নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি না হয় পাখী হলাম, পাখীর মতো বন্য....

ব্লগ মাফিয়া

হাউ ম্যানি ইয়ারস ক্যান সাম পিপল এগ্সিস্ট বিফোর দে'র আ্যলাউড টু বি ফ্রি............

ব্লগ মাফিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

হেভেন চৌধুরী হত্যা: নবীগঞ্জের রাজনীতিতে এক কালো অধ্যায়ের সূচনা

০৩ রা মার্চ, ২০১৪ রাত ৩:১৮

স্থানীয় রাজনীতির বাইরে ছিলাম



আমি সাধারনত নবীগঞ্জের রাজনীতি নিয়ে কিছু লিখিনা। নবীগঞ্জের রাজনীতির হাল চাল রকমফের কিছুই আমি গায়ে মাখতে চাইনা। কিন্তু মানুষ হিসেবে আমি খুবই রাজনীতি সচেতন। স্কুল জিবন থেকেই বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ছাত্র সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলাম। কলেজে ভর্তির সাথে সাথেই কঠিন কিছু দ্বায়িত্বও পালন করেছি। সে হিসেবে অনেকের কাছেই আমি ছিলাম পটেনশিয়াল এক কর্মী। কিন্তু সত্যিকার অর্থে রাজনীতিতে ক্যারিয়ার গড়ার বিষয়টি আমাকে তেমন টানেনি। তাই হয়তো যখনই সিলেট থেকে বাড়ি্তে আসতাম তখন নিজেকে গুটিয়ে রাখতাম। পুরানো বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা আর ঘরের ত্রিসীমানার মধ্যেই। নিজেকে কখনোই স্থানীয় রাজনীতিতে জড়াইনি। এটারঅন্য একটা কারন থাকতে পারে যে বাবা সদরের প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক তার ইজ্জত সম্মানের সাথেও হয়তো ব্যাপারটা যায়না। তবে নবীগঞ্জের সেরা তরুনদের নিয়ে সাহিত্য ও সামাজিক উন্নয়ন মূলক কাজ ঠিকই করেছি।



অন্যতম নেতাদের পরিচিত মুখগুলো




নবীগঞ্জের স্থানীয় রাজনীতি আমি দেখে আসছি অনেক ছোট বেলা থেকেই। আমাদের বাসা থেকে নতুন বাজার মোড় ছিলো ২০/৩০ গজের মধ্যেই। সে হিসেবে আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি তখন থেকেই নবীগঞ্জের সকল অন্যতম নেতাদের নাম ধাম, কে কেমন বক্তৃতা করেন তা মুখস্থ হয়ে গিয়েছিলো। আমার মনে পরছে আমি একদিন আমার আব্বাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। আব্বা একটা দলে অন্যতম নেতা কতজন থাকেন। কারন সেদিন আওয়ামীলীগের এক সভায় কমপক্ষে ১৫/২০ জন অন্যতম নেতা বক্তৃতা করেছিলেন। তো এই সব অন্যতম নেতাদের ভীরে অনেকের বক্তৃতাই নবীগঞ্জবাসীকে আকৃষ্ট করতো, তারা অনেকেই আজ হয়তো নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফলতার উজ্জল সাক্ষর রেখে চলেছেন। সে বিষয়ে অন্য একদিন পোস্ট দিবো ভাবছি। আমাদের হোটেল মধুবন ও আরজু হোটেল ছিলো নবীগঞ্জের সকল রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। সে হিসেবে নেতা ছাত্রনেতা সবাই আমাকে চিনতেন নানা'র পরিচয়ে, বাবার পরিচয়ে। অনেকে অনেক সময় ডেকে আদর করেছেন। এটাও হয়তো আরো একটা কারন যে নবীগঞ্জের স্থানীয় রাজনীতিতে আমি কখনোই পরিচিত হতে চাইনি।



