নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সম্পদহীনদের জন্য শিক্ষাই সম্পদ

চাঁদগাজী

শিক্ষা, টেকনোলোজী, সামাজিক অর্থনীতি ও রাজনীতি জাতিকে এগিয়ে নেবে।

চাঁদগাজী › বিস্তারিত পোস্টঃ

রিজিয়ার দখলে জ্বীন

৩০ শে অক্টোবর, ২০২১ ভোর ৪:৩২



আমাদের বাড়ির উত্তর পাশের ২য় বাড়ীটার লোকজন চাষবাস করে কোনভাবে চলতেন; সেই বাড়ীর ১ মেয়ে, রিজিয়ার বিয়ে ঠিক করা হলো গ্রামের এক ছেলের সাথে; ছেলেটি রিজিয়ার পছন্দ হয়নি; বিয়ের সপ্তাহ'খানেক আগে রিজিয়া লুকায়ে যায় নিজেদের ঘরের ছালে; তাকে খুঁজে পাবার পর, সে জ্বীনে-ধরাদের অভিনয় শুরু করে; আমার সাথে ঘনিষ্ঠতা থাকার কারণে, উহাতে আমাকেও ভুমিকা পালন করতে হয়েছিলো:

রিজিয়া বয়সে আমার থেকে বছর'খানেকের বড় ছিলো; আমি যেদিন প্রথবার স্কুলে গেছি, সে সেইদিন ক্লাশে উপস্হিত ছিলো; সেটাই ছিলো তার জীবনে স্কুলের পড়ালেখা, ১ম ও শেষদিন; কাপড় ছিলো না বলে আর যাওয়া হয়নি; কিন্তু রিজিয়া পড়তে শিখার জন্য উৎগ্রীব ছিলো, সে তাদের বাড়ীর স্বশিক্ষিত পন্ডিতের কাছে পুঁথি পড়তে শিখার শুরু করলো; বছর খানেকের মাঝে সে আমাদের যেকোন বাংলা বই সুন্দরভাবে পড়তে পারতো। এরপর সে পুরানো পত্রিকা পড়া শিখলো; আমার বড় ভাই সপ্তাহে ২/১ দিন আজাদী পত্রিকা কিনে আনতেন; উহার শেষ পাঠক ছিলো রিজিয়া।

আমি দশম শ্রেণীতে; এক বাজারবারে, বেলা ডুবার একটু আগে, আমি মেঠো পথ ধরে বাড়ী ফিরছিলাম; দুর থেকে গ্রামটিক অসম্ভব সুন্দর লাগছিলো: গ্রামের গাছগুলোর মাথায় একরাশ কুয়াশা ঝুলেছিলো। পথটি রিজিয়াদের বাড়ীর পাশ দিয়ে গিয়েছে ; আমি দুর থেকে দেখছি, রিজিয়া বাড়ীর পাশে ছাগলের ১টি বাচ্চাকে কোলে করে দাঁড়িয়ে আছে; কাছে আসতেই সে হাত নেড়ে ডাকলো; কাছে যেতেই ওর শরীর থেকে সোঁন্দা-মুলের সুগন্ধী আমার মাথা ঘুরায়ে দিলো; সে সব সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতো ও সোঁন্দামুলের সুগন্ধী ব্যবহার করতো।

সে খুব উৎসাহের সাথে আমাকে বললো,
-তোকে বাঁচায়ে দিলাম, আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে!
-কখন, কার সাথে?
-জামাল সওদাগরের সাথে, আগমী মাসে। তুই তো ভয়ে ছিলি, তোর গলায় ঝুলে পড়ি নাকি।
-ভয় পাবো কেন? আমাকে তো এখন বিয়ে করতে দেবে না; তদুপরি, তুই তো বষসেও আমার চেয়ে বড়!
বয়স কোন সমস্যা নয়, ভালো চাষী সব জমিনে ভালো চাষ করতে পারে, ছোট বড় কোন সমস্যা নয়; ইহা তোকে আমি বুঝতে পারলাম না, তোর সাহস কম, না'হয় মাঝরাতে আমি তোর খামার-ঘরে আসতে পারতাম, অনেক গল্প হতো।

রিজিয়ার সাথে কথা বললে, কথা কখনো শেষ হতো না; সে ভালোবাসা, নারীপুরুষের সম্পর্ক নিয়ে অনেক ফ্যান্টাসী কথা বলতো সব সময়; সে সব সময় এই রকমই ছিলো। আমার থেকে বই নিতে এলে, এমন সব কথা বলতো, যেগুলো মেয়েরা নিজেদের মাঝে বলে। ২ জনে হাসাহাসি করলাম অনেকক্ষণ; ওর মা এসে ডেকে নিয়ে গেলো।

বিয়ের ১ সপ্তাহ বাকী; সকালে আমি স্কুলে যাবার জন্য গোসল সেরে ঘরে এসেছি, রিজিয়ার ছোট বোন এসে বললো যে, আমাকে তাদের বাড়ী যেতে হবে, ভোর থেকে রিজিয়াকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি বেশ চিন্তিত হয়ে তাদের বাড়ী গেলাম; লোকজন চিন্তিত, গ্রাম পুরোটা খুঁজে ফেলেছে, রিজিয়া কোথয়ও নেই; তার মা আমার থেকে জানতে চাইলো, সম্প্রতি রিজিয়া আমাকে কিছু বলেছে কিনা!
-সে কিছু বলেনি; তবে মনে হয়, জামাল সওদাগরের সাথে বিয়ে তার পছন্দ হচ্ছে না।

আমি ফিরে এলাম, ভাবছি সে কোথায় গেলো! কাপড় পরে বের হবো, আবার রিজিয়ার ছোট বোন এলো দৌড়ায়ে; রিজিয়াকে পাওয়া গেছে, ঘরের ছালে, আম গাছের ডাল-পাতার আড়ালে বসে ছিলো; তাকে নাকি জ্বীন ওখানে নিয়ে গেছে, সে ওখান থেকে নামবে না; কেহ উঠার চেষ্টা করলে সে লাফ দিবে। ঘরটা বেশ উঁচু ছিলো। ওর মা আমাকে ঘরের ছালে উঠে বুঝায়ে বলতে বললো।

-রিজিয়া, আমি উপরে আসছি, কথা আছে!
-আমি তোর মই ফেলে দিবো।
মই ফেলিস না, আমি ব্যথা পাবো।

বড় ২টি বাঁশের সাথে ২ টি মই বেঁধে দিয়েছে রিজিয়ার বাবা ও চাচা; আমি উপরে উঠলাম; রিজিয়া বললো,
-তুই কাছে আসিস না, আমি লাফ দেবো।
-লাফ দিলে তোর হাত-পা ভাংগবে, তুই খোঁড়ায়ে হাঁটতে চাস?
-আমি এখান থেকে নামবো না।
-আরে বেকুব, আমি তোর মাকে বলেছি যে, জামাল সওদাগরকে তুই পছন্দ করিস না।
-মা কি বলেছে?
-তোর মা বুঝেছেন, তোর মা তোর মতের বিপক্ষে যাবে না।
-ঠিক আছে, আমি তারপরও এখান থেকে নামবো না।
-পাগলামী ছাড়, তোর পেশাব লাগলে কোথায় যাবি?
-আমার এখনি লেগেছে!
-তাড়াতাড়ি করে নেমে যা, গ্রামের সবাই না'হয় হাসবে।
-ঠিক আছে, সবাইকে ওখান থেকে সরে যেতে বল; তুই আগে নাম, মই শক্ত করে ধরবি, না'হয় আমি পড়ে ব্যথা পাবো; আর, উপরের দিকে তাকাবি না, ঠিক আছে?
-ঠিক আছে।




মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৮:৩০

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:

রিজিয়ার এখন কি খবর? আপনার সাথে কতজনের ঘনিষ্ঠতা ছিলো?

৩০ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৯:৫৬

চাঁদগাজী বলেছেন:



আমার সাথে অনেকের ঘনিষ্ঠতা ছিলো; আাদের দেশের ছেলেরা মেয়েদের সাথে মিশতে জানে না; আমি মেয়েদের কথা শুনতাম, সহজ হওয়ার চেষ্টা করতাম।

সে তেমন ভালো নেই, স্বাস্হ্য সমস্যা; গ্রামের মানুষ কখনো ডাক্তার দেখার সুযোগ পায়নি, রোগ লালন পালন করে চলে।

২| ৩০ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৮:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল সুন্দর লেখা।
আগের জীবন অনেক সহজ সরল ছিলো।

৩০ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৯:৫৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


আমাদের ছেলেরা স্বভাবের দিক থেকে হ্যাংলা, এদের চালচলন অস্বাভাবিক।

৩| ৩০ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:০১

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:

আপনার গ্রামের আপনার পরিচিত কতজন ছেলে-মেয়ে আপনার মত ভালো অবস্থানে আছে?

৩০ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:০৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


২ জন পড়ালেখায় ও চাকুরী ইত্যাদিতে আমার থেকে অনেক অনেক ভালো করেছিলো; কিন্তু ওরা শহরবাসী এখন; ছাত্র-জীবনে বই ও নিজ পরিবারের বাইরে কাউকে চিনতো না, এখনো নিজ পরিবারের বাইরে চলাফেরা নেই।

৪| ৩১ শে অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৩:১০

রাজীব নুর বলেছেন: অনেকদিন হয়ে গেলো জেনারেল হয়ে বসে আছি। তাতে আমার কিছুই যায় আসে না। আমি আমার মতোই লিখছি। পড়ছি। হে হে---
আমার পোষ্ট কে পড়লো না পড়লো তা নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না। লিখতে ভালো লাগে লিখে যাচ্ছি। জেনারেল হওয়ার পর, ভালো লেখার ফাঁকে ফাঁকে দুই তিনটা অতি মন্দ লেখা লিখে ফেলেছি। এডমিন যদি জানে তাহলে আমার খবর আছে।

৩১ শে অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৪:৪৯

চাঁদগাজী বলেছেন:




আার কমেন্ট ক্ষমতা নেই; ফলে, আপনার পোষ্টে কেন্ট করতে পারছি না; আপনার যেসব লেখা আপনার কাছে ভালো না লাগে, সেগুলো সরায়ে ফেলেন।

আমি লেখার জন্য বা পড়ার জন্য সামুতে আসি না: আমি এখানে সময় কাটাই, বুঝতে চাই দেশের তরুণ শিক্ষিতদের কত অংশ অকেজো, অদক্ষ!
[native code]
}

৫| ০১ লা নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: মেধাবীরা চলে যাচ্ছে বিদেশে। কম মেধাবীরা কোনো ভাবে খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে চাচ্ছে।

০১ লা নভেম্বর, ২০২১ ভোর ৪:০১

চাঁদগাজী বলেছেন:




গার্মেন্টস চালু হওয়ার পর থেকে কমপক্ষে ২কোটী মেয়ে গার্মেন্টস'এ কাজ করেছে; এই কোয়ালিটির ভারতীয় মেয়েরা পড়ালেখা করে এসে আমেরিকার সব কোম্পানীর কম্প্যুটার চালাচ্ছে; ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে এসে এখানে ট্যাক্সী

৬| ০১ লা নভেম্বর, ২০২১ রাত ১০:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: আমাদের দেশের এই অবস্থার জন্য সর০কার দায়ী। শুধু মাত্র সরকার। আর কেউ না।

০১ লা নভেম্বর, ২০২১ রাত ১১:১৮

চাঁদগাজী বলেছেন:



সরকার, প্রশাসন, অসৎ ব্যবসায়ীরা ও শিক্ষকেরা দায়ী।

৭| ০৩ রা নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:০৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনার এ রকম আরো কয়েকটা লেখা পড়ার পর মনে হচ্ছে, আপনি ছোটবেলা থেকেই নারীবান্ধব ছিলেন।
শেষ পর্যন্ত রিজিয়ার কেমন ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছিল? সে কি জীবনে সুখী হয়েছিল?

০৩ রা নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:১৮

চাঁদগাজী বলেছেন:



আমি আমার গ্রামের ১টি মেয়েকেও সুখী হতে দেখিনি, আশপাশের গ্রাের দরিদ্র পরিবারের একটি মেয়েও সুখী হয়নি। রিজিয়ার বিয়ে হয়েছিলো ১টি চাষী ছেলের সাথে, খেয়ে পরে চলছে কোন মতে; তার সাথে ২০১২ সালে দেখা হয়েছিলো, শরীর রোগাকান্ত; কোনদিন ডাক্তার দেখানো হয়নি।

৮| ০৮ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১:১৪

জহিরুল ইসলাম সেতু বলেছেন: রিজিয়ার জন্য সহানুভূতি .।.।.।.।

০৮ ই নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৩

চাঁদগাজী বলেছেন:



এদের জীবনটাই কষ্টের সাক্ষ্য

৯| ১২ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৮:১৮

মিরোরডডল বলেছেন:



এরকম কতো সহস্র গ্রামের মেয়েকে বাবা মা ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দিয়ে দেয় ।
রিজিয়া বুদ্ধিমতী, ছেলে পছন্দ হয়নি তাই বিয়ে না করার একটা এক্সকিউজ বের করেছে ।


১২ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১০:২০

চাঁদগাজী বলেছেন:


আমাদের গ্রামের মেয়েদের কষ্টকর জীবনের এক সাক্ষী হয়ে আছি আমি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.