নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আশিক। প্রচন্ড স্বপ্নবাজ একজন মানুষ। একাধারে অনেক কিছু হবার ইচ্ছে।খুব আত্মকেন্দ্রিক একজন । অনেক কথা কারো সাথে তাই বলা হয়ে ওঠেনা। তাই এখানে আসা। যা কিছু মনে আসে, তার মধ্য থেকেই সবার সাথে শেয়ার করা.. এইতো.. আর কিছু বলার নেই...

আশিক সরকার শুভ (আবীর)

আমি ছেলেটির সাথে আমার নামের কোন মিল নেই।এমনকি আমার লিখার সাথেও নেই।আমি আমার মত।আমার লিখারা তাদের মত..

আশিক সরকার শুভ (আবীর) › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাগল

২৩ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ২:৪৮


পাগলাগারদের মানুষদের সাধারনত ছাড়াভাবে রাখা যায়না। এদেরকে নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্যে হাতে পায়ে বেড়ি দিয়ে শিকল পড়িয়ে দেয়ালের সাথে আটকে রাখা হয় । এদের কান্ডকারখানাও হয় দেখার মত।

আপনি যখন কোন পাগলাগারদের কোরিডোর দিয়ে হাটবেন, তখন সেখানে দেখবেন কেউ না কেউ দৃপ্ত কন্ঠে শেখ মুজিবরের ভাষন দিচ্ছে। কাউকে দেখবেন আবার দেয়ালে অত্যন্ত মনোযোগের সাথে নিউটনের ক্যালকুলাস ম্যাথ করছে ।আর কিছুক্ষণ পরপর বিজ্ঞের মত মাথা ঝোকাচ্ছে, যেন বিরাট কিছু একটা আবিষ্কার করে ফেলেছে। নতুন ম্যাথ ফরমুলা। এই ফরমুলা দিয়ে আইন্সটাইনকে একজন মাইকেল জ্যাকসনের মত ব্রেক ড্যান্সার হিসেবে প্রমাণ করা যায়।

অনেক পাগল আবার মাইক্যাল জ্যাকসনের মতই সারাদিন ড্যান্স করে। পায়ের নিচের ধুলো উড়াতে উড়াতে কিছুক্ষণ পরপর মুখ দিয়ে কি যেন আবোলতাবোল বলেই আবার নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। আরেক ধরনের পাগলদের দেখা যায় সারাদিন গোসল করতে। ঝর্ণা ছেড়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করা মাত্রই সে এক অন্য জগতে চলে যায়। মনে মনে ব্যাকগ্রাউন্ডে হয়তো সেতার বাজতে শুরু করে। এ ধ্যান সহজে ভাংবার নয়।

এসকল পাগলদের বাইরে কিছু অন্যধরনের পাগলও থেকে যায়। এরাও তাদের সাথেই থাকে । এদের হাতে পায়েও জন্তু জানোয়ারের মত করে সারাদিন শিকল বাঁধা থাকে। কোরিডোর দিয়ে হাটতে হাটতে দেখবেন কোন কোন পাগলের পাগলামিটাতে আপনার হাসি আসবেনা। এরাও পাগলামি করবে । তবে এদের পাগলামিতে অনেক কষ্ট মেশানো থাকে। এদের মধ্যে আপনি কিছু পাগল পাবেন ,যারা সারাদিন দেয়ালে ছবি আঁকে। বাবা মা এর মাঝখানে তার ছবি। একই ছবি সে সারাদিন আঁকবে। আবার মুছে ফেলবে। মুছে ফেলা জায়গায় আবার আঁকবে। এরপর ছবিটা ছুঁয়ে দেখে অনেক্ষন হাসবে। এরপর আবার কাঁদতে শুরু করবে। বাচ্চাদের মত আব্বু আম্মু বলে ডেকে কিছুক্ষন চিৎকার করবে। এরপর আবার একটা অট্টহাসি দিয়ে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আবারো ছবি আঁকতে শুরু করবে। এবারের ছবিটা অন্য কারোর...

