নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আশিক। প্রচন্ড স্বপ্নবাজ একজন মানুষ। একাধারে অনেক কিছু হবার ইচ্ছে।খুব আত্মকেন্দ্রিক একজন । অনেক কথা কারো সাথে তাই বলা হয়ে ওঠেনা। তাই এখানে আসা। যা কিছু মনে আসে, তার মধ্য থেকেই সবার সাথে শেয়ার করা.. এইতো.. আর কিছু বলার নেই...

আশিক সরকার শুভ (আবীর)

আমি ছেলেটির সাথে আমার নামের কোন মিল নেই।এমনকি আমার লিখার সাথেও নেই।আমি আমার মত।আমার লিখারা তাদের মত..

আশিক সরকার শুভ (আবীর) › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রকৃতির নির্মমতা

১২ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ২:১৮


আপনি যখন কোন অভিজাত রেস্তোরায় বসে ৫০০ টাকার কফির মগে চুমুক দেবেন,ঠিক সে সময়েই এ শহরেরই কোন না কোন ঘরে হয়তো কোন অসুস্থ মায়ের স্কুলপড়ুয়া সন্তান পুরনো মাটির ব্যাংকটি ভেঙ্গে খুচরো নোটগুনো গুনে গুনে ৫০০ টাকা মিল করার চেষ্টা করবে।কম হলে টিফিনের জমানো টাকা থেকে দিয়ে হলেও মিল করার একটি চেষ্টা থাকবে।যতক্ষনে আপনার মগের কফিটুকু শেষের দিকে আসবে, ততক্ষনে ওই ছেলেটা ফার্মেসী থেকে খয়েরী কাগজের ঠোঙ্গার ভেতর অষুধগুলো নিয়ে ঘরে ফিরবে। আপনি হয়তো পরেরদিন এসেও ৫০০ টাকার কফির মগে চুমুক দেবেন। কিন্তু ওই ছেলেটির ঘরে মাটির ব্যাংক একটিই।

রেস্তোরার বার্গার শেষ করার পর যে আপনার মিনারেল ওয়াটার না হলে চলেনা, সে আপনিই যখন হাতের চামড়া পুড়িয়ে দেয়া কড়া রোদের ভেতর দিয়ে মরূভূমির মাঝ দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা হাটবেন, তীব্র পিপাসায় যখন গলা শুকিয়ে মুখের লালাটুকুও শুকিয়ে যেতে চাইবে, ঠিক তখন যদি এই বালির সমূদ্রের মাঝখানে একটি কুয়োর সন্ধান পেয়ে যান, আপনি হয়তো সেখানে ঝাপিয়েও পড়বেন। কুয়োর পানি কতটুকু নোংরা কিংবা ভাল, সেটি আর বিষয় থাকবেনা তখন।

আমাদের ঘরগুলোতে মায়েদের উপস্থিতিটুকু খুব বেশী বোঝা যায় না। বাইরে যাচ্ছি ঘুরছি ফিরছি, ফিরে এসে আবার টেবিলের বেড়ে দেয়া ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে যাচ্ছি। সকালে উঠে আবার নিজেদের মত করে চলে যাচ্ছি, আবার হয়তো ক্লাস শেষ করে ফিরছি বিকেলের পর।

যেসব ছেলেপেলেরা এতিমখানায় জন্মায়,এদের ক্ষেত্রে এমনটি হয়না। কোন মায়ের বয়সী মহিলা এদের মাথায় একবার হাসি দিয়ে হাত বুলিয়ে দিলেও সে সাদামাটা গল্পটি এরা বড় হলেও বাচ্চাদের বলবে।

