![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শিক্ষা, টেকনোলোজী, সামাজিক অর্থনীতি ও রাজনীতি জাতিকে এগিয়ে নেবে।
এইটি আমাদের পাশের গ্রামের ছোট একটি মেয়ের জীবনের ছোট একটি কাহিনী। বর্ষাকালে স্কুলে ও খামারে আসতে যেতে আমাকে ওদের বাড়ীর সামনে দিয়ে আসতে যেতে হতো; মেয়েটাকে ওর ছোটকাল থেকেই দেখে আসছি, সে পরিবারের একটা ছাগল চরায়, গাভীটাকেও দেখে; আমি যখই ওকে দেখছি, প্রতিবারই গরুঘরের মাঝে, না'হয় গরুঘরের সামনে, কিংবা মাঠে ছাগল চরাচ্ছে। সে ছোটকাল থেকে নাকি কারো সাথে তেমন কথা বলে না, মাথার চুলগুলো বাঁধে না; তার আসল নাম আমি জানতাম না, সবাই পাগলী নামে ডাকে।
আসতে যেতে, আমার সামনে পড়লে, আমি হাত নেড়ে দিই, জিজ্ঞাসা করি, "কেমন আছ"; সে একটু ম্লান-হাসি হাসে সব সময়, কোনদিনও উত্তর দেয়নি। সেবার কালবৈশাখীর ঝড়বৃষ্টিতে দুই দিনের মাঝে মাঠে আধা হাঁটু পানি জমে গিয়েছিল। আমি বেলা ডুবার সামান্য আগে খামারে এসেছি; দেখি, পশ্চিম ভিটার ভেঁড়ির (এক ধরণের ডাল) জমিতে অন্যদের একটি ছাগল ভেঁড়ির লতা খাচ্ছে। পাকা ভেঁড়ির ডাল তোলা হয়ে গেছে, গাছগুলো গাভীকে ও ছাগলগুলোকে খাওয়ানো হচ্ছে। এই ছাগলটা আমার চেনা, পাগলীর ছাগল; তবে এতদুর এলো কিভাবে, মাঠে পানি! আমি একটা ছোট ঢেলা ছুঁড়ে মারলাম ছাগলটার দিকে, চলে যাক; ছাগল নড়লোও না। দেখি, আমাদের পুকুর পাড়ের কলাগাছের আড়াল থেকে পাগলী বেরিয়ে এলো, বললো,
-এই, তুমি ছাগলের দিকে ঢেলা মারছো কেন? ছাগলের গায়ে পড়বে, সে বাচ্চা দিবে দুই একদিনের মাঝে।
আমি এই প্রথম মেয়েটিকে কথা বলতে শুনলাম। সে ছাগল নিয়ে চলে যাবার কথা; কিন্তু সে গেলো না, হেঁটে আমার কাছে এসে, খামারের ছোট ঘরটা দেখায়ে আমাকে বললো,
-তুমি নাকি এখানে একা থাক?
-আমি মাঝে মাঝে থাকি!
-একা একা ভয় লাগে না? আমিও আমাদের পাকঘরে একা থাকি; আমার খুব ভয় লাগে একা একা!
-পাক ঘরে কেন, বড় ঘরে যায়গা নেই?
-না, আমার জন্য যায়গা নেই; আমাদের পেছনে ধানের জমিতে রাতে শিয়াল ডাকে; ওখানে পানি জমলে ভুতেরা বাতি জ্বালায়!
-ওগুলো ভুত নয়, পানিতে ধানের নারা (ঘাস) পঁচে গ্যাস বের হয়, উহা জ্বলে।
-হ্যেঁ, তোমাকে বলছে।
সে আমার পাশ দিয়ে হেঁটে গিয়ে, ঘরের দরজার উপরের শেকল খুলে ঘরে প্রবেশ করলো; আমি ওর পেছনে পেছনে আসলাম; এই ঘরটি খুবই মজবুত করে তৈরি করা হয়েছিলো; ছোট ২টি রুম: একটা আমার, অন্যটা বুড়ামিয়ার; এখানে অন্য কেহ ভয়ে থাকে না। আমার রুমে একটা ছোট টিনে খই ছিলো, সে এক মুঠো নিয়ে খেতে লাগলো, সে বললো,
-এই ঘরটা খুবই সুন্দর, রাতে তোমার কেমন লাগে?