আবার অনেকে গলায় লোহার বেড়ি নিয়ে আপনার সামনে ঘোড়া সাজবে। ঘোড়া হয়ে একা একাই ছুটতে থাকবে। কিছুদূর যাবার পর গলার বেড়িতে লাগানো শিকলে যখন টান পড়বে, তখন আবার ফিরে আসবে। তাও ওই ঘোড়ার মত করে মুখে টগবগ টগবগ শব্দ করতে করতে। আর কিছুক্ষন পরপর নিজের পিঠের উপড় তাকিয়ে বলবে "আম্মু! শিশুপার্কের ঘোড়ার মত না? হাওয়াই মিঠাই খাবা? একটা কিনে দেই? "। যেন তার মেয়ে পিঠের উপড় বসে আছে। মেয়েটা যেন হাওয়াই মিঠাই হাতে নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে হাসছে..

প্রতিটা পাগলাগারদের দেয়ালই গলায় লোহার বেড়ি আর হাতে পায়ে জন্তু জানোয়ারদের মত শিকল দিয়ে বাঁধা পাগলগুলোর হাতের একেকটি আচড়ে তাদের পাগল হবার ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। এরাও একদিন আপনার আমার মতই মতই তিনবেলা ভাত খেতো। বাইরে থেকে বাড়ি ফেরার সময় ছেলের জন্য রাফখাতা আর কাঠপেন্সিল নিয়ে ঘরে ফিরতো। মেয়ের জন্মদিনের সময়ে মেয়েকে ঘাড়ে তুলে বলতো "আম্মু, দেখো একদিন তুমি এত্ত বড় হবা!"। রাতে বাসায় ফিরে মাঝে মাঝেই স্ত্রীকে বলতো "আসো আজকে এক প্লেটে দুজন ভাত খাই"। বড় বড় টেডিবিয়ারগুলো শোরুম থেকে কিনে বাসায় ফিরতো এ হয়তো এদের মধ্য থেকেই অনেক পাগল...

আমার প্রায় সময়ই ক্লাশ শেষ করে বাসায় ফিরতে রাত হয়ে যায়। রাস্তার জ্যামের কারনে বেশীরভাগ সময়ই আমাকে প্রায় ১ কিলোমিটারের মত রাস্তা হেটে আসতে হয়। হাটতে আমার যে ক্লান্তি লাগে তা নয়, বরং উপভোগই করি। আমি মাঝপথে প্রতিবারেই একটি পাগলের দেখা পাই। তার পাগলামি হচ্ছে, সে ড্রেন থেকে নষ্ট খাবার তুলে খায়। আমি মাঝেমধ্যে তাকে সামনে পেলে দু একটা রুটি কিনে দিই। সেগুলো সে নিয়ে খায়, খেয়ে আবারো ড্রেনের পানিতে হাত ডুবিয়ে দেয়। এরকম চলছে তো চলছেই.... প্রতিটা দিন তার এমন করেই শুরু হয়, শেষ হয়ও ড্রেনের খাবার খেয়েই...

আমি মাঝেমধ্যে ভাবি, আমি যদি কখনো কোন কারনে পাগল হয়ে যাই, তবে আমাকে কি ঘর থেকে বের করে রাস্তায় ছেড়ে দেয়া হবে? নাকি আমার হাতে পায়েও শিকল পড়িয়ে গলায় বেড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হবে? আমিও কি দেয়ালে কোন ছবি আঁকবো? ছবিগুলো কেমন দেখতে হবে?

পৃথিবীটা আসলে যে কতটা নির্দয় সেটি যদি পৃথিবী নিজে জানতে পারতো তাহলে সে নিজেই হয়তো এতদিনে অপরাধবোধে ভুগতো। আজ আপনি সুস্থ্য, পুরো পৃথিবী আপনার সাথে থাকবে। আপনাকে সঙ্গ দেবে, কথা বলবে। আপনার কষ্টগুলো শুনবে, শুনে সান্ত্বনা দেবে । কাল আপনি অসুস্থ্য, পুরো পৃথিবী নিজেই আপনার কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেবে।

হয় আপনার হাতে পায়ে শিকল আর গলায় বেড়ি পড়িয়ে জেলখানার কয়েদির মত আপনাকে একটি দেয়ালের সাথে আটকে রাখবে, আর নাহয় পুরো দুনিয়াটাকে জেলখানা বানিয়ে আপনাকে খোলা আকাশের নিচে ছেড়ে দেবে.. কেউ ফিরেও তাকাবেনা সেদিন..

মাঝে মাঝে শুধু হেটে যাওয়া পথচারীদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো শুধু একবেলা রুটি কিনে দেবে...

ব্যস... এটুকুই...

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ৭:৫২

আদীব জামান বলেছেন: অনেক বেশি সুন্দর:)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.