নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বুনোগান

বুনোগান › বিস্তারিত পোস্টঃ

জ্ঞান ও সমাজ

১৬ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:১৫

ছবিঃ সংগ্রহীত

জ্ঞান তিন ধরনের । ইন্দ্রিয় লব্ধ জ্ঞান ,ভাষা জ্ঞান এবং অনুসন্ধানী জ্ঞান। অনুসন্ধানী জ্ঞান আবার দুই ধরনের। যুক্তিবাদী জ্ঞান ও পরিমাপগত জ্ঞান । অনুসন্ধানী জ্ঞান একটি প্রকল্প দাঁড় করায় । প্রকল্পটি যদি বাস্তব পরীক্ষা-নিরীক্ষার দ্বারা প্রমাণিত হয় তাহলে সেটাই হলো প্রকৃত জ্ঞান । পরিমাপগত জ্ঞান দ্বারাই প্রকৃত জ্ঞানে উপনীত হওয়া যায়।

সকল জীবের ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞান রয়েছে । এই জ্ঞানের দ্বারা সে প্রকৃতি থেকে খাদ্য আহরণে সক্রিয় হয় এবং জীবনের মৌলিক কাজ গুলি সমাধান করে । প্রাকৃতিক নিয়মে বেঁচে থাকা ও বংশগতি রক্ষা করার সংগ্রামে এই ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞানই যথেষ্ট । ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞান বাইরের জগত সম্পর্কে তথ্য দিয়ে থাকে। বিবর্তনীয় ধারায় প্রাণীজগতে বিভিন্ন প্রাণীর ইন্দ্রিয় বিভিন্ন মাত্রায় বিকশিত হয়েছে । মানুষ দর্শন ইন্দ্রিয় ও শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের প্রতি বেশি নির্ভরশীল। এই ইন্দ্রিয়গুলির দ্বারা মানুষ বস্তুজগতের অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রমাণ লাভ করে। কিন্তু বস্তুজগতের সম্পূর্ণ সঠিক তথ্য সে লাভ করে না। যেমন সূর্য দেখে সে সূর্যের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পারে কিন্তু সূর্য যে পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরছে না এই তথ্য সে লাভ করে না। এই তথ্য জানতে হলে তাকে অনুসন্ধানের আশ্রয় নিতে হয়। এই সম্পর্কে যুক্তিবাদী অনুসন্ধানকারীরা বিভিন্ন প্রকল্প হাজির করে। তারা মনে করে সূর্য আপনা আপনি পূর্ব থেকে পশ্চিমে যেতে পারে না। কোন মহাশক্তিশালী দেবতার আদেশে সূর্য এই পরিভ্রমণ করে থাকে। আর পরিমাপগত অনুসন্ধানকারীদের প্রকল্প হল পৃথিবী তার কক্ষপথে ঘুরছে বলে এই অবস্থা ঘটছে। পর্যবেক্ষণের দ্বারা এই পরিমাপগত প্রকল্পটি সত্য তথ্য হিসেবে গৃহীত হয়। মানুষের পূর্বপুরুষেরা লক্ষ লক্ষ বছর শুধুমাত্র এই ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞান ব্যবহার করেই বেঁচে ছিলেন । ভাষা আবিষ্কারের পর মানুষ সবকিছুর নামকরণ শুরু করে । প্রকৃতি র সকল বস্তু , সকল কর্ম , সকল গুনাগুন এবং প্রকৃতি ও সমাজের সকল নিয়ম কানুন নামকরণ ও সংজ্ঞায়িত করে । এখান থেকেই মানব সভ্যতার শুরু । এই ভাষার মাধ্যমে মানুষ তাদের জ্ঞান সঞ্চিত করে রেখেছে , যা বংশ পরম্পরায় প্রবাহিত হয় । এই জ্ঞান সামাজিক জ্ঞান বা জ্ঞানের সামাজিক তথ্য ভান্ডার । ভাষা আবিষ্কারের পর থেকে সাধারণ মানুষের ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞানের সাথে এই সামাজিক জ্ঞান যুক্ত হয় । বর্তমান আধুনিক যুগেও ব্যক্তি মানুষের জ্ঞান এই দুইয়ের সংমিশ্রণ ।
দূরত্বের কারণে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে অসংখ্য ভাষার উদ্ভব হয়েছে । এই ভাষা অসংখ্য সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে । বিমুর্ত নামকরণ ও সংজ্ঞার অর্থ বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন । অন্যান্য প্রাণীর মতই মানুষের পশু প্রবৃত্তি হলো টেরিটরি ভিত্তিক সমাজ গঠন করা । বিচ্ছিন্ন টেরিটরি ভিত্তিক সমাজের ভাষা ও সংস্কৃতি বিভিন্ন , বিভিন্ন তাদের সামাজিক তথ্য ভান্ডার । ব্যক্তি মানুষ তার নিজস্ব টেরিটরি ভিত্তিক সমাজে বসবাস করতে একাত্মতা বোধ করে । ভিন্ন সমাজের সংস্কৃতি ও সামাজিক তথ্য ভান্ডার তার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়না । নিজ টেরিটরি রক্ষা করার পশু প্রবৃত্তি থেকে বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রতি তার প্রতিরোধী মনোভাব থাকে । সব সংস্কৃতিতেই রয়েছে নিজস্ব ধর্ম বিশ্বাস । আগ্রাসনের ফলে বিজাতীয় ধর্ম ও সংস্কৃতির কিছু অংশ গ্রহণ করলেও টেরিটরি ভিত্তিক সমাজ নিজস্ব সংস্কৃতি পুরোপুরি বর্জন করতে পারে না ।

