নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই আছে নেই, এই আছে নেই, জীবন চঞ্চল

ফাতেমা-তুজ-জোহরা

আশা নিয়ে ঘর করি....

ফাতেমা-তুজ-জোহরা › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্টকহোম ভাইকিং ভিলেজ

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ২:১৯

আমার সুইডেনে আসার প্রায় বছর হতে চলল, কিন্তু নানান ব্যস্ততা, পড়াশুনার চাপ এবং আসার পরপরই শীত শুরু হওয়ায় স্টকহোমের আশেপাশের অনেক জায়গাই এখনও দেখা হয়ে ওঠেনি। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে তাই মাঝে মাঝেই আমি এবং আমার বর বেরিয়ে পড়ি। অল্প দূরত্বের জায়গাগুলোতে এক বেলা বেড়িয়ে আসি। অনেক সময় মেট্রো, কমিউটার ট্রেন বা লাইটার ট্রেনে চেপে বসি। শেষ স্টপেজে গিয়ে ঘুরি-ফিরি, কফি খাই তারপর চলে আসি। বলা হয়, স্টকহোমের মেট্রোলাইন পৃথিবীর দীর্ঘতম এক্সিবিশন! কেন? সেটা আরেক গল্প, আপাতত কিছুদিন আগে ঘুরে আসা ভাইকিং গ্রামের কথা বলবো।
স্টকহোম মূল শহরের উত্তর পূর্ব দিকে একেবারে সমুদ্রের তীরের শহর নর্তালিয়ে। পুরো স্টকহোমেই, শহরের ভেতর দিয়ে চলে গেছে অনেক হ্রদ এবং লেক। তবে ম্যাপে যদি নর্তালিয়ের দিকে তাকাই তবে দেখা যায়, নীল পানি একেবারে জালের মত বিছিয়ে আছে। এক রৌদ্রজ্বল শনিবার হঠাৎই মনে হলো, সামার চলে যাচ্ছে নর্তালিয়ে ঘুরে আসা হয়নি। যেই ভাবা সেই কাজ! বেরিয়ে পড়লাম দুজনে। শহর থেকে একটাই বাস যায় সময় বিশেষে দশ মিনিট, পনের মিনিট, আধাঘন্টা, একঘন্টা পর পর। দোতালা বাস, বাসের ভেতর ওয়াইফাই আছে এবং পুরো স্টকহোমের ভেতর যাতায়াত করার যে ট্রাভেল কার্ড আমরা কিনি সেটাতেই হয়, আলাদা টিকেট কিনতে হয় না। বাসটি শহর এলাকার বাইরে দিয়ে যায়, দোতলায় বসলে দেখা যাইত দুপাশে বিস্তৃত মাঠ, হইতো সেখানে যব বপন করা হয়েছে। কখনো মাঠ ভরা শুধুই ঘাস বাতাসে দোল খায় । আবার হয়তো অনেকটা পথের দুপাশেই পাইনের বন। দিনের বেলাতেও অন্ধকার দেখায়। মোটামুটি এক ঘন্টা দশ মিনিট লাগে নর্তালিয়ে পৌঁছাতে ।
নর্তালিয়ে তো আসলাম, এখন কি করা যায়? কোথায় যাওয়া যায়? বাসে বসেই অনলাইনে দেখছিলাম নর্তালিয়ার কাছেই একটি গ্রাম আছে, ভাইকিং ভিলেজ যেটাকে সবচে বেশি রেকমেন্ড করা হয়ে। বাস স্টপেজে পেছনেই নদী এবং নদীর তীর গেলেই পুরনো শহর। বেশ কিছু ডক আছে নৌকা নোঙর করার, পার্ক, গাছপালায় সাজানো ছিমছাম শহরতলি। আমরা নদীর তীর পুরনো শহর ঘুরে ফিরে, ঠিক করলাম ভাইকিং ভিলেজে যাব। এজন্য আরেকটি বাসের উঠতে হবে। বাসটি নর্তালিয়ে থেকে স্টকহোমেই আরেকটা কমিউনে যাবে। বলা হয়নি, কমিউন হলো এক একটি বড় এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠা প্রশাসনিক এলাকা। স্টকহোমে স্টকহোম কমিউন ছাড়াও আরো ১০টি কমিউন আছে। নর্তালিয়া থেকে সিংগোগামী বাসে দশ মিনিটের মত যাবার পর আরেকটু হেটে পৌঁছনো যায় সেখানে। আমরা স্ভ্যানবারিয়া আফার নামক জায়গায় নামলাম। এবার হেটে একটু পেছনে যেতেই দেখি সামনে এক হ্রদ। হ্রদের পাশে জঙ্গল এবং জঙ্গলের মাঝেই ভাইকিং গ্রামে যাওয়ার দিক নির্দেশ করা। সেই মত চার পাঁচ মিনিট হাটার পর দেখি আমাদের সামনে ভাইকিং গ্রামের প্রবেশদ্বার।

