নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সম্পদহীনদের জন্য শিক্ষাই সম্পদ

চাঁদগাজী

শিক্ষা, টেকনোলোজী, সামাজিক অর্থনীতি ও রাজনীতি জাতিকে এগিয়ে নেবে।

চাঁদগাজী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভিক্ষুক-রাজদের বনেদি জাতি

১৭ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৪:২৫



আমি প্রাইমারী স্কুলে পড়ার সময়, আমাদের স্কুল আমেরিকান ইউএস-এইড'এর রিলিফ হিসেবে মাসে ২/৩ বার গুড়োদুধ দিতো; বেশীরভাগ গরীব বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারতো না; দুধ পাউডার দেয়ার দিন, সামান্য দুধ পাউডারের আশায় কেহ কেহ স্কুলে আসতো; কিন্তু নির্দয় শিক্ষকেরা এদেরকে রিলিফের সামান্য গুড়োদুধটুকু দিতো না; এটা সেই সময়ের একটি ঘটনা:

পাকিস্তানী আমলে, আইয়ুব খানের বদৌলতে পুরো জাতি মোটামুটি ভিক্ষুকে পরিণত হয়েছিলো; আমরা তখন উহা বুঝতাম না; সর্বস্তরে রিলিফে এটাসেটা দিতো; স্কুলে গুড়োদুধ দিতো। প্রথমে, খুবই উৎসাহভরে দুধ আনতাম; তবে, পরে লাইনে দাঁড়িয়ে দুধ নিতে লজ্জা লাগতো। আমাদের ২টি গাভী ছিলো সব সময়ে, এবং আমাদের নিজের দুধ পরিবারের জন্য যথেষ্ট ছিলো। ২য়, ৩য় শ্রেণীতে পড়ার সময়, দুধ পাউডার দেয়ার দিনটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিলো, সারা গ্রাম কিভাবে জেনে যেতো যে, আজকে স্কুলে গুড়োদুধ দেবে; আমরা ছোট একটা টিনের পট নিয়ে যেতাম; দুধ দিতো স্কুল ছুটির পর; দুধ নিয়ে বাড়ী ফেরার পথে, স্কুলে না-যাওয়া শিশুরা গুড়োদুধ চাইতো, তাদেরকে হাতে সামান্য পরিমাণ দিলে, ওরা খেতো, অনেক খুশী হতো।

আমি দুধ আনার সময় যেই কয়টি শিশু দুধ চাইতো, তাদের মাঝে জিরাধন ছিলো খুবই উৎসাহী; জিরাধন এমনভাবে হাত এগিয়ে দিতো যে, যেন আমি তাকে দেয়ার জন্যই স্কুল থেকে দুধ আনতাম; তাকে ৩/৪ বার দিতে হতো। তার ১ বছরের বড় বোন নুরজাহান অদুরে দাঁড়ি্যে থাকতো, কখনো দুধ চাইতো না, আমি দিতে চাইলেও নিতো না; ছোটবোন জিরাধন তাকে দিলে, সে সমান্য পরিমাণ নিতো।

নুরজাহান আমার থেকে ২/১ বছরের বড় ছিলো; পরিবারে সে অবহেলায় বড় হচ্ছিলো; তার মাথার চুল উসকো-খুসকো ছিলো বরাবরই, মায়ের সাথে তার খুব একটা ঘনিষ্ঠতা ছিলো না; তাকে আমি তার বাবার সাথে দেখতাম প্রায়ই, এবং সে অন্য শিশুদের মতো হাসিখুশী ছিলো না।

তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময়, একদিন দুধের লাইনে আমার পেছনে কয়েকজনের পর দেখি নুরজাহান; নুরজাহানের চাচাতো ভাই স্কুলের ২য় শ্রেণীতে পড়তো, নুরজাহান দুধের জন্য এসেছে। আমি জানতাম, যেই শিক্ষকটি দুধ দিচ্ছেন, উনি নুরজাহানকে দেবেন না; সেটাই ঘটলো। নুরজাহান চুপ করে তার চাচতো ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করলো; একটু পরে, সে যখন চাচাতো ভাইয়ের সাথে চলে যাচ্ছে, আমি নিজের দলকে ফেলে ওদের পেছনে পেছনে বাড়ীর দিকে রওয়ানা হলাম।

