নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ক্যপ্রিসিয়াস

মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। তাই স্বপ্ন দেখি বড় কিছু করার। অন্যের উপকার করতে ভাল লাগে তা যত নুন্যতমই হোক না কেন ।\n\nভাল লাগে বিধাতার গড়া অপরুপ সৌন্দর্যের মাঝে ঘুরে বেড়াতে।\n\nফেসবুকে এই আমি https://www.facebook.com/capricious.based

ক্যপ্রিসিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবন থেকে নেয়া-৭ (দেশের চিকিৎসা মান )

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:০৪

লেখাটি এক ডাক্তার ভাই(Saiful Islam) এর ফেসবুক স্টেটাস থেকে নেয়া । উনি Medical Officer হিসাবে IGMH - Indira Gandhi Memorial Hospital কর্মরত। তার প্রতি সম্মান রেখই লেখাটি হুবুহু তুলে দিলাম। ধন্যবাদ তাকে সুন্দর একটি লেখার জন্য..



সার্জারিতে ইন্টার্নশিপ চলছে। একদিন এডমিশন ডিউটি করছি সন্ধ্যাবেলা। এডমিশন ডিউটি বলতে বুঝায় ঐদিন হাসপাতালে যত সার্জারি রোগী ভর্তি হবে সব আসবে আমার ইউনিটে।



এক রোগী আসল চিৎকার করতে করতে। সাথে আরও তিনজন লোক স্ট্রেচার ঠেলে নিয়ে এসেছে। তাড়াতাড়ি এগিয়ে গেলাম। পরীক্ষা করে বুঝলাম ডিউডেনাল আলসার পারফোরেশন(অতিরিক্ত এসিডিটিতে খাদ্যনালী ফুটো হয়ে গেছে)। বলার অপেক্ষা রাখেনা এটা ভয়াবহ সমস্যা। তাড়াতাড়ি স্যালাইন, ঔষধের ব্যবস্থা করে চিকিৎসা শুরু করা হল। আমার প্রাথমিক কাজ রোগীকে অপারেশনের জন্যে প্রস্তুত করা।



দুই ঘণ্টা পরের দৃশ্য। অপারেশন থিয়েটারে দাঁড়িয়ে আছি। একজন আই.এম.ও(দলনেতা) আরেকজন এইচ.এম.ও এবং আমি। রোগীর পেট কাটা হল। পেটকে অনেক সার্জন আদর করে বলে ম্যাজিক বক্স। বক্সের ভিতরে আসলেই ম্যাজিক দেখা গেল। খাদ্যনালী ছেড়ে বেরিয়ে এসে পুরো পেটের ভিতর জুড়ে বিরাজ করছে সবুজ শাকসবজি, কতিপয় ভাতের দানা। সার্জন দ্রুততার সাথে নাড়িভুঁড়ি ঘাঁটতে লাগলেন। মিনিট খানেকের মাথায় ফুটো আবিষ্কার করা গেল। লিভারের কাছটা দেখিয়ে সার্জন আমাকে বললেন হাত দে। আমি আস্তে আস্তে হাত দিলাম।



“আরে বেটা ডরাস নাকি? ভাল করে হাত দে। এইটা লিভার, হাত বুলা; ফিল কর। হ্যাঁ এইভাবে। সব অর্গান টাচ করে ফিল কর। সার্জনের হাত কোটি টাকার হাত। এই হাত পাকাইতে হবে। দুইদিন পর আমার জায়গায় আসবি তখন যেন কোন ভুল না হয়”।



আমি মুগ্ধ হয়ে শুনেছিলাম কথাগুলো। কত আত্মবিশ্বাস আর সাহসের সাথে বলা! অথচ এই লোকটা এখনো পুরো সার্জন হয়ে ওঠেননি। এফসিপিএস পাশ করার অপেক্ষায় আছেন।



