![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঠিক মনে নেই কোন ক্লাসে তখন আমি, একটা ভেরি ভেরি ইম্পোরট্যান্ট প্রশ্ন বিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য মুখস্ত করতে হয়েছিল। সেটা হলো “আকাশের রঙ নীল কেন?” আমি মফঃস্বলে বড় হয়েছি। আমাদের ওখানে স্কুল লাইব্রেরি ছাড়া আর কোনো লাইব্রেরি ছিল না। বিশ্ব সাহিত্যকেন্দ্র তখনো হয় নি বা হলেও হয়তো ঢাকায় আছে, আমরা তার নামও শুনিনি। চেষ্টা করতাম স্কুল থেকে সবসময় যত দূরে থাকা যায়, তাই স্কুল লাইব্রেরি থেকে যে গল্পের বই নেয়া সম্ভব, তা কখনো ভাবি নি। পড়তাম চাচা চৌধুরী, তিন গোয়েন্দা আর জাফর ইকবাল স্যারের বই। আর কিছু কিছু সেবা প্রকাশনীর বই যদি কারও কাছে পাওয়া যেত, তাহলে পড়তাম। যাই হোক, বেশির ভাগ সময় লুকিয়ে লুকিয়ে বই পড়তে হতো। পড়ার বই ছাড়া অন্য বই একমাত্র সাময়িক বা বার্ষিক পরীক্ষার পর কয়েক সপ্তাহর জন্য পড়ার অনুমতি পেতাম। নানা-দাদা বাড়ি যখন যেতাম, আমাদের ঢাকা হয়ে যাওয়া লাগত। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে আব্বা আম্মা বেশ কিছু বই প্রতিবারই কিনে দিতো। যেমন; গোপাল ভাড়, হাসির কৌতুক, আরও অনেক রকম ডাইনি বুড়ির আর ভূতের গল্পের বই।
বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার জন্য লেখা কোনো বই তখন পড়িনি। মনে করতাম, বিজ্ঞান শুধু স্কুলে পড়ার বই। প্রথম সায়েন্স ফিকশন পড়ি জাফর স্যারের লেখা। হয়তো সেবা প্রকাশনীর অনেক অনুবাদ সায়েন্স ফিকশন তখন ছিল, কিন্তু মফঃস্বলে থাকার কারনে সেগুলোর কোনো হদিস পাইনি। বিজ্ঞানকে সাধারন মানুষের বোঝার উপযোগী করে আকর্ষণীয় করে লেখা প্রথম বই আমি পড়ি অভিজিৎ রায়ের লেখা “আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী”। সেখান থেকেই খোঁজ পাই আমেরিকান লেখক ও বিজ্ঞানী কার্ল সেগান, মিচিও কাকু, ব্রায়ান গ্রিন, নীল ডি গ্রেসনদের। তারা বইগুলো এমনভাবে লিখেছেন যে, বিজ্ঞানের ছাত্র না হলেও বিজ্ঞানকে অত্যন্ত সহজভাবে সবাই যেন বুঝতে পারে। প্রকৃতিকে আরও গভীরভাবে অনুভব করার আরও সূক্ষভাবে দেখার চোখ তারা খুলে দেন। তেমনি একটা গল্প পেলাম কার্ল সেগানের “Pale blue dot” বইতে আকাশের রঙ নিয়ে।
আমাদের পৃথিবীর আকাশের রঙ নীল বা হালকা নীল। আমার মনে হয় তার কারন কি সেটা সবাই জানে। চাঁদের আকাশের রঙ কি? নীল? মঙ্গল, বুধ, শুক্র বা অন্যান্য গ্রহগুলোর আকাশ কেমন? আকাশ বলতে আমরা যা বুঝি, তার রঙ আসলে কালো। বুধ গ্রহ, আমাদের চাঁদ এবং অন্যান্য গ্রহগুলোর ছোট ছোট উপগ্রহ যাদের কোনো বায়ুমন্ডল নেই, এসব জায়গায় গেলে ভর দুপুরেও আকাশকে কালোই দেখা যাবে। চাঁদে মানুষের অবতরনের পর যেসব ছবি তোলা হয়েছে, দেখলে মনে হয় সেখানে রাত। ফ্লাড লাইট জ্বালিয়ে ছবি তোলা হয়েছে। কিন্তু, আসলে তা নয়। সেখানে দিনের বেলাতেও, মানে সূর্য যখন চাঁদের আকাশে থাকে তখনো মনে হবে পৃথিবীর রাতের মতো! মনে হবে কেউ উপর থেকে ফ্লাড লাইট জ্বালিয়ে রেখেছে।
