![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ছেলেটির সাথে আমার নামের কোন মিল নেই।এমনকি আমার লিখার সাথেও নেই।আমি আমার মত।আমার লিখারা তাদের মত..
আমার জন্মের পেছনে আমার কোন হাত ছিল না, তোমাদেরও হাত যে ছিলো তাও বলাটা আসলে ঠিক হবে না।কারন শুনেছি মানুষের জন্ম মৃত্যুর কোন ঠিক নেই। তবে দায়ী তোমরা ছিলে অবশ্যই। সবসময়ই থাকো..
তোমাদের ফোনসেক্স করে মন ভরেনা,তাই বহুদিন ধরেই লিটনের ফ্ল্যাট খোঁজো ।একসময় পেয়েও যাও।খোঁজার মত খুঁজলে নাকি আল্লাহকেও পাওয়া যায়, লিটনের ফ্ল্যাট কি আর এমন আহামরি জিনিস!
লিটনের ফ্ল্যাটের বিছানা ছাড়ার অনেকদিন পর যখন টের পেলে তোমাদের মাঝে আমি চলে আসছি পৃথিবীর আলো দেখতে, ঠিক তখনই তোমরা কিভাবে সেটি ঠেকানো যায় সে পরিকল্পনা শুরু করে দিলে । পৃথিবীতে আসার আগেই আমাকে খুন করার তোমাদের সব কথোপকথন আমি মাতৃগর্ভ থেকেই শুনেছিলাম। প্রতিটা দিন আর রাত এক করে আমি মাতৃগর্ভে থেকেই চিতকার করে কেঁদেছি ,পৃথিবীর আলো দেখতে চেয়েছি ।তা দাওনি তোমরা। কোন এক হসিপিটালে যেয়ে গোপনে এক নার্সকে বেশ কিছু টাকা খাইয়ে আমাকে তার হাত দিয়েই মৃত অবস্থায় পৃথিবীতে নিয়ে আসো সবসময়।আমার শরীরের আকার বেশী বড় হলে কখনো কখনো আমাদের হাত পা কেটেও ঘন্ড খন্ড করে তোমরা বের করে আনো ।
তোমরা যারা লিটনের ফ্লাটে সময় কাটাও শুধু তারাই যে অমন করো তা নয়, যারা নিজেদের ফ্লাটেই স্বামী স্ত্রী মিলে একই বিছানায় সময় কাটাও তারাও এভাবে আমাদের খুন করো প্রায়ই।আমরা তখনো তোমাদের কথোপকথন শুনি, আমরা তখনো গর্ভে থেকে চিতকার করি, কিন্তু তোমরা তাতে কোন ভ্রুক্ষেপ করো না। করার কথাও নয় ।
তোমরা সবাই যে আমাদের মাতৃগর্ভ থেকে পলিথিনে মুড়িয়ে ডাস্টবিনে রেখে আমাদের দাঁড়কাকের খাবার বানাও তেমনটি নয়। তোমাদের মধ্যে অনেকে আবার আমাদের নিয়ে কোন এক বস্তিতে ফেলে রেখে আসো।সেখান থেকে হাতবদল হতে হতে শেষ পর্যন্ত কোন এক এতিমখানায় গিয়ে আমাদের ঠাই হয়। আমরা সেখানে থেকেই বড় হই। বড় হয়ে দেখি আমাদের মতই আরো অনেক আছে সেখানে । একটা সময় এরাও মাতৃগর্ভে থেকে চিতকার করেছিলো আমার মত। এরাও হাতবদল হয়েছে আমার মতই। আমাদের মতই তারাও এখানে এসেছে এভাবেই ।
আমরা সবাই সেখানে একসাথে বড় হতে থাকি। ফজরের আজানের সময় ঘুম থেকে উঠে আমরা একসাথে অযু করি।ছোট ছোট টুপিগুলো মাথায় দিয়ে একসাথে নামাজে দাড়াই। সিজদায় যাবার সময় আমরাও তখন বাচ্চাসুলভ দুষ্টুমি থেকে কনুই দিয়ে পাশের জনকে ধাক্কা দেই।
আমরা পাড়ার মাঠে অন্য সবার মতই ইটের উপড় ইট সাজিয়ে স্ট্যাম্প বানিয়ে ক্রিকেট খেলি। আমাদের ক্রিকেটে ছক্কা মারার কোন সুযোগ নেই। ওয়ালের ওপাশে বল গেলেই আউট। পাড়ায় যদি কোন দিঘী থাকে, তবে গ্রীষ্মের দুপুরে খেলাশেষে আমরা সবাই মিলে একসাথে সেখানে লাফিয়ে পড়ি। দীঘির পানি ঘোলা হবার আগ পর্যন্ত আমাদের ঝাঁপাঝাপি সেখানে চলতেই থাকে।