এই গল্প বাংলাদেশের একজন উঠতি সার্জনের গল্প। যার কাছে একটা Duodenal Ulcer Perforation অপারেশন করা ডাল-ভাত। মূল সার্জারি অধ্যাপকদের কথা কি বলব আর? বলতে গেলে আরব্য রজনীর শেষ রাতও পেড়িয়ে যাবে তাদের প্রতিভা আর অসাধারণত্বের গল্প বলে শেষ করা যাবেনা। একটা অপারেশন থিয়েটার যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায় ধরনের অভাব অনটন সেখানে ঐ সীমিত রিসোর্সের ভিতর থেকেই তারা কি অবলীলায় অসাধারণ সব অপারেশন করে যাচ্ছেন রোজ। স্ট্রেচারে করে কাঁদতে কাঁদতে আসা রোগী কিছুদিন পর পায়ে হেঁটে হাসতে হাসতে বাড়ি যাচ্ছে।



ইন্দিরা গান্ধি মেমোরিয়াল হাসপাতাল, মালদ্বীপ। ইমার্জেন্সি ডিপার্টমেন্টে এক রোগী এসেছে আমি ভাগ্যক্রমে আশেপাশেই ছিলাম। ভারত থেকে ইম্পোর্টেড সার্জন মশাই আমাকে ডাকলেন বহুভাষাবিদ হিসেবে। বাংলাদেশী রোগীর কথা তার কাছে ইংরেজি অনুবাদ করে দিতে হবে। এদিকে আমার মেডিসিন ডিপার্টমেন্টের স্যারও এসে হাজির।

জানলাম এতক্ষণে সার্জারি টিম রোগী দেখে ফেলেছে। তাদের অভিমত হল এটা মেডিসিনের কেস, সার্জারি রিলেটেড কিছু না। আমি রোগীর সাথে কথাবার্তা বললাম, পেটটা একটু পরীক্ষা করলাম। আমার সুবিধা ছিল আমি রোগীর পুরো সমস্যার কথা আদ্যপ্রান্ত বুঝতে পেরেছিলাম।



Sir! I think this is a case of D.U Perforation.



আশেপাশের সবাই আমার দিকে চোখ বড় করে তাকাল। ভাবখানা এইরকম “হাতি ঘোড়া গেল তল, ইদ্রিস বলে কত জল?’’



তারা রোগীকে অবজার্ভেসনে রেখে চলে গেল। পরদিন সকালে ডিউটিতে গিয়ে শুনি মাঝরাতে সেই রোগীর ইমার্জেন্সি অপারেশন করা হয়েছে। পেট কেটে দেখা গেছে খাদ্যনালীতে ফুটো।

আমি মুচকি একটা হাসি দিয়ে বুকের ভিতরের দীর্ঘশ্বাসটাকে চাপা দিলাম। কারন এই বেচারা রোগীটা যে আমার দেশের মানুষ! আহারে সারারাত মানুষটা কত যন্ত্রণায়ই না ভুগেছে!



প্রায় এক সপ্তা কেটে গেছে। আজকে সার্জারি ডিপার্টমেন্টের হেড আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। তার কাছ থেকে জানতে পারলাম রোগীর সাথের লোকজন তাকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান। আমি যেন তাদের সাথে একটু কথা বলি এই ব্যাপারে।



রোগীর ছেলে কাছেই ছিল। জানতে পারলাম বাপ ছেলে একসাথে এখানে আছে বছর পাঁচেক ধরে।

ভালই কাটছিল দিনকাল হঠাৎ করে বাবার এই অসুস্থতা সব এলোমেলো করে দিল। আরও জানা গেল এরমাঝে সার্জন রোগীর পেট দ্বিতীয়বার কেটেছে কারন আগেরবারের সেলাই নাকি খুলে গেছে! এখানেই শেষ নয়... তিনি তৃতীয়বারের মতো অপারেশন করতে চান! কারন সমস্যা এখনো ঠিক হয়নি! ছেলেটা আর এখানে থাকতে রাজিনা। দেশে ফিরে গিয়ে চিকিৎসা করাবে।