অন্যান্য প্রাণীদের মতই মনুষ্য সমাজে প্রাথমিক শ্রেণীবিন্যাস বা হায়ারিকি রয়েছে । এর একটি হলো লিঙ্গ ভিত্তিক ও আরেকটি হলো আলফা নারী বা পুরুষ ভিত্তিক । যদিও আদিম সমাজের এই বিভাজন বৈষম্যমূলক নয় বরং সহযোগিতামূলক এবং বিবর্তনীয় ধারার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ । আলফা নারী ও পুরুষকে কেন্দ্র করেই প্রাথমিক পরিবার , বর্ধিত পরিবার , গোত্র ও সমাজ গড়ে ওঠে । টেরিটরি ভিত্তিক সমাজের সকল কর্মকান্ডের দিক নির্দেশনা প্রদান করে এই আলফা নারী ও পুরুষ । অনুসন্ধানী মূলক জ্ঞান মূলত এদের দ্বারাই অর্জিত হয় । সমাজের সকল ট্যাবু , নিয়ম কানুন , রীতি-নীতি ,ধর্মবিশ্বাস , কৃৎকৌশল উদ্ভাবন তথা সংস্কৃতি এদের হাতেই তৈরি হয় । সমাজের অন্য সদস্যরা এদের অনুসরণ করে থাকে । সাধারণ সদস্যরা জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে আলফা নারী-পুরুষদের উপরই নির্ভরশীল । ইন্দ্রিয় লব্ধ জ্ঞানের বাইরে এরা যেতে চায়না । এরা বাড়তি জ্ঞান লাভ করে আলফা পুরুষ ও নারীদের কাছ থেকে। আবার আলফা পুরুষ ও নারীদের মধ্যে যারা যুক্তিবাদী প্রকল্পের মাধ্যমে যে বিভিন্ন কল্পকাহিনী প্রচার করছে অনুসরণকারীদের মধ্যে তার প্রভাব বেশি। এভাবে সমাজে অনুসন্ধানকারী ও অনুসরণকারী এই দুই ধরনের মানুষ দেখা যায় ।