পেশী শক্তি নির্ভর রাজনীতি




বাংলাদেশে আমরা যে ধারার রাজনীতি সূদীর্ঘ সময় ধরে দেখছি তা আদর্শ ও জ্ঞান চর্চার চেয়ে পেশী শক্তির উপর বেশী নির্ভরশীল। তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলোতে যেখানে সরকারী ইনস্টিটিশনগুলো শক্তিশালী নয়, যেখানে পুলিশ, নির্বাচন কমিশনসহ জনগুরুত্বপূর্ন প্রতিষ্ঠানগুলো জবাবদিহিতার আওতার মধ্যে প্রায় নেই সেখানে পেশী শক্তির জয়জয়কার হবে এটাই স্বাভাবিক। তারপরও বাংলাদেশে বিভিন্ন দলের স্থানীয় রাজনীতি সাধারনত পরষ্পর ভ্রাতৃত্ববোধ, স্নেহ, মমতা ও ভালোবাসার বন্ধনে চলে আসছিলো দীর্ঘদিন ধরে। দলীয় পরিচয়ের চেয়ে উর্ধে ছিলো ছিলো এলাকা, এলাকার সম্মান, অমুকের ছেলে তমুকের ভাই ইত্যাদি পারষ্পরিক বোঝাপড়ার মতো বইষগুলো। দলীয় মত, পথ যাই থাকুকনা কেন মুরুব্বীদের কথা শুনা একটা প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। যে কারনে কোন ধরনের মনো-মালিন্য, ঝগড়াঝাটি বড় আকারে রূপ নেয়ার পূর্বেই আপোস-মীমাংসা ইত্যাদির মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলা হতো। কতোইনা সুন্দর ছিলো সে প্রথা। কিন্তু সময়টা এখন প্রথা ভাঙ্গার, নিয়ম ভাঙ্গার সে যতই ভালোই হোক না কেনো। মুরুব্বীরা হয়তো এখন তরুন যুবকদের শাসন করার ক্ষেত্রে অবাঞ্চিত। আজকাল যুবকেরা যেভাবে অস্ত্র হাতে ঘুড়ে বেড়ায় তাতে হয়তো মুরুব্বিরাও তাদের সমীহ করে চলেন।



তখনকার সুদিনগুলো



একবার হলো কি। আমি আর সুদীপদা নতুন বাজার মোড়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছি। হঠাৎ করে কয়েকটি ছেলে তর্কাতর্কি করে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লো। সুদীপদা আমার দিকে একবার তাকিয়ে দৌড়ে ওদের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালেন। খুব মেজাজ দেখিয়ে সাবধান করে দিলেন তারা যেনো আর মারামারি না করে। দু একজন তারপরও একটু হম্বি তম্বি করছিলো। শেষে আবারো নিষেধ করার পর চলে গেলো। আমি একটু অবাকই হলাম। বাহ বেশতো ছেলেগুলো। এক বড় ভাইয়ের মধ্যস্থতায় সুন্দরভাবে হাতাহাতি থেমে গেলো। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। নিজের এলাকায় এমন বিরল দৃশ্য দেখতে কার না ভালো লাগে। কিন্তু আজ আমি আতংকিত হয়ে ভাবি নবীগঞ্জ বোধহয় সেই সুন্দর সোনালী দিন হারিয়ে ফেলেছে। যেখানে আজ এখন রাজনৈতিক হানাহানিতে কোমলমতি ছাত্রদের প্রানঘাতি ঘটনাও ঘটতে পারে।