সন্ধ্যার পর আমাদের জন্যে বাইরে যাওয়া বারন থাকে, সবার ঘর থেকে তখন ইংরেজী প্যারাগ্রাফ মুখস্ত করার আওয়াজ শোনা যায়। কখনো কখনো প্যারাগ্রাফ মুখস্থ করার ফাঁকে আমরা হঠাত করেই থেমে যাই।অবাক বিষ্ময়ে কিছু একটি আমরা ভাবতে থাকি, বিশেষ করে My Parents প্যারাগ্রাফটি মুখস্থ করার সময়ে। পরীক্ষায় এলে আমরা প্যারাগ্রাফটি যে খাতায় লিখিনা তা নয়। লিখি.. তবে বাবা আর মায়ের জায়গায় অজানা দুটো নাম আমরা জুড়ে দেই।
আমাদের বছরগুলোর দুই ঈদগুলো খুব বেশী জাকজমকপূর্ণ হয়না। তবু যেটুকু আমরা পাই, তাতে মনে হয় পৃথিবীর সমস্থ আনন্দগুলো নিয়ে এসে আমাদের মধ্যে ভাগাভাগি করে দেয়া হয়েছে। সাধারনত আমাদের জন্যে সেদিন খিচুড়ি রান্না করা হয়।সেটিতেই আমরা আমৃতের স্বাদ পাই। আমাদেরকে নিয়ে সেদিন আশেপাশেই কোথাও ঘুরিয়ে দেখানো হয়। আশেপাশে ঘোরাটাই আমাদের কাছে বিদেশ ঘোরার আনন্দ।ঘুরতে ঘুরতে আমরা প্রায়ই দেখি , আমাদের মতই দূরে কিছু বাচ্চাদের সাথে দুজন করে মানব মানবী। সেসকল বাচ্চাদের চেহারা আমাদের মত মলিন নয়। আমাদের জীর্ণশীর্ণ শরীরের বুকের হাড় যেমন হাত দিয়ে গোনা যায়, তারা মোটেই নয় তেমন। তাদের হাতে হাওয়াই মিঠাই দেখে আমরা ছোট্ট মগজ নিয়েও ভাবনার সাগরে ডুবে যাই, আর ভাবি, আমাদের হাতে কেন হাওয়াই মিঠাই নেই.. তাদের হাতে সেগুলো কে কিনে দেয়?
বড় হতে হতে যখন আমরা এই এইতিমখানার গন্ডি থেকে বেরিয়ে আসি, পৃথিবী তার নিষ্ঠুরতার চরম সীমাটা আমাদের তখন দেখাতে শুরু করে।মানুষগুলোকে খুব অদ্ভূত লাগতে শুরু করে তখন।কেউ আমাদের নাম জিজ্ঞেস করার পর পরই সবচেয়ে বেশী যে প্রশ্নের আমরা সম্মুখীন হই তা হচ্ছে "তোমার বাবা কি করেন?"
আমরা যখন বোর্ড পরীক্ষা দিতে পরিক্ষার জন্যে রেজিস্ট্রেশন করতে যাই , তখন পুরো ফর্ম ঠিকঠাক পূরণ করলেও "Father's name" আর "Mother's Name" এর জায়গায় এসে আমাদের আটকে যেতে হয়। "সবাই জানলে কি বলবে" এই ভয়ে আমরা শিক্ষকদের ডেকে কিছুই বলিনা তখনও। ছোটবেলায় My Parents প্যারাগ্রাফে যে দুটো ছদ্মনাম আমরা বহু পরীক্ষায় বারংবার লিখেছি, তা দিয়েই ওই দুটি ফাঁকা জায়গা পূরণ করি। জাতীয় পরিচয়পত্রের ঝামেলাটাও আমাদের এভাবেই সারতে হয়।
আমরা যারা এভাবে জন্মাই, তাদের আসলে প্রেম ভালোবাসা সম্পর্কিত কোন আবেগ থাকা উচিত নয়। তবুও একটি মানুষের শরীর নিয়ে জন্মাবার কারনে আর দশজন মানুষের মত আমাদের ভেতরও সেরকম কিছু অনুভূতি থেকেই যায়। এই "থেকে যাওয়া"র কারনে আমাদের জীবনের একটি সময়ে এসে পাড়ার কোন দালানের দোতলার বারান্দার গ্রীল ধরে দাঁড়ানো কোন স্কুল বা কলেজপড়ুয়া কোন মেয়েকে আমাদের ভালো লেগেই যায়। সময় খরচ করতে করতে কখনো কখনো তাদেরও কোন এক রহস্যময় কারনে আমাদের প্রতি ভাললাগা জন্মে। সে ভাললাগাকে পুঁজি করে আমরা বড়জোর দু থেকে তিন বছর খুব সুন্দর একটি সময় কাটাই।জীবনের সবচেয়ে সুখময় স্মৃতুগুলো আমাদের সংগ্রহ করতে হয় এ সময়ের মাঝেই। একটি সময়ে এসে যখন তাদেরকে আমরা রেজিস্ট্রেশন ফর্মের ওই দুটো ঘর পূরণ করার পেছনের গল্পটি বলি, তখন তারা "এই ছেলের কোন ভবিষ্যত নেই" বলে মনে মনে ভেবে নিয়ে পারিবারিকভাবে নির্ধারন করা কোন এক প্রবাসীর হাত ধরে তিনবার কবুল পড়ে হারিয়ে যায়... পৃথিবীর কোন মেয়ের বাবা মা আমাদের হাতে তাদের মেয়ে দেয়ার সাহস করেনা কখনো...