মূল প্রবেশের পেরিয়ে বনের ভেতর দিয়ে খানিকক্ষণ চলার পর গ্রামে ঢোকার সদর দরজা। দরজা পার হতেই সামনে পড়বে গ্রামের দৃশ্য আর প্রবেশ পথের পাশেই বোর্ডে টানানো গ্রামটি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য। ভাইকিং গ্রাম মূলত একটি ওপেন মিউজিয়াম। তিন দিক থেকে সুইডেনের অন্যতম বড় লেক এরিক লেক ঘিরে রাখা জায়গাটিকে ভাইকিং আমলের একটি ছোট্ট গ্রামের মত করে তৈরি করা হয়েছে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলে একসময় যে জলদস্যুদের বিচরণ ছিল, কেমন ছিল সেই সভ্যতার মানুষরা, সেটা উপস্থাপনের একটা প্রয়াস। তিনদিকে পানি ঘেরা গ্রামটার বাইরে একদিকে আছে আয়রন এজের গ্রেভইয়ার্ড। গ্রামে স্থাপন করা হয়েছে বেশ কিছু রুনস্টোন বা ভাইকিং আমলের শিলালিপি (https://en.m.wikipedia.org/wiki/Runestone)। নর্তালিয়া ও এর আশেপাশের এলাকাতেই পাওয়া গেছে বেশ কিছু পাথর। গ্রামটি দেখলে মনে হবে প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটা গ্রাম। কিন্তু ঘোরাঘুরি করলে বোঝা যায় খুব যত্ন করেই এভাবে রাখা হয়েছে। গ্রামের মধ্যে কিছু মানুষ সেই পুরানো ভাইকিং আমলের কাপড় পরে ঘোরাঘুরি করছিল। আসলে ওরাই গ্রামের দেখাশোনা করে। দর্শনার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। আমরা যেদিন গিয়েছিলাম পরদিন শিশুদের একটা উৎসব ছিল, তারই প্রস্তুতি চলছিল। গ্রামে গ্রাম প্রধানের বাড়ি ছাড়াও আছে সাধারন মানুষের ঘরবাড়ি, রান্না ঘর, শোবার ঘর ইত্যাদি। ঘরের ভেতর কাঠের মাচায় ভাল্লুকের চামড়ার বিছানা পাতা। যেন এক্ষুনি কেউ এসে শুয়ে নাক ডাকতে শুরু করবে। আছে ভাড়ারঘর, তাঁতঘর, ফসলের ঘর, ওয়ার্কশপ যেখানে নৌকা বানানোর প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ছাড়াও বাসন কোসন ইত্যাদি বানানো হয়। পাশে নৌকা বানানোর ঘরে একটা নৌকা উল্টো করে রাখা। যেন, শেষ কোট রং দেয়া হলেই ভাসবে সমুদ্রে। শেষ মাথায় গাছের সাথে দুটো নৌকা বাধা; ভাইকিং ভিলেজে যদি নৌকা না থাকে তবে কি চলে! ডান দিকে জঙ্গল আর গ্রামের সীমানার ঘরগুলোকে স্টেজ বানিয়ে ফেলা যায়। পরদিন শিশু উৎসবের জন্য সেখানে সাজ সজ্জা চলছিল। আরেকটু সামনে গেলে, বেড়া দেয়া একটা গোল জায়গা। সেখানকার গাইডের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ওই জায়গায় তারা বিভিন্ন হার্ব লাগায়। ওরকম আরো একটি বাগান আছে গ্রামের আরেক প্রান্তে। বাঁদিকে পানির উপরে কাঠের মাচা করে বসার জায়গা। মাঝে টেবিল পাতা আর পাশে বার্বিকিউ চুলা। যেন পোড়া মাংস আর পানীয় খেতে খেতে ভাইকিংদের চলে ভাইকিংদের আলাপচারিতা অথবা পরবর্তী সাগর অভিযানের পরিকল্পনা। আরেক পাশে এগিয়ে গেলে চোখে পড়বে পাথর কেটে কাঠের পাত বসিয়ে বানানো সিড়ি নেমে গেছে পানিতে। সেখানে কাঠে ঘাট পানির তালে দুলছে। বোঝাই যায় ভাইকং মেয়েদের গোসলের জন্যই ওই ঘাট। গ্রামের মাঝামাঝি জায়গায় অনেকটা ফাঁকা, দুই সারি বেঞ্চ পাতা আরেক মাথায় গ্রাম প্রধানের চেয়ার পাতা। সে এক বিশাল চেয়ার! আমরা দুজনেই একসাথে সেই চেয়ারে অনায়াসে বসে পড়লাম! গ্রাম প্রধানের চেয়ার আর সন্ধ্যার আড্ডার জায়গার মাঝে ফাঁকা জায়গায় আছে কয়েকটি টোটেম। এর মধ্যে একটি দেখে আমার হিন্দু দেবী কালীর কথা মনে হয়েছিল। ছবিটা দেখলে যে কেউ বুঝবে কেন।