শুক্র গ্রহ থেকে আকাশ আসলে দেখা যায় না তেমন। কারন, সেখানে প্রচুর মেঘ। শুক্র গ্রহে বাতাসের পরিমান পৃথিবীর চেয়ে ৯০ গুন বেশি। শুক্রের আকাশকে যদি মেঘমুক্ত করা হয়, তাহলে দেখা যাবে সমস্ত আকাশ জুড়ে একটা হলদে ভাব। পৃথিবীর সূর্যাস্তের সময় পশ্চিম আকাশ থেকে আলো এসে যেমন একটা কমলা আবহ তৈরি করে, শুক্রেও দিনের বেলায় সেরকম দেখা যাবে চারপাশ। এর কারন, আলোর নীল-বেগুনি অংশ শুক্রের ভারি বায়ুমন্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছতে পারে না, প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যায়। মেঘে সালফার থাকার কারনে আকাশে একটা হলুদাভ ভাব হয়।
চিত্রঃ শুক্রের ভূপৃষ্ঠ থেকে তোলা ছবি।
মঙ্গলের মাটিতে রোবট নামানোর পর ছবি তুলে পৃথিবীতে পাঠানোর পর যখন সংবাদপত্রে ছাপানোর জন্য দেয়া হয়, তখন একটা মজার ঘটনা ঘটে! মঙ্গলের মাটি থেকে তোলা ছবিতে দেখা যায় আকাশ হালকা নীল। নাসার বিজ্ঞানিদের চোখ তো ছানাবড়া! মঙ্গলের আকাশ নীল হয় কেমনে!! পরে তারা বুঝতে পারলেন Something is wrong!! মহাকাশ থেকে পাঠানো ছবির মধ্যে বিভিন্ন রঙের মিশ্রন কেমন হবে তা নাসার বিজ্ঞানীরা Computer analyst-এর উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন। Computer analyst অ্যাস্ট্রোনোমার ছিলেন না। তাই মঙ্গলের আকাশকে পৃথিবীর আকাশের মতো রাঙিয়ে দিলেন! আমরা আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার দ্বারা এতো প্রভাবিত যে, অন্য একটা পৃথিবীর ছবি দেখার সময়ও আমরা সেখানে আমাদের পৃথিবীর রূপ দেবার চেষ্টা করি। ব্যাপারটা নিজের মতামত অন্যের উপর যুক্তি না দিয়ে জোর করে চাপিয়ে দেবার মতোই! যাই হোক বিজ্ঞানীরা তাড়াতাড়ি ছবি সংশোধন করলেন। বিজ্ঞানীরা ধারনা করেছিলেন মঙ্গলের আকাশ হবে বেগুনি-কালচে। কারন, মঙ্গলের বায়ুমন্ডল খুব পাতলা। কিন্তু দেখা গেল, মঙ্গলের আকাশ ঘিয়া আর গোলাপির মাঝামাঝি! এর কারন হচ্ছে মঙ্গল প্রায় পুরোটাই মরুভুমি আর এর বালি হচ্ছে লালচে। এখানে প্রায়ই বালিঝড় হয়। অভিকর্ষজ বল অনেক কম হওয়ার কারনে বালিঝড়ের পর ভূমি থেকে মিহি ধূলাবালি আকাশ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে আর ভেসে বেড়ায়। এগুলো ধীরে ধীরে মাটিতে নেমে আকাশ পরিস্কার হবার আগেই আবার ধুলিঝড় হয়। তাই মঙ্গলের আকাশ এরকম দেখা যায়।
চিত্রঃ মঙ্গলের মাটি থেকে দুপুর বেলা তোলা ছবি।