আমাদের পরবর্তী জীবন কাটে কোন এক প্রতিষ্ঠানে কোনমতে একটি জব আকড়ে ধরার মাধ্যমে। অথবা কোন প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতার মাধ্যমে। কোন মেসের এক ঘরে পাঁচজনের সাথে ছাদের নিচে চিত হয়ে শুয়ে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমরা প্রতি রাতে ঘুমিয়ে যাই।এভাবে করে অফিসের টেবিল কিংবা স্কুলের টিচারের টেবিল আর ঘরের সিলিং ফ্যান দেখতে দেখতেই একটি সময়ে এসে আমাদের গায়ের চামড়া কুঁচকে যায়। আমাদেরকে তখন দেখার মত কেউ থাকেনা। শেষে শরীরে স্থান করে নেয়া ছোট অসুখকে বড় করতে করতে একটি সময়ে আমরা আর সহ্য করতে না পেরে কাবু হয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাই...
আমাদের মৃত্যুর পর পাড়ার মসজিদগুলোতে অন্যদের মৃত্যুসংবাদে যতটা না সময় নিয়ে দোয়া করা হয়,কোন এক রহস্যময় কারনে আমাদের লাশটির জন্যে ততটা সময় নেয়া হয়না, বোধহয় পরকালে যেয়ে অন্তত যেন জান্নাত পেয়ে যাই সেটি সম্ভবত আমাদের ক্ষেত্রে একটু কম করেই চাওয়া হয়, সেটিও কোন এক রহস্যময় কারনে...
আমরা খুব রহস্যময় একটি প্রানী। আমরা খুব অদ্ভূতভাবে পৃথিবীতে আসি। জন্মাবার আগেই আমরা মৃত্যুভয়ে ভীত হই। অদ্ভূতভাবেই প্রায় একই ছকের দাসত্ব করতে করতে কখন যে একটির পর একটি বসন্ত পেড়িয়ে যেতে থাকে সেটি টের পাবার সময়টুকুও আমরা শেষমেষ হারিয়ে ফেলি। সে ছকেবাধা নিয়মেই আমাদের মৃত্যু হয়। আমাদের গল্পগুলো হাজারো গল্পের নিচে চাপা পড়ে মৃত্যুবরন করে এমনি করেই । হাতে গোনা যে কজন মানুষ আমাদের অন্য এক রহস্যময় কারনে আমাদের মনে রাখে কিছুদিন, তাদেরও একটি সময়ে এসে আর মনে রাখার প্রয়োজনবোধ হয়না..
যারা পারিবারিকভাবে নির্ধারন করা অন্য এক প্রবাসীর হাত ধরে যারা হারিয়ে যায়, তারাও তাদের জীবন থেকে আমাদের সাথে ২-৩ বছর কাটানোর সময়টুকুও ভুলে যায়.. প্রয়োজনবোধ হয়না আর মনে রাখার...
আমাদের কবরগুলোতেও তাই কারো আর যাওয়া হয়না।সেখানে গর্ত খুড়ে আস্তানা গড়ে তোলে কিছু গর্তে বাস করা ইদুরেরা । বছরের পর বছর উপড়ে জঞ্জাল জমতে জমতে একটি সময়ে এসে পুরো কবরটিই মাটির নিচে হারিয়ে যায়।
পৃথিবীতে আমাদের শেষ চিহ্নটুকুও মুছে যায় এমনি করেই.. .....
©somewhere in net ltd.