নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সোনার কেল্লা

সোনার কেল্লা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিগ বয়....

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:২৮


সকাল ৯ টা বাজে। আম্মু এসে জানালার পরদা খুলে দিল। আম্মু অনেকক্ষণ ধরেই বকবক করে কান ফাটিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু আমি আজকে বিছানায় চুপটি করে শুয়ে আছি। আমার যে ভীষণ জ্বর। আজকে স্কুল বাদ, পড়া বাদ, মিসের বকা বাদ। কি মজা!


আমাকে সবাই খুব পিচ্চি মনে করলেও আমি কিন্তু পিচ্চি বাচ্চা নই। গেল মাসে আমি ছয়ে পড়েছি। আগের মোজাগুলি আমার ফেলে দিতে হচ্ছে। রাতের জামাটা এখন আর গায়ে আঁটছে না। আমি এখন বিগ বয়। তারপরও আম্মু আমাকে মিকি মাউস আঁকা টিফিন বক্স কিনে দেয়। ইস! আম্মুটার বুদ্ধি হল না।


আম্মু-আব্বু অফিসে চলে গেল। যাবার আগে আম্মু আমার গালে বড় একটা চুমু খেল। আমি তো লজ্জায় মরে গেলাম। নাহ্! আম্মুটা বড় হল না।

বাসায় আমি এখন একা। প্রতিদিন এসময় তালা দিয়ে সবাই অফিসে যায়। আমিও যাব একদিন অফিসে,আব্বুর মত বড় লাঞ্চবক্স নিয়ে। কিন্তু তার জন্য মিসের কথামত ভালোভাবে পড়তে হবে,কবিতাগুলি মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় লিখতে হবে।


সকাল ১১টা অবধি আমি cartoon network নিয়ে ব্যস্ত থাকলাম। একা একাই হো হো করে হাসলাম। আম্মুর রেখে যাওয়া পাউরুটি –জ্যাম খেয়ে নিলাম। হঠাৎ দেখলাম বাসার মেইন দরজা খোলা!!

আমার খু-উ-ব হাসি পেল। আব্বুটা কি বোকা। আজকে তালা লাগাতে ভুলে গেছে। যাই হোক-আমি তো এখন বিগ বয়। আমার এতটুকুও ভয় করছে না। আমি জুতো-মোজা পড়ে বাইরে বেরিয়ে গেলাম।

দারোয়ান কাকু মুখ হা করে ঘুম পাড়ছিল। এটাই তার কাজ। বকা খেয়েও শিক্ষা হয়না। তবে আমার মিস বকা দিলে মনে হয় ঠিক হয়ে যেত।

আমি একদম আমাদের বিল্ডিং এর বাইরে এসে দাঁড়ালাম। তারপরে হাঁটতে থাকলাম। আগে কখনো একা হাঁটিনি। পাশের বাড়ির ঝন্টুদের বাড়িতে গেলেও আম্মু হাত ধরে নিয়ে যায়। আজকে তাই অন্যরকম মজা লাগছে।

বড় রাস্তাটা আমি সহজেই পার হয়ে গেলাম। আমাকে রাস্তার মাঝে হাঁটার জায়গা করে দিতে দুইটা গাড়ির মাঝে ঠোকাঠুকি লেগে ড্রাইভার দুটোর ঝগড়া বেধে গেল। বড়দের কাজই হল মুখ খিঁচিয়ে ঝগড়া করা। আমাদের মত টিভি দেখে হাসতে পারে না?

ইয়া লম্বা একটা শপিং মলের সামনে দাঁড়ালাম। আমার বড় হয়ে যখন অনেক পয়সা হবে তখন আমিও এরকম মল বানাব। মলের টিভিগুলিতে সারাদিন টম এণ্ড জেরি দেখাবে, রেস্টুরেন্টে পাওয়া যাবে কেবল চকলেট আর আইসক্রিম। বড়রা সেগুলি খেতে পারবে না বলে লম্বা লম্বা শ্বাস ফেলবে। ওদের যে শুধু পেটের অসুখ আর মাথার ব্যারাম!!

মল ছেড়ে আমি park এর দিকে গেলাম। এখানে আমার বয়সী কেউ নেই। সবাই স্কুলে! একটা ছেলে আর একটা মেয়ে বেঞ্চে বসে কুটকুট করে বাদাম খাচ্ছে আর ফ্যাচফ্যাচ করে হাসছে । আমাকে দেখে ছেলেটা বলল-“ এই দুষ্টু বাবু, এখানে দাঁড়িয়ে কি শুনছ ? স্কুল ফাঁকি দিয়েছ না কি?”

আমি মেজাজ গরম করে বললাম-“আমি মোটেও বাবু নই। আর আপনারা এভাবে ফ্যাচফ্যাচ করে হাসবেন না। লোকজন শুধু আপনাদেরই দেখছে”

মেয়েটার হাত থেকে বাদামের ঠোঙা পড়ে গেল। ছেলেটার মুখ হা হয়ে গেল। আমি হাঁটতে থাকলাম। প্রায় দুপুর হয়ে গেল। আমি ঘামছি। ইস! ঘামের গন্ধ আমার মোটেও পছন্দ নয়।

ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দেখলাম একটা অন্ধ ফকির বিশ্রী সুরে পয়সা চাইছে। কয়েকটা পয়সা থালাতে পড়তেই সে ঝোপের আড়ালে চলে গেল। চোখ থেকে কালো চশমা খুলে পয়সাগুলির সাইজ দেখতে লাগল।ফকিরটা মোটেও অন্ধ নয়। আমার যে কি হাসিটা পেল!!

এখন বাসায় যাওয়া উচিত। রাস্তা আমার বেশ মনে আছে। বাসার সামনে দেখি একগাদা লোকের ভিড়। গতবার বাড়িওয়ালা চাচুর বাবা মরার সময় এরকম ভিড় হয়েছিল। একটা পুলিশ আংকলকে দেখে আমার বুক দপ করে উঠল ।

তিনতলায় গিয়ে দেখি আব্বুকে জড়িয়ে আম্মু হাউমাউ করে কাঁদছে। কোন বোকাটা এদের দুজনকে খবর দিল? নিশ্চয়ই ঝন্টুর আম্মুর কাজ়। যখনই টের পেল আমি বাসায় নেই সাথে সাথে আব্বু-আম্মুকে ফোন লাগাল। নাহ্! এরা আমাকে বড় হতে দিবে না।

আম্মু আমাকে দেখেই ছুটে এল। এবার আমাকে ধরে কাঁদতে লাগল। আমি তো লজ্জায় মরে যাচ্ছি। ওদিকে আবার ঝন্টু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। আর আম্মু চুমু খেয়ে খেয়ে আমার গালটা লাল বানিয়ে দিল। ইস! আম্মু বোঝোনা কেন যে আমি এখন বিগ বয়?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.