কিছুদুর আসার পর, আমি ওদের সাথে কিছুক্ষণ হাঁটার পর, নুরজাহানকে বললাম,
-নুরজাহান, আমাদের ঘরে অনেক দুধ, তুই আমার দুধের পটটা নিয়ে যা।
-না, দরকার নাই, নুরজাহান বললো।

আমি তাকে দেয়ার চেষ্টা করলাম কয়েকবার, সে নিলো না। সে ক্রমেই আস্তে হেঁটে আমার পেছনে পড়ে গেলো। ওদের বাড়ীর কাছে আসতেই জিরাধন দৌড়ে এলো; আমি পেছনে ফিরে দেখি নুরজাহান নেই, সে পাশের বাড়ীতে ঢুকে গেছে। আমি জিরাধনকে ২ বার দুধ দেয়ার পর পটটা তার হাতে দিয়ে বললাম,
-পটটা নিয়ে যা, দুধগুলো নুরজাহানের জন্য, তুইও সামান্য নিস; তবে, পটটা নুর জাহানের জন্য।
-তোর মা কিছু বলবে না?
-না, বলবেন না, আমাদের গাভীর দুধ আছে।

২ দিন পর, সন্ধ্যার আগে আমি খামারে গরুকে পানি খাওয়াচ্ছি, সেইসময় দেখি জিরাধন পটটি ফেরত দিতে এসেছে।
-তুই নুরজাহানকে দিয়েছিলি?
-দিয়েছি, আমরা ২ জনে খেয়েছি, এখনো অনেক দুধ আছে।






মন্তব্য ৩৪ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (৩৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৪:৪৬

রানার ব্লগ বলেছেন: বাবার মুখে শুনেছি আপনি যে সময়ের কথা বলছেন আমার বাবাও সেই সময়ের মানুষ, তিনি ৬৮ এ পাকিস্থান নেভীতে যোগদান করেন, অভাব ও দারিদ্রতা সেই সময় অনেক বেশি ছিলো তবে মানুষ গুলো ভালো ছিলো এখনকার মতো বাটপার কম ছিলো।

১৭ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৪:৫৯

চাঁদগাজী বলেছেন:



সরকারের মগজহীনরা জাতিকে ভিক্ষকে পরিণত করেছে; আমরা দরিদ্র জাতি, কারণ আমাদের সরকারে বাটপাড়েরা কাজ করে; বাটপাড়ি দক্ষতা হিসেবে গণ্য হয় বাংলাদেশে।

২| ১৭ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৪:৫৭

নজসু বলেছেন:



শ্রদ্ধেয়, আপনার ভিতরে সত্যিই সুন্দর একটি মনের বসবাস।

১৭ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৪:৫৯

চাঁদগাজী বলেছেন:



আমি সামুর একমাত্র ব্যক্তি-আক্রমণকারী।

৩| ১৭ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৫:১৫

মিরোরডডল বলেছেন:



থ্যাংকস সেই সময়ের গল্পটা শেয়ার করার জন্য ।
কত ঘটনাই আমরা জানিনা । কতকিছু ঘটে মানুষের জীবনে ।
এত কষ্টের মধ্যে দিয়ে মানুষকে যেতে হয়েছে ।

আজ এতো বছর পরেও এখনও দেশে কত দরিদ্র মানুষ ।
তাদেরকেও হয়তো এরকম অবস্থার মধ্যে দিয়েই যেতে হয় ।

ইউ ডিড দ্যা রাইট থিং ।
সামর্থ্যহীনদের পাশে থাকা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ।

১৭ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৫:২১

চাঁদগাজী বলেছেন:




দেশের সম্পদ ও সুযোগগুলো প্রশাসনের লোকেরা দখল করে রাখে; ফলে, সাধারণ মানুষ সুযোগ পায় না।

আমেরিকার দেয়া সামান্য গুড়োদুধ একজন শিক্ষক গরীব শিশুকে দিতো না; কেমন নির্দয় জাতি!

