নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তিমি মাছ আকাশে উড়ে

সেডরিক

৩ দিনের পর্যবেক্ষনে আছি, এখনও।

সেডরিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

হাতি বিলুপ্ত করতে উঠে পড়ে লেগেছি আমরা

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:৫৬



বাংলাদেশে একটা প্রবাদ আছে, মরা হাতি লাখ টাকা। হাতির এই দামের কারন হলো এর দাঁত। হাতির দাঁত পৃথিবীর সৌখিন শিল্প সামগ্রীর অন্যতম একটা উপাদান। পৃথিবীর প্রায় সব দেশের বিত্তশালীদের স্ট্যাটাস সিম্বল হিসেবে হাতির দাতের সামগ্রীর চাহিদা সবসময় ছিলো, এখনো আছে। এ কারনে শিকারী ও চোরাকারবারি পোচার গ্যাং দের হাতে প্রতিনিয়তই হাতি মারা পরছে।

কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হাতি মারা হচ্ছে ভিন্ন কারনে। হাতির দাতের লোভে নয়, বরং ফসলি জমি, বাড়ি ঘরে হাতির হামলা (?) উৎপাতে অতিষ্ট হয়ে এলাকাবাসী মহা উৎসাহে হাতি মেরে সাফ করতেছেন। গত ৩০ বছরে বাংলাদেশে প্রায় ১৫০ হাতি হত্যা করা হয়েছে, তার ভেতর ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৪৩ টি হাতি হত্যা করা হয়েছে। এবং শুধু ২০২১ সালের নভেম্বর মাসেই বাংলাদেশে ৮ টি হাতি হত্যা করা হয়েছে। এগুলো সরকারী হিসাবে।

যদিও হাতি নিধনে শক্ত আইন আছে, ২ বছর থেকে ৭ বছরের জেল এবং ১ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকার জরিমানার আইন আছে। তবে এগুলো শুধু কাগজেই আছে, এই আইনের দৃশ্যমান প্রয়োগ নেই। কারন হাতি হত্যায় এ পর্যন্ত মামলা হয়েছে ৩৭ টি, এসব মামলায় কোন আসামীর বিচার হওয়া দূরের কথা একজনও গ্রেফতার হয়নি।

হাতি হত্যায় এলাকাবাসীর অযুহাত, হাতি ফসলের ক্ষেত নষ্ট করে, বাড়িঘরে হামলা করে। তাই তারা বাধ্য হয়ে ফসলের জমির চারপাশে বৈদ্যুতিক তারের বেড়া দিয়ে, ফাঁদ পেতে হাতি মারছেন।

ছবিঃ একে একে হাতি মারা হচ্ছে, বিচারহীনতায় হাতি হত্যা বেড়েই চলছে।



তাহলে এখন কিছু প্রশ্নের উত্তর খোজা যাক।
১) হাতির আক্রমন থেকে ফসল বাচাতে বৈদ্যুতিক তারের বেড়া ও ফাদের বিকল্প কি নেই?
২) ফসলের ক্ষতির ফলে চাষীগন কতটা ক্ষতিগ্রস্থ হন?
৩) বন্য হাতি কেন লোকালয় ও ফসলের জমিতে হানা দিচ্ছে?

উত্তরঃ
১) প্রথম প্রশ্নের উত্তর খুব সোজা, উচু বাশেঁর বেড়া দেয়া যায়, টিনের ক্যান পিটিয়ে শব্দ করে তাড়িয়ে দেয়া যায়। শক্ত জাতের বাশের ঝাড় তৈরী করে ফসলী জমি ও বনের মাঝে বিভাজন তৈরী করা যায়। এগুলো কোনটাই কাগজে কলমে বের করা বুদ্ধি না। থাইল্যান্ড, কেনিয়া ও ভারতে এভাবেই হাতির হাত থেকে ফসল রক্ষা করা হচ্ছে।

২) দুই নং প্রশ্নের জবাব বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা এবং তরুণ বন্যপ্রাণী গবেষক জোহরা মিলার বক্তব্যেই পরিস্কার হয়ে যায়। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “হাতি কর্তৃক যে কোনো ক্ষতির বিপরীতে আবেদন করলে বন বিভাগ তার ক্ষতিপূরণ দেয়। তাই হাতিহত্যা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়”

৩) বন্য হাতি কেন লোকালয় বা ফসলী জমিতে হানা দিচ্ছে তা জনতে আগে বুঝতে হবে হাতি লোকালয়ে আসছে না, আমাদের দেশের মানুষই বন পুড়িয়ে জমি দখল করে বাড়িঘর ও ফসলের জমি বানিয়ে নিচ্ছে।

হাতি (বিশেষ করে বন্য হাতি) কোন পোষা প্রাণী না। দু-তিন কিলোমিটার জায়গায় হাতি বাচতে পারে না। হাতির আবাসসস্থল অনেক বড় জায়গা নিয়ে বিস্তৃত হতে হয়। ১৯৩১ সালে তৎকালীন সরকার টেকনাফ ও উখিয়ায় ৩০,০০০ একর বনভুমিকে সংরক্ষিত অঞ্চল হিসেবে হাতির অভয়ারণ্য ঘোষনা করে।

