![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঈর্ষা
১
দিনের পর দিন বসে থাকি ক্যানভাসের সামনে নতুন কিছু আকবো বলে।পাশেই কেকা একের পর এক ছবিতে ফিনিশিং টাচ দিতে থাকে। ওর যে একক প্রদর্শনী আছে সামনের মাসে।অন্তত দু ডজন ছবি চাই।ভীষন তাড়া।বউটার মুখের দিকে তাকিয়ে মায়া হয় আমার।ইচ্ছে হয় বলি এই প্রদর্শনীটা নাই বা করলে।বলা হয় না।কিছু বললেই বিষাক্ত গরল উগড়ে দেবে।শুনিয়ে দেবে গত তিন বছরে একটা পয়সাও দিইনি আমি সংসারে।আজ আমার ভাল কিছু শুনতে ইচ্ছা হচ্ছে।সুন্দর কোনো কথা।চল্লিশ বছর আগে এমনই এক শরত সকালে আমি পৃথিবীর আলো দেখেছিলাম।কেকার কি মনে আছে?নাহ,অকর্মন্য স্বামীর জন্মদিন নিয়ে আদিখ্যেতা করা ওকে মানায় না।এমন কিছু হলে আমিই বরং অস্বস্তিতে মরে যাবো।কেকার একমাত্র আদিখ্যেতা লীও কে নিয়ে।বড়সড় একটা হুলো ওটা।বিচিত্র কোনো কারনে বিড়াল টাও আমাকে সহ্য করতে পারে না মনিবানীর মতই।আদর করতে গেলেই ঘাড়ের রোয়া ফুলিয়ে খামচে দিতে আসে।আর যখন কেকার সাথে তুমুল ঝগড়া হয় ওটাও দাত মুখ খিচিয়ে আমার সাথে ঝগড়া করে।
২
ঘুম ভেঙ্গে হাত মুখ না ধুয়েই ছুটে যাই স্টুডিওতে।এইমাত্র যে স্বপ্নটা দেখলাম তাকে আটকে ফেলতে হবে ক্যানভাসে।ভীষন এক দৈত্য দুনিয়াটাকে তছনছ করছিল কি দানবীয় শক্তিতে।আমার পেন্সিল ধরা হাত দ্রুত থেকে দ্রুততর হয় ।দাড়ি ভরতি মুখে ঘস ঘস আঙ্গুল চালাই।ক্যানভাসে ফুটে উঠতে থাকে ভয়ার্ত দলিত মথিত মানুষের মুখ।আকতে আকতে টের পাই কেকা এসে দাড়িয়েছে পাশে।না দেখেও বুঝতে পারি ওর চোখে অবাক বিস্ময়।পায়ে নরম ছোয়া পেয়ে বুঝি বিড়াল টাও হাজির হয়েছে,অবাক দৃষ্টিতে দেখছে নিষ্কর্মন্য মানুষটার হঠাত কর্মব্যস্ততা।
৩
ইদানীং কেকা আমাকে বড় বেশি যত্ন আত্তি করছে।ঠিক যেন সেই দশ বছর আগের বউটা আমার ।বিয়ের পর পর সে কি তুমুল প্রেম ছিল আমাদের ,দেখতে দেখতে সেই প্রেমেও ভাটা পরলো।সন্তানহীনতার জন্য ডাক্তার যখন আমাকেই সনাক্ত করল তখন থেকেই দুরত্ব বেড়ে চললো কেকার সাথে আর ভাটা পরলো আমার ছবির স্রোতেও,সেও বছর তিনেক হলো।আমার সেই দুঃসময়ে কেকা একদিন নিয়ে এল লিও কে,হুলোটাকে নিয়ে ওর আদিখ্যেতা দেখে মনে হত আমিই যেন ওদের মধ্যে এক বাড়তি মানুষ।তবে গত মাসে ছবির কাজে হাত দেবার পর থেকেই দেখছি আমূল পালটে গেছে কেকা।সারাক্ষন আমার আশেপাশেই ঘুরঘুর করছে এমন কি দু এক বেলা লিওকে খাবার দিতেও ভুল হয়ে যাচ্ছে।লিও মাঝে মাঝে স্টুডিওতে দুখে ক্রুদ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে যেন বলতে চায় তুই বেটা কোত্থেকে এসে আমার আদরে ভাগ বসাচ্ছিস।বিড়ালটাকে আরো রাগিয়ে দেয়ার জন্য ওটাকে দেখিয়ে দেখিয়ে চুমু খাই কেকাকে।রাগে গরগর করে হুলোটা।
৪
বড্ড গুমোট লাগছে।ছবিটা প্রায় শেষের পথে,দুএক টা ডিটেইলস শুধু বাকি।চোখ সরাতে পারছিনা ক্যানভাস থেকে।কেকা এসে টেনে তুললো।বাইরে ঝুম বৃষ্টি,দুজন ছাদে চলে এলাম ভিজতে।পুরোনো দিনের মতই ওকে কোলে তুলে নিয়ে সোজা চলে এলাম বেড রুমে।হঠাত পায়ে নরম কিছুর ছোয়া লাগতে বুঝতে পারলাম লিও।ভীষন রাগ হল।শক্ত এক লাথি কষালাম ব্যাটাকে।দরজা বন্ধ করে ঝাপিয়ে পরলাম বিছানায়।হঠাত এক টা বিচিত্র আওয়াজ শুনে গায়ের রোম সব খাড়া হয়ে গেল। আওয়াজটা আসছে স্টুডিও থেকে প্রচন্ড আক্রোশে গরগর করছে লিও।যেভাবে ছিলাম সেভাবেই ছুটে গেলাম।প্রচন্ড রাগে ধনুকের মত বাকা হয়ে যাচ্ছে লিও;সারা শরীর রক্তে মাখামাখি।রক্ত এল কোত্থেকে।ঝট করে ক্যানভাসের দিকে ফিরলাম। প্রচন্ড আক্রোশে ছিড়ে ফালাফালা করা হয়েছে ক্যানভাস টেবিল থেকে ছড়িয়ে পড়েছে সমস্ত রঙ আর সেই রঙ মেখে ঈর্ষায় ফুলে ফুলে উঠছে হুলোটা।
©somewhere in net ltd.