৪| ১৭ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৫:২৮

মিরোরডডল বলেছেন:



শিশুদের প্রতি মানুষের এমনিতেই একটা মমত্ববোধ থাকে ।
আর যদি সেটা হয় দরিদ্র শিশু তাহলে আরও বেশী মায়া লাগে ।
সেখানে একজন শিক্ষক যদি এমন ব্রুটাল হয়, তাহলে মানুষ তার কাছ থেকে কি শিখবে !!!
সত্যিই দুঃখজনক ।

১৭ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৫:৩২

চাঁদগাজী বলেছেন:



বাংলাদেশে শিক্ষার মান নীচু হওয়ার জন্য শিক্ষকেরা দায়ী; পুরোজাতিকে শিক্ষিত করার জন্য শিক্ষকেরা কোন ভুমিকা পালন করেনি।

৫| ১৭ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০০

শূন্য সারমর্ম বলেছেন: প্রকৃতিগত ভাবে সোসালিস্ট মনোভাবের ছিলেন মনে হয়; জিরাধন ও নূরজাহানের কি খবর এখন?

১৭ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৬

চাঁদগাজী বলেছেন:




আমি মনেপ্রানে সোস্যালিজমে বিশ্বাসী।

আমাদের গ্রামের ১টি মেয়েও সুখী হয়নি; ২ জনেই আছে (২০১৯ সালের খবর অনুযায়ী )।

৬| ১৭ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৩

মিরোরডডল বলেছেন:




নিম্নমানের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য শুধু শিক্ষকদের দায়ী করা যাবে না ।
ভালো শিক্ষক অবশ্যই আছে কিন্তু তারা শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন চাইলেও করতে পারবে না কারন তারা সংখ্যায় কম ।
দুষ্টদের সংখ্যা বেশী যারা সুবিধাবাদী । গোঁড়ায় গলদ আছে, যারা টাকা খেয়ে অযোগ্য লোকদের নিয়োগ দেয় ।
আবার অনেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করেও সুযোগ নেয় ।

তাই এ অবস্থার উন্নতি করতে হলে মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদের নিয়োগের সিলেকশন ক্রাইটেরিয়া সেটা ঠিক করতে হবে । যোগ্য লোকদের নিয়োগ, তাদেরকে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দেয়া, কাজের মূল্যায়ন, এপ্রিসিয়েশন এগুলো দিতে হবে ।
তাহলে মোটিভেটেড হয়ে তারাও ভালো কাজ করবে । এসবকিছুই একটা চেইনের মতো । একটার সাথে আরেকটা সম্পৃক্ত ।



১৭ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৯

চাঁদগাজী বলেছেন:




এই করোনায় সরকারী সকল শিক্ষক বেতন পেয়েছেন; বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ ও ইউনিভার্সিটির শিক্ষকেরা বেতন পেয়েছেন; বসে বসে টাকা খেয়েছেন, কোথায়ও ভলনটিয়ার হয়েছেন? বেসরকারী স্কুলের ২/৪ লাখ শিক্ষক কোন বেতন পায়নি, সরকারী স্কুলের শিক্ষকেরা এঁদের সাহায্য করেছেন?

৭| ১৭ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৯

শূন্য সারমর্ম বলেছেন: সুখের ডেফিনিশন কি?

১৭ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৩১

চাঁদগাজী বলেছেন:



সুখের ডেফিনেশন: ইহা মনের একটা অনুভবতা, যখন মনে হয় যে, জীবন সফল হয়েছে, জীবনে আনন্দ আছে, জীবন সুন্দর; যখন নিজের হৃদয়ে ভালোবাসার উপস্হিতিকে অনুভব করা সম্ভব হয়, নিজকে সন্তষ্ট মনে হয়, অন্যদের সুখী দেখতে ইচ্ছে হয়।

৮| ১৭ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৩০

মিরোরডডল বলেছেন:




খুবই লেজিটিমেট প্রশ্ন, উত্তর জানা নেই বললে ভুল হবে ।
উই অল নো দ্যা আনসার । খুবই শকিং !

ব্যক্তিগতভাবে কে কি করেছে জানিনা, কিন্তু রাষ্ট্রীয় ফান্ড থেকে যে এসব শিক্ষকদের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি,
তাই কেউ চায়ের স্টল চালাচ্ছে, কেউ বা খেলনা বিক্রি এটা মেনে নেয়া অনেক কষ্টকর ।






১৭ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৩২

চাঁদগাজী বলেছেন:



আমি খুশী হতাম শেখ বংশের কেহ যদি টং'এর চা দোকান চালাতো।

১৭ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৪

চাঁদগাজী বলেছেন:



বাংলাদেশ জুটমিল কর্পোরেশনের এক উঁচুপদের অফিসারকে ম্যানহাটনে বাদাম বিক্রয় করতে দেখেছিলাম; উনি আমাকে চিনতেন না, আমি উনাকে চিনতাম।


