নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি স্বেচ্ছাচারী; করি মন যা চায়! শাসন কিংবা শঙ্কায় নয়, আমি স্থির হই ভালোবাসায়।

Biniamin Piash

প্রত্যেকটা মানুষের মতই সাধারণ হয়েও নিজেকে অসাধারণ মনে করি!

Biniamin Piash › বিস্তারিত পোস্টঃ

অধরা স্বপ্ন

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৪০

সবার মত ভোরে মোবাইলের অ্যালার্ম শুনে আমার ঘুম ভাঙেনা,মোরগের ডাক শুনেও নয়।কুকুরের চেঁচামেচি,বাচ্চাদের চিতকার,ট্রেনের হুইসেল অথবা কোন শুভাকাঙ্ক্ষীর লাথি খেয়েই হয়তো আমার ঘুম ভাঙে।কারণ,আমিতো আর এই ইট-পাথরে ঘেরা সভ্য সমাজের কেউ নই,যাদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে এই সভ্যতার সূচনা হয়েছে সেই নিগৃহীত শ্রেণীর মানুষ আমি।নাম পরিচয়হীন,যার পিতামাতা কে সে নিজেই জানে না।হয়তো ঐ সভ্য সমাজের কোন মানব-মানবীর ভালবাসার অনাকাঙ্ক্ষিত বহিঃপ্রকাশ।যার ঠিকানা হয় রাস্তের ধারের কোন ডাস্টবিনে,কুকুরের মুখে নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কায় পড়তে হয় জন্মের ক্ষাণিক পরেই!সেখান থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে ঠাই হয়েছিল রেললাইনের পাশের এক বস্তিতে,জন্ম না দিয়েই কোন এক অভাগিনী মা হওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
সূচনা দেখেই আঁচ করতে পারছেন আমার জীবনটা কেমন।শৈশবে যখন ওই সভ্য সমাজের ছেলে-মেয়েরা বাবা-মায়ের হাত ধরে পার্কে ঘুরতে যেত আমি তখন আমার সমগোত্রীয়দের সাথে রাস্তায় বেরোতাম জীবিকা নির্বাহের দায়ে।কখনো টোকাইগিরি,কখনো ভিক্ষাবৃত্তি,কখনো বা পকেটমার হয়েছি।তবে যখন কাগজ কুড়াতাম তখন কাগজের গায়ের কালো রঙের লেখগুলো পড়তে খুব ইচ্ছা করতো,তাই বস্তির ছেলেমেয়েদের জন্য খোলা নৈশকালীন স্কুলে যেতাম।জীবিকার তাগিদে হয়তো অনেক কিছুই করেছি,অনেক সময় না খেয়েও থেকেছি কিন্তু পড়ালেখাটা বাদ দেইনি।বস্তির পাশের স্কুলটা থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি।এরপর অবশ্য বেশ ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল।মাধ্যমিকে ভর্তি হওয়ার এবং বই কেনার জন্য অনেক টাকার দরকার ছিল,তাই একটা বছর পড়ালেখা বাদ দিয়ে শুধু কাজ করে স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য টাকা জমাই।পরের বছর ভর্তিও হই।সকালে স্কুলে যেতাম আর বিকালে বস্তির ধারের দোকানে কাজ করতাম।মাঝে মাঝে কিছু টাকা জমিয়ে পুরনো বইয়ের দোকান থেকে গল্পের বই কিনতাম,খুব ভালো লাগতো গল্পের বই পড়তে।ভাবতাম বড় হয়ে আমিও এরকম গল্প লিখবো,জীবনের গল্প,দুঃসময়ের গল্প।
