![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হাউ ম্যানি ইয়ারস ক্যান সাম পিপল এগ্সিস্ট বিফোর দে'র আ্যলাউড টু বি ফ্রি............
কে না চিনে এই প্রতিথযশা আপাদমস্তক ভদ্র মানুষটিকে। আমার জন্মস্থান নবীগঞ্জের সূর্যসন্তানদের মধ্যে কিবরিয়া সাহেব অন্যতম শ্রেষ্ঠ। কিবরিয়া সাহেব তখন তার দীর্ঘ সরকারী চাকুরী থেকে অর্থ সচিব হিসেবে অবসর গ্রহন করে রাজনীতিতে যোগদান করেছেন। যোগদান পরবর্তী সময়ে তিনি তার নিজ এলাকা নবীগঞ্জে এলে একটু ঘরোয়া টাইপের মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হলেন। তৎকালীন নবীগঞ্জ নতুন বাজারে অবস্থিত আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মধুবন এম্পোরিয়ামের সন্নিকটে ভাঙাচোরা এক ঘরে সেই মতবিনিময় সভা হচ্ছিলো। কিবরিয়া সাহেবকে দেখার জন্য মানুষ দূর দুরান্ত থেকে এসেছে। সবার মাঝে কৌতুহল আমাদের এলাকার এক সোনার ছেলেকে এক নজর দেখার জন্য।
ঘটনাক্রমে সেদিন আমি দোকানেই ছিলাম। আমি হয়তো তখন ক্লাস ফাইভ/সিক্সের ছাত্র। আমাদের দোকানে এক ভদ্রলোক তখন নিয়মিত আসতেন। আব্বার সাথে গল্প করতেন। শান্তিপাড়ায় তার হোমিওপ্যাথি চেম্বার ছিলো। আমি তার পুরো নাম না জানলেও তাকে চিনি বখত সাহেব হিসেবে। বখত সাহেব আমার কাছে এক জিবন্ত ইতিহাস ছিলেন। সম্ভবত তিনি নবীগঞ্জের প্রায় সব মানুষের বাবা চাচা সবাইকেই চিনতেন, জানতেন। মহুর্তেই বলে দিতে পারতেন তাদের পারিবারিক ইতিহাস। রাজনীতিতেও তার ছিলো পদচারনা। অসাধারন বাকপটু এই মানুষটিকে আমি খুব ভালোবাসতাম। বখত সাহেব সেদিন একটা একটাকার নোট বের করে আমাকে বললেন দেখতো এই নোট টা তে কার দস্তখত দেয়া আছে। আমি দেখলাম বাংলা টানা টানা অক্সরে লেখা শাহ এ এম এস কিবরিয়া। তিনি তখন আমাকে বললেন এই নোটা টাতে তুমি যার নাম দেখছ সেই কিবরিয়াই হচ্ছেন তোমার থেকে ২০ গজ দূরে প্রধান অথিতির আসনে বসা কিবরিয়া। ইনি আমাদের নবীগঞ্জের এক কৃতীসন্তান।
জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে আজীবন জড়িত বখত সাহেব তখন স্মৃতি রোমন্থন করতে লাগলেন। বলতে লাগলেন এই কিবরিয়া হচ্ছেন সেই কিবরিয়া যার বগলে সবসময় থাকতো একটা ছাতা আর একটা বই। রোদ- বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য ছাতা আর পড়ালেখার জন্য বই। পড়া লেখাই ছিলো এই লোকটির দিনের খাবারের মতো অপরিহার্য। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে কিবরিয়া সবসময় মুখস্থ পড়া মনে করে করে হাটতেন যখনই ভুল হতো সাথে সাথে বই বের করে শুধরে নিতেন। পড়ালেখায় কঠিন অধ্যাবসায়ী ছিলেন। আর তার এই অধ্যাবসায়ের পরবর্তী ইতিহাস সারা বাংলাদেশ জানে।
আজ হঠাৎ করে কিবরিয়া সাহেবকে খুব মনে পড়ছে। সংবাদ পত্রের কোন এক কোনায় অবহেলার সাথে প্রকাশ হবিগঞ্জে কিবরিয়া সাহেবকে নিয়ে এক স্মরন সভা হয়েছে। তারপর আমারো পুরোনো দিনগুলো হঠাৎ মনে পরে গেলো। কিবরিয়া সাহেবের সাথে আমার কখনোই দেখা হয়নি। কিবরিয়া সাহেবের আদর্শ আর আমার আদর্শ এখনো ভিন্ন বলেই মনে করি। দীর্ঘদিন ঢাকায় তার বাসার খুব কাছাকাছি বাসায় থেকেছি। কিন্তু কোনদিন তার সাথে দেখা করিনি কিংবা করতে ইচ্ছাও হয়নি। তবুও তার সাথে আমার এক ধরনের যোগাযোগ ছিলো। মৃদুভাষনে তার চিন্তাশীল লেখাগুলো পড়তাম। বিভিন্ন সভা সেমিনারে তার বক্তব্যের যে নির্যাসটুকু সংবাদ পত্রে ছাপা হতো তা পড়তাম। রাজনীতিতে তার পদচারনা ও রাজনৈতিক পরিবর্তনে তার অংগীকারের খবর রাখতাম। নিজ এলাকার শিক্ষিত একজন মানুষের জন্য শ্রদ্ধা ছিলো অপরিসীম, বন্ধু মহলে তাকে নিয়ে গর্বও করতাম। এই ছিলো কিবরিয়া সাহেবের সাথে আমার যোগাযোগের মাধ্যম।