অনুসরণকারী মানুষেরাই সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ । এরাই রাজনৈতিক ভাষায় জনগণ । এদের জ্ঞান ও মতামতের উপর সমাজের স্থিতিশীলতা নির্ভর করে । কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তাদের জ্ঞান ও মতামত বেশিরভাগ সময় তাদের নিজস্ব নয় । তাদের জ্ঞান গড়ে ওঠে সামাজিক জ্ঞান থেকে । আর এই সামাজিক জ্ঞান ও মতামত নিয়ন্ত্রণ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক, ধর্মীয় নেতৃত্ব, বুদ্ধিজীবী, গুরু ও সামাজিক মিডিয়া গুলো। সামাজিক রীতিনীতি, শাসকশ্রেণীর আইন কানুন, মিডিয়ার প্রচারণার প্রতি এরা প্রায়সই বিশ্বস্ত থাকে। শাসক শ্রেণীর মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন জনগণের মধ্যেও বিভাজন ঘটায়। যদিও শাসকশ্রেণীর রাজনৈতিক স্বার্থের সাথে জনগণের শ্রেণী স্বার্থের কোন সম্পর্ক থাকে না। শাসকশ্রেণীর প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেললে জনগণ নতুন কোনো বিরোধী নেতৃত্ব ছাড়া নিজেরা সংগঠিত হতে পারে না। নতুন নেতৃত্বের প্রতি আস্থাও শ্রেণীর স্বার্থের উপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে নতুন নেতৃত্ব কতটুকু ক্যারিশম্যাটিক। তখন নতুন নেতৃত্বের বক্তব্যকেই জনগণ তাদের নিজেদের মতামত হিসেবে মেনে নেয়। এই সমস্ত কিছুই প্রবৃত্তিগত আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ।

সামাজিক এই অর্ধসত্য ও কল্পকাহিনী মিশ্রিত জ্ঞানের প্রতি অনুসরণকারীদের অনুভূতি ও বিশ্বাস এত প্রবল যে পরিমাপগত জ্ঞানের সত্যতা তারা স্বীকার করতেই চায় না। যদিও প্রযুক্তিগত সকল সুবিধা গ্রহণে তাদের কোনো আপত্তি নেই। এরাই সমাজ গরিষ্ঠ এবং এটাই সামাজিক বাস্তবতা। আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণার স্থান অতি নগণ্য। যতটুকু রয়েছে সেটাও সামাজিক বিজ্ঞান ও দর্শনের সাথে সংযুক্ত করা হয়নি। ফলে সাধারণ মানুষের মনোজগতে বিজ্ঞান শিক্ষা কোন প্রভাবই ফেলতে পারছে না। অপরদিকে সমাজে যুক্তিবাদী জ্ঞানের যে নিয়মিত প্রচার ও প্রচারণা রয়েছে সেই তুলনায় বিজ্ঞান ভিত্তিক জ্ঞানের প্রচার খুবই নগণ্য । এই প্রচারে বিজ্ঞানমনস্কদের এগিয়ে আসা খুবই জরুরী।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:১০

জুল ভার্ন বলেছেন: অত্যন্ত জ্ঞানগর্ভ পোস্ট!

২| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৪৫

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।জ্ঞান সম্পর্কে তাত্বিক আলোচনা এবং সেই সাতে তার সামাজিক প্রয়োগ,পড়ে ভাল লাগলো।জ্ঞান মানুষের মনে সহজাত না এবং বস্তুর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জ্ঞান আহরন করা যায় না।বাভবাদিরা যেটা অহরহ বলে।বস্তুকে পরিবর্তন করে এবং পর্যবেক্ষণ করেই জ্ঞান আহরন করা সম্ভব।
আরো এমন লেখা চাই।

৩| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৪৪

রাজীব নুর বলেছেন: টাকা পয়সার চেয়ে বেশি মূল্যবান হচ্ছে জ্ঞান।

৪| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:০১

জহিরুল ইসলাম সেতু বলেছেন: উচ্চমার্গীয় জ্ঞানগর্ভ আলোচনা। যতই পড়ছি, জানছি, শিখছি, একই সাথে মুগ্ধ হচ্ছি।
প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম, বারবার পড়ার জন্য। এমন আরো দর্শনতাত্ত্বিক লেখা পড়ার জন্য সাগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম।
শুভ কামনা।

৫| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:৫৮

নূর আলম হিরণ বলেছেন: তথ্যপূর্ণ পোষ্ট। ভালো লাগলো।

৬| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৫৯

মেহেদি_হাসান. বলেছেন: খুব সুন্দর তথ্যপূর্ণ পোষ্ট, আবার পড়বো।

৭| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১০:২৬

জ্যাকেল বলেছেন: পরতে পরতে ভাবনার বিষয়। প্রিঅ সেকশানে এড করিয়া রাখিলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.