শত প্রতিকূলতার মাঝেও পড়াটা চালাচ্ছিলাম,এর মাঝেই এসএসসি পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে আসে।ফর্ম ফিলাপের জন্য অনেকগুলো টাকার দরকার ছিলো,যা জোগাড় করা আমার পক্ষে প্রায় অসম্ভব ছিলো।তখন আমাকে গর্ভে না নিয়েও যিনি নিজের সন্তান মনে করতেন সেই মা আমার হাতে তার কষ্টার্জিত অর্থ তুলে দেন।তার নিজের দুটি বাচ্চা নিয়েই সংসার চালাতে হিমসিম অবস্থা,কিন্তু তবুও তিনি আমাকে টাকাটা দিয়ে বলেন,”ভালা পাশ দিস বাবা।আল্লায় য্যান তোর কষ্ট সার্থক করে।“সেদিন চোখে জল এসেছিল,কিন্তু সেটা আনন্দে নাকি দুঃখে তা বুঝতে পারিনি।এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পরবর্তী ৩ মাস দিনরাত কাজ করে টাকা জমিয়েছি কলেজে ভর্তির জন্য।এর মধ্যেই এসএসসির রেজাল্ট দেয়ার দিন ঘনিয়ে আসলো।রেজাল্টের আগের দিনই মা মারা গেলেন।সভ্য সমাজের লোকেরা মারা গেলে কত কারণ খুজে,কত অসুখের নাম বলে কিন্তু অসভ্য সমাজের মানুষ আমরা মৃত্যুটা এখানে খুবই সাধারণ,এর জন্য কোন কারণ,রোগের দোহাই দেই না।মা যখন মারা যায় তখন চোখ থেকে এক ফোটাও অশ্রু পরে নি কিন্তু পরদিন যখন রেজাল্ট দিলো তখন চিৎকার করে কেদেছিলাম।মায়ের কবরের কাছে হাটুগেড়ে বসে চিৎকার দিয়ে বলেছিলাম,”মা তোমার ছেলে ভালো পাশ দিছে।“মা কি আমার কথা শুনেছিলো?কবরের ভিতরে থেকে মা কি একটু মুচকি হাসি দিয়েছিল?যিনি সব কিছু প্রত্যক্ষ করছেন তিনিই ভালো জানেন!
কলেজে ভর্তি হলাম,দুটো টিউশনিও পেলাম।সেগুলো দিয়েই চলছিলো জীবন।সময় চেলে যেতে থাকে বহমান নদীর মত।দেখতে দেখতে এইচএসসি পাশও করে ফেলি ।বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি,খুব ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্সও পাই।দিনগুলো যেন স্বপ্নের মত যাচ্ছিলো।আমি আর মা হারা দুটি সন্তান এটাই ছিল আমার পরিবার।এ পরিবারে কোন কর্তা নেই,কর্ত্রী নেই যার যার উপার্জন সেই করে।এ যেন এক আজব সংসার!সভ্য সমাজের মানুষগুলো বছরের হিসেবকরে বাচে।কিন্তু আমরা প্রতিটা মুহূর্ত বাঁচি।প্রতিটা নিঃশ্বাস যেন আমাদের এক একটা জয়,প্রতিটা দিন বেঁচে থাকা মানে জীবন যুদ্ধে একবার করে জয়ী হওয়া।সভ্য সমাজের মানুষদের মত আমরা তুলতুলে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে স্বপ্ন দেখিনা,সে অধিকার প্রকৃতি আমাদের দেয় নি।মাথার নিচে ইটের বালিশ দিয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখি।স্বপ্ন দেখি এমন একটা দিনের যেদিন দুবেলা ঠিকমত খেতে পারবো,ভাল জামাকাপড় পড়তে পারবো,ইট-পাথরের কৃত্তিমতায় ঘেরা এই সমাজে আমরাও নিজেদের মানুষ বলে দাবি করতে পারবো।মাঝে মাঝে নিজেকে খুব একা মনে হয়,ভাবি কে আছে আমার।কারো প্রতি আমার কোন দায়িত্ব নেই,একেবারে মুক্ত জীবন আমার।কিন্তু পরমুহূর্তেই মনে পড়ে আমি তো একা নই,খোলা আকাশের নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষগুলোই তো আমার আপনজন।মাতৃ-পিতৃ পরিচয়হীন এই ছেলেমেয়ে গুলোই তো আমার পরিবার।কে বলেছে আমার দায়িত্ব নেই,আমার পরিবারের প্রতেকটা সদস্যের স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে আমার দায়িত্ব।রূপোলি জ্যোৎস্নাপ্লাবিত রাতে যখন সবাই ঘুমে মগ্ন থাকে তখন আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে তাদের স্বপ্নগুলোকে দেখি,রঙিন ফানুশের মত উরে যাওয়া স্বপ্নগুলোকে ধরার জন্য হাত বাড়াই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.