![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার আগের দুটো লেখায় আমি শুনিয়েছিলাম মানুষের বুদ্ধিমত্তার গল্প। আজ শোনাব নির্বুদ্ধিতার গল্প। না, আমি ধর্ম, সংস্কৃতি, সংস্কার বা কুসংস্কার নিয়ে লিখব না। বিজ্ঞানের আশীর্বাদগুলোকে আমরা কিভাবে পৃথিবীর জন্য অভিসাপ করে তুলছি সেই গল্প বলব।
আমরা ছিলাম গুহামানব। প্রকৃতির অন্যান্য পশুপাখির মতই আমাদের দিনের বেশিরভাগ সময় কেটে যেত খাদ্য সংগ্রহে। এখন পৃথিবীর জল, স্থল, আকাশ সবকিছুই আমাদের দখলে। আমরা মহাশুন্যেও বিচরন করি। ৭০-৮০ র দশকেও আমরা যা কল্পনা করতে পারতাম না, সেসব প্রযুক্তি এখন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। আমাদের জীবনমান উন্নততর করার জন্য আমরা প্রতিনিয়ত গবেষণা করে যাচ্ছি এবং সফলতাও পাচ্ছি। কিন্তু, আমাদের আবাসস্থলের দিকে কি আমরা ততটা মনোযোগ দিচ্ছি! আমরা কি খেয়াল করছি এই পৃথিবীর জন্য আমরা কতটা ক্ষতিকর হয়ে উঠছি! যার পরিনতিতে পৃথিবীর সমস্ত প্রান নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে।
মহাশুন্যের আর কোনো গ্রহ বা উপগ্রহে কোন বুদ্ধিমান প্রানি বা প্রানের কোনো সরল রূপ আছে কিনা, তা আমরা এখনো জানি না। বিজ্ঞানিরা খুঁজছেন। মহাকাশে গ্রহ নক্ষত্র বা অন্তরীক্ষের যে সংখ্যা (!!), হয়ত কোথাও কোনো প্রান বা বুদ্ধিমান প্রান থাকতেও পারে!! বিজ্ঞানিরা নানা রকম রেডিও সংকেত সবদিকে পাঠাচ্ছেন। কিন্তু কোথাও থেকে কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। এই পৃথিবী খুবই বিরল। কারন, সূর্যের মত লক্ষ লক্ষ নক্ষত্র আমরা খালি চোখেই খুঁজে পাই, সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহউপগ্রহগুলোর মতো পাথুরে বা জলীয়-বায়বীয় গ্রহের সন্ধানও বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন। কিন্তু আরেকটা পৃথিবীর সন্ধান এখনো পাননি। বিজ্ঞানীরা শুধু ধারনা করতে পারছেন, হ্যা ওই ওই জায়গায় পৃথিবীর মতো গ্রহ থাকতে পারে বা থাকা উচিত। পৃথিবীর বাইরে বিজ্ঞানীরা যেখানে সামান্য ভাইরাস-ব্যকটেরিয়ার সন্ধানও পাননি, সেখানে পৃথিবীর বুকে বিচরণকারী মানুষ আমরা ২০৩০ সালে পৃথিবীর কক্ষপথ ছেড়ে মঙ্গলের পথে পা বাড়াব!! আমরা খুবই বিরল ও অমুল্য। কারন, আমাদের প্রান আছে, আমরা মানুষরা যেমন খুশি চিন্তা করতে পারি। ডাইনোসরের মতো প্রানি ১৮০ মিলিয়ন বছর ধরে পৃথিবীতে বিবর্তিত ও বিকশিত হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তাই পৃথিবীর জন্য, প্রকৃতির জন্য, সমস্ত প্রানিকুলের জন্য, এই পৃথিবীতে যত মানুষ এসেছে তাদের জন্য, আমাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভাবার আমাদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