কিন্তু ১৯৭৮ সাল থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও আশ্রয় দান করার পরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প করে এই বনাঞ্চল বেদখল হতে থাকে। ১৯৮৩ সালে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ১১,৬১৫ হেক্টর বনকে হাতির অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। এছাড়া মায়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্য হাতির চলাচলের করিডোর হিসেবে ১৯৮৬ সালের কক্সবাজারের চকরিয়া এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী, লোহাগাড়া ও সাতকানিয়া উপজেলার ৭৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গড়ে তোলা হয় চুনতি অভয়ারণ্য।

বন বিভাগের হিসাবে টেকনাফের অভয়ারণ্যে ৬৪টি এবং চুনতি অভয়ারণ্যে ৬০টির মতো হাতি আছে। এছাড়াও বান্দরবানের লামা, রাঙামাটির কাপ্তাইসহ বিভিন্ন পাহাড়ে হাতির আবাসস্থল আছে।

হাতিগুলো স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য বাংলাদেশ ও মায়ানমারের বনে ঘুরে বেড়ায়। স্বাভাবিকভাবে একটি হাতি হাটা শুরু করলে ৭০-৮০ কি.মি হাটতে পারে। একটি পূর্ণবয়স্ক হাতির জন্য দিনে ১৫০-২০০ কেজি খাবার প্রয়োজন হয়।
কিন্তু মায়ানমার সরকার তার সীমান্তে কাটাতারের বেড়া ও ল্যান্ড মাইন বসানোর কারনে এই হাতি এখন মায়ানমারের বনে যেতে পারছে না।

ছবিঃ হাতির সংরক্ষিত অভয়ারন্য ধ্বংস করে রোহিঙ্গা শিবির বানানো হয়েছে


ওদিকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য আমাদের সরকার বন্য হাতির এই আবাসস্থল ধ্বংস করে দিয়েছে। ৮০০০ একর সংরক্ষিত অভয়ারণ্য ধ্বংস করে তৈরী করা হয়েছে রোহিঙ্গা শিবির। সাথে প্রায় ২৫ টি জলাধার (খাল/পাহাড়ি ছড়া), ১২ টি করিডোর (হাতির চলাচলের রাস্তা) নষ্ট করা হয়েছে।

হাতির স্বাভাবিক আবাসস্থল আমরা নষ্ট করে ফেলেছি। মাত্র ২০০-৩০০ একর জায়গায় এতগুলো হাতি টিকে থাকা কষ্টকর। আর তাই হাতিগুলো এখন খাবার সংকটে লোকালয়ে (?) ঢুকে পরছে। আর মানুষের হাতে মারা পরছে।
আমরা হাতির আবাস কেড়ে নিয়ে বন দখল করে রোহিঙ্গা শিবির বানিয়েছি, লোকালয় বানিয়েছি। হাতির পানি খাওয়ার জলাশয় ভরাট করে দখল করে নিয়েছি, চলাচলের রাস্তায় বিদ্যুতের তার ঝুলিয়ে রেখেছি। খাবার ও আবাসস্থল কেড়ে নিয়ে ক্ষান্ত হচ্ছি না, ক্ষুধায় ও ক্লান্তিতে হাতিগুলো সামনে আসলে ফাঁদ পেতে, বিদ্যুৎপৃষ্ট করে, গুলি করে মেরে মহান বীর সাজছি।

যেভাবে হাতি হত্যা চলমান আছে, এবং প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে থাকা কর্তাব্যাক্তিগন চোখে ঠুলি বেধে এইসব দেখেও না দেখার ভান করছেন, তাতে বলাই যায় হাতি বাংলাদেশে বিলুপ্ত হতে আর বেশি দেরী নেই। যেভাবে আমরা বাংলাদেশ থেকে বৃহৎ এক শৃঙ্গ গন্ডার, সুমাত্রা গন্ডার, নীলগাই, গৌর, বারশিঙ্গা হরিণ মেরে বিলুপ্ত করেছি, একইভাবে হাতিও বিলুপ্ত করে ফেলবো মনে হচ্ছে।
শরৎচন্দ্র বলে গেছেন "অতিকায় হস্তী লোপ পাইয়াছে কিন্তু তেলাপোকা টিকিয়া আছে", এভাবে হাতি মেরে সাফ করে ফেললে বাংলাদেশে আর হাতি দেখা যাবে না। তেলাপোকা দেখেই আমাদের হাততালি দিতে হবে।

তথ্যসূত্রঃ
১) বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবর
২) উইকিপিডিয়া
৩) কোরা
৪) ন্যাশনাল জিওগ্রাফী ও কিছু ডকুমেন্টারি



মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:১৬

জুল ভার্ন বলেছেন: গুড পোস্ট। কিন্তু দুর্ভাগ্য, পাঠকদের রেস্পন্স নাই!!! +

১২ ই জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:৪৩

সেডরিক বলেছেন: দুর্ভাগ্য, এখনো সেফ হতে পারি নাই। তাই লেখা প্রথম পাতায় যায় না, রেসপঞ্জও পাই না।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ প্রিয় ব্লগার

২| ২৬ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১০:২৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: অত্যন্ত নির্মম এবং দুঃখজনক পরিস্থিতি। প্রশাসনের আশু বোধোদয় কামনা করি।
আপনি সেফ অবার পর এটা আবার রিপোস্ট করবেন। তাতে আপনার এ চমৎকার পোস্টটা আরও অনেক বেশি পাঠকের দৃষ্টিগোচর হবে, আর আপনার শ্রম সার্থক হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.