তখন ছিলো উৎসবের আমেজ। পবিত্র ঈদের শুভ্র সুন্দর উচ্ছাসে বইছে আনন্দ হাওয়া চারিদিকে। সারা বাংলাদেশ উৎসবে মেতে উঠেছিলো। কিন্তু এমন পবিত্র সময়েও দুষ্কৃতিকারীরা, ষড়যন্ত্রকারীরা অন্য এক সুনিপুন খেলায় মত্ত ছিলো। অজ পাড়া গাঁয়ের কর্মীদের আব্দার ও ভালোবাসা মূল্য দিতে গিয়ে কিবরিয়া সাহেব ছুটে গিয়েছিলেন হবিগঞ্জের বৈদ্যের বাজার বিদ্যালয়ের সভায়। সভাশেষে কিবরিয়া যখন বিদ্যালয়ের গেট দিয়ে বের হচ্ছিলেন তখনই তার উপর ঘাতকেরা হামলা করলো। সে কোন সাধারন হামলা নয়, যেই সেই হামলা নয়। গ্রেনেড হামলা। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এরকম গ্রেনেড হামলা বিরল ঘটনা। মুহুর্তেই সারাদেশ স্তব্ধ। হবিগঞ্জের মানুষ সেদিন বোবা হয়ে গিয়েছিলো। পাথর শোকে মুহ্যমান নবীগঞ্জ সেদিন গুমড়ে গুমড়ে কাঁদছিলো। আমরা যে যেখানে ছিলাম সেখান থেকে মূহুর্তেই বের হয়ে নবীগঞ্জ বাজারে ভীর জমাতে শুরু করলাম। ঘটনার শুরু শেষ কিছুই যেন বুঝতে পারছিনা। কি করবো, কি হবে কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না। অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম দল মত নির্বিশেষে বিএনপি, আওয়ামীলীগ, জামায়াত, জাতীয় পার্টি ভুলে গিয়েছিলো দলীয় রেষারেশি। শোকে স্তব্ধ সবাই। একোন খেলা শুরু হলো? মৃত কিবরিয়া সাহেব সেদিন সব দলের ও সব মতের মানুষ হয়ে গেছিলেন। পরদিন কিবরিয়া সাহেবের ভাতিজা শাহ মঞ্জুর মরদেহ নিয়ে স্মরনকালের বৃহত্তম এক জানাজা অনুষ্টিত হয় নবীগঞ্জ নতুন বাজার মোড়ে। সেদিনও দল মত নির্বিশেষে মানুষের জমায়েত দেখে মনে হয়েছিলো এই মানুষটিকে কত ভালোবাসতো নবীগঞ্জবাসী।
কেন কিবরিয়া হত্যাকান্ড? এক অন্তহীন প্রশ্ন আমার কাছে। আমি আজো এর কোন উত্তর খুঁজে পাইনা। এই প্রশ্নের উত্তর খোজাটা আমার থেকে বেশী জরুরী ছিলো সরকার ও আইন শৃংখলা বাহিনীর। হায় আমরা এমনই এক দেশে বসবাস করি যে দেশে তার সোনার সন্তানদের খুন করা হয় কিন্তু বছর বছর চলে যায় বিচারতো দুরের কথা সুষ্ঠু তদন্তই হয়না। কিবরিয়া হত্যাকান্ড সাধারন কোন রাজনৈতিক হত্যাকান্ড নয় বলে মনে করি। এটা কোন দলীয় মিছিল মিটিং বা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার রাজনৈতিক কালচারের রেশ থেকেও হয়নি বলে বিশ্বাস করি। কিবরিয়া সাহেবের উপর গ্রেনেড হামলা বাংলাদেশ বিরোধী, সরকার বিরোধী, শান্তি বিরোধী কোন গোষ্টির সাজানো, সুশৃঙ্খল সিলেক্টেড কিলিং এর অংশ বলেই প্রতীয়মান হয়। আজ যেমন করে প্রতিদিন বিরোধীদলীয় নেতা কর্মীদের র্যাব-পুলিশ পরিচয় দিয়ে গুম করে কিংবা খুন করে সিলেক্টেড কিলিং হচ্ছে। কিবরিয়া হত্যাকান্ড সেদিনকার কোন গোষ্টির এমনই এক সুনিপুন চক্রান্তের অংশ ছিলো। যার ফলশ্রুতিতে সেদিন ঘাতকের গ্রেনেডের আঘাতে তিনটি তাজা প্রান ঝরে গেয়েছিলো।
সময় গড়িয়ে যায় সময়ের পরিক্রমায়। কিন্তু আজো কিবরিয়া পরিবার এই ভয়ানক হত্যাকান্ডের কোন বিচার পায়নি। আওয়ামীলীগ সরকারে থাকা অবস্থায়ও আওয়ামীলীগের একজন একনিষ্ট নেতা হত্যার বিচার হয়নি এটা কিবরিয়া পরিবারের জন্য নিঃসন্দেহে গ্লানির আর আমাদের জন্য লজ্জার। এ থেকেই প্রমানিত হয় বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এখনো কতদূর। আজ দেশ জুড়ে যে অরাজকতা চলছে তার মূলে রয়েছে আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্টায় আমাদের ব্যর্থতা।