আমাদের সৌভাগ্য যে আমাদের প্রিয় পৃথিবীর কাছাকাছি দুটো গ্রহ রয়েছে, যাদের সাথে আমাদের পৃথিবীর গঠন বৈশিষ্ট্যের বেশ ভাল কিছু মিল আছে। তাই পৃথিবীর আবহাওয়ায় যেসব উপাদান যে অনুপাতে আছে, সেগুলো যদি পরিবর্তিত হয়ে যায়, তবে পরিনতি কি হতে পারে তার নমুনা আমাদের চোখের সামনেই আছে! তার আগে পৃথিবীর গঠন বৈশিষ্ট্য নিয়ে একটু বলি।
পৃথিবীর তিনটি প্রধান স্তর রয়েছে। আমরা এবং পৃথিবীর আর যত রকম প্রান আছে, সবাই যে স্তরে বাস করে তাকে বলে ক্রাস্ট। তার নিচে আছে লাভার স্তর যাকে ম্যান্টল বলে। এই স্তরে আলোড়নের কারনেই অগ্নুতপাত বা ভুমিকম্প হয়। তার নিচের স্তরকে কোর বলে। এই হল প্রধান তিন স্তর। কোরকে আবার বাইরের কোর আর ভেতরের কোর, এই দুইভাগে চিহ্নিত করা হয়। বাইরের কোর লোহা আর নিকেলের মিশ্রনে তৈরি, ভেতরের কোর প্রধানত লোহা দিয়ে তৈরি। বাইরের কোর ঘন তরল অবস্থায় থাকে, কিন্তু ভেতরের কোর চারপাশের চাপের কারনে কঠিন অবস্থায় থাকে। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এই কোরের তাপমাত্রা আর সূর্য পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় সমান, কিন্তু ভিন্ন কারনে। পৃথিবী যে গতিতে অক্ষ কেন্দ্র করে ঘুরছে, এই কোর তারচেয়ে একটু বেশি গতিতে ঘুরছে। আর সে কারনেই আমাদের পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র রয়েছে। পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এই চৌম্বকক্ষেত্রের জন্যই সূর্য থেকে যে সৌরবাতাস বা চার্জড পারটিক্যাল পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে, তা আমাদের পৃথিবীর বায়ুমন্ডল পর্যন্ত পৌঁছুতে পারে না। না হলে প্রানের বিকাশ সম্ভব ছিল না। তবুও যখন বড় কোনো সৌরঝড় হয়, চার্জড পারটিক্যাল ভূপৃষ্ঠে পৌঁছে যায়। তখন অনেক শহরে দেখা যায় যে বিদ্যুৎ বিতরন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে, টেলি বা মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্থা, জিপিএস ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বা অচল হয়ে গেছে। এই চৌম্বকক্ষেত্রের মুল কাজ হচ্ছে পৃথিবীর যে পাতলা ওজোন স্তর রয়েছে, তাকে রক্ষা করা। চার্জড পারটিক্যাল যদি ওজোন স্তর পর্যন্ত পৌঁছুতে পারত, তাহলে এই পাতলা ওজোন স্তর ধীরে ধীরে মহাকাশে বিলিন হয়ে যেত। ফলে সূর্যের আল্ট্রা ভায়োলেটরে বিনা বাধায় ভূপৃষ্ঠে পৌঁছে যেত আর পৃথিবীর সমস্ত প্রান নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত। বিজ্ঞানীরা ধারনা করেন আমাদের প্রতিবেশি মঙ্গলের ভেতরের কোর পুরোটাই কঠিন হয়ে ঘূর্ণন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর কোনো চৌম্বকক্ষেত্র নেই, তাই এর ওজোন স্তর মহাশুন্যে বিলিন হয়ে গেছে। শুক্রেরও চৌম্বকক্ষেত্র নেই, কারন হয়তো এর কোর পুরোটাই তরল অবস্থায় আছে!
