![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশে প্রায়ই দেখা যায়, বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহে বিভিন্ন বাধা সৃষ্টি করে। অনেক সময় সাংবাদিকদের ওইসব প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। ফলে বাকবিতন্ডা ও মারামারিসহ বিভিন্ন অপ্রীতিকর পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। সাংবাদিক এবং প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সাংবাদিকতার জ্ঞান, তথ্য অধিকারসহ সংবিধান ও আইন সম্পর্কে যথাযথ ধারণার অভাবে বা এসবের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ এসব অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জন্য কখনও কখনও এক পক্ষ আবার কখনও উভয় পক্ষই দায়ী। ২০১৩ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল এ দুটি প্রতিষ্ঠানে প্রবেশে গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর ‘নিষেধাজ্ঞা’ আরোপ সাংবাদিকদের মনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, ওই বছর ১৯ জানুয়ারি ঢামেক হাসপাতালে একজন রোগী দায়িত্বরত চিকিৎসকের হাতে লাঞ্ছিত হন। এ খবর গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে কলেজের ইর্ন্টানরা ২২ জুলাই হাসপাতালে দায়িত্বরত অবস্থায় কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর হামল করে। এতে কয়েকজন সাংবাদিক গুরুত্বর আহত হন। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনুমতি ছাড়া সাংবাদিকদের সেখানে সংবাদ সংগ্রহ নিষিদ্ধ করে দেয়। অনুমতি না নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়ায় ইর্ন্টানরা সাংবাদিকদের ওপর আরও কয়েকবার হামলা করে। হামলায় আহত হন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। গণতান্ত্রিক স্বাধীন সার্বভৌম দেশে এসব হামলা শুধু ফৌজদারী অপরাধ নয় স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য বড় হুমকিও বটে। অবশ্য ওই বছর ২৬ জুলাই সাংবাদিকদের সাঙ্গে বৈঠকের পর ঢামেক কর্তৃপক্ষ ‘নিষেধাজ্ঞা’ তুলে নিয়েছে। এটা অবশ্যই ভালো সংবাদ। কিন্তু কেন এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল? বিষয়টি আলোচনার দাবি রাখে। কেননা, এর আগে ২০১২ সালের ২৮ জুন সাংবাদিকদের প্রবেশে ‘মৌখিক নিষেধাজ্ঞা’ আরোপ করেছিল দুদক। এছাড়া ২০০৭ সালের মার্চ মাস থেকে প্রায় এক বছরের বেশি সময় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেয়নি কর্তৃপক্ষ। তথ্য সংগ্রহে সাংবাদিকদের প্রবেশে এমন বাধা-নিষেধ কতটুকু আইনসিদ্ধ বা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য কতটুকু হুমকি তা বিশ্লেষণের দাবি রাখে। তাছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানের তথ্যের প্রয়োজনীয়তা ও এর সাথে জনস্বার্থ কীভাবে জড়িত তাও আলোচনা ও সুরাহা হওয়া দরকার।
আমরা জানি তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ সংসদে পাস হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে চিন্তা, বিবেক ও বাক-স্বাধীনতা নাগরিকের অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। তথ্য প্রাপ্তির অধিকার চিন্তা, বিবেক ও বাক-স্বাধীনতার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাস্তবতা হলো এই যে স্বাধীনতার প্রকাশ ঘটাতে গেলেই ‘যুক্তিহীন নিষেধাজ্ঞা’ আরোপ করা হয়।
দুদক ও ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের প্রবেশে যে ‘নিষেধাজ্ঞা’ আরোপ করেছিল তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। তথ্য অধিকার আইনের ধারা ৬ (২) এ বলা হয়েছে “তথ্য প্রকাশ ও প্রচারের ক্ষেত্রে কোন কর্তৃপক্ষ কোন তথ্য গোপন করিতে বা উহার সহজলভ্যতাকে সংকুচিত করিতে পারিবে না।” কিন্তু দুদক ও ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের প্রবেশে ‘অনুমতির বেড়াজাল’ দিয়ে তথ্য প্রাপ্তির সহজলভ্যতাকে আরও জটিল করে তুলেছিল।
গণমাধ্যমের অন্যতম কাজ জনগণকে তথ্য প্রদান। সাংবাদিকরা বিভিন্ন উৎস হতে সংবাদ সংগ্রহ করে জনগণের তথ্য চাহিদা পূরণ করেন। এসব তথ্য বা সংবাদ খুব সহজে ও দ্রুত সংগ্রহ করতে হয় সাংবাদিকদের।