আজ কিবরিয়া সাহেবের ৯ম মৃত্যবার্ষিকী। আমার খুব মনে পড়ছে ক্ষনজন্মা প্রচন্ড ধীশক্তির অধিকারী আমার এলাকার এই সূর্যসন্তানকে। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সাথে স্মরন করছি আপাদমস্তক প্রজ্ঞাবান এই ভদ্রলোক জনাব কিবরিয়াকে। অপেক্ষা করছি সেদিনের যেদিন কিবরিয়া হত্যাকারীদের বিচার হবে। দেশে প্রতিষ্ঠিত হবে আইনের শাসন, প্রত্যেকটি গুম খুনের বিচার হবে পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব নিয়ে। দেশ দায়মুক্ত হবে রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের এই অভিশাপ থেকে। আমরা তরুনেরা পাবো কিবরিয়া হওয়ার প্রেরনা।
পাদটিকা:
বখত সাহেব সেদিন আরো বলেছিলেন, কিবরিয়ার মতো অধ্যাবসায়ী হও। জিবনে সফলতা আসবেই। কিবরিয়ার মতোই প্রতিষ্ঠিত হবে। সারাদেশ তোমাকে শ্রদ্ধা করবে, ভালোবাসবে। অবাক হয়ে ভাবি বখত সাহেবর কথা কতইনা সত্য। কিবরিয়া সাহেবকে সারাদেশ এখনো ভালোবাসে, এখনো শ্রদ্ধা করে।
[উল্লেখ্য যে ২০০৫ সালের ২৭ শে জানুয়ারী শাহ এ এম এস কিবরিয়া শাহাদাত বরন করেন]
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:০৯
ব্লগ মাফিয়া বলেছেন: আমাদের দোকানটা আর নাই যে ভাই। তাও দাওয়াত থাকলো।
সত্যি সত্যি নবীগঞ্জ কখনো গেলে আওয়াজ দিয়েন।
২| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৩৫
খেয়া ঘাট বলেছেন: তিনি তখন আমাকে বললেন এই নোটা টাতে তুমি যার নাম দেখছ সেই কিবরিয়াই হচ্ছেন তোমার থেকে ২০ গজ দূরে প্রধান অথিতির আসনে বসা কিবরিয়া। ইনি আমাদের নবীগঞ্জের এক কৃতীসন্তান।
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মহান রাব্বুল আলামীন উনাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন। আমিন।
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:২৬
ব্লগ মাফিয়া বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ খেয়া ঘাট ভাই।
নিশ্চয় তিনি তার উত্তম কাজের প্রতিদান পাবেন মহান আল্লাহর দরবারে। আমিন।
৩| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:২৭
ব্লগ মাফিয়া বলেছেন: মামুন রশিদ ভাই আপনি কোন এলাকার লোক?
৪| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৬
পাঠক১৯৭১ বলেছেন: শেখ সাহেবকে হত্যা করা হয়েছে, সেই ধারাবাহিকতায় কিবরিয়া ও হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে: বাংগালীরা 'রাজনীতি' করে না, হতয়া করে দেশ দখল করে।
১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:১৬
ব্লগ মাফিয়া বলেছেন: শেখ সাহেবকে হত্যা করা হয়েছে, সেই ধারাবাহিকতায় কিবরিয়া ও হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে:
আমি ঠিক বুঝি নাই এই ধারাবাহিকতাটা ক্যানো একে অপরের সাথে প্রাসংগিক মনে হলো আপনার কাছে।
শেষের অংশের সাথে একমত আছি।
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৩৪
মামুন রশিদ বলেছেন: শাহ এএমএস কিবরিয়ার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ।
আপনার দোকান তো চিনে ফেললাম ভাই । আসবো নাকি একদিন চা খেতে ? ভাল থাকবেন আমার নিকট প্রতিবেশি নবীগঞ্জই ভাই ।