৯| ১৭ ই জুলাই, ২০২১ রাত ৮:৫৫

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: স্বাধীনতার পরের কিছু স্মৃতি আছে আমার। তখন ভূট্টার গুড়া (চিনি মিশানো), ইউনিসেফের রুলটানা খাতার দেবার কথা মনে আছে।

১৭ ই জুলাই, ২০২১ রাত ১১:২৫

চাঁদগাজী বলেছেন:



শেখ সাহেবও ভিক্ষুক ছিলেন; জাতিকে কাজে লাগানোর কথা উনার মাথায় আসেনি। উনি জাতির জন্য রিলিফ নিয়ে আসার পক্ষে ছিলেন।

১০| ১৭ ই জুলাই, ২০২১ রাত ৯:০৩

কামাল১৮ বলেছেন: শেখেদের উপর এতো খেপলেন কেন।অনেক সৈয়দ আছে চোর,অনেক শেখ আছে চায়ের দোকানদার।
আইউবের ইলেকশনের আগে ছিল স্কুলে দুধ দেয়ার প্রচলন।সেটা সম্ভবত ৬৪/৬৫ দিকে।ভালো স্মৃতিচারণ
৭ নং কমেন্টের উত্তরে আপনি যা লিখেছে,এখানে ভাষার ব্যবহার একটু অন্য রকম,মনে হয় পরিশীলিত সাহিত্যিকের লেখা।আপনার সাধারন লেখা থেকে একটু অন্য রকম।

১৭ ই জুলাই, ২০২১ রাত ৯:৪৫

চাঁদগাজী বলেছেন:



৭ নং প্রশ্নের উত্তরে দেয়া ডেফিনেশনটি আমার অনুধাবন থেকে চেষ্টা করেছি।

১১| ১৭ ই জুলাই, ২০২১ রাত ১০:৪৮

শূন্য সারমর্ম বলেছেন: কিছু ডেফিনিশন অনুধাবন সবাই এক রাস্তায় থেকেই করে;তাই মিলে যায়।

১৭ ই জুলাই, ২০২১ রাত ১১:০৭

চাঁদগাজী বলেছেন:



সঠিক ডেফিনেশনগুলো মিলার সম্ভাবনা আছে; আমরা এগুলোকে কোথায়ও না কোথায় পড়েছি সবাই; কিন্তু সবার নিজস্ব অনুধাবন, কিংবা ভুল ধারণার কারণে, এগুলো বদলাতে পারে।

১২| ১৭ ই জুলাই, ২০২১ রাত ১১:১৯

শূন্য সারমর্ম বলেছেন: তা ঠিক ; তবে গরীবের কাছে টাকা,ধনীর কাছে সুস্বাস্থ্য ও মধ্যবিত্তের কাছে টাকা ও সুস্বাস্থ্য ব্যালেন্স করার নামই সুখ।

১৭ ই জুলাই, ২০২১ রাত ১১:২৮

চাঁদগাজী বলেছেন:




দরকারী পরিমাণ সম্পদ মানুষের প্রাথমিক চাহিদা মেটানোর জন্য দরকার; একজনের অধিক সম্পদ মানে অন্য কারো ভাগের অংশ দখল। অন্যের অশান্তি করে যারা সুখী হওয়ার চেষ্টা করে, তাদের সমস্যা হয়।

১৩| ১৭ ই জুলাই, ২০২১ রাত ১১:২৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আমিও আমেরিকার সৌজন্যে লা্ইনে দাঁড়িেয় গুড়া দুধ ( আমরা বলতাম ঘাষি দুধ)
ডালডা, বিস্কিট, গম, ইউনিসেফের দেওয়া রং পেন্সিল আরও কত কি নিতাম। তখন
আমার মনে হয়নি আমরা ভিক্ষুক জাতি !!