মঙ্গল ও শুক্র গ্রহের বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমান যথাক্রমে ৯৫.৯% ও ৯৬.৫% । শুক্র গ্রহকে পৃথিবীর সহোদর বলা হয়। কারন, এর ব্যাস পৃথিবীর চেয়ে মাত্র ৬৫০ কিমি কম এবং ওজন পৃথিবীর ওজনের ৮১.৫%। ধারনা করা হয় কয়েক বিলিয়ন বছর আগে শুক্র গ্রহের বায়ুমন্ডল আর পৃথিবীর বায়ুমন্ডল প্রায় একই ছিল। পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের বায়ুতে অক্সিজেন (২১%) আর নাইট্রোজেনের (৭৯%) যে অনুপাত, তা এখনো শুক্র গ্রহের এক বিশেষ জায়গায় পাওয়া যায়! সেই বিশেষ জায়গাটি হলো শুক্রের ভূপৃষ্ঠ থেকে ৫০ কিমি উপরে!! বুধ সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ হলেও শুক্র সৌরজগতের সবচেয়ে উত্তপ্ত গ্রহ। তার কারন হচ্ছে Greenhouse effect!! শুক্রের অভিকর্ষজ বল পৃথিবীর প্রায় সমান (8.9 m/s2). তাই সূর্য থেকে ধেয়ে আসা বাতাস শুক্রের বায়ুমন্ডলকে পাতলা করতে পারে নি ঠিকই, কিন্তু অন্যান্য হালকা গ্যাসের পরিমান অনেক কম। সালফার ডাই অক্সাইড আর সালফিউরিক এসিড মেঘ সূর্যের ৯০% আলো ভূপৃষ্ঠে পৌছাতে দেয় না, কিন্তু Greenhouse effect এর কারনে শুক্রের ভূপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা হয়েছে প্রায় ৪৬৭ ডিগ্রী সেঃ, তাই পৃথিবীতে হাইড্রোজেন যেমন হালকা গ্যাস তেমনি শুক্রে অক্সিজেন হালকা গ্যাস! তাই ভূপৃষ্ঠ থেকে ৫০ কিমি উপরে অক্সিজেনের উপস্থিতি পাওয়া যায়। প্রচুর অগ্নুতপাত হয় শুক্রে এবং এর ফলে প্রচুর সালফিউরিক এসিড শুক্রের বায়ুমন্ডলে ছড়িয়ে পড়েছে। ধারনা করা হয় শুক্র গ্রহেও এক সময় পানি ছিল। কিন্তু তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারনে পানি বাস্প হয়ে অক্সিজেন হইড্রোজেনে রুপান্তর হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। যেহেতু এখনো অক্সিজেনের উপস্থিতি আছে, তাই সাময়িকভাবে কোনো কোনো স্থানে ওজোনস্তর সৃষ্টি হয়, কিন্তু চৌম্বকক্ষেত্র না থাকায় তা আবার বিলীনও হয়ে যায়। কোনো প্রানের উদ্ভব না হওয়ায় শুক্রের কার্বন ডাই অক্সাইডের কোনো রুপান্তর হয় নি। শুক্রের বায়ুমন্ডলের চাপ পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের চেয়ে প্রায় ৯০ গুন বেশি! তাই, শুক্রে কোনো রোবট পাঠিয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় নি। রাশিয়ার পাঠানো রোবট শুক্রের ভূপৃষ্ঠে অবতরনের পর মাত্র ২৩ মিনিট সচল ছিল (venera 7)। মঙ্গল গ্রহেরও মোটামুটি একই হাল। কোনো প্রানের উদ্ভব না হওয়ায় সেখানেও কার্বন ডাই অক্সাইডের কোনো রুপান্তর ঘটে নি। মঙ্গল গ্রহ পৃথিবীর চেয়ে বেশ ছোট, তাই অভিকর্ষজ বলও কম, আর কোনো চৌম্বকক্ষেত্র না থাকায় সূর্য থেকে আসা চার্জড পারটিক্যাল মঙ্গলের বায়ুমন্ডলকে অনেক পাতলা করে ফেলেছে। পৃথিবীর তুলনায় মঙ্গলে তাপমাত্রা ও বায়ুচাপ অনেক কম।