মঙ্গলের পরের গ্রহগুলোর ধরন আলাদা। এগুলো পৃথিবীর চেয়ে অনেক গুন বড়। এগুলোর বায়ুমন্ডল মূলত হাইড্রোজেন আর হিলিয়ামের তৈরি। এই গ্রহগুলোর কঠিন স্তর বা ভূমি বায়ুমন্ডলের এতো গভীরে যে সেখানে সূর্যের কোনো আলো পৌঁছুতে পারে না। সেখানে কোনো সূর্যোদয় হয় না! কিন্তু, এগুলোর বায়ুমন্ডলের একটু উপরের স্তরে, যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছে সেখানে অনেক রঙের খেলা দেখা যায়। যদি বৃহস্পতির কথাই বলি, তাহলে বৃহস্পতির একদম উপরের স্তর থেকে যে আকাশ দেখা যাবে তা প্রায় কালো। একটু নীচে নামলে রংবেরঙের মেঘ দেখা যাবে। আকাশ নীলচে দেখা যাবে। আরেকটু নীচে নামলে লালচে বাদামি আকাশ দেখা যাবে। সেটাও নির্ভর করে সেখানকার উপরের মেঘের উপর। মেঘ যদি পাতলা হয়, তবে আকাশ নীলচে দেখাবে। আরও নিচে নামতে থাকলে আকাশ ধীরে ধীরে কালো হতে থাকবে। শনিগ্রহের আকাশের ছবিও বৃহস্পতির মতোই হবে, তবে বৃহস্পতির চেয়ে কিছুটা ঘোলাটে দেখাবে।
ইউরেনাস এবং বিশেষ করে নেপচুনের আকাশের দিকে তাকালে একটা অপার্থিব ফ্যাকাশে নীল রঙের আকাশ দেখা যাবে। প্রধানত হাইড্রোজেন আর হিলিয়ামের তৈরি তুলনামূলক স্বচ্ছ বায়ুমন্ডলের ভেতর দিয়ে অনেক ভেতর পর্যন্ত সূর্যের আলো সহজেই পৌঁছে। এই বায়ুমন্ডল প্রচুর পরিমানে মিথেনও আছে, আর মিথেন হলুদ এবং বিশেষ করে লাল আলো শোষণ করে। তাই এটা অনেকটা সবুজ নীল ফিল্টারের মতো হয়ে যায়। হাইড্রোকার্বনের স্তর কিছুটা নীল আলোও শোষণ করে নেয়। তাই কোনো কোনো স্থান হতে সবুজ আকাশও দেখা যেতে পারে!!
চিত্রঃ শিল্পীর তুলিতে বৃহস্পতির উপগ্রহ ক্যালিস্টো থেকে
চিত্রঃ শিল্পীর তুলিতে বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপা থেকে
চিত্রঃ শিল্পীর তুলিতে নেপচুনের উপগ্রহ ট্রাইটন থেকে
পৃথিবীর অনেক ধর্মই শিক্ষা দেয় যে মানবজাতির লক্ষ্য হলো দেবতাদের গুনাবলি অর্জন করা। আজ থেকে কয়েকশত বছর আগের কোনো মানুষকে যদি জীবিত করে বর্তমান সময়ে আনা যেত বা বর্তমানে আমরা যেসব প্রযুক্তি ব্যবহার করি, এগুলো দিয়ে একদল মানুষকে যদি কয়েকশত বছর আগে টাইম মেশিনে করে পাঠানো যেত, তাহলে আমাদেরকে তাদের দেবতাই (বা শয়তান) মনে হতো! ইহুদীদের তালমুদে (খৃস্টপূর্ব ৮০০ শতকে ইহুদি যাজকদের লেখা ইহুদি আইন ও গল্পসমগ্র) একটা ছোট ঘটনা পাওয়া যায় এরকম যে, সৃষ্টিকর্তা আদম হাওয়াকে বলেছেন যে তিনি ইচ্ছে করেই তাঁর সৃষ্টি অসম্পূর্ণ রেখেছেন। এটা মানবজাতির দায়িত্ব যে অগনিত বংশপরম্পরায় সৃষ্টিকর্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অংশগ্রহন করা- তাঁর অসম্পূর্ণ সৃষ্টিকে সম্পূর্ণ করা!!
সুদূর বা অদূর ভবিষ্যতে মানুষ হয়তো এই সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহে বসতি স্থাপন করবে। কিন্তু কিভাবে?
