![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মেয়েটির সাথে ছেলেটির সম্পর্ক আজ প্রায় ৫ বছর।
ছেলেটি মেয়েটিকে একদিন একটি বারবি ডল উপহার দিয়েছিল।
ছোট্ট একটা কোম্পানিতে সামান্য কিছু বেতনে চাকরি করতো বিধায়
ইচ্ছা থাকলেও বড় কিছু কিনে দেবার সামর্থ্য ছিল না তার। ছেলেটি ভাবতো সে যদি মেয়েটিকে বিয়ে করে তবে সারা জীবনেও
তাকে ঐশ্বর্যের সুখ দিতে পারবেনা।
হঠাৎ কোনও এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় মেয়েটি সেই ছেলেটির বাসার
সামনে এসে হাজির।
মেয়েটি বললো, আগামি কাল সন্ধ্যায়
সে তার বাবা মার সাথে প্যারিসে চলে যাচ্ছে এবং সে কোনও দিনও ফিরবে না।
সুতরাং তাদের সম্পর্ক আজ এখানেই শেষ।
ছেলেটি কি বলবে বুঝতে পারছিলো না, তবে চোখের পানি সামলে নিয়ে শুধু আস্তে করে বললো “ ঠিক আছে ”।
পরদিন সন্ধ্যা...
আজও গত দিনের মতো বৃষ্টি হচ্ছে ।
ছেলেটি এক কাপ চা হাতে বারান্দায় দাড়িয়ে ছিল । হঠাৎ খেয়াল করে দেখলো দূর আকাশে একটি প্লেন ভেসে চলেছে । গন্তব্য জানা না থাকলেও ছেলেটি বিড় বিড় করে আপন মনে তার ভালবাসার
মানুষটিকে দূরথেকেই গুড বাই জানালো।
রাত ১ টা...
ছেলেটি ঘুমোতে পারছে না । কয়েক ডোজ ঘুমের ওষুধ খেয়ে চোখ মুখ
জ্বালা করছে তবুও ঘুম নেই । যেই মানুষটিকে ভেবে ভেবে সে প্রতি রাত পার করেছে,যাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে তার প্রতিটি সকাল হয়েছে সেই মানুষটি তাকে ছেড়ে চলে গেছে স্পষ্টই বুঝতে পারছিলো সে, নিজের কাছে কিছু সত্য ভালবাসা ছাড়া আর এমন কিছুই ছিল না যার মাধ্যমে সে তার ভালবাসাকে আঁকড়ে রাখবে । ঐশ্বর্যের ভেতরে থেকে যে মানুষ হয়েছে সে কেন মনের আবেগে অন্ধকারে পা দেবে, কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই ছেলেটি মন শক্ত করল । যে ঐশ্বর্যের টানে মেয়েটি আজ তাকে ছেড়ে চলে গেলো একদিন সমপরিমান ঐশ্বর্য নিয়েই সে মেয়েটির সামনে হাজির হবে।
কঠোর পরিশ্রম আর নিয়তির নির্মম পরিহাসে ছেলেটি আজ অঢেল সম্পত্তির মালিক । নিজস্ব কোম্পানি,আর লাখ টাকা মূল্যের গাড়ি নিয়ে সে আজ সম্পূর্ণ প্রস্তুত সেই মেয়েটির সামনে হাজির হতে ।
আজও সন্ধ্যা হয়েছে, আকাশ মেঘ করে অঝোরে বৃষ্টি নামছে,ঠিক
যেন সেই দিনের বৃষ্টি যেদিন তার ভালবাসা তাকে ছেড়ে চলে
গিয়েছিলো-আনমনে এ সব কথা ভাবতে ভাবতে গাড়ি
চালাচ্ছিলো ছেলেটি । এয়ারপোর্ট রোড, রাত ৮টায় ফ্লাইট, গন্তব্য প্যারিস - সেই মেয়েটির খোঁজে । গাড়ি চালাতে চালাতে হঠাৎ সামনের রাস্তায় দুইজন মধ্য বয়সী নারী পুরুষের দিকে চোখ গেলো তার । চিনতে অসুবিধা হয়নি, তারা সেই মেয়েটির বাবা মা। ইচ্ছে হচ্ছিলো কাছে যেয়ে মেয়েটির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে । কিন্তু মনের আকুলতা সামলে নিয়ে সে গাড়ির গতি কমিয়ে মেয়েটির বাবা মার পিছু পিছু যেতে লাগলো । কিছুক্ষণ পর সে খেয়াল করল মেয়েটির বাবা মা একটি কবরস্থানের ভেতর ঢুকছে ।দম বন্ধ হয়ে আসছে ছেলেটির । গাড়ি থামিয়ে দ্রুতসে নিজেও কবরস্থানে গেলো, যেয়ে দেখতে পেল সেই মেয়েটিরছবি সম্বলিত
একটি কবরে তার বাবা মা ফুল দিচ্ছে । কবরের এক
পাশে রয়েছে একটি বাক্স । ছেলেটিকে দেখে মেয়েটির বাবা মা এগিয়ে এলো । কেমন করে এসব হল জানতে চাইলে তারা বলেন, “ ওকে আমরা উন্নত চিকিৎসার জন্য প্যারিসে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম । কিন্ত ও যেতে চাইনি, ও তোমার কথা বলেছিল ।বলেছিল তার ভালবাসাকে রেখে সে কিছুতেই যেতে পারবে না ।ওর আসলে ক্যান্সার হয়েছিলো । ডাক্তার ওর মৃত্যুর দিন ঠিক করে দিয়েছিল কিন্তু এ সব তোমাকেও বুঝতেও দেই নি । ও কোনও দিনও তোমার হতেপারবে না, এ কথা জেনেই ও নিজেকে তোমার থেকে আলাদা করে নিয়েছিলো । ও মৃত্যুর আগে বলে গিয়েছিলো ওর ভালবাসা অবশ্যই তোমাকে ওর কাছে ফিরিয়ে আনবে ”।
এর পর তারা কবরের পাশের সেই বাক্সটার দিকে দেখিয়ে বলল, সম্ভবত তোমার জন্য ওটাতে কিছু আছে । ছেলেটি বাক্স খুলে দেখে এর ভেতর সেই বারবি ডল আর একটি চিঠি । চিঠিতে লেখা রয়েছে “ আমাকে ক্ষমা করো, তোমাকে কষ্ট দেওয়ার কোনও ইচ্ছাই আমার ছিল না । স্বপ্ন ছিল তোমার সাথে আমার ভবিষ্যৎ গড়ব, কিন্তু ডাক্তার আমার চলে যাবার টিকিট দিয়ে দিয়েছিল, তাই আমাকে একলা চলে আসতে হল ”।
চিঠির একদম শেষ
প্রান্তে লেখা ছিল-“ খবরদার কাঁদবে না ”
©somewhere in net ltd.