![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রথম দৃষ্টিতে আমাদের দেশের বহেড়া ফল বলে ভ্রম হতে পারে। আসলে এর নাম ‘বেরি ফল’। বিশ্বে একমাত্র অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড প্রদেশের দূরবর্তী উত্তরাঞ্চলে ব্লাশউড নামক বৃক্ষে এই ফল জন্মে। বেরি ফলের দ্রুত ক্যান্সার নিরোধক গুণাগুণ দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সে দেশটির বিজ্ঞানীরা। কুইন্সল্যান্ডের রাজধানী ব্রিসবেনে অবস্থিত কিউআইএমআর বারগোফার মেডিকেল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডা: গ্লেন বোয়েলের নেতৃত্বে আট বছর ধরে পরিচালিত গবেষণায় বেরি ফলের মধ্যে এক ধরণের যৌগপদার্থের অস্তিত্বের সন্ধান পান বিজ্ঞানীরা। এই যৌগপদার্থই মূলত মাথা এবং ঘাড়ের টিউমার বা মেলিগন্যান্সি ধ্বংস করে দেয়।
বেরি ফল থেকে নির্যাসকৃত ইবিসি-৪৬ নামাকৃত ওষুধ পরীক্ষামূলকভাবে বিড়াল, কুকুর এবং ঘোড়াসহ ৩০০ প্রাণীর উপর ব্যবহার করা হয়। এতে ৭৫% টিউমার অদৃশ্য হয়ে যেতে দেখা গেছে এবং সেগুলো পুনরায় বেড়ে উঠছে না।
উল্লেখ্য, বেরি ফলের বীজের মধ্যে বিদ্যমান এক ধরণের যৌগপদার্থ বীজ থেকে আলাদা এবং বিশুদ্ধ করার প্রক্রিয়াটি খুবই জটিল। কারণ, এটি আসলে বীজের নির্দিষ্টি কোন অংশে অবস্থান করছে তা এখনও জানতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। সে যাহোক, যৌগপদার্থটি মূলত তিনটি উপায়ে কাজ করে, যথা- এটি সরাসরি টিউমার কোষ ধ্বংস করে, টিউমারে রক্ত সরবরাহ বন্ধ করে দেয় এবং নিজস্ব রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা সক্রিয় করার মাধ্যমে শরীরে রয়ে যাওয়া অকেজো টিউমারের অংশগুলো পরিস্কারে সহায়তা করে। আবিষ্কৃত এই ওষুধে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, উপরন্তু যতটা দ্রুততম সময়ে এটি কাজ করে তা দেখে বিজ্ঞানীরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। ওষুধটি প্রয়োগের মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে তা টিউমার ধ্বংসের ক্রিয়া শুরু করে দেয় এবং কয়েক দিনের মধ্যেই টিউমার উধাও হয়ে যায়। ক্যান্সারের নিরাময়ে এমন অতি দ্রুত কার্যক্ষম ওষুধ সচারচর দেখা যায় না। টিউমারের নিজস্ব রক্তবর্ণ অংশটি ওষুধ প্রয়োগের পাঁচ মিনিটের মধ্যে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে- যা পরের দিন কালো হয়ে যায় এবং কয়েক দিনের মধ্যে গোটা টিউমারটিই অদৃশ্য হয়ে যায়।
কুইন্সল্যান্ডের উত্তর দূরবর্তী একমাত্র অ্যাথারটন টেবলল্যান্ডস এলাকায় জন্মানো ব্লাশউড বৃক্ষ অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এখন ব্যাপকহারে রোপণের পরিকল্পনা এবং এই বৃক্ষের খামার সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। কারণ এই বৃক্ষে জন্মানো বেরি ফল থেকে তৈরি ওষুধ মনুষ্য গোরীদের উপরেও প্রয়োগ করে কার্যকরী ফল পাওয়া যাবে বলে প্রাক-চিকিৎসা পরীক্ষায় প্রতীয়মান হচ্ছে। তবে চিকিৎসকরা সতর্কভাবে জানিয়েছেন এই ওষুধ কেবলমাত্র সেইসব টিউমারের উপরই প্রয়োগ করা যাবে যেগুলো সরাসরি ইনজেকশনের নাগালের মধ্যে পাওয়া যাবে। আর এটি আপতত মেটাস্টেটিক ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কার্যকর করা যাবে না।
আরেকটি বিষয় পরিস্কার করা প্রয়োজন যে, ইবিসি-৪৬ ওষুধটি প্রচলিত কেমোথেরাপি বা অস্ত্রোপচারের প্রতিস্থাপক নয়, বরং এর দ্বারা একটি অতিরিক্ত বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থা হতে পারে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ- বয়োবৃদ্ধ রোগী যারা পুনঃপুন কেমোথেরাপি বা পূর্ণমাত্রায় অজ্ঞান হয়ে চিকিৎসা নিতে অক্ষম তাদের টিউমার চিকিৎসায় এই ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে এবং এতে তাদের জীবনমান উন্নত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা।
সবশেষ কথা হচ্ছে- কিউবায়োটিক্স নামক একটি বায়োটেকনোলজি কোম্পানি মানুষের উপর পরীক্ষামূলকভাবে ইবিসি-৪৬ ব্যবহারের নৈতিক অনুমোদনলাভ করেছে।
©somewhere in net ltd.