নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি স্বেচ্ছাচারী; করি মন যা চায়! শাসন কিংবা শঙ্কায় নয়, আমি স্থির হই ভালোবাসায়।

Biniamin Piash

প্রত্যেকটা মানুষের মতই সাধারণ হয়েও নিজেকে অসাধারণ মনে করি!

Biniamin Piash › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুভ্রর বিয়ে

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৪৩

অ্যালার্মটা বেজেই যাচ্ছিলো।খানিকক্ষণ বালিশ চাপা দিয়ে ঘুমাবার চেস্টা করেও ব্যর্থ হলাম।শেষমেশ চোখ না খুলেই হাতড়ে মোবাইলটা খুজে বের করে অ্যালার্ম কেটে দিয়ে আবারো ঘুমাবার চেষ্টা করলাম।কিন্তু একি,তাও অ্যালার্ম বাজছে।এবারে সত্যিই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো,পাশে ফিরে দেখি শুভ্র হতচ্ছারাটা হাতির মত ঘুমুচ্ছে আর তার পরাণের বান্ধবী কলের পর কল দিচ্ছে।চোখটা বন্ধ করে শুভ্রর পশ্চাতদেশ বরাবর একটা লাথি মেরে খাট থেকে ফেলে দিলাম,নিচে পরে একবার “উহ,মাগো’ বলে আবার ঘুমাতে লাগলো হতচ্ছারাটা।এবারে আমার রাগ চরম সীমানায় পৌছালো।জগ থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে পুরোটাই শুভ্রর গায়ে ঢেলে দিলাম।এবারে নবাবাজাদা ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠলো আর পরিস্থিতি বোঝার জন্য চোখ পিটপিট করতে থাকলো।
-“সমস্যাটা কি তোর?” শুভ্র খানিকটা আহত গলায় বললো।
-“তোর সমস্যাটা কি?নিজে তো মরার মত ঘুমুচ্ছিস এদিকে তোমার বান্ধবি সেই সকাল বেলা থেকে কল দিয়ে অন্যের ঘুমের বারোটা বাজাচ্ছে।সপ্তাহে একটা দিন ও কি শান্তিতে ঘুমাতে দিবি না তোরা?”
এবারে শুভ্র লাফ দিয়ে উঠে মোবাইলটা হাতে নিয়ে বললো,
-“ধুর শালা,আগে বলবি না।আজকে আমার খবরই আছে।“
মোবাইলটা হাতে নিয়েই সে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
আমি আদিত্য রহমান আর আমার বন্ধু শুভ্র,আমরা দুজন একসাথেই থাকি।দুজনেই পড়াশোনা করছি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে।ছোটবেলা থেকেই আমাদের বন্ধুত্ব।আমি আমার লাইফ নিয়ে খুবই সিরিয়াস,কিন্তু শুভ্র সম্পূর্ণ বিপরীত।আমি সবকিছু প্ল্যান মত করার চেষ্টা করতাম,আমার জীবন ছিল সময়ের কড়া হিসেব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।কিন্তু শুভ্রর প্ল্যান বলতে কিছুই ছিলো না,যখন যা ইচ্ছে করতো তাই করতো।আমরা দুজন সম্পূর্ণ দুই ধরণের হলেও আমাদের ভেতরে বন্ধুত্বটা ছিল বেশ।ক্লাসে রেজাল্টের দিক থেকে আমি বরাবরই প্রথম সারিতে থাকি কিন্তু শুভ্র থাকে টেনেটুনে পাশ করাদের কাতারে।কিন্তু,শুভ্রর যে বিশেষ গুন আছে তার ছিটেফোটাও আমার মধ্যে নেই।সে একাধারে কবি,সাহিত্যিক,নায়ক-গায়ক,আর্টিস্ট ইত্যাদি ইত্যাদি।পুরো ক্যাম্পাসের প্রায় সব ছেলেমেয়েরাই শুভ্রকে একনামে চেনে।পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে তার বন্ধু-বান্ধবের অভাব নেই।কোথাও কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে তারমানে শুভ্র সেখানে হাজির।তার একজন সিরিয়াস গার্লফ্রেন্ড ও আছে।রিমা,সেই হাইস্কুল থেকেই তাদের প্রেম।এরমধ্যে কতবার যে তাদের ঝগড়া হয়েছে তার কোন ইয়ত্তা নেই।প্রতিবার ঝগড়া হলেই আমাকে থাকতে হত বিচারক হিসেবে। আর দোষটা যারই হোকনা কেন রায়টা প্রতিবারই একই থাকতো,শুভ্র তিনবার কানে ধরে উঠবস করে রিমাকে স্যরি বলবে।আমি রিমারও খুব ভালো বন্ধু ছিলাম,ওরা ওদের খুটিনাটি বিষয়গুলোও আমার সাথে শেয়ার করতো।
আমার অবশ্য কোনকালেই কোন গার্লফ্রেন্ড ছিলনা।কাউকে যে পছন্দ হয়নি ব্যাপারটা এমন না।হাইস্কুলে থাকতে একবার একটা মেয়েকে পছন্দ হয়েছিল,শুভ্রর পরামর্শ নিয়ে মেয়েটাকে একটা চিঠিও দিয়েছিলাম।পরদিন সকালে স্কুলে গিয়ে দেখি চিঠিটা আমাদের হেড মাস্টারের হাতে।পরের কাহিনী আর বলতে চাইনা।সেদিন থেকেই পণ করেছিলাম জীবনে আর যাইহোক প্রেম করবো না।এরপর অনেক সময়ই শুভ্র চেষ্টা চালাতো আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলার কিন্তু সেই ভয়াল দিনের কথা মনে করে আমি আর তার ফাঁদে পা দিতাম না।ব্যাপারটা নিয়ে শুভ্র আর রিমা দুজনেই আমাকে খুব ক্ষ্যাপাতো।প্রায় প্রতিদিন বিকেলে আমরা তিনজন আড্ডা দিতাম।শুভ্র গান গাইতো আমরা শুনতাম,কখনো কবিতা লিখে শোনাতো।ওর লেখার হাত যথেষ্ট ভালো ছিল।দুই একটা বইও বের হয়েছিল ওর।দিনগুলো খুব ভালোই যাচ্ছিলো।কিন্তু হঠাত করেই একদিন শুনলাম রিমির বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে।ওর বাসায় নাকি শুভ্রর ব্যাপারটাও জানাজানি হয়ে গেছে,তাই ওকে নাকি গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছে।এই খবর শোনার পর শুভ্রর মনের অবস্থা কি হয়েছিল তা আমি আঁচ করতে পেরেছিলাম,কিন্তু ওর মুখ দেখে মনে হয়েছিল যেন কিছুই হয়নি।আমি অনেক চেষ্টা করছিলাম রিমির সাথে যোগাযোগ করার জন্য কিন্তু ওকে ফোনে পাচ্ছিলাম না।শুভ্র,রিমি আর আমার বাড়ি একই গ্রামে হওয়ায় আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যা হবার হবে,বাড়িতেই যাবো।শুভ্র অবশ্য যেতে চাইছিলো না কিন্তু ওকে একপ্রকার জোড় করে নিয়েই রওনা হলাম।বাড়িতে এসে যা শুনলাম তাতে তো আমার চক্ষু চড়কগাছ।রিমির বিয়ে ঠিক হয়েছে আমাদের এলাকার চেয়ারম্যান সাহেবের ছেলের সাথে,আর আজকেই নাকি তার বিয়ে।এবারে আমি বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম,কিন্তু শুভ্রকে দেখে মনে হলো তার কোন চিন্তাই নেই,সে নিশ্চিন্ত মনে গান শুনছিলো।তারমানে যা করার এখন আমাকেই করতে হবে,বন্ধুর এত দিনের প্রেমকে বিফলে যেতে দেয়া যাবে না।চেয়ারম্যান সাহেবের ছেলেটা খুব বেশি চালাক টাইপের না,বড়লোক বাপের বুদ্ধিহীন ছেলে যাকে বলে।মাথার ভিতরে একটা ছক একে নিলাম।