নস্ট রাজনীতি দিচ্ছে নতুন পরিচয়




হেভেনের পরিচয় যতটা না একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী তার চেয়ে লক্ষ গুন বেশী একজন মানুষ হিসেবে। কি এমন কারন ছিলো যার বলি হতে হলো হেভেন কে? দল, দলের পোস্ট, বড় পোস্ট, ছোট পোস্ট, কলেজে প্রভাব, এলাকায় প্রভাব ইত্যকার যাবতীয় মামুলী বিষয়সমূহ। তাই বলে একটা তরুন তরতাজা ছেলেকে খুন হতে হবে? মানতে পারলাম না। মানতে পারলাম না এটা নবীগঞ্জ বলেই। মানতে পারলাম না নবীগঞ্জের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে অসামঞ্জস্য বলেই। এই খুন যদি নীলফামারী, লালমনিরহাট, সাতক্ষীরা, সীতাকুন্ড ইত্যাদি অঞ্চলে যেখানে নিত্যদিন-হরহামেশা পুলিশের গুলিতে পাখিরমতো মানুষ মারা যাচ্ছে, সেখানে হতো তাহলে হয়তো বলতাম অনেক গুলো রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতায় আরো একটি হত্যাকান্ড। কিন্তু আমার নবীগঞ্জ, আমাদের নবীগঞ্জে এমন রক্তাক্ত, ক্ষত-বিক্ষত, নষ্ট রাজনীতির বলি হয়ে তাজা খুন ঝড়বে? এ কোন কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।



পিতার কাঁধে একমাত্র সন্তানের লাশ



হেভেনকে ব্যাক্তিগত ভাবে আমি চিনিনা। আমার চেনার খুব প্রয়োজনও ছিলোনা। কিন্তু নষ্ট রাজনীতি হেভেনকে এমনভাবে চিনিয়ে দিলো যা আমরা কোনদিনই চাইনি। হেভেন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। আমি জানি, খুব ভালো করেই জানি সন্তানহারা মায়ের বুক ফাটা চিৎকার উর্ধাকাশ ভেদ করে কত দুরে বিস্তৃত হয়ে ইশ্বরের ঘরে আঘাত হানতে পারে। আমি দেখেছি নিজ সতীর্থের লাশের উপর তার স্বজনের কান্না তাই খুব ভালো করেই জানি সন্তানের লাশ কাঁধে নিয়ে গোরস্থানের দিকে যাওয়া একজন পিতার জন্য কতটা দূর্ভাগ্যের। নষ্ট রাজনীতির শিকার বন্ধুর লাশ নিয়ে গ্রামের পথ ধরে হাঁটা কত কষ্টের।



একটি ঐতিহ্যের মৃত্যু



আজ নবীগঞ্জের ঐতিহ্য ভুলন্ঠিত হলো। আজ নবীগঞ্জের সম্মান নষ্ট হলো। খুনের রাজনীতির সূচনা হলো। রাস্ট্র কি দায় এড়াতে পারে? নবীগঞ্জের নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক মুরুব্বীরা কি দায় এড়াতে পারবেন? রাস্ট্র কি কোন জবাব দিবে কেন, কি কারনে এক শান্ত জনপদে কোমলমতি ছাত্র হত্যার মাধ্যেমে অশান্ত হয়? আজ আইন শৃঙ্খলার অবনতি, দলীয় প্রভাব, আইনের শাসনের অভাব, ক্ষমতা অবৈধভাবে আঁকড়ে থাকার মনোভাব ইত্যাদি বিষয়গুলো যেভাবে সমাজে বাসা বাঁধছে তা আমাদের জন্য সমাজ-গঠন নয় বরং সমাজ বিনষ্টের পথ তৈরি করে দিচ্ছে। আর এজন্যই আমরা প্রতিনিয়ত হেভেনের মতো তাজা প্রানগুলোকে হারাতে থাকবো

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:২৪

মামুন রশিদ বলেছেন: আসলে হেভেনরা নষ্ট রাজনীতির শিকার ।

আপনার এলাকার রাজনীতির ঐতিহ্য বিশ্লেষণ ভালো লাগল । নাগরিক সাংবাদিকতার একটা চমৎকার উদাহরণ হতে পারে এই পোস্ট । মাঝে মাঝে লিখবেন ।

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:২০

ব্লগ মাফিয়া বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ মামুন ভাই।

যার সাথেই কথা বলেছি, সবাই খুব শোকাহত। কারন ভিন্নমতাবলম্বীদের মাঝেও যেখানে আন্ডার্স্ট্যান্ডিং আছে সেখান ছাত্রলীগের নিজেদের কোন্দলে এমন হত্যাকান্ড পুরো নবীগঞ্জবাসীকে স্তব্ধ করে দিয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.