এরমাঝে হাসপাতালের বিল এসেছে দেড় লক্ষ টাকা। রোগীকে বিমানে করে নিয়ে যেতে খরচ লাগবে আরও দেড় লক্ষ টাকা। ছেলেটার দিকে তাকানোর সাহস হচ্ছিলনা এই কথাগুলো শোনার পর। এখনো যে এই ছেলে নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেটাই অবাক করা বিষয়। পেরেছে হয়তো সে বাঙ্গালী বলেই। এখনো নানা জায়গায় দৌড়ে বেড়াচ্ছে... একবার অ্যাম্বাসি আরেকবার এয়ারলাইন অফিস আবার হাসপাতালের এই কাউন্টার থেকে ঐ কাউন্টার!



আপাত মামুলি একটা অপারেশন করতে গিয়ে রোগীটার পেট কাটা হয়েছে দুইবার, তৃতীয়বার কাটার পায়তারা চলছিল। দেড় লক্ষ টাকার বিনিময়ে ছেলেটা কিছু পায়নি হাসপাতালের কাছ থেকে, কিছুই না। তার বাবার এক আনা উন্নতি হয়নি।



এই অপারেশনটা কোন অপারেশন বুঝতে পেরেছেন নিশ্চয়ই? হ্যাঁ এটা সেই অপারেশন যেটা করতে গিয়ে একজন বাংলাদেশী শিক্ষানবিশ সার্জনের সময় লেগেছিল মাত্র আধঘণ্টা, যা করতে গিয়ে তাঁর হাত এক বিন্দু কাঁপে তো না-ই বরং আমার কাঁপা কাঁপা হাতটা টেনে নিয়ে শিখিয়েছিলেন কিভাবে অপারেশন করতে হয়।



পাঠকবন্ধুগণ এবারে বলুন তো আমার লেখার শুরুতে বলা সেই প্রথম রোগীটার অপারেশন করতে কত খরচ হয়েছিল? থাক কষ্ট করতে হবে না। আমি বলে দিচ্ছি “মাত্র দেড় হাজার টাকা”। কিছু স্যালাইন আর আনুষঙ্গিক ঔষধ কিনতে ওটা খরচ হয়েছিল।



এরপরও যারা দেশের চিকিৎসা মান নিয়ে নাক সিটকান আর ভারত-আম্রিকা নাম শুনে গলে-ঢলে পড়েন তাদেরকে বলব ওরকম নাক রাখারই প্রয়োজন দেখিনা। এই হাসপাতালে চলে আসেন, অপারেশন করে নাক কাটিয়ে যান। একবারে না হোক তিনবারে নিশ্চয়ই নাক কেটে দিতে পারবে আহাম্মকগুলো।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২১

মুদ্‌দাকির বলেছেন: হায়!!! মানুষকে বুঝিয়ে লাভ নাই!!

কতযে কষ্ট করে ডাক্টাররা তাদের জন্য!!!

তবে অনেকের ভোগান্তিও কিন্তু আছে!!

২| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২৭

ক্যপ্রিসিয়াস বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য..সবকিছুরই ভাল ও মন্দ দিক আছে। আমাদের ডাক্তারদের মধ্যেও ভাল মন্দ আছে। আমাদের দেশের চিকিৎসা মান ও খরচের বিষয়টাকে ফোকাস করে এ লেখ.

