নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্নের জাল বুনে চলি প্রতিনিয়ত প্রতিক্ষণ

সরদার সীজার

মনের কথা প্রাণ খুলে বলতে চাই

সরদার সীজার › বিস্তারিত পোস্টঃ

কয়লা

২৪ শে জুন, ২০১২ রাত ১০:১৭

কয়লা ধুলে ময়ল যায় না। দেশের বহুল প্রচলিত প্রবাদ। শত ধুয়ে ময়লা না গেলেও কয়লার অর্থনৈতিক গুরুত্ব কোনমতেই ধুয়ে ফেলার মত নয়। কয়লার আবার রকমফেরও রয়েছে। উন্নত-উৎকৃষ্ট মানের কয়লার কদরই আলাদা। দেশে বিদেশে রয়েছে এর বহুল ব্যবহার ও চাহিদা। বিটুমিনাস । অত্যন্ত মুল্যবান ও দামি কয়লা। কালো সোনা তার আরেক নাম। বিশ্বের খুব কম সংষ্যক দেশে এর অস্তিত্ত্ব আছে। দিনাজপুর ফুলবাড়ির বড় পুকুরিয়া এলাকা। বিস্তৃত এ অঞ্চলের তলদেশে সজ্জিত রয়েছে লাখ লাখ টন কালো সোনা বিটুমিনাস কয়লা। বড় পুকুরিয়ার সাধারণ মানুষের পায়ের নিচে। সুজলা সুফলা প্রায় ১০-১৫ টি গ্রামের নিচে। ইতোমধ্যে যারা উচ্ছেদ হয়েছে তারা কোথায়? আবার কি নতুন করে ঘরবাড়ি ছাড়তে হবে? আবার কি কোন মায়ের বুক খালি হবে?





আজকের কয়েকটি পত্রিকা বলছে:



আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান

বড়পুকুরিয়ায় অবস্থান ধর্মঘট অব্যাহত রাখার ঘোষণা ক্ষতিগ্রস্তদের

-দৈনিক প্রথম আলো



Land subsidence victims block road near coal mine

-The Daily Star



ডিসির সমঝোতা আলোচনা ব্যর্থ ৫ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি

-দৈনিক আমাদের সময়



বড় পুকৃরিয়ায় ক্ষতিগ্রস্থদের ধর্মঘট আবারো ৫ দিন বেড়েছে জেলা প্রশাসনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান

-দৈনিক ইনকিলাব







ঘটনাটা সাম্প্রতিক।দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীর অবস্থান ধর্মঘট গতকাল শনিবার ৬ষ্ঠ দিন অতিবাহিত হয়েছে। ৬ষ্ঠ দিনে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আন্দোলনরত গ্রামবাসীর সমঝোতা আলোচনা ভেঙ্গে গেছে। আগামী ৫ দিনের মধ্যে শতভাগ ক্ষতিপূরণ প্রদানে আল্টিমেটাম দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীর সংগঠন জীবন ও সম্পদ রক্ষা কমিটি। অন্যথায় কয়লা উত্তোলন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে তারা। ৫ দিনের অবস্থান ধর্মঘটের শেষ দিনে ঘোষিত অনির্দিষ্টকালের অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচীতে গতকাল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার হাজার হাজার নারী পুরুষ খনির গেটে বিক্ষোভ প্রদর্শণ করে।বিক্ষোভ চলাকালে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমঝোতার আলোচনার প্রস্তাব দিলে কয়লা খনির রেস্ট হাউজে এক সমঝোতা আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।







বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীদের দাবি তাদের মোট ক্ষতিপূরণের অর্থ হলো ১৯০ কোটি। গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের প্রদান করা হয় ১১২ কোটি। বাকি ৭৮ কোটি টাকা প্রদান করলেই কেবল তাদের দখলিকৃত ভূমি-ঘরবাড়ি ছেড়ে দেবে। এক্ষেত্রে কোন অজুহাত বা বিলম্ব তারা চান না। অন্যদিকে দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের বক্তব্য হলো,১৯০ কোটি টাকার মধ্যে ক্ষতিপূরণের অর্থ হচ্ছে ১৬০ কোটি টাকা। তার মধ্যে ১১৫ কোটি টাকা ইতিমধ্যেই পরিশোধ করা হয়েছে। বর্তমানে ২১ কোটি টাকার চেক প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া যে অবশিষ্ট টাকা রয়েছে তার বিপরিতে হুকুম দখলভূক্ত জায়গায় মালিকানা জটিলতা নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা রয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি হলেই সে টাকা পরিশোধ করা হবে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত জনগন হুকুম দখলকৃত জায়গা ছেড়ে না দিয়ে, তারা আন্দোলনে নেমেছেন।২১ কোটি টাকার চেক প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে হুকুম দখলভুক্তদের তাদের দখলকৃত জায়গা ও বাড়ী-ঘর ছেড়ে দিতে হবে। অপর দিকে জীবন ও সম্পদ রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়-আমাদের শত ভাগ টাকা পরিশোধ হলেই কেবল আমরা জায়গা ছেড়ে দিব। কিন্তু জেলা প্রশাসন আমাদের টাকা না পরিশোধ করে আমাদেরকে উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্র করছে। ফলে সমস্যা বেশ জটিল বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।