মানুষের চাহিদাগুলো সময়ে সময়ে প্রকৃতি ভিন্ন ভিন্ন চেহারায় দাড় করিয়ে চিনিয়ে দেয়। একদিন হয়তো আপনিও মাটির ব্যাংক ভেঙ্গে ৫০০ টাকা মিল করে ফার্মেসীতে দৌড়েছেন, আজ সে আপনারই হয়তো ৫০০ টাকার কফির মগে ঠোট বসানোটা নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার। ক্ষুধাতৃষ্ণায় থেকে রোদে পুড়ে একদিন হয়তো আপনিও গ্রামের রাস্তার ধুলোবালি মাড়িয়ে ডান হাতে বাংলা ইংরেজী আর গণিত বইটা নিয়ে স্কুলের বারান্দায় এসে দাড়াতেন, সে আপনারই হয়তো আজ এসির বাতাসের বাহিরে খুব একটা থাকা হয়না।

ক্যারিয়ার নামক টাকার পেছনে ছুটতে ছুটতে একদিন হঠাত করেই দেখবেন রাতে ঘরে ফিরলে কেউ আর টেবিলে ভাত বেড়ে দিচ্ছেনা। সে মানুষটি আর নেই। এ ঘর ও ঘর করে সারা দুনিয়ায় খুঁজে বেড়াবেন, সে নেই। আর সে নেই.... কোথায় হারালো! কখন হারালো!! টের পাবারও সুযোগ পাবেন না... এরপর অফিসে যাবার সময় গাড়ির গ্লাসের ফাঁক দিয়ে যখন দেখবেন রাস্তার কোন ৫-৬ বছরের পথশিশুর হাতে একটি পাঁচ টাকা দামের সিঙ্গারা তুলে দিয়ে কোন মাঝবয়সী মহিলা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, তখন চোখ ঘোলা হয়ে আসবে আপনার...

প্রকৃতির প্রকৃতি আসলে খুব রহস্যময়।আর সে যে কতটা রহস্যময়, সেটি সে সবাইকে জানান দিতে ভালবাসে। সে কখনো কখনো বুঝিয়ে দেয় ৫০০ টাকার একটি নোটের মূল্য একই সময়ে দুটি হাতে কেমন করে দুরকম হয়ে যায়। কোন হাত হয়তো তার বিনিময়ে কফির মগের হাতল ধরবে, আবার কোন হাত হয়তো তার বিনিময়ে ওষুধ নিয়ে ঘরে ফিরবে।প্রথমজনেরটি বিলাসীতা, অপরজনেরটি হচ্ছে প্রয়োজন।এটি বোঝানোর জন্যে প্রকৃতির কখনো নোটের গায়ে লিখা "পাঁচশত টাকা" লিখা শব্দটি পরিবর্তন করতে হয়না। নোটের উপড় লিখা অংকটি ঠিক রেখেই সে বুঝিয়ে দেবে।

যে পথশিশুদের আপনার চোখে বলতে গেলে ধরাই পড়তো না, সে তাদের দিকেও আপনার দৃষ্টিপাত করিয়ে ছাড়বে। সেজন্যে সে আপনার রাতের খাবার টেবিলে ছোটবেলা থেকে ভাত বেড়ে দেয়া মানুষটিকে হুট করে কেড়ে নিয়ে যাবার মত নির্মমতাও সে করবে...

এই নির্মমতাটিই বা সে কেন করছে..? হয়তো আমরাই তাকে বাধ্য করছি....

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৬

র‍্যাশ বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন। বাংলা ব্লগে ভাল পোস্টগুলো আজকাল তেমন কেউ পড়ে না , এই পোস্টটাও মনে হয় অনেকের চোখ এড়িয়ে গেছে।

২| ২৩ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৪:১৯

মহা সমন্বয় বলেছেন: অসাধারণ, সত্যিই অসাধারণ লিখেছেন। এক অদ্ভুত ভাললাগার পরশ পেলাম লেখাটিতে :) কিছুটা মন খারাপও হল। :(
প্রকৃতি আসলেই খুব নিষ্ঠুর এবং রহস্যময়, প্রকৃতি চলে তার আপন গতিতে আমাদের ব্যক্তিগত, সুখ দুঃখ, হাসি, কান্নায় তার কিছুই আসে যায় না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.