মঙ্গল আর শুক্র নিয়ে এতো কথা বলার কারন হলো, দুটো গ্রহেই ওজোনস্তর অনুপস্থিত। কারন গ্রহ দুটির চৌম্বকক্ষেত্র নেই। ওজোনস্তর না থাকায় সেখানে প্রানের জন্ম সম্ভব হয় নি। কারন সূর্য থেকে বিনা বাধায় আসা অতিবেগুনি রশ্মি কোষপ্রাচীর অতি সহজেই ভেদ করতে পারে এবং কোষ ধ্বংস করে ফেলে। তাই সেখানে প্রানের সুচনা হওয়াই সম্ভব হয় নি। আমাদের পৃথিবীতেও আমরা বিপুল পরিমান কার্বন ডাই অক্সাইডের উপস্থিতি দেখতে পাই। কিন্তু, বায়ুমন্ডলে আছে মাত্র ০.০৩৯%। বাকিরা কোথায়!! বাকিরা বন্দি আছে গ্যাস কয়লা, চুনা পাথর আর গাছপালায়!! আমরা প্রতিনিয়ত এসব পোড়াচ্ছি আর বন্দি কার্বন ডাই অক্সাইডকে মুক্ত করে দিচ্ছি আমাদের বায়ুমন্ডলে! কার্বন ডাই অক্সাইডকে বন্দি করার কাজটা করেছিল উদ্ভিদ। আমাদের জীবন ধারনের উপযোগী অক্সিজেনের পরিমাণও তৈরি করেছিল এই উদ্ভিদই। এখনো গাছপালাই কার্বন ডাই অক্সাইডকে বায়ুমন্ডল থেকে ধরে নিয়ে বন্দি করছে। এক বর্গ কিমি বন এক বছরে প্রায় কয়েকশো টন কার্বন ডাই অক্সাইডকে বন্দি করতে পারে। সামুদ্রিক উদ্ভিদ প্ল্যাঙ্কটন আরও বেশি পারে। এক বর্গ কিমি সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও প্ল্যাঙ্কটন এক বছরে ৪১ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইডকে রুপান্তর করে। তাছাড়া যখন বৃষ্টি হয় বা জলপ্রপাতের ফলে পানি বাতাসের কার্বন ডাই অক্সাইডকে এক ধরনের কার্বাইডে রুপান্তর করে এবং সমুদ্রের তলদেশে তলানি হিসেবে জমা করে। আর আমরা কি করছি! আমরা হাজার হাজার বছর ধরে বন্দি হতে থাকা এবং হয়ে থাকা কার্বন ডাই অক্সাইডকে তো মুক্ত করে দিচ্ছিই, আবার গাছপালার সংখ্যাও এমনভাবে কমাচ্ছি যে কার্বন ডাই অক্সাইডের রুপান্তরের হারও কমে যাচ্ছে। আবার সিএফসি গ্যাস, রেফ্রিজারেন্ট, বিভিন্ন সলভেন্ট, ওজোনস্তরের জন্য ক্ষতিকর গ্যাস ব্যবহার করে ওজোনস্তরও ধ্বংস করে ফেলছি। সমুদ্র দূষণ করছি। সমুদ্র দূষণ আরও ওজোনস্তর ধ্বংস হয়ে যাবার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে সামুদ্রিক প্ল্যাঙ্কটনের। ওজোনস্তরে বড় বড় ছিদ্র হয়ে যাবার কারনে অতি বেগুনি রশ্মি সমুদ্রের প্ল্যাঙ্কটনের উপর এসে পড়ে আর সমুদ্রের অনেক বড় এলাকা জুড়ে প্ল্যাঙ্কটন মরে যাচ্ছে। এভাবেই পৃথিবীর কার্বন ডাই অক্সাইডের রুপান্তর কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে আমরা আরও বেশি বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড বাতাসে ছাড়ছি। স্বল্প মাত্রায় Greenhouse effect এর প্রয়োজন আছে, না হলে পৃথিবী এতো শীতল হতো যে এখানে এতো প্রান প্রাচুর্য দেখা যেত না। প্রকৃতি এখানে একটা ভারসাম্য বজায় রাখছে। কিন্তু, এই Greenhouse effect এর কারনেই বুধ গ্রহ হচ্ছে সৌরজগতের সবচেয়ে উত্তপ্ত আর প্রতিকূল গ্রহ। প্রকৃতি প্রানের উদ্ভব আর বিকাশের জন্য এতো সুরক্ষার ব্যবস্থা করে রেখেছে, কিন্তু আমরা এতো জেনে বুঝেও পৃথিবীকে বসবাসের অনুপযোগী করে তুলছি। আমরা দাবি করি আমরা সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রানি, শ্রেষ্ঠ জীব। আমরা আসলেই কি তাই?
২| ০৮ ই মে, ২০১৫ সকাল ১০:৩৭
প্রামানিক বলেছেন: চমৎকার
৩| ০৮ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৬
ঠাহর বলেছেন: Thanks for reading...
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই মে, ২০১৫ সকাল ৯:২৩
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
ভাল লাগল।++