কয়লা খনি ফুলবাড়িয়ার মানুষ ও পরিবেশকে মারাত্নকভাবে প্রভাবিত করছে। কমবেশী ৪০০,০০০ মানুষ আদি বাস্তভিটা ও জমিজমা হারান বা হারাবেন।ইতোমধ্যে খনি ও আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণে ১০,০০০ হেক্টর কৃষিজ আবাদি জমি ব্যবহ্রত হয়েছে। এলাকার নদীর গতিপথ পরিবর্তনের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ খনিতে দৈনিক প্রায় ৮০০ মিলিয়ন লিটার পানি উত্তোলন দরকার।এতে করে খনি এলাকায় ৫০০ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে।পরিবেশবাদীদের মতে ডিনামাইট বিস্ফোরণ শব্দদূষণ ও ব্যাপক ধূলো বালির সৃষ্টি করে। অন্য আরেকটি রিপোর্ট (কালচারাল সারভাইভ্যাল) বলছে-১০০ টি গ্রামের প্রায় ১৩০,০০০ জন মানুষ প্রাথমিক ভাবে স্থানচ্যূত হবে এবং প্রায় ১০০,০০০ মানুষ নদী-খালের শুষ্কতার দরুণ সেচ দিতে পারবে না। ফসল ফলাতে না পেরে বাধ্য হয়ে তারা এলাকা ত্যাগে বাধ্য হবে। প্রায় ৫০,০০০ আদিবাসী স্থানচ্যূত বা দারিদ্রের শিকার হয়েছে ও হবে। যদিও ২০১১ সালের নতুন নীতিমালার আলোকে কোল মাইন ডিপোজিটের মাধ্যমে বাস্বচ্যূতদের পনর্বাসনের বিধান রাখা হয়। তারপরেও মানুষ ও পরিবেশ সেখানে কোনেভাবেই স্বস্তিতে নেই। এর পরেও যদি এসব মানুষের ক্ষতিপূরণ দিতে গড়িমসি করা হয় তাহলে হয়ত নিকট অতীতের পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।







একটি দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির জন্য খনিজ সম্পদ আহরণের বিকল্প নেই। পশ্চিমা ধনী রাষ্টসমূহের অভূতপূর্ব উন্নতির পেছনে খনিজ সম্পদের প্রাচুর্যতা ও আহরণ মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে।ফুলবাড়ি থেকে কয়লা উত্তোলন করা হোক-দেশের স্বার্থে সবাই এক্ষেত্রে একমত পোষণ করবে। এমনকি স্থানীয় জনগণও ছাড় গিয়েছে, দিচ্ছে এবং হয়ত আরো ছাড় দিবে। তারা পারত খনির কার্যক্রম রুখে দিতে। কিন্তু তা করেনি। বরং দেশের স্বার্থে শেষ পর্যন্ত আপস করেছে। নিজেদের ভিটে মাটি ছেড়ে দিয়েছে। রাষ্ট্রের উচিত ভিটে মাটি হারানো এসব মানুষকে সম্মান দেখানো। অত্যন্ত ক্ষতিপূরণটা ঠিকঠাক মত দেয়া। সবচেয়ে বড় ভিকটিম মনে হয় ওরা। আমরা ক'জন দেশের জন্য আপন ঘর ছেড়েছি? আপনাকে হাজার কোটি টাকা দিব।ছাড়বেন আপনার বসত বাটি?







ফুলবাড়ি প্রতিরোধ আন্দোলন। ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট। প্রায় ৫০০০০ স্থানীয় লোকজন জমায়েত হয় খনি প্রকল্প বন্ধ করার আন্দোলনে। সেদিন তিন যুবকের লাশ ফেলে দিয়েছিল তৎকালীন বিডিআর।দুই শতাধিক মানুষ হয়েছিল আহত। এ জাতীয়ভাবে ধর্মঘট পালিত হয় ৪ দিন। এ ঘটনার ভিলেন ছিল কুখ্যাত এশিয়া এনার্জি। রাতের আঁধারই জুটেছিল তাদের পালানোর জন্য। কারণ ওরা নাকি স্থানীয়দের সাথে করা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। সরকার নতুন করে কয়লা নীতি নির্ধারণের আশ্বাস দিয়েছিল সে সময়। পরে বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠন, মারাবাধিকার প্রতিষ্ঠান এবং পরিবেশবাদীরা খনি বন্ধে জনমত গড়ার চেষ্টা করেন। তবু কয়লা উত্তোলন থেমে থাকেনি। ২০১১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আবার বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন গ্রামবাসীরা।২০০০ প্রতিবাদকারী ফুলবাড়ী এলাকার মহাসড়ক অবরোধ করে। কারণ ছিল সরকার ২০০৬ সালে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। ২০১২ তে এসে তার পালে আবার হাওয়া লেগেছে। প্রতিকূল আবহাযয়া উপেক্ষা করে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। তাদের দাবি সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণের। পত্র পত্রিকায় এ বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পায়নি মনে হয়। প্রধান শিরোনামেও আসেনি। এর আশু সুরাহা না হলে হয়ত রক্ত ঝরবে। লাশ পড়বে। পত্রিকার প্রথম শিরোনামও হবে। রক্তাত্ত ফুলবাড়ি কারো কাম্য নয়।









সূত্র:

১.দৈনিক প্রথম আলো, দ্য ডেইলী স্টার, দৈনিক আমাদের সময়,দৈনিক ইনকিলাব।

২.http://www.sourcewatch.org/index.php

৩.http://phulbariresistance.blogspot.com/2009/03/barapukuria-coal-mine-in-trouble.html

৪.http://www.panoramio.com/photo/51995740

৫.http://poleshift.ning.com/profiles/blogs/landslide-panic-around

৬.http://en.wikipedia.org/wiki/File:Barapukuria_Coal_Mine_Dinajpur_Bangladesh_%284%29.JPG













মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.