সবচেয়ে সস্তা সিলিং ফ্যানগুলোর নিচে বসে বাল্বের আলোয় আমরা দিনাতিপাত করি। স্কুল ব্যাগ ,পড়ার টেবিল আর একটি সিঙ্গেল খাটের বাইরে খুব বেশীকিছু আমাদের পড়ার ঘরগুলোতে থাকেনা।
সস্তা বেতনের চাকুরিজীবি বাবারা সকালবেলা আমাদের ঘুমের ভেতরে রেখেই অফিসে চলে যান। ২৪ ঘন্টার দিনে ১২ ঘন্টার কর্মঘন্টার ভেতর ৩৬ রকমের কাজ শেষে যখন তারা রাতে বাসায় ফেরেন, ততক্ষনে আবার আমরা খেয়ে ঘুমিয়ে যাই।বাবাদের চেহারা তাই খুব একটা দেখা হয় না। মায়েরা শুধু বাবাদের অপেক্ষায় বসে থাকে। বাবাগুলো যখন রাতে দরজায় নক করে ভেতরে ঢোকে , তখন দরজা খুলে দিয়েই মা-গুলো আবার খাবার বাড়তে ব্যস্ত হয়ে যায়।
আমরা যখন রাস্তা দিয়ে হাটি,তখন রাস্তায় দাড় করানো গাড়ির গ্লাসে নিজের চেহারা দেখি। আমরা লোকাল বাসে ঝুলি। খুব বেশী প্রয়োজন না হলে সি এন জিতে আমরা খুব একটা চড়িনা। কারো গাড়ির সামনের সিটে বসতে পারলে আমরা নিজেকে গাড়িটার মালিক বলে মনে করি।
আমাদের খাবারের তালিকায় সপ্তাহে একদিন মাংস রান্নার চেষ্টা থাকে।কোন সপ্তাহে সেটুকু না পারলে ডিমের ঝোল দিয়ে সে স্বাদটি মেটাই। কিছু না থাকলেও ডালটা ছাড়া আমাদের ভাত ভেজেনা। ডালের ভেতর ভাত ভিজিয়ে খেতে খেতে একটা সময়ে এসে আমরা কলেজে পড়ার উপযুক্ত হয়ে যাই।
বাবাদের ১৫ হাজার টাকার প্রায় অর্ধেকটাই ব্যয় হয়ে যায় আমাদের কলেজ ফিস আর কোচিং এর খরচ বহন করতে গিয়েই। বাকী অর্ধেকটা চলে যায় মাথার উপড়ের সে ভাড়া করা ছাদটির ভাড়া দিতে গিয়ে। এরপরেও খেয়েপড়ে দিনের পর দিনে আমরা কিভাবে চলছি আর চলছি, সে এক বিরাট রহস্য...
কলেজ পাশের পর আমাদের বাবা মায়েরা সর্বদা আমাদের সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে চান। ভাবখানা এমন, আমাদের পরিবারে মধ্যম মেধার কোন সন্তান জন্মাতে নেই। জন্মালে কেবল মেধাবী মাথা নিয়েই জন্মাতে হবে। এরপরেও যদি ভুলে একটি কুলাঙ্গার জন্ম নিয়েই নেয়, তবে তার উপড় সমস্থ অশ্রু বিসর্জন দিয়ে বলা হয় "এর বেশী সাধ্য আমাদের ছিলো না..." ।
আমাদের প্রেম ভালবাসা নামক আবেগগুলো নিয়ে খুব বেশী মাথা ঘামালে চলেনা। তবু ভেতরের কোন এক চাহিদার কারনে আমরা মাথা ঘামাতে বাধ্য হই। স্বপ্ন থাকে একটি রাজকন্যা পাবার। খুব সাধারন কোন মেয়েকে কোনভাবে অসাধারন লাগলেই আমরা তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। টিউশনির টাকা বাঁচিয়ে কে এফ সিতে মাসে দুদিনের বেশী বসার সাধ্য কখনো আমাদের হয়না। এক ঈদে কেনা জিন্সের প্যান্ট দিয়ে আমরা মাসের পর মাস সেটা পড়ে ক্লাসে যাই। এগুলোতে মেয়েদের মন টেকেনা বলে সে সাধারন মেয়েগুলোও আমাদের হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে কোন এক অসাধারন হাত ধরে হারিয়ে যায়। আমরা কিছুদিন সেটির দুঃখে পাগলের মত কাঁদি। এরপর আবার ঠিকই সে টিউশনির টাকা বাঁচিয়ে কে এফ সিতে যাবার বদলে ছোটবোনের জন্য পুতুল আর চকলেট কেনার চেষ্টা করি। মাঝখানে আমাদের করা কান্নাটুকু গোপনই থেকে যায়।
আমরা ভার্সিটিতে ভর্তির প্রথম থেকেই ভাবি , পাশ করে বেরিয়ে বিরাট কিছু করে ফেলবো। শেষ বছরে এসে আমরা মামা চাচাদের খোঁজে দৌড়াই। পেয়ে গেলে ভাল, আর না পেলে "কিছু একটা হয়ে যাবে" ভাবতে ভাবতে বছরের পর বছর খরচ করে বি সি এস পরীক্ষা দেই। পায়ের নিচে শক্ত মাটি খোঁজা আমাদের নিরন্তর অভ্যেস। শেষমেষ অনেক কষ্টে আমাদেরও ৫ টা সার্টিফিকেট হয়ে যায়। সেগুলো ফাইলে নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে আর জুতো ক্ষয় করতে করতে শেষে আমরাও ১০ হাজার টাকার বেতনের একটি জব পেয়ে যাই। নতুন করে আমরাও আবার আমাদের বাবাদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হই। এই চক্রের কোন শেষ নেই, শুরুটা কবে হয়েছিলো, সেটিও ইতিহাস মনে রাখেনি। শুরু যখন থেকেই হোক,আমরা শুধু এটুকু জানি এই চক্র শুধু চলছে আর চলছেই.....