১৭ ই জুলাই, ২০২১ রাত ১১:৩০

চাঁদগাজী বলেছেন:



কম বয়সে মানুষ জীবনের অনেক কিছু বুঝতে পারেন না; আইয়ুব ও শেখ সাহেবের বয়স সব সময় কম ছিলো, মনে হয়।

১৪| ১৮ ই জুলাই, ২০২১ রাত ৩:০৬

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



পোষ্টের কথামালা আমাকেও নিয়ে গেল স্মৃতির অনেক পিছনে ।
আমার মনে পড়ে আমাদের বাড়ীর পাশে প্রাইমারী স্কূলে তখন
তৃতীয় হতে চতুর্থ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছি । এই প্রাইমারী স্কুলটি
সরকারী স্কুল ছিলনা , পাশেই নদীর উপারে ছিল সরকারী মডেল
প্রাইমারী স্কুল । আমরা খবর পেলাম সে স্কুলে সপ্তাহে একদিন
বিলাতি দুধ ছাত্রদেরকে দেয়া হয়।আমরা অনেকেই ভাবলাম এই
স্কূল ছেড়ে ঐ মডেল স্কুলে ভর্তী হয়ে ছাত্র হয়ে যাব । অনেকেই
চলেও গিয়েছে । হেডমাষ্টার মৌলভী সার বলতেন বিলাই এর দুধ
(তখন রিলিফের দুধ বিলাতি দুধ নামে পরিচিত ছিল ) খাওয়ার
জন্য অনেকেই স্কুল ছেড়ে চলে যাচ্ছে । কে শুনে কার কথা ।
আমিউ একদিন বাড়ীতে কাউকে কিছু না বলে নীজে নীজেই
সেই মডেল স্কুলে ক্লাশ ফোরে এডমিশন নিয়ে নিলাম । বাড়ীতে
তোলপার ,খেয়াঘাটের নৌকায় নদীর পার হয়ে প্রতিদিন উপারের
স্কুলে যেতে হবে তাও আবার বাড়ী হতে ১০/১৫ মিনিটের পথ ।
আরো কত কি ।যাহোক আমিরিকান রিলিফের দুধ খাচ্ছি ।
দিন কয়েক পরে দুধের সাথে আসল ভেজিটেবল ঘি , চিনির বস্তা
আর গমের বস্তা । তবে তা আসল পাশেই থাকা হাই স্কুলের জন্য ।
দেখতেদেখতে প্রাইমারী ছেড়ে হাইস্কুলে এডমিশন নিলাম ক্লাশ
সিক্সে। সেখানে এলাহী কান্ড , আমিরিকান বিলাতি দুধ ,সাথে
ডালডা ঘি আর চিনি দিয়ে প্রতিদিন স্কুলের ছাত্রদের টিফিনের জন্য
রান্নাহতো ক্ষীর , কোনদিন চিনি না দিয়ে পেয়াজ মরিচ , বিলাতি দুধ
আর গম দিয়ে রান্না হতো খিচুরী । রান্না করতো স্কুলের বাবুর্চি।
টিফিন আওয়ারে প্রতিটি ক্লাশের ছাত্রদেরকে তাদের শ্রেণী কক্ষে
বেঞ্চে বসিয়ে থালায় পরিবেশন করতে হতো সেই খিচুরী ।
বড় গামলায় করে খিচুরী শ্রেণী কক্ষে নেয়া হতো , গামলা হতে
তা থালায় নিয়ে সকলকে পরিবেশন করতে হতো , দায়িত্ব ছিল
ক্লাশ কেপ্টেনের। দুর্ভাগ্য কিংবা সৌভাগ্যক্রমে সেবার আমাকেই
নির্বাচিত করা হয়েছিল ফার্স্ট কেপটেন হিসাবে । ঠেলা কারে কয়
বুজেছিলাম তখন। তবে এ কাজ করে বেশ গর্ব বোধ করতাম ।

যাহোক ঐ রিলিফের গম , চিনি , দুধ আর ডালডা ঘি মনে হয়
বেশীর ভাগই যেতো বিভিন্ন জনের বাড়ীতে , আমি টের পাই স্কুলের
বিয়ারার যখন স্কুলের ম্যনেজমেন্ট টিমের সদস্যদের বাড়ীতে
দুধের টিন,ডালডার টিন নিয়ে যেতো ব্যাগে করে।