-তোমার নাম কি?
-পাগলী।
-ভালো নাম আছে?
-আনু।
সে আমার দুই একটা বই উল্টায়ে দেখলো, এই রুম থেকে ঐ রুমে যাচ্ছে, উপরে নীচে দেখছে। এদিকে সন্ধ্যা হয়ে আসছিলো, আমি বললাম,
-আনু, বেলা ডুবে গেছে, তুমি ছাগল নিয়ে বাড়ী চলে যাও।
-আমি আরেকটু থাকি?
-ঠিক আছে, থাক।
-আমি যদি রাতে এখানে তোমার পাশের কামরায় থাকতাম, আমার ভয় লাগতো না; আমি জানালা দিয়ে রাতে মাঠ দেখতাম।
ওর চোখে মুখে কেমন একটা আনন্দ! আমি বললাম,
- অন্ধকার হয়ে আসছে, তুমি বাড়ী চলে যাও।
তার মুখের আনন্দটা কোথায় যেন মিশে গেলো, সে ধীর পায়ে বেরিয়ে ছাগলটা নিয়ে চলে গেলো।
২| ১১ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:২০
আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: আপনার এই লেখাগুলো পড়াতে বেশ লাগে।
৩| ১১ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:২১
আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: *পড়তে
৪| ১১ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:৩৬
খায়রুল আহসান বলেছেন: শুধু পাগলীকেই নয়, আপনি পাগলীর ছাগলটাকেও চিনতেন? বাহ!
জীবন থেকে নেয়া একটি চমৎকার ছোটগল্প! +
আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, আপনার এ গল্পটি বা ঠিক এরকম এরেকটি গল্প আমি এর আগেও পড়েছিলাম। সেখানে মন্তব্য করতে গিয়ে স্কুলের বাংলা পাঠ্য বইয়ে পড়া "একই সমতলে" নামক একটি গল্পের উল্লেখ করেছিলেন। সেই গল্পটিতেও পাগলীর মত, পাগলীর বয়সী একটি মেয়ে ছিল। তার পিতা যখন গাভীর দুধ দোয়াতো, বাছরটিকে তখন সে ধরে রাখতো। মায়ের দুধ খাবার জন্য বাছুরটির ছটফটানি তার মনে গেঁথে গিয়েছিল। এর অনেক বছর পরে সে তরুণীটি একদিন নিজে মা হয়। উঠোনে বসে সে তার শিশুকে স্তন্যদান করছিলো। এমন সময় বাহিরে কেউ একজন গাভী দোহাচ্ছিল। মায়ের কাছে যাবার জন্য বাছুরটির আর্ত চিৎকার শুনতে পেয়ে তার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। এবারে সে নিজে চিৎকার করে যে দুধ দোহাচ্ছিল, তাকে বললো," বাছুরটারে তোরা ছাইড়্যা দে! গাই এর দুধ তোরার লাইগ্যা না, বাছুড়ডার লাইগ্যা"! গল্পে তরুণীটির নাম ছিল জৈগুন।
৫| ১১ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:৪৫
সোহানী বলেছেন: জীবনের গল্পে ভালোলাগা।
৬| ১১ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:২২
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আপনার অন্তর্দৃষ্টি অনেক প্রখর। তবে ব্লগে আপনি মেয়েদের কিছু বলেন না আর ছেলেদের পারলে চামড়া ছিলে ফেলেন। আপনি একটু একরোখা স্বভাবের।
৭| ১১ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৩৬
রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট নিয়ে কিছু বলব না।
মানুষ যখন অতীত পেছনে ফেলে সামনে এগুতে থাকে। সামনে এগুতে এগুতে বয়স বেড়ে যায়। একসময় অবসরে হুটহাট করে অতীত দিনের টুকরো টূকরো কথা মনে পড়ে যায়।
৮| ১১ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৩৭
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সব সময় হিসেব নিকেশ.
