নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কতশত চেনা মুখে দেখেছি আমি অচেনা মানুষের ছায়া!

চেনা মুখ, অচেনা ছায়া

© সব পোস্টের সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

চেনা মুখ, অচেনা ছায়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

||=এ গল্পের আপাতত কোন নাম নেই=||

১৩ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৩

"এই ছেলে! নামো দেয়ালের উপর থেকে, নামো বলছি!" চেঁচিয়ে বলতে থাকেন মণীষা রহমান।
এই মহিলার সমস্যাটা কোথায়? দেয়ালের উপর তো শুধু বসেই আছি, ভেঙে তো ফেলছি না! এতেই এত চেঁচানোর কি হলো?- মনে মনে ভাবতে থাকে রিশিত। দেয়াল থেকে নেমে হাঁটা দেয় সে।

মণীষা রহমান, ৪৭ বছর বয়সী এক ভদ্রমহিলা। ৩নং রোডের একেবারে শেষ মাথায় পৌঁছুলে ডানে ছোট্ট একটা গলি চোখে পড়ে। এই গলির দুপাশের বাড়িগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো, দোতলা যে বাসাটা, শান্তি কুটির, তার একমাত্র বাসিন্দা। ঠিক একমাত্র বলা যায় না অবশ্য। বাসার একজন কেয়ারটেকার কাম দারোয়ান আর রান্নার আর ঘরের টুকটাক কাজকর্মের জন্য রয়েছে দারোয়ানের বউ। তবে তাদের গোনায় ধরা যায় না। কাজ শেষে দোতলা বাড়িটায় থাকার অনুমতি নেই তাদের। কেয়ারটেকার আর তার বউ দোতলা বাড়িটার পেছনের খালি জায়গাটায় একটা ঘর বানিয়ে তাতে উঠেছিল। মণীষা রহমানের সঙ্গী বলতে পিকু নামের একটা বিড়াল। মহিলা কিছুটা অসামাজিক বলা যায়। এই এলাকার সবচেয়ে পুরনো বাসিন্দা কিন্তু প্রতিবেশীদের কারো সাথে তেমন যোগাযোগ নেই বললেই চলে, কেউ তার সম্পর্কে তেমন কিছু জানেও না। পুরনো প্রতিবেশীরা শুধু এটুকুই জানে, বছর পনের আগে এই বাড়ির প্রকৃত মালিক হাফিজুর রহমান সাহেব মারা যাবার পর তাঁর একমাত্র মেয়ে মণীষা এ বাড়িতে এসে ওঠেন। মারা যাবার সময় হাফিজুর রহমান বিপত্নীক ছিলেন। তাই তার মৃত্যুর পর এই বাড়িটার একলা বাসিন্দা এখন মণীষা।
৬৬ শতকের বিশাল জমিটার সামনের অল্প কিছু জায়গার উপর দাঁড়ানো ছোট্ট ডুপ্লেক্স বাড়ি আর তার পেছনে নানান জাতের ফলজ, বনজ , ঔষধী গাছের বিশাল এক বাগান। বাগানের এক কোনায় কেয়ারটেকারের ছোট্ট একটা দোচালা ঘর। কেয়ারটেকার সবুর মিয়া মণীষা রহমানের বাবার আমলের লোক। বলতে গেলে এবাড়িতেই মানুষ হয় সে।
হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ বাড়ির সাথে মণীষার যোগাযোগ কেন ছিল না, এতদিন কোথায়ই বা সে ছিল- এ বাড়ির সীমানার বাহিরের কেউই জানে না তা। সেকারণে বলা যায়, মণীষা কিছুটা রহস্যজনক এক চরিত্রই বটে।

এ গল্পের আরেক চরিত্র রিশিত , এবার আসি তার কথায়। ১৭ বছরের রিশিত কিছুটা বাউন্ডুলে, ছন্নছাড়া স্বভাবের। তাকে পুরোপুরি ভালো ছেলেও বলা যায় না, আবার ঠিক বখাটেও না। বাবা-মার স্মৃতি তেমন নেই তার। মামা-মামীর কাছেই বড় হয়েছে। তবে বড় হওয়া বলার চেয়ে শুধু আশ্রয় আর তিনবেলা কিছু খেতে পাওয়া বলাটাই ভালো হবে। স্কুলে যাওয়া হয়নি তার। খুব আগ্রহের কারণে ৪/৫ বছরের ছোট মামাতো ভাইয়ের বই খুলে অল্প অল্প করে পড়তে শেখার চেষ্টা করেছিল একবার। তবে একদিন মামী টের পেয়ে যাওয়ায় এমন এক শিক্ষা দিয়েছিল যে পুঁথিগত বিদ্যা অর্জনের সাধ একেবারে মিটে গেল তার। ঘরের ফুটফরমাস খাটতে খাটতে একসময় সে ভুলেই যেতে শুরু করলো, এ তার মামাবাড়ি।

রহস্যজনক এই চরিত্র মণীষার সাথে শান্তি কুটিরের মানুষজনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় যখন তার বয়স ২৬। এলাকার সবার কাছে তার জীবনটা একটা রহস্যে ঘেরা থাকলেও, আমার কাছে নয়। এ বাড়ি ছেড়ে যাওয়া, আবার ফিরে আসার মাঝের সময়টুকুর কথা আমার অজানা নেই। বয়সে তারচেয়ে বছর দুয়েকের ছোট একজনকে ভালোবেসে ঘর ছাড়েন তিনি। শুধুমাত্র বয়সের সামান্য এই ব্যবধানটাটুকুতেই ছিল প্রাচীনপন্থী দুই পরিবারের বিশাল অমত। লেখাপড়া শেষ করে তারা দুজনেই নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গেছেন ততদিনে। তাই সমাজ, পরিবারের তোয়াক্কা না করেই ঘর ছাড়েন মণীষা আর রাজীব। এই শহর ছেড়ে দূরে চলে যান।

সময় গড়ায়। তাদের মাঝে আসে সন্তান। কিন্তু স্বপ্ন আর ভালোবাসার দিনগুলো খুব দ্রুতই ফুরিয়ে আসে। টিকে থাকা না থাকার দোলাচলে দুলতে থাকে তাদের সংসার। একসময় সব দ্বিধা কাটিয়ে একমাত্র ছেলেকে নিয়ে ছেড়ে আসেন সেই সংসার। আলাদা থেকেও স্বস্তি নেই। একদিন জোর করেই ছেলেকে নিয়ে চলে যান রাজীব। কোথায় যায়, ঠিকানা রেখে যান না। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মণীষার আশ্রয় হয় কাছের এক বন্ধুর বাসায়। বাবার কাছে ফিরতে চাইলেও জেদের কাছে হার মেনে যায়। তবু ভেবেছিলেন ফিরবেন, কিন্তু তার আগেই খবর পান হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর। নির্জন বাড়িটায় ফিরে আসেন একা।

বারান্দা থেকে চেঁচিয়ে ছেলেটাকে দেয়াল থেকে নামতে বলায় ছেলেটা মুখ ঘুরিয়ে তাকায় তার দিকে। কি যেন আছে সেই মুখটায়। দেখলেই বুকে একটা ধাক্কা লাগে। তার চাহনি, হাসি খুব চেনা সেই মানুষটার কথা মনে করিয়ে দেয়। একই সাথে ঘৃণা আর অসম্ভব ভালোবাসার মিশ্র এক অনুভূতিতে মনটা ছেয়ে যায়। হঠাৎ বজ্রপাতের মত মাথায় খেলে যায় তার সন্তানের মুখ। দেয়ালে বসে থাকা বাউন্ডুলে ছেলেটার নাম জানা হয় না, কিন্তু আন্দাজে তার বয়সটা মেলানোর চেষ্টা করেন পিছনের সময়গুলোর সাথে। একে একে মিলে যেতে থাকে। তবু নিশ্চিত হতে চান তিনি।

সেদিন সারাটা বিকেল মণীষা বারান্দাতেই অপেক্ষায় থাকলেন, যদি ছেলেটার দেখা পাওয়া যায় আবার। কিন্তু না, ও আর আসেনি। সন্ধ্যায় সবুর মিয়া মেইন গেটে তালা লাগাতে এলে মনীষা তাকে দোতলায় ডেকে পাঠান, জানতে চান ছেলেটা সম্পর্কে। সবুর মিয়া একটু অবাকই হয়ে যায় যেন, স্বল্পভাষী এই ভদ্রমহিলা প্রয়োজনের বাইরে একটা কথাও কোনওদিন বলেছেন কি না , মনে করতে পারে না। ছেলেটা সম্পর্কে সবুরও খুব একটা বেশি কিছু জানে না।
বাড়ি থেকে এক পাও বাইরে যান না যে মণীষা , সেই মণীষাই সিদ্ধান্ত নেন ছেলেটার খোঁজ নেবেন। সবুরকে বলে দেন, ছেলেটার বাড়ির ঠিকানা জোগাড় করতে। পরের দিন ঠিকানা নিয়ে এলে সবুর মিয়ার বউ পারুলকে নিয়ে তিনি বের হন, ছেলেটার খোঁজ করতে।
ঠিকানা মিলিয়ে বাসাটার সামনে এসে দাঁড়াতেই একরকম অবসাদ ঘিরে ধরে তাকে। তবু কাঁপা কাঁপা হাতে ডোরবেলটায় আঙ্গুল চেপে ধরেন। হৃৎপিন্ডে প্রচন্ড শব্দে কে যেন ড্রাম পিটিয়ে চলছে।



মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৮

আজিজার বলেছেন: শেষ হয়ে গেল?

১৪ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৪

চেনা মুখ, অচেনা ছায়া বলেছেন: সেরকমই তো মনে হচ্ছে।

২| ১৩ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৮

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: কোন কোন গল্পের শেষ এমন হওয়াই ভালো।

১৪ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৫

চেনা মুখ, অচেনা ছায়া বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ১৩ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৫

মনিরা সুলতানা বলেছেন: চমৎকার গল্প !!
এমন গল্পের নাম নাম না থাকলেও চলে।

১৪ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৬

চেনা মুখ, অচেনা ছায়া বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ।

৪| ১৪ ই মে, ২০১৮ সকাল ১১:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর।

১৪ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৬

চেনা মুখ, অচেনা ছায়া বলেছেন: ধন্যবাদ অশেষ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.