যাহোক দেশকে তখন শুধু মাত্র রিলিফের উপরেই নির্ভরশীল
করা হয়নি , তখনকার পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আয়ুব খান
তার বিডি মেম্বারদের নিয়ে মৌলিক গনতন্ত্রের সিসটেম প্রবর্তন করেছিল
( আয়ুব খানের আবিস্কৃত মৌলিক গনতন্ত্র বেসিক ডেমোক্রেসি )
সেই মৌলিক গনতন্ত্র অনুযায়ী দেশের দুই অংশের বিডি মেম্বারদের
( ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত মেম্বার)ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবে ।
কিছুদিন পরে দেশে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হলো , প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে
আয়ুব খানের প্রতিধন্ধি হিসাবে দাঁড়িয়েছিলেন কায়েদে আজমের
বোন ফাতেমা জিন্নাহ , তখনকার পাকিস্তানের পুর্ব পশ্চিম উভয়
অংশেই ফাতেমা জিন্না বিশাল জনপ্রিয়তা পান ,আমরাও সকলেই
ভাবলাম এবার একনায়ক আয়ুব খানের পতন হবে , ফাতেমা জিন্না
বিশাল ব্যবধানে ভোটে জিতবে। দেশের প্রায় সকল বিরোধি দল ফাতেমা
জিন্নাকে সমর্থন দেয় । জনমত দেখে বিডি মেম্বাররাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল
তারা ফাতেমা জিন্নাহকে ভোট দিবে । দিন কয়েক বাদে নির্বাচন হলো
ফলাফল আয়ুব খান বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করেছে । কারণটা
বুঝা গেল দিন কয়েক পরে । বাজারে জাল একশ টাকার নোট পাওয়া
যেতে লাগল । খবর রটলো আয়ুব খান তার স্থানীয় দোসর মুনায়েম খানের
( পুর্ব পাকিস্তানের ততকালীল গভর্নর) মাধ্যমে ভোটের আগের রাতে
জাল টাকার নোটের বান্ডিল দিয়ে বিডি মেম্বার কিনে নিয়েছে । পরে দেখা
গেল অনেক বিডি মেম্বারের কাছে আছে জাল নোট , তাদের মাথায় হাত,
সাধারণ মানুষ বেজায় খুশী হলো, আয়ুব খান এক ডিলে দুই পাখী মারলো।
নির্বাচনেও জিতল বিডি মেম্বারদেরকে ভেড়া বানিয়ে জনগনকে এক ধরনের
আনন্দ দিল । তেলেসমাতি কান্ডই বটে ।

যাহোক পোষ্ট পাঠে প্রসঙ্গক্রমে অতীত দিনের কিছু স্মৃতি চর্বন করে গেলাম ।

১৮ ই জুলাই, ২০২১ ভোর ৪:১৩

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনি সেই ভুংকর দি গুলোকে বিশদভাবে তুলে ধরেছেন; পাকী মিলিটারী দেশটাকে ভিক্ষুকের দেশে পরিণত করেছিলো। দু:খেরর বিষয়, শেখ সাহেবও জনতার কর্মশক্তির অর্থনীতি বুঝতে পারেননি।

ফাতেমা জিন্নাহের জন্য মিলিল করেছিলাম।

জিয়া, এরশাদ, বেগম জিয়া মিলে জাতিকে ভুল পথে নিয়ে গেছে; শেখ হাসিনাও আমাদেরকে আমাদের কক্ষপথে আনতে সক্ষম হলো না।

১৫| ১৮ ই জুলাই, ২০২১ সকাল ৯:৩৭

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: আমার চাচা চেয়ারম্যান ছিলেন আমাদের বাড়ী উঠানে গুড়োদুধ, বিস্কুট ও লজেন্স দেওয়া হতো; ছোট বেলায় আমরাও সেগুলো নিয়ে খেতাম তবে কখনো ভিক্ষুক বলে মনে হয়নি, হয়তোবা ছোট ছিলাম তাই।

১৮ ই জুলাই, ২০২১ রাত ৮:১০

চাঁদগাজী বলেছেন:




এখন বড় হয়েছেন?

১৬| ১৮ ই জুলাই, ২০২১ দুপুর ১:০৭

কুশন বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।

১৮ ই জুলাই, ২০২১ রাত ৮:১১

চাঁদগাজী বলেছেন:




চেষ্টা করছি।

১৭| ২০ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ৭:১০

খায়রুল আহসান বলেছেন: কোন কিছু শেয়ার করে খাবার আনন্দ যারা একবার বোঝে, তারা সুযোগ পেলেই খাবার দাবার শেয়ার করে খায়।
'ত্যাগে আনন্দ' - এটা অনেকের মজ্জায় মিশে থাকে। তবে বেশিরভাগ লোকেরই মজ্জায় থাকে 'ভোগে আনন্দ'।
জিরাধন - নামটা খুব সুন্দর!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.