![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দানব আকৃতির ট্রাকটি সাই সাই করে ছুটে যাওয়ার সময় এক দলা বালি প্রাতরাশ হিসাবে ঢুকিয়ে দিয়ে গেল মজিদের হা করা মুখের ভিতর।খক খক করে কেশে উঠল সে।বিরক্তিতে কপাল কুছকে চেয়ে থাকল ছুটে যাওয়া ট্রাকটির দিখে।সে শোয়ে আছে বিরাট একটা কড়ই গাছের নিচে।সকালের সোনা রোদের ঝাপটা গাছের পাতার ফাক দিয়ে নিংড়ানো পানির মত ছুয়ে ছুয়ে পরছে তার নাকে,মুখে,গায়ে। কাশির তুপে ঠোটের ফাক দিয়ে বের হওয়া শ্লেষ্মা গুলো বাম হাত দিয়ে মুছে উদাস মনে শোয়ে শোয়ে উপরের দিখে তাকায় মজিদ। সবুজে হলুদে মেশানো ছোট ছোট পাতার ফাকে সাদায় নীলে মেশানো আকাশটা রোদের আভায় খল খল করে হাসছে।দেখতে দেখতে মজিদ আপনমনেই বলে বেঁচে থাকার খোরাক।অনেকটা নিচের দিখে নেমে আসা গাছের ডালে একটি দাঁড় কাঁক বসে আছে। সে দিখে চোখ পরতেই মজিদের মনে হল কাঁকটি তার পায়ের দিখে তাকিয়ে আছে।আর তখনই তার ডান পায়ের হাটুর নিচ থেকে গোড়ালির উপর পর্যন্ত পচে যাওয়া অংশের ব্যাথাটা মাথার ভেতর জানান দেয়।
কাঁকটা মনে হচ্ছে এখনও তাকিয়ে আছে তার পায়ের দিকে।সেটা দেখতে দেখতে মজিদের চোখ ছক ছক করে উঠলো। তাহলে কি ঘটনা ঘটে গেল।অবশেষে কি পায়ে পোকা ধরল।ভাবতে ভাবতে তার মনে হয়,শত শত সুচ ফালা ফালা করে দিচ্ছে তার পায়ের মাংস গোলকে।গতকাল রাতে গাজায় শেষ টানটা দেয়ার সময় মকবুল বলছিল-
অরে মইজ্জা পাউয়ের একটা হিল্লে কর,পরে কিন্তু পুকে ধরব।
মজিদ তৃপ্তির সাথে বলে-
সে ধরুক, যাদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষমতা আছে তারা কাউকে আশ্রয় দেয় না। আমি আশ্রয়হীন মানুষ কিছু পোকা মাকড়কে আশ্রয় দিতে পারলে খারাপ কি। তাছাড়া পচন পোকার কর্মকাণ্ড দেখার আমারও অনেকদিনের শখ।
মকবুল আর কোন কথা বলে না।তাকিয়ে থাকে মজিদের দিখে।মজিদের বড় ভাল লাগে, নেশা ভং করার সময় এই রকম দু একটা ভাবের কথা বলতে পারলে সে খুব আরাম পায়।
মকবুলকে মজিদ কথাটা একেবারে মিথ্যা ও বলে নাই। সত্যি সতিই এ সব পোকার কর্মকাণ্ড দেখার তার খুব শখ।কিছু কিছু মানুষ যারা গোটা পৃথিবীটাকে খেয়ে ফেলার চেষ্টা করছে,অথচ দিন শেষে ওরা এসব পোকার খাবারে পরিণত হচ্ছে।এসব পোকার কর্মকাণ্ড নিজ চোখে নিজের শরীরে দেখতে পারবে ভাবতেই এক ধরনের আনন্দ অনুভব করে মজিদ।
রোদের তেজ বারছে।কপালের চকচকে ঘামের উপর রাস্তার উড়ে আসা বালি গুলো বসে বসে যাচ্ছে। পায়ের ব্যাথাটা কাল বৈশাখী ঝড়ের মত কুন্ডুলি পাকিয়ে মাথায় উঠে বিস্ফুরণ ঘটাচ্ছে।কয়েকবার উঠে বসার চেষ্টা করেও সফল হল না মজিদ।পোকা কি সত্যি সত্যি ধরেছে কিনা দেখা দরকার।ব্যাথার ধাপটে কমর পর্যন্ত মনে হচ্ছে অবশ হয়ে গেছে।অযথা আর চেষ্টা করল না সে।কেমন যেন নেশা নেশা লাগছে।শোয়ে শোয়ে সে সামনের দিখে তাকায়, রাস্তার পাশের টঙ দোকানটায় শংকুকে দেখা যাচ্ছে।আয়েশ করে সিগারেট টানছে।মহা হারামি লোক।মজিদ শংকুর অনেক কাজ করে দিয়েছে।ভাল ধাচের কোন কাজ না সবই খারাপ কিছিমের কাজ।মজিদ অবশ্য এসব ভাবে না। কাজের আবার ভাল মন্দ কি?টাকা পেয়েছে কাজ করেছে। তাছাড়া খারাপ কাজ ও তো কাউকে করতে হবে না হয় তো ভালর মূল্যটা কোথায়।
পায়ের ঝামেলাটা হওয়ার পর থেকে শংকু আর তার খোঁজ নেয় নাই।মজিদ তাই শংকুকে ডাকবে কিনা বোজতে পারছে না।অবশ্য এই অবস্থায় শংকুর উপকারটা ও তার দরকার। কিছু টাকা পয়সার বেবস্থা না করলেই নয়।শংকু তার উপকার করবে কিনা সেটাও একটা কথা।মানুষ ভাল কাজগুলো করে ইচ্ছার বিরুদ্ধে আর খারাপ কাজ গুলো করে নিজ ইচ্ছায়,আনন্দের সাথে।তবে খারাপ মানুষের মাঝে ছোটখাট ভাল কাজ করার একটা প্রবনতা থাকে।মজিদ নিজে ও খারাপ মানুষ তার ও মাঝে মাঝে ভাল কাজ করতে মন চায়।কিন্তু সুযোগ কই,ভাল কাজ করা যেমন কষ্ট পাওয়াটা ও কষ্ট।
মজিদ শংকুকে ডাকার চেষ্টা করে।গলা দিয়ে শব্দ বের হয় না।গলা শুকিয়ে কাঠ,মাথায় কেমন নেশা নেশা ভাব,তীব্র একটা ব্যাথা পা থেকে সব কিছু ভেঙ্গেচুড়ে উপরে উঠছে। সূর্যের আলো মনে হচ্ছে ভাঙ্গা কাচের গুড়ার মত এসে চোখে বিধচে।সেটাকে বাধা দিতেই যেন মজিদ নিঃশব্দে চোখ বুজে।
গত বছর এতটুক লেখার পর আব্দুল মজিদকে নিয়ে আর লিখি নাই।কিন্তু কয়েকদিন যাবৎ আব্দুল মজিদ আমার মাথায় ঢুকে আছে। ঢুকে যে বসে আছে তা না রীতিমতো কলকাঠি নাড়ছে।ভয়াবহ ব্যাপার।মজিদের একটা দফারফা তাড়াতাড়ি করা দরকার।
©somewhere in net ltd.