৩| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:২০

পাজল্‌ড বলেছেন: খুবই সত্যি কথা।

৪| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩৫

মহিসন খান বলেছেন: এ রকম একজন ডাক্তার বন্ধু পেলে ভাল হত

৫| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৩২

ভোরের সূর্য বলেছেন: ভাই সব কিছুর ভালমন্দ দিক রয়েছে।সবাই যে ১০০% সঠিক হবে তা নয়।

১) আপনি যে উদাহরন টা দিলেন সেটা মালদ্বীপের একটি ঘটনা।ভাল চিকিৎসার জন্য মালদ্বীপ কোন বিখ্যাৎ জায়গা নয়। বা সেখানে কোন নামকরা চিকিৎসক বা হসপিটালও নাই।বাংলাদেশের মানুষ উন্নত চিকিৎসার জন্য মালদ্বীপে যায় বলে শুনিনি।

২)বাংলাদেশের মানুষ ভারত,সিঙ্গাপুর বা আমেরিকা যায় উন্নত চিকিৎসার জন্য।আপনি যদি সেসব দেশের কোন একটি উদাহরণ দিতেন তাহলে একটা কথা ছিল।

৩)শুধু তাই নয়।খারাপ চিকিৎসা যে ঐ সব দেশগুলোতে হয় না তা নয় কিন্তু সেটার পরিমাণ এতই কম যে সেটা দিয়ে পুরা চিকিৎসা ব্যাবস্থাকে পরিমাপ করা যায়না।

৪)মজার বিষয় কি জানেন।ভারতে এ্যাপোলো নামের হসপিটাল টি খুব বিখ্যাৎ সেটির একটি শাখা আমাদের দেশেও আছে কিন্তু সেটার বিষয়ে হাজারো অভিযোগ রোগীদের।

৫) আমাদের দেশে ভাল চিকিৎসক আছেন কিন্তু সেটার পরিমাণ অনেক কম আর ঐ সব দেশে বরং খারাপ চিকিৎসকের পরিমাণ কম।

৬) ঐসব দেশে হসপিটাল বা ডাক্তারদের রেসপনসিবিলিটি আছে। যদি ভুল কিছু হয়ও তাহলে ওরা চেষ্টা করে সেই রোগীকে সর্বোচ্চ সার্ভিস দিয়ে সারিয়ে তোলার।

খুব খারাপ লাগছে আমাদের দেশের চিকিৎসা সেবা সম্পর্কে এভাবে বলতে কিন্তু আমি একজন ভুক্তভুগি। একাধিক বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমার মনে হয় এই ব্লগে যারা আছেন অনেকেরই বাংলাদেশী চিকিৎসা ব্যাবস্থা সম্পর্কে খারাপ অভিজ্ঞতা আছে।

৬| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:৪৫

ক্যপ্রিসিয়াস বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য ... আমি কিন্তু আগেই বলেছি সব কিছুর ভাল মন্দ দিক এর কথা। আমাদের দেশে অনেক সিমাবদ্ধতা রয়েছে। আর খরচের ব্যাপারটাও চিন্তা করতে হবে। সম্পদের সিমাবদ্ধতার মাঝেও আমাদের ডাক্টাররা কিন্তু চেষ্টা করে ভাল সেবা দেবার জন্য, কিন্তু তার উল্টাটা ও আছে। ডাক্তার নামের কসাই এর পরিমান ও কম নয়।

৭| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫১

গগণজয় বলেছেন: পেশায় আমি ও ডাক্তার। আমি ও জানি বাস্তবতা ।সিমা বদ্ধতার মাঝেও আমাদের ডাক্তার রা সব চেস্টায় করেন। তবে হ্যা খারাপ ডাক্তার ও আছেন কন সন্দেহ নাই।

৮| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:১৯

জাগতিক ভালবাসা বলেছেন: সবাই ডাক্তারদেরে খারাপটাই বেশি দেখে।তাদের সমস্যাগুলো বোঝার চেষ্টা বা সমাধানের চেষ্টা নেই।

৯| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩০

ক্যপ্রিসিয়াস বলেছেন: শুধু ডাক্তার কেন , সব মানুষেরই খারাপ দিকগুলু বেশি দেখে। তার বিপরিতে যে ভাল দিকগুলু আছে সেগুলুর মুল্যায়ন খুব কমই হয় ।

১০| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:০৪

নীহারিক০০১ বলেছেন: আমাদের দেশে রোগীও তো বেশি এত হাসপাতাল দেখে তাইতো মনে হয়

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.