কেননা, একটা ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর ইলেকট্রনিক মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সংবাদ প্রচার করার একটা তাড়া থাকে। দৈনিক সংবাদপত্রেও সময় খুব বেশি পাওয়া যায়না। সংবাদ সংগ্রহ করে লেখা, সম্পাদনা ও সংবাদপত্রের পাতায় স্থান দিয়ে প্রকাশনা প্রক্রিয়ার কমপক্ষে ১০/১২ ঘন্টা সময় প্রয়োজন হয়। তাই তথ্য প্রাপ্তি সহজ না হলে ঘটনার সংবাদ প্রকাশ বা প্রচার করা অসম্ভব হয়ে ওঠে। ঢামেক হাসপাতাল হচ্ছে সংবাদের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। খুন, মারামারি, এসিড নিক্ষেপ, সড়ক ও কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা প্রভৃতি আশংকাজনক মাত্রায় বেড়ে গেছে। এসব দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিসহ বিভ্ন্নি রোগে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা সেবার জন্য ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হন। এসব ঘটনার প্রাথমিক বিবরণ ও নিহতদের পরিচয় পাওয়া যায় ঢামেক হাসপাতালে। ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি বা তার পরিবার বা ঘটনাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন হয় সাংবাদিকদের। ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টদের সাঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে কথা বলতে না পারলে পরে অনেক সময় তাদের পাওয়া যায় না। এজন্য ঢামেক হাসপাতালে অনেক সংবাদমাধ্যমের সার্বক্ষণিক প্রতিনিধি রয়েছে। এভাবে যদি সাংবাদিকদের প্রবেশে অনুমতির ‘বেড়াজাল’ আরোপ করে তাহলে তারা অনেক ঘটনার তথ্য ও প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ সংগ্রহ করতে পারবেন না। তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য না পেলে ওই ঘটনার খবর প্রচার অনেক সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। খবর বাসি হওয়ার আশংকা থাকে। এমনকি, এসব ঘটনার সংবাদ গণমাধ্যমে না আসলে সঙ্গতভাবেই জনগণ তথ্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়। লঙ্ঘিত হয় জনস্বার্থ। গণমাধ্যম তথ্য প্রদানের মাধ্যমে জনস্বার্থ রক্ষা করে। আর ঘটনার নির্যাতিত বা ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরে আসতে নাও পারেন। ফলে তারা প্রতিকার থেকে বঞ্চিত হন। তাই তথ্য সংগ্রহে ‘অনুমতি আর আমন্ত্রণের বেড়াজাল’ সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহে শুধু বাধা নয়, জনস্বার্থের বিষয় ও তথ্য অধিকারের সহজলভ্যতাকে বাধাগ্রস্থ করে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)ও সাংবাদিকদের প্রবেশে অনুমতির শর্ত জুড়ে দিয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছিল ‘আমন্ত্রণ ছাড়া’ সাংবাদিকগণ দুদক কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না। তবে সাংবাদিকদের তথ্য-চাহিদা এবং তথ্য প্রদানে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছিল। পরে অবশ্য এ নিয়ম বেশিদিন বহাল থাকেনি। এভাবে শর্ত জুড়ে দিলে তথ্য প্রাপ্তির সহজলভ্যতা বিনষ্ট হয়, ক্ষতিগ্রস্থ হয় সাংবাদিকতার স্বাধীনতা। অথচ দুর্নীতি প্রতিরোধে বাংলাদেশের গণমাধ্যম সাহসী ভুমিকা পালন করে চলেছে। গণমাধ্যমগুলো দুর্নীতিসম্পর্কিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচারিত হওয়ায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনগণ এখন অনেক বেশি সচেতন। শুধু তাই নয়, দুর্নীতি হ্রাস ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার ব্রত নিয়ে জনগণ সামাজিক আন্দোলনে শরিক হচ্ছে। গণমাধ্যম এক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে আজ দুর্নীতি বিরাজমান। দুদকের একার পক্ষে এসব দুর্নীতি রোধ করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। কাজেই জনগণ, গণমাধ্যম ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে সরকার, রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্নীতির প্রভাব থেকে মুক্ত করতে।
ঢামেক কর্তৃপক্ষ সাংবাদিক প্রবেশে অনুমোদনের বিষয়টি তুলে নিয়ে সেখানে স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ নিশ্চিত করেছে। দাপ্তরিক গোনীয়তা আইন ১৯২৩ অনুযায়ী দেশে কিছু ‘নিষিদ্ধ স্থান’ রয়েছে। এসব জায়গায় প্রবেশ যে কারো জন্যই দন্ডনীয় অপরাধ। ঢামেক হাসপাতাল ও দুদক এসব ‘নিষিদ্ধ স্থানের’ মধ্যে পড়ে না। দাপ্তরিক গোনীয়তা আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ স্থান হিসেবে ঘোষিত আদেশের কপি বা এ সংক্রান্ত নোটিশ নিষিদ্ধ স্থানটির প্রবেশ পথে কিংবা কোনও দৃাষ্টি আকর্ষক স্থানে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। তবে তথ্য আইন অনুযায়ী “তদন্তাধীন কোন বিষয় যাহার প্রকাশ তদন্ত কাজে বিঘœ ঘটাতে পারে”- এরূপ তথ্য প্রদানে যে কেউ বিরত থাকতে পারে।