কি হবে কি হলোনা,
সমসাা , অভিযোগ
শুনতে ভাল্লাগেনা।
মাঝে মাঝে পাগল ছাগল
পাগলী মাগলীদের নিয়ে লিখবেন
এগুলো আপনার সাথে বেশ জমে !!
পাগল ছাগল নিয়ে লিখুন জনপ্রিয়তা পাবেন।
নাকি জনপ্রিয় হতে চান না?
৯| ১১ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:২০
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: দারুন রোমান্টিক গল্প।
আনুর মাঠ দেখা হলো না।
১০| ১১ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৫২
মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: আপনার জীবনে নিগূঢ় রহস্য আছে।
১১| ১১ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:৩৩
চাঁদগাজী বলেছেন:
যাঁরা পড়েছেন, মন্তব্য করেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ। অনেকেই কিছু জানতে চেয়েছিলেন, আমি অন্য ব্যাপারে একটু ব্যস্ত হওয়ায় প্রত্যেককে আলাদাভাবে উত্তর দেয়া সম্ভব হচ্ছে না, স্যরি! পরে সময় করে, উত্তর দেবো।
সবার জন্য শুভকামনা রলো।
১২| ১১ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৭
তারেক ফাহিম বলেছেন: গল্প ভালো লাগছে।
১৩| ১১ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৫৬
মোঃ ইকবাল ২৭ বলেছেন: আপনার বয়স তখন কত ছিল ?
১৪| ১১ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:২৩
বাকপ্রবাস বলেছেন: দারুণ লাগল
১৫| ১১ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:২৪
কাছের-মানুষ বলেছেন: জীবনের চলার পথে অভিজ্ঞতা, যেটা অনেক সময় নিজের মনে দাগ কেটে যায়, সেই হিসেবে স্মৃতিচারণ হিসেবে ঠিক আছে লেখা।
তবে ততটা উহ আহ করার মত লেখা নয়।
১৬| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:১৫
নাম প্রকাশে ইচ্ছুক নহে বলেছেন: -ওগুলো ভুত নয়, পানিতে ধানের নারা (ঘাস) পঁচে গ্যাস বের হয়, উহা জ্বলে
ছোট বেলায় ভূতই ভাবতাম। আরেকটু বড় হওয়ার পড়ে ভাবতাম ফ্লাইং সসারও তো হতে পারে। আমি যেগুলো দেখেছি সেগুলো আবার উড়তো কিনা!
যাই হোক, গল্প ভালো হয়েছে। নিরাপদে থাকবেন।
১৭| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৩:২৪
আশাবাদী মানব বলেছেন: রহস্যের আবরণে রঙ ছড়িয়ে আক্ষেপভরা উক্তিতে গল্পের পরিসমাপ্তি। ভালই বলতে হয়...।
১৮| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৭:৪৯
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
ভাল লিখেছেন।ছোট গল্প লেখায় বেশ সিদ্ধহস্ত হচ্ছেন বলেই মনে হল ।
গল্পের ভিতর উঠে আসা পাগলী মনের কিছু অব্যক্ত কথার অনুরননে
জয় কবির ভাষায় কার না বলতে ইচ্ছে করে;
পাগলী তোর সঙ্গে ঝড়ের দিনে জীবন কাটাব
পাগলী তোর সঙ্গে দিবা স্বপ্নের জীবন কাটাব
পাগলী তোর সঙ্গে নিরক্ষর জীবন কাটাব
পাগলী তোর সঙ্গে অক্ষর সাজার জীবন কাটাব
পাগলী তোর সঙ্গে বই পড়ার জীবন কাটাব
পাগলী তোর সঙ্গে সদা সত্য জীবন কাটাব
পাগলী তোর সঙ্গে মিথ্যার জীবন ঘুচাব
পাগলী তোর সঙ্গে কথাশিল্পের জীবন রচিব
পাগলী তোর সঙ্গে বকবকম জীবন কাটাব
পাগলী তোর সঙ্গে ভ্যাবাচ্যাকা জীবন কাটাব
পাগলী তোর সঙ্গে ঝগড়ার জীবন কাটাব
পাগলী তোর সঙ্গে আশাপূর্ণা জীবন কাটাব
পাগলি তোর জন্য অন্ন্পূর্ণার ঘর সাজাব
পাগলী তোর সঙ্গে লেখক জীবন কাটাব
পাগলী তোর সঙ্গে রাখাল জীবন কাটাব
পাগলী তোর সঙ্গে ব্রক্ষ্মচারী জীবন কাটাব
পাগলী তোর সঙ্গে ছাগল চাষের জীবন কাটাব
পাগলী তোর সঙ্গে অনন্ত সুখের জীবন কাটাব।
তেমন পাগলী আর কোথায় পাওয়া যাইব ???
