নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখালেখি করতে ভালবাসি।

শেখ শাকিল হোসেন

লেখালেখি করতে ভালবাসি।

শেখ শাকিল হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশন : প্রতিবিধান নাকি হুমকি?

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৫৮

স্বাস্থ্যখাত বর্তমানে আলোচনার তুঙ্গে। এই খাতে দূর্নীতি ও অসংগতি নিয়ে পত্রিকার পাতা খুললেই কিছু না কিছু অবশ্যই মিলবে। অস্পষ্ট অক্ষরে প্রেসক্রিপশন (ব্যবস্থাপত্র) লেখা তেমনই একটি অসংগতি। কি ভাবছেন? বড় বড় অসংগতি রেখে প্রেসক্রিপশন নিয়ে আমি কেন চিন্তিত? স্বাস্থ্যের মতো স্পর্শকাতর একটি খাতে বিন্দু পরিমান অসংগতিও সিন্ধু আকার ধারণ করতে পারে,যেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি। কিছুদিন আগে গ্রামে গিয়েছিলাম। এক সন্ধ্যায় গ্রামের এক মুরব্বী আমাকে ডেকে তার বাড়ি নিয়ে গেলো। শুরু হলো আপ্যয়ন,নিজের গ্রামেই নিজেকে আগন্তক মনে হচ্ছিল! কিছুক্ষণ পর মুরব্বী শহরের স্বনামধন্য এক ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে বললো, ‘বাবা,দেখো তো ডাক্তার কি লিখেছে? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। বাজারের ঔষধের দোকানে গেছিলাম কিন্তু,ওরাও কিছু বলতে পারলো না। তুমি একটু ঔষধের নামগুলো স্পষ্ট করে এই কাগজে লিখে দাওতো।’ আমি প্রেসক্রিপশনটা ৫-১০ মিনিট ধরে দেখেও ঔষধের নামটা উদ্ধার করতে পারলাম না। খুব লজ্জায় পড়ে গিয়েছিলাম! মুরব্বী জিজ্ঞেস করে, ‘কি হলো বাবা?’ আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকি আর তিনি আমার দিকে,দুজনেরই চোখে-মুখে অসহায়ত্বের ছাপ। ক্ষণিকের জন্য সত্যিই নিজেকে নিরক্ষর মনে হচ্ছিল।আমার মনে হয় কিছু কিছু ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশনের ভাষা সাধারণ মানুষ তো দূর,খোদ ইংরেজির অধ্যাপকের পক্ষেও উন্ধার করা কঠিন হয়ে যাবে! এমনও হয় যে,এক ডাক্তারের লেখা অন্য ডাক্তারই বুঝতে পারেনা।

ব্যবস্থাপত্রের লেখা বুঝতে না পারার কারণে ভুল চিকিৎসার আশঙ্কা থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট অব মেডিসিন (আইওএম) এর চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে,চিকিৎসকের ভুলের কারণে বিশ্বে বছরে সাত হাজার রোগী মারা যায়। ওষুধ দিতে ভুল নয়, হাতের লেখার কারণে ঘটছে এ বিপত্তি। প্রেসক্রিপশনে ডাক্তারদের হাতের লেখার অস্পষ্টতা নিয়ে নানা রকম রসিকতা চালু রয়েছে বাজারে। তবে, ডাক্তারদের হাতের লেখা খারাপ হওয়ার পরিণাম যে এত মারাত্মক হতে পারে তা বোঝা যায়নি। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হলেও তেমন কোনো পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়নি। ডাক্তাররা রোগীদের প্রতি যে নির্দেশনা দেন তা প্রায়ই বুঝতে ভুল করেন রোগীরা। ডাক্তারদের হাতের লেখা খারাপ হওয়াই এটার কারন। যে ওষুধ দিনে দুইবার খাওয়ার কথা ভুলে তা সপ্তাহে দুবার খেয়ে বসেন। কিংবা সকালের ওষুধটি খান রাতে। ফলে ঘটে বিপত্তি। ফার্মেসি কর্মীরাও অনেক সময় ডাক্তারদের হাতের লেখা বুঝতে না পেরে ভুল ঔষধ দিচ্ছে রোগীকে। ফার্মেসিগুলোতে একটু খোঁজ নিলেই আপনি তাদের সরল স্বীকারোক্তি পাবেন।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী দেশে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার নিবন্ধিত ফার্মেসি রয়েছে। এগুলো ছাড়াও আরো কয়েক লক্ষ অনিবন্ধিত ওষুধের দোকান রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। অথচ দেশের বেশির ভাগ ফার্মেসিতে বিক্রয় প্রতিনিধি অষ্টম শ্রেণী, এসএসসি কিংবা এইচএসসি পাস। ডাক্তারদের অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশন যেখানে অন্য ডাক্তাররাই অনেক সময় বুঝতে পারেন না,সেখানে আমাদের মতো সাধারণ জনগণ কিংবা স্বল্পশিক্ষিত বিক্রয়কর্মী সেটা কিভাবে বুঝবে? উচ্চ আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে যে, প্রেসক্রিপশন স্পষ্টাক্ষরে ‘পড়ার উপযোগী করে’ লিখতে হবে। জেনেরিক নামসহ ব্লক লেটার বা প্রিন্ট করার মাধ্যমে প্রেসক্রিপশন লেখার আদালতের নির্দেশটিও আমাদের বেশিরভাগ চিকিৎসকরা মেনে চলছেন না।

করণীয় কি? প্রথমত,চিকিৎসকদের জনস্বার্থে কিংবা অন্তত আদালতের নির্দেশ মানার জন্য হলেও প্রেসক্রিপশন স্পষ্টাক্ষরে ব্লক লেটারে লিখতে হবে। দ্বিতীয়ত, যেসব ফার্মেসিগুলোতে ফার্মাসিস্ট নেই সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে সচেষ্ট হতে হবে,প্রয়োজনে প্রশাসনের তদারকি বাড়াতে হবে। তবে,মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারির পর স্বাস্থ্যখাতে সংগতি ফিরতে শুরু করেছে। তাই,আশা করতেই পারি অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশন লেখার প্রবনতাও শ্রীঘ্রই উবে যাবে।
- Shakil Hosen

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.