শুক্রের কথা যদি ধরা হয়, দেখা যায় এখানে ৯৬% কার্বন ডাই অক্সাইড। এখানের তাপমাত্রা প্রায় সাড়ে চারশো ডিগ্রীরও উপরে। চাপ পৃথিবীর চেয়ে ৯০ গুন বেশি। কোনোভাবে যদি সূর্যের আলোকে শুক্রে আসতে বাঁধা দেয়া যায় (কালো কোনো আস্টোরয়েডের গুড়া এর উপরের বায়ুমন্ডলে ছড়িয়ে দিয়ে বা এর অরবিটে বা পরিমন্ডলে ছাতার মতো কিছু একটা দিয়ে সূর্যকে আড়াল করে) তাহলে এর তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। একটা পর্যায়ে কার্বন ডাই অক্সাইড তরল হয়ে সমুদ্রে পরিনত হবে। তারপর এই কার্বন ডাই অক্সাইডকে কার্বনেট পাথরে রুপান্তর করতে হবে যেন আবার বায়ুমন্ডলে মিশতে না পারে। পানির বরফের তৈরি আস্টোরয়েড বা সৌরজগতের বড়গ্রহগুলোর কোনো একটা বরফে ঢাকা উপগ্রহ যদি কোনো ভাবে এনে শুক্রে পানির যোগান দেয়া যায়, তাহলে হয়তো মানুষের বসবাস উপযোগী হবে!! নাহ...!! ব্যাপারটা একটু ব্যয়বহুল হয়ে যায়!!
মঙ্গলে আবার ঠিক উল্টা সমস্যা দেখা যায়। এখানে তাপমাত্রা আর চাপ দুটোই কম। এখানে গ্রিনহাউজ গ্যাস কার্বন ডাই অক্সাইড (প্রায় ৯৬%) আছে। কিন্তু আরও দরকার! সিএফসি বা আমোনিয়া এখানে আনা যেতে পারে। বিশেষ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে তৈরি ব্যক্টেরিয়া দিয়ে মঙ্গলের নাইট্রোজেনকে অ্যামোনিয়ায় রুপান্তর করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে পৃথিবী ও টাইটান থেকে মঙ্গলে নিয়মিত নাইট্রোজেন সাপ্লাই দিতে হবে! এভাবে মঙ্গলের তাপমাত্রা যদি শুন্য ডিগ্রীর উপরে রাখা যায়, তখন বিশেষ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে তৈরি উদ্ভিদ দিয়ে অক্সিজেনের ব্যাপক উৎপাদন করা সম্ভব। আর মঙ্গলপৃষ্ঠকে অতিবেগুনি রশ্মি বা সূর্যের চার্জড পারটিক্যাল থেকে আড়াল করার জন্য এর বায়ুমন্ডলের উপরের স্তরে খুব সুনিয়ন্ত্রিতভাবে আস্টোরয়েডের গুড়ো ছড়িয়ে রাখতে হবে। মঙ্গলের বায়ুমন্ডল রুপান্তর করা শুক্রের চেয়ে তুলনামূলক সহজ; কিন্তু এটাও অনেক ব্যয়বহুল!!
শনি আর বৃহস্পতির উপগ্রহগুলোর মধ্যে টাইটানকে মানুষের বসবাস উপযোগী করা তুলনামূলক সহজ। টাইটানের বায়ুমন্ডল পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের মতোই প্রধানত নাইট্রোজেন দিয়ে তৈরি। এখানকার বায়ুচাপও পৃথিবীর অনেক কাছাকাছি। এখানে গ্রিনহাউজ গ্যাস অ্যামোনিয়া বরফ আকারে আছে, ধারনা করা হয় পানির বরফও আছে। তাই নিউক্লিয়ার ফিউসন বিক্রিয়ার মাধ্যমে যদি এর ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়ানো হয়, তবে অন্যান্য গ্রহের তুলনায় সহজেই মানুষের বসবাস উপযোগী করা যেতে পারে।
গ্রহউপগ্রহের বায়ুমন্ডল পরিবর্তনের চেয়ে সেখানকার ভূঅভ্যন্তরে বা ভূপৃষ্ঠে বিশেষ স্থাপনা করে মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা তুলনামুলক সহজ হবে। মানবজাতি যদি বিলুপ্ত হতে না চায় বা বিভিন্ন কারনেই হয়তো মানুষকে পৃথিবীর বাইরে বসতি স্থাপন করতে হবে। কিন্তু, একটা জিনিস পরিস্কার, তা হলো প্রানের বেঁচে থাকার উপযোগী আবহাওয়া অতি সহজেই নষ্ট করা সম্ভব, কিন্তু জীবন ধারনের ন্যূনতম উপযোগী পরিবেশ তৈরি করাও কতো কঠিন!
১০ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:৫৫
ঠাহর বলেছেন: জেনে ভাল লাগলো।
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:৩৭
জাহিদ নীল বলেছেন: Valo laglo apner alomalo vabna