ভাইকিং ভিলেজ মোটামুটি সারা বছর খোলা থাকে। তবে উইন্টারে কোন ধরনের অনুষ্ঠান থাকে না। সামারে বিশেষ করে জুন-জুলাই মাসে অনেক ধরনের উৎসব চলে। কখনো কখনো সারারাত চলে বিভিন্ন আয়োজন। কেউ চাইলে রাতে থেকে যেতে পারে গ্রামে তবে ঘুমাতে চাইলে সে ব্যবস্থা নিজের করতে হবে। গ্রামটা একটু ভেতরে বলে বাস থেকে নেমে কিছুটা হাটতে হয়। গাড়ি নিয়েও যাওয়া যায়, মূল ফটকের বাইরে গাড়ি রাখার ব্যবস্থা আছে। কোন ধরনের প্রবেশ মূল্য নাই, তবে মিউজিয়াম থেকে ২০০ থেকে ২৫০ ক্রোনার বিনিময়ে গাইডের ব্যবস্থা করা হয়। তবে তার জন্য গ্রুপের সদস্য চল্লিশ জনের বেশী হতে হয়। গ্রামের তিনদিকেই পানি এবং তীরের পাথরগুলো ভীষণ পিচ্ছিল তাই একটু সাবধান থাকা ভালো। লেকের বাতাসে গ্রাম ঘুরে দেখতে দেখতে ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত হলেও কিছু করার নাই, কাছে পিঠে কিচ্ছু পাওয়া যাবেনা। কাছাকাছি খাবারের যে দোকান, সেটাও বাসস্টপেজের কাছে। তাই সঙ্গে করে কিছু খাবার বিশেষ করে পানি নিয়ে নেয়া ভালো।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৩:১৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


"আমার সুইডেনে আসার প্রায় বছর হতে চলল, কিন্তু নানান ব্যস্ততা, পড়াশুনার চাপ এবং আসার পরপরই শীত শুরু হওয়ায় স্টকহোমের আশেপাশের অনেক জায়গাই এখনও দেখা হয়ে ওঠেনি। "

-ওখানে শীতকাল এক বছরের কাছাকাছি? কখন গরমকাল আসবে?