১৯| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৮:৩২
মলাসইলমুইনা বলেছেন: চাঁদগাজী সাহেব,
আপনার এই লেখাগুলো সব সময়ই সুন্দর হয় । এটাও সুন্দর হয়েছে ।
২০| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:৫৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
পড়ে আপনারা মতামত জানায়েছেন, সবাইকে আবারো ধন্যবাদ; কয়েকজনের কিছু প্রশ্নও ছিল; স্যরি, আপনাদের প্রশ্ন গুলোর উত্তর পরে দিতে হবে, সামান্য ব্যস্ত।
২১| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:৫৩
জুন বলেছেন: ছোট বেলায় আমিও দেখেছি বাসার সবচেয়ে মানসিক ভাবে দুর্বল ছেলেমেয়েদের ভাগে এই কাজগুলো পড়তো। এর কারন কি? তারা অন্য কাজের অনুপযুক্ত এটাই কি কারন?
সাবলীল লেখা। ভালো লাগা রইলো।
২২| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:০৫
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
চাঁদগাজী বলেছেন: পড়ে আপনারা মতামত জানায়েছেন, সবাইকে আবারো ধন্যবাদ; কয়েকজনের কিছু প্রশ্নও ছিল; স্যরি, আপনাদের প্রশ্ন গুলোর উত্তর পরে দিতে হবে, সামান্য ব্যস্ত।
কোয়ারেন্টাইন সময়ে কী নিয়ে এত ব্যাস্ত ? বউেযের সাথে ঝগড়াঝাটি অস্বাভাবিক নয়। কারন লক ডা্উনের কারনে বিশ্বে বৃদ্ধি পেয়েছে নারী নির্যাতনঃ বউযের প্রতি সহমর্মী হোন, তারাওতো মানুষ !!!
১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:৪৭
চাঁদগাজী বলেছেন:
আমাদের এলাকায় অনেক খারাপ সংবাদ, নিজের পোষ্ট আসতে খুব একটা ভালো লাগছে না।
২৩| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:৪১
অনন্য দায়িত্বশীল আমি বলেছেন: মহাদূর্যোগে আপনি কি নিয়ে ব্যস্ত?
২৪| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:১৮
সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: ছোট গল্প!
২৫| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:৩৭
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: ভালো লাগলো।
২৬| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:১৬
শামছুল ইসলাম বলেছেন: জীবন ঘনিষ্ঠ গল্প।
ছোট গল্পের সার্থক রূপায়ণ।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৮:৫৬
মিরোরডডল বলেছেন: ভালো করেছেন এখন পাগলিকে নিয়ে লিখেছেন । এ লেখাগুলো সবসময়ই ভালো লাগে, এখন আরও বেশী ভালো লাগবে ।
‘তাঁর মুখের আনন্দটা কোথায় যেন মিশে গেলো’
আহারে ! কে জানে সে কি ভেবেছিল মনে মনে ।
বয়স কত ছিল তখন ? কিউরিসিটি থেকে একটা প্রশ্ন, ছোটবেলায় কি চশমা পড়তেন ?