এই যে মধ্যবিত্তদের জীবনের ফুল হাতা শার্ট পড়ে অফিসে যাওয়া, সপ্তাহে একবার ডিমের ঝোল খাওয়া, ডালে ভাত ভিজিয়ে খেতে খেতে বড় হওয়া, এগুলোর মাঝে অসাধারন কিছুই নেই। মধ্যবিত্তরা অসাধারন শুধু স্বপ্ন দেখার ক্ষেত্রে। এমন কোন স্বপ্ন নেই, যেটি মধ্যবিত্তরা দেখেনা। বেশীরভাগ স্বপ্নই হেরে যায় সামর্থের কাছে। রাজকন্যার স্বপ্নটি পর্যন্ত একই ছুড়িকাঘাতেই খুন হয়ে যায় । পরে অন্য কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেলেও তার সাথে মনের মিল না হলেও তারা সুখী দাম্পত্য জীবনের অভিনয় করে বাকী জীবনটা কাটিয়ে দেয়... আর আড়ালে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
পৃথিবীতে আসলে মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া ঠিক না।যারা এসকল পরিবারে জন্ম নিয়েছে, এরা প্রত্যেকের জীবনে প্রাপ্তি হিসেবে কয়েকটি সার্টিফিকেট ছাড়া আর তেমন কিছুই পায়নি। সেগুলো দিয়েও ১০ হাজার টাকা বেতনের একটি চাকরী ছাড়া আর অর্জনেরও তেমন কিছুই থাকেনা। টাকা নামক এক মূল্যবান কাগজ দ্বারা চালিত এই পৃথিবীর নিয়মের গোলাম থাকতে থাকতেই তারা বয়সের ভারে নুয়ে পড়তে পড়তে জীবনের শেষ প্রান্তের দিকে এগিয়ে যায়...
পূর্বজনম বলে যদি কোন কিছু সত্যিই থেকে থাকে, তবে এই মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়াটা হচ্ছে সে জন্মে করা কোন পাপের ফসল। এ শাস্তিটুকু খুব ভয়াবহ।ডালে ভাত ভিজিয়ে খেয়ে বড় হওয়া, দুদিনের জন্য কে এফসির এসির বাতাস খাওয়া, দুদিনের জন্য কোন এক হাত পেয়ে সেটায় চুমু খাবার আগেই হারিয়ে ফেলার মত যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি কেবল মধ্যবিত্তরাই পায়। প্রায় প্রতিটি খেলায় শুধু হারজিত থাকে। মধ্যবিত্তদের জীবনের এই খেলায় কোন হারজিত নেই।
টাকা নামক এক মূল্যবান কাগজ দ্বারা চলিত এই পৃথিবীতে সব জায়গাতেই কেউ কেউ জিতে যায়, কেউ কেউ হেরে যায়। যারা জিততেও পারেনা, হারতেও পারেনা, মাঝখানে নির্লজ্জের মত ঝুলে থাকে, তারাই মধ্যবিত্ত....
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৪১
লিংকন১১৫ বলেছেন: মধ্যবিত্ত দের দুঃখের শেষ নেই ।
না তারা বলতে পারে না তারা সইতে পারে ।
দারিদ্র্যের জাঁতাকলে সব ইচ্ছে তাদের হারিয়ে জায় ।