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:৪২

ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেছেন: হাহা গরম কালেই গিয়েছিলাম। গরমের শেষ দিকে। এখন আবার শীত :(

২| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৪:৪১

আমি মাধবীলতা বলেছেন: ভ্রমণ কাহিনী পড়তে সবসময়ই ভালো লাগে....সুন্দর পোস্ট আপু !! :)
তবে আরো কিছু ছবি হলে ভালো হতো না ?

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:৪৫

ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেছেন: আসলেই ভালো হতো! কিন্তু লিখবো যে আগে প্লান ছিল না। তাই ওভাবে ছবিও তোলা হয়নি। অনেক ধন্যবাদ, এরপর নিশ্চয়ই বেশি বেশি ছবি তুলবো

৩| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:৫২

পুলহ বলেছেন: আপনার বর্ণনা সুন্দর, পড়ে আনন্দ পেয়েছি।
একটা জিনিস অবাক লেগেছে, গ্রামটা একটা লিভিং মিউজিয়াম কিন্তু এর কোন এন্ট্রি ফি নেই!! তার মানে এখান থেকে কর্তৃপক্ষ/ সরকারের রেভিনিউ যদি কিছু থাকে, তবে সেটা শুধুমাত্র গাইড ভাড়া। তাও গাইড নিতেও তো দেখলাম সার্টেইন ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল করা লাগে!
"লেকের বাতাসে গ্রাম ঘুরে দেখতে দেখতে ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত হলেও কিছু করার নাই, কাছে পিঠে কিচ্ছু পাওয়া যাবেনা। "-- এটা পড়েও কিছুটা অবাক হলাম। তাহলে ঐ গ্রামে যারা থাকেন- তাদেরও কি কোন দোকানপাট দরকার হয় না!
শুভকামনা জানবেন আপু !

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:৫৫

ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেছেন: এরকম অনেক মিউজিয়াম আছে এখানে যার এন্ট্রি ফি নেই। এসব এখানে সরকারের সোশ্যাল ফান্ডে চলে। সরকারের প্রধান আয় ট্যাক্স । এদেশে যার আয় যত বেশি তার ট্যাক্স ও তত বেশি। কিন্তু সবাই সেধেই দেয়। কারন জানে এটা বিভিন্ন ভাবে ঘুরে ফিরে তাদের কাছে যাবে।
গ্রামে যারা থাকে তারা তো ঠিক অধিবাসী না, ওখানে থাকাটাই একটা জব তাদের। স্টেজের পেছন দিকটায় রান্না ঘরের মত একটা জায়গা আছে ওখানে প্রচুর খাবারের মজুত দেখেছি। তাছাড়া ওরা শিফট ভাগ করে কাজ করে।
দেরিতে উত্তর দেয়ার জন্য দুঃখিত।

৪| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:১৯

কালীদাস বলেছেন: আরে সেইম কাজ তো আমিও করতাম/করি ফ্রি টাইম পেলে। একটা র‌্যান্ডম বাস বা ট্রামে উঠে পড়ি আর দেখে আসি শহরের নতুন কোন অদেখা জায়গা! আরও কিছু ছবি আশা করেছিলাম পোস্টে :)

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:৫৭

ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেছেন: আসলেই ভুল হয়েছে। মোবাইল ক্যামেরায় অত ভালো ছবি আসছিল না আর ভাবলাম সবাই ছবি পছন্দ করবে কিনা...

৫| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:৫০

অন্তু নীল বলেছেন: বর্ণনা ভালো লাগল।

পরবর্তী পোস্টে আরো ছবি আশা করছি।

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:৫৭

ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেছেন: ধন্যবাদ, নিশ্চই দেবো

৬| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১০:০২

নিষ্‌কর্মা বলেছেন: আপনার লেখা পড়ে মনে হচ্ছে আপনি ওখানে [মানে ঐ দেশে] যাবার পরে সেই যে শীত কাল শুরু হয়েছিল, তা Present continuous Tense-এর মত চলিতেছে আজও!

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:৫৮

ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেছেন: হু আবার চলে এসেছে শীত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.