নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অধিকার চাই, সুযোগ নয়গ

বীেরন্দ্র

প্রগিতশীল, মুক্তমনা, সমঅধিকার এবং মানবতাবাদে বিশ্বাসী

বীেরন্দ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

আইসিটি আইনকে বিপজ্জনক করা হচ্ছে কার স্বার্থে?

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৪

বিগত চারদলীয় জোট সরকারের শেষ সময়ে তৎকালীন সংসদের সর্বশেষ অধিবেশনে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬’ পাশ হয়। এর আগে থেকেই যুগের প্রয়োজনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতসহ সংশ্লিষ্ট সবাই এ ধরনের আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাই অনেক কর্মকাণ্ডের জন্য তৎকালীন সরকার ও সরকারি দলকে অপবাদ দেয়া হলেও তাদের মেয়াদের শেষকালে এসে আইসিটি আইন পাশের পর এ নিয়ে কমবেশি সবাইকে খুশি হতে দেখা যায়। তবে সে সময় উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গোটা দেশ ও জাতি ব্যতিব্যস্ত ও উদ্বিগ্ন থাকার কারণে এ আইন নিয়ে তখন কেউ ততটা ঘাটাঘাটি করেন নি। পরবর্তী দুই বছর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশ শাসন করার ফলে ২০০৯ সালের আগে আইনটির তেমন কোন প্রয়োগ হয়নি বিধায় এর জনবিরোধী বা জনক্ষতিকর দিকগুলো কারো গোচরীভূত হয়নি। যদিও বর্তমান সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনে ২০০৯ সালের ৯ জুলাই আইসিটি আইনের ১৮ ধারার একটি সংশোধনী বিল পাশ করা হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে মূলত নিয়ন্ত্রক ও সার্টিফিকেট প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের নিয়োগদান বিধি পরিমার্জন করা হয়, অর্থাৎ এই সংশোধনীতে জনসংশ্লিষ্টতার কিছু নেই। তাই এ নিয়ে কোন মহেল থেকে কোন টুশব্দটি হতে দেখা যায়নি। তবে বর্তমান মহাজোট সরকার ও সংসদের শেষ সময়ে এসে বিদ্যমান আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার সংশোধনীর উদ্যোগ নিয়ে নানা মহলে হৈচৈ পড়ে গেছে, এর বিরুদ্ধে সভা-সেমিনার ও প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে। উল্লেখ্য, আ্ইসিটি আইনের ৫৭ ধারা সংশোধনীর প্রস্তাব ইতোমধ্যে মন্ত্রিসভায় পাশ হয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া বর্তমান সংসদের সর্বশেষ অধিবেশনের যে কোন দিন এটি বিল আকারে উত্থাপিত হলে তা পাশ হয়ে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার প্রয়োগের ফলে সংশ্লিষ্টদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠবে।



৫৭ ধারায় বর্তমানে যা উল্লেখ রয়েছে তা-ই অনেকটা বিজ্জনক, যেমনটি এ ধারায় বলা হয়েছে- “৫৭। ইলেক্ট্রনিক ফরমে মিথ্যা, অশ্লীল অথবা মানহানিকর তথ্য প্রকাশ সংক্রান্ত অপরাধ ও উহার দণ্ড- (১) কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েব সাইটে বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্রে ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানী প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ। (২) কোন ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি অনধিক দশ বৎসর কারাদণ্ডে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।”



স্পষ্টত এমনিতেই আইনের এ ধারাটি মারাত্মক, এটিকে কঠোর করার জন্য আবার কী সংশোধনী আনার প্রয়োজন পড়ল? সরকারের সংশ্লিষ্ট জনৈক আমলাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান বর্তমানে আইনের এ ধারা প্রয়োগ করতে হলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়, অর্থাৎ তাদের ভাষায়- আইসিটি আইনের বিদ্যমান ৫৭ ধারা নন-কগনিজ্যাবল বিধায় এটি দুর্বল(!), সংশোধনীর মাধ্যমে এটিকে কগনিজ্যাবল করার মাধ্যমে এটিকে সবল(!) করা হচ্ছে। সরাবত্তা হচ্ছে- আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার সংশোধনী সংসদে পাশ হওয়ার পর কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কোন আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে না, অর্থাৎ আদালত কর্তৃক কোন প্রকার সমন জারি ছাড়া তারা চাইলেই যে কারুর বিরুদ্ধে এফআইআর রেজিস্ট্রেশন ও তদন্ত করা এবং তাকে আটক করতে পারবেন। কী সর্বনেশে কথা! এমনিতেই আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মহাক্ষতাধর, তার উপর আবার আইসিটি আইনের ৫৭ ধারাকে কগনিজ্যাবল করে তাদের হাতে আইনের আরেকটি ক্ষুরধার অস্ত্র তুলে দেয়া হচ্ছে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে অপারগ হলেও তা অপপ্রয়োগে যে তারা সিদ্ধহস্ত তাতো বাংলাদেশের সর্বত্র নিত্যদিনের ঘটনা। সঙ্গত কারণেই আইসিটি খাতসহ সংশ্লিষ্টরা যারপর নাই উদ্বিগ্ন হয়ে এই সংশোধনী বিলের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তারা শুধুমাত্র ৫৭ ধারার সংশোধনী বিল প্রত্যাহারই নয়, গোটা ৫৭ ধারাটিরও বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন।



জনগণ কোন রাজনৈতিক দল, জোট বা মহাজোটকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে এই প্রত্যাশায় যে, আইন-কানুন প্রণয়ন এবং সেসবের প্রয়োগ হবে তাদেরই অনুকূলে, প্রতিকূলে নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সবকালেই কিছু-কিছু আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কোন সরকারই জনগণের এই মৌলিক প্রত্যাশার দিকে ভ্রূক্ষেপ করে না। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা হচ্ছে এরই প্রকৃষ্ট একটি উদাহরণ। বিগত চারদলীয় জোট সরকার মেয়াদের শেষ সময়ে আইন প্রণয়নে এ ধারাটি কঠোর করে রেখে গেছে। এ ক্ষেত্রে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে- ঐ সরকারের অসম্পন্ন কাজ বর্তমান মহাজোট সরকার সম্পন্ন করছে। এর মাধ্যমে আইসিটি আইনকে বিপজ্জনক করা হচ্ছে কার স্বার্থে? সকলের মনে রাখা প্রয়োজন- কোন দল বা জোটই চিরস্থায়ীভাবে সরকারে থাকবে না। তাই আজ যারা একটি আইন সংশোধন করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে অসীম ক্ষমতা দিয়ে যাচ্ছেন, আগামীতে কোন না কোন সময়ে সেটি তাদের বিরুদ্ধেই কারণে-অকারণে প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ হতে পারে- বিষয়টি কি একবারও তারা ভেবে দেখেছেন? তাছাড়া, একান্তই যদি আইসিটি আইনের বিদ্যমান ৫৭ ধারায় কাউকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করা সম্ভব না হয়, তা’হলে বিদ্যমান বিশেষ ক্ষমতা আইনেই সে কাজটি করা যেতে পারে। এসব কিছু বিবেচনায় রেখে আইসিটি আইনের সংশোধনের জন্য প্রস্তাবিত বিল সংসদে পাশ করা থেকে বিরত থাকার জন্য সংসদ সদস্যদের প্রতি অনুরোধ রইল। অন্যথায় এটি একটি কালো আইনে পরিণত হবার দায় তাদের কাঁধেই বর্তাবে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:০৯

সাদরিল বলেছেন: নেক কিছু কানলাম। পোস্ট ফেভারিটে নিলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.