সন্ধ্যায় বিয়ে বাড়ির এক কোণে আমি আর শুভ্র দাঁড়িয়ে আছি সবার অলক্ষ্যে।মিনিট বিশেক যাবত সবাই ছেলের জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু ছেলে লাপাত্তা।চেয়ারম্যান সাহেবের তো কাঁদো কাঁদো অবস্থা।এরই মধ্যে তাদের বাড়ির কাজের লোক এসে খবর দিলো কাজের মেয়ে সালেহাকেও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না!
এরপর দর্শকরা নিজের ইচ্ছেমত গল্প সাজাতে থাকলো আর সব দোষ গিয়ে পরলো চেয়ারম্যানের ঘাড়ে।মেয়ে পক্ষের লোকজনও খুব ক্ষেপে গেলো চেয়ারম্যানের ছেলের এরূপ কর্মকান্ডে।আর এই বেচারা “পাত্র” সে অন্য কোন এক বাড়ির বাথরুমে বসে মনের আনন্দে প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদন করছে।বিকেলে খুব কায়দা করে তাকে কিছু খাবার খাইয়ে ছিলাম,এসব তারই ফলাফল।যদিও এই মাথামোটা ছেলেটা এসবের কিছুই বুঝতে পারবে না।আগামী দু-চার ঘন্টায় তার আর বের হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।বাইরে থেকে তালা মেরে চাবিটা আমি নিয়ে এসেছি।যা করার এই দুঘন্টার মধ্যেই করতে হবে।মেয়ে পক্ষ আর ছেলে পক্ষ যখন ঝগড়ায় মত্ত তখন সুযোগ বুঝে রিমাকে বাথরুমে নিয়ে যাওয়ার নাম করে আমাদের কাছে নিয়ে আসলো তার চাচাতো বোন।এই চাচাতো বোনটাকেও ম্যানেজ করতে হয়েছে আমার,বেশ কিছু টাকাও খরচ করেছি নিজের গাট থাকে,পরে শুভ্রর কাছ থেকে উসুল করে নেবো।বাইরে একটা টমটম আগেই দাড় করিয়ে রেখেছিলাম,শুভ্র আর রিমিকে নিয়ে দ্রুতই সেখান থেকে কেটে পরলাম।ঘটনার আকস্মিকতায় শুভ্রর মুখ হা হয়ে গিয়েছিল।আমার মত একটা বোকা মার্কা ছেলে যে কিনা পুরো লাইফে একটাও মেয়ে পটাতে পারে নি সে কিভাবে এতবড় একটা প্ল্যান সাকসেসফুল করলো এটাই তার মাথায় ঢুকছিলো না।পরবর্তী দুই ঘন্টায় শুভ্র আর রিমার বিয়ের কাজটা সেরে ফেলে বাসায় ফিরলাম আর চেয়ারম্যানের ছেলেকেও বাথরুম থেকে উদ্ধার করলাম।তার চেহারা দেখে মনে হচ্ছিলো না তার বাথরুমে থাকতে খুব একটা কষ্ট হচ্ছিলো।
শেষ পর্যন্ত রিমার বাবা-মা শুভ্রকে মেনে নিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু চেয়ারম্যান যখন জানতে পারলেন সব কিছু প্ল্যান করাই ছিলো আর প্ল্যানটা ছিলো আমার তখন আমার কি অবস্থা হয়েছিলো তা আর উল্লেখ করলাম না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.