তবে প্রশ্ন হতে পারে দাপ্তরিক গোপনীয়তা আইনের অধীনে নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া কি অন্যান্য স্থানে প্রবেশে সাংবাদিক বিশেষ কোন অধিকার ভোগ করেন? বিশিষ্ট আইন বিশেষজ্ঞ গাজী শামছুর রহমান তাঁর ‘সংবাদবিষয়ক আইন’ গ্রন্থে বলেন, “বিস্ময়কর হলেও এটা নিষ্ঠুর সত্য যে আইন সাংবাদিককে কোন বিশেষ অধিকার দেয়নি। বাংলাদেশের সকল মানুষ যেসব অধিকার পেয়েছে, সেইসব অধিকার সংবিধান ও আইনের কাছ থেকে সাংবাদিকও পেয়েছে; তার এক বিন্দু বেশিও নয়, কমও নয়।”
তবে সব জায়গায় সাংবাদিকের প্রবেশাধিকার থাকা কি উচিত? আবু নছর মো. গাজীউল হক তাঁর ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যম আইন ও বিধিমালা’ গ্রন্থে বলেন, “খবর সংগ্রহের জন্যে কোনও ব্যক্তির গৃহে প্রবেশের কোনও অধিকার একজন সাংবাদিকের নেই। তিনি একই সঙ্গে পারেন না একজন নাগরিকের গোপনীয় বিষয়াদির মধ্যে উঁকি মারতে। একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে কোনও টেপ রেকর্ডার স্থাপনেরও কোন অধিকার নেই একজন সাংবাদিকের।”
এ বিষয়ে সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে: “রাষ্ট্রের নিরাপত্তা জনশৃঙ্খলা, জনসাধারণের নৈতিকতা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা নিষেধ সাপেক্ষ প্রত্যেক নাগরিকের (ক) প্রবেশ তল্লাসি ও আটক হইতে স্বীয় গৃহে নিরাপত্তা লাভের অধিকার থাকিবে এবং (খ) চিঠিপত্রের ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার থাকিবে।” গাজী শামছুর রহমান এর নিম্নোক্ত বিশ্লেষণ করেছেন। অর্থাৎ প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার আছে-
(ক) আপন গৃহে নিরাপদে থাকার;
(খ) আপনগৃহে কাউকে প্রবেশ করতে না দেয়ার;
(গ) আপনগৃহে তল্লাসি করতে না দেয়ার;
(ঘ) আপনগৃহে আটক না হওয়ার;
(ঙ) চিঠিপত্রের গোপনীয়তা বজায় রাখার এবং
(চ) অন্যভাবে অন্যের সাথে যোগাযোগের ব্যাপারে গোপনীয়তা রক্ষা করার।
তবে এ ছয়টি অধিকার কিছু বাধা নিষেধের অধীন বলে ‘সংবাদবিষয়ক আইন’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন গাজী শামছুর রহমান। কারণ সেসব বাধা নিষেধ-
(ক) যুক্তিসঙ্গত হতে হবে, (খ) আইনের দ্বারা আরোপিত হতে হবে, (গ) রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে হতে হবে, (ঘ) জনসাধারণের নৈতিকতার স্বার্থে হতে হবে এবং (ঘ) জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে হতে হবে।
যেকোন স্থানে অবাধ প্রবেশাধিকার কারও নেই। সাংবাদিকের ক্ষেত্রেও তাই প্রযোজ্য। অনেক স্থানে প্রবেশে পূর্বানুমতিরও প্রয়োজন হয়। যেমন জাতীয় সংসদ ও সচিবালয়ে প্রবেশে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত কার্ড বা প্রবেশপত্র প্রদর্শন করতে হয়। এমনকি আদালত কক্ষে নিরঙ্কুশ প্রবেশের অধিকারও বিচারক নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খায়রুল ইসলাম তাঁর “সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও আইন” শীর্ষক গ্রন্থে বলেন, “জনস্বার্থে পাবলিক ডকুমেন্টস দেখার অধিকার সাংবাদিকের থাকে। কিন্তু এটি যথার্থ পাবলিক ডকুমেন্টস কি-না এই প্রশ্নে সাংবাদিক সেটি দেখা হতে বিরত হতে পারেন।”
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার দপ্তর অর্থাৎ পুলিশ অফিস, থানায় তদন্তাধীন কাগজপত্র দেখা জনস্বার্থে আবশ্যক হলেও সাংবাদিককে দেখা থেকে বিরত রাখা যেতে পারে এই অজুহাতে যে আসামিদের গ্রেফতার বা তদন্তে বিঘ্ন ঘটতে পারে।”
তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ এর ধারা ৭ অনুযায়ী কতগুলি তথ্য প্রকাশ বা প্রদান বাধ্যতামূলক নয়। এ আইনের অন্যান্য বিধানাবলীতে যা-ই থাকুক না কেন, কর্তৃপক্ষ কোন নাগরিককে নিম্নলিখিত তথ্যসমূহ প্রদান করতে বাধ্য থাকবে না।
(ক) কোন তথ্য প্রকাশের ফলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা, অখ-তা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি হতে পারে এরূপ তথ্য।
(খ) