নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সম্পদহীনদের জন্য শিক্ষাই সম্পদ

চাঁদগাজী

শিক্ষা, টেকনোলোজী, সামাজিক অর্থনীতি ও রাজনীতি জাতিকে এগিয়ে নেবে।

চাঁদগাজী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুকিনীর বিচার

১৫ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৫৬



আমাদের পাশের গ্রামের এক হিন্দু ছেলে কলিকাতায় চাকুরি করার সময়, এক স্নিগ্ধ সুন্দরী অবাংগালী মেয়েকে বিয়ে করে গ্রামে নিয়ে আসে; বিয়ের ২ বছরের মাঝে ছেলেটির মৃত্যু হয়; বিধবার পাশে কেহ ছিলো না, অপরিচিত এই যায়গায় বেঁচে থাকার চেষ্টা করেছিলো সে; কিন্তু সমাজের মানুষের বিবেকহীন আচরণের কারণে সে অবশেষে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়, এটি সেই কাহিনী।

৬০ দশকের শুরুতেও আমাদের এলাকার অনেক মানুষ কলিকাতায় চাকুরী করতেন; তাদের মাঝে একজন ছিলেন, আমাদের পাশের গ্রামের দরিদ্র হিন্দু পরিবারের ছেলে, দশরথ মন্ডল। আমি ৭ম শ্রেনীতে পড়ার সময়, সে বাড়ী এলো, সাথে স্ত্রী; কলিকাতায় বিয়ে করেছে, খুবই সুন্দরী, শহরের মেয়ে। কিছুদিন পরে বুঝা গেলো যে, মেয়েটা বাংগালী নয়, পশ্চিম ভারতীয়; কলিকাতায় ছিলো বলে বাংলা জানে। দশরথ আর কলিকাতা ফেরত গেলো না, সে প্রায় ৪ কানি জমি ও গরু কিনে চাষবাস শুরু করলো; সেই সময় এক সাথে এত জমি কেনাটা মোটামুটি অসম্ভব ব্যাপার ছিলো; সবার ধারণা, কুকিনীর পরিবার নিশ্চয় অনেক ধনী। মেয়েটার কপাল খারাপ, ২ বছর পরই টাইপয়েডে দশরথের মৃত্যু হলো। দশরথ জমি কিনেছিলো নিজের স্ত্রী, কুহকিনী ভাটের নামে; গ্রামের লোকজন কুহকিনী'কে 'কুকিনী' বানিয়ে ফেলেছিলো।

গ্রামের বাজারে দশরথের বাবার ছোট একখানা পোসারী দোকান ছিলো, তেমন চলতো না; সেই দোকানটা বড় করার জন্য দশরথের বাবা ছেলের জমির কিছুটা বিক্রয় করার প্রস্তাব করলো; কিন্তু কুকিনী স্বামীর কেনা জমি বিক্রয় করতে ইচ্ছুক ছিলো না; শ্বশুর রাগ করে কুকিনীকে ঘর থেকে বের করে দিলো। গ্রামের লোকদের সাপোর্ট ছিলো কুকিনী পক্ষে, কুকিনী উঠোনের উল্টোপাশ একটি ছোট্ট সুন্দর কুঁড়েঘর বানিয়ে নিলো; শ্বশুর কুকিনীর জীবনকে সবদিক থেকে কষ্টকর করে তুললো।

আমাদের গ্রামের মুসলমানেরা কুকিনীর পক্ষে ছিলো; কুকিনীকে নিয়ে হিন্দুমুসলমাদের মাঝে অনেকটা দলাদলি শুরু হলো। কিন্তু এক নতুন সমস্যা, কুকিনী বিধবাদের সাদা শাড়ী পরতো না, ইহা আবার হিন্দু-মুসলিম সবাইকে বিরক্ত করে তুললো। কুকিনীকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলো আমাদের গ্রামের স্বচ্ছল চাষী ফকির মিয়া, তিনি কুকিনি'র জমিগুলো বর্গা নিলেন। ফকিরমিয়ার ছোট ছেলে, ১৬/১৭ বছরের আজিজ কুকিনীর গাভীটির দেখাশোনা করতো, বাজার খরচ এনে দিতো। কিছুদিন পরে, কুকিনী ফেনী থেকে মেয়েদের /সাজগোজের জিনিষপত্র এনে বাড়ী বাড়ী গিয়ে বিক্রয় শুরু করলো, সে বেশ ভালোই করছিলো। কিন্তু তার শ্বশুর ইহার বিপক্ষে, এমন কি কুকিনীর চরিত্র নিয়েও গ্রামে গুজব উঠলো।

কলিকাতায় চাকুরীর সময় দশরথের সবচেয়ে ঘনিষ্টবন্ধু ছিলো আমাদের গ্রামের ১ যুবক, দশরথের সমবয়স্ক এলাহী বকস; সে দেশে এলো, দশরথ নেই, সে কুকিনীকে বিবিধভাবে সাহায্য করতে লাগলো; এলাহীর সময়ে অসময়ে কুকিনীর ঘরে যাওয়া-আসা নিয়ে কুকিনীর শ্বশুর বিরক্ত; সে সমাজের কাছে বিচার দিলো। এলাহী রেগেমেগে কুকিনীকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালো, কুকিনী বিয়েতে সন্মত আছে, শর্ত হলো, সে সনাতন ধর্ম ছাড়বে না। এলাহী ক্ষিপ্ত হয়ে গ্রামে ছড়ায়ে দিলো যে, কুকিনী নিজের নানীর কাছে মানুষ হয়েছে বস্তিতে, কুকিনীর মা পতিতা এবং অনেক টাকার মালিক। এবার গ্রামবাসী দশরথের এত জমি কেনার ব্যাখ্যা খুঁজে পেলো; এবার গ্রামের অনেকেই কুকিনীর বিপক্ষে চলে গেলো।

কুকিনীর শ্বশুর নিজ বাড়ীতে এক পতিতার মেয়েকে থাকতে দেবে না, সালিশ ডাকলো; সালিশে একমাত্র সাক্ষী এলাহী। সেই গ্রামের সর্দার ছিলেন স্কুলশিক্ষক জ্যোতি বাবু; তিনি মাত্র ১ জনের সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে বিচার না করার সিদ্ধান্ত নেন। কুকিনী চুপ, সে কোন ব্যাপারেই মুখ খুলেনি; কিন্তু গ্রামের অনেকেই চাইতো না যে, কুকিনী তাদের বাড়ীতে যাক; কুকিনীর ব্যবসা বন্ধ।

(বাকীটুক পরে )

মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১:১০

বঙ্গদুলাল বলেছেন: মিথ্যা অপবাদ সবচেয়ে বাজে স্বভাব।বিশেষ করে যাদের সাথে পথ চলতে হয়,এড়িয়ে চলা যায় না তারা যদি মিথ্যাবাদী হয় জীবনটা ভয়ংকর নরক,দূর্বিষহ হয়ে যায়।

আমি আগে ভাবতাম মানুষ বিপদ থেকে বাঁচতে মিথ্যা বলে,পরে বেশি মানুষের সাথে মিশার পর ধীরে ধীরে বোধোদয় হলো- মানুষ অকারণেও অনেক অপ্রয়োজনীয় মিথ্যা বলে, যেন মিথ্যা বলা এক ধরণের স্মার্টনেস!

১৬ ই নভেম্বর, ২০২১ ভোর ৪:৪৯

চাঁদগাজী বলেছেন:



বাংগালীরা নিজকে সন্মান করে না, তারা মিথ্যা বলতে দ্বিধা করে না।

২| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১:১৯

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:

অবশেষে নিরুদ্দেশ।

চট্রগ্রাম থেকে মানুষ কলিকাতায় চাকুরীতে গেলে কতদিন পর পর আসতো গ্রামে? কুকিনী বিধবা হবার কতদিন পর বিয়ের প্রস্তাব পায়,এলাহীর কাছ থেকে?

১৬ ই নভেম্বর, ২০২১ ভোর ৪:৪৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


মানুষ ২/৩ বছর পর বাড়ী আসতেন। স্বামীর মৃত্যুর বছর'খানেক পর এলাহী কলকাতা থেকে আসে; তখন সে কুহকিনীকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো।

৩| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১:২৩

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:

আপনি কুকিনীকে দেখেছেন?

১৬ ই নভেম্বর, ২০২১ ভোর ৪:৪৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


কুহকিনী আমাদের বাড়ী আসতো, মেয়েরা এটাসেটা কিনতো; তারপর কুহকিনী আড্ডা দিতো, খেয়েদেয়ে যেতো; আমার মা ও আমার সাথে তার কষ্টের কথা বলতো; আমরা তার পক্ষে ছিলাম; কিন্তু বেচারী এক সময় সমাজের উপর বিরক্ত হয়ে পালিয়ে যায়।

৪| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১০:০৪

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: মানুষ খারাপ কাজের জন্য মিথ্যার আশ্রয় নেয়।খারাপ কাজ না করলে অত মিথ্যা বলতে হয় না।খারাপ লোক আগেও ছিল ,এখন একটু বেশি।কুহকিনীরা পালিয়েই বাঁচে।পালানো ছাড়া তাদের যে আর পথ নেই।

১৬ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১০:২১

চাঁদগাজী বলেছেন:



আমাদের গ্রামে শিক্ষাদীক্ষা ছিলো না, মানুষ সঠিকভাবে ভাবতে পারতেন না।

৫| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:৫৮

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: একজন মেয়ে এত দূর থেকে এসে সংসার করছে এটা ভাবতেই মায়া লাগে। তার ওপর আমাদের দেশের মানুষেরা ইতর এবং বিবেকহীন। অসহায়ের পক্ষে অল্প কেউ থাকলেও বেশিরভাগ নির্বিকার থাকে। আমি এমন অনেক মানুষও দেখেছি যারা নিজেরা অপচয় করে অথচ কাউকে সাহায্য করে না।

১৭ ই নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৫৯

চাঁদগাজী বলেছেন:




শিক্ষাদীক্ষাহীন সমাজ

৬| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১:১৪

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:




বাংলাদেশের মানুষের অনেক বদঅভ্যাসের মধ্য একটি বদঅভ্যাস হচ্ছে যেই দেশে যাবে সেখানেই বিয়ে করার ফন্দি ফিকির করবে। মেয়ে ভাগিয়ে নেবার চিন্তা করবে। দশরথ অন্যায় কাজ করেছেন।



১৮ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১:২৩

চাঁদগাজী বলেছেন:



মানুষ যখন তরুণ বয়সে বিদেশে যায়, একটা সমস্যা হলো, বিদেশেও তরুণ বয়সের লোকজন আছে।

৭| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:০৮

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: কুহকিনীর জন্য সমবেদনা।

১৮ ই নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:০৫

চাঁদগাজী বলেছেন:



বাংগালীদের একটা কাজ হলো অন্যের জীবনটাকে বিষাক্ত করে তোলা।

৮| ২০ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: আমি আপনার একটা বিষয় খেয়াল করেছি, আপনি সব সময় অসহায় মানুষের পাশে থাকেন। এই বিষয়টা আমার ভালো লাগে।

২০ শে নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৪

চাঁদগাজী বলেছেন:



এটি সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক অবস্হান।

৯| ২১ শে নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: যতটুকু লিখেছেন, ইন্টারেস্টিং!
কুহকিনী পালিয়ে বেঁচেছে। দশরথ কুহকিনীকে বিয়ে করে খারাপ কিছু করে নাই, কিন্তু এলাহী বক্স তার চরিত্রের উপর কালিমা লেপন করে খুব খারাপ কাজ করেছিল।

২১ শে নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:০৯

চাঁদগাজী বলেছেন:



অশিক্ষিত এলাহী বক্স বেকুবের হর্দ ছিলো, আর কুহকিনী স্বাভাবিকভাবেই সংগ্রামী ছিলেন। শেষে কুহকিনী নিজের জীবনকে গড়তেই পালিয়ে গিয়েছিলেন।

১০| ২৩ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:১৭

জ্যাকেল বলেছেন: কুকিনীর জন্য খারাপ লাগল। এটার অংশ অংশ না করে একসাথে পরের ৩য় পর্ব দিতে পারেন।

২৩ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:২৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


আচ্ছা, শেষে অংশগুলোকে সংযুক্ত করে দেবো।

১১| ২৩ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:১৬

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: পরের টুকু পড়ে নিচ্ছি।

২৩ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৩০

চাঁদগাজী বলেছেন:



ভালো লাগলে পড়ে নেন, ২ মিনিটের ব্যাপার, সবকিছু ছোট আকারে লেখা।

১২| ২৩ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ৮:৫৪

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



গল্পের গাথুনী বেশ মজবুত হয়েছে ।
পরের পর্বগুলিতে গল্পটি স্বাচ্ছন্দতা পাবে।
ষাটের দশকের সামাজিক চিত্রের একটি দিক
বিশেষ করে গুজব ছড়ানোর হীন প্রচেষ্টার চিত্র
ও তার কুফল কুহকিনী তথা কুকিনীর জীবনের
দুর্বিসহতার মাধ্যমে সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে ।

২৩ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৪৬

চাঁদগাজী বলেছেন:



মানুষ যখন কোন কিছু সম্পর্কে সম্যক ধরণা রাখে না, তাদের এনালািজিং ক্ষমতা থাকে না, যা মাথায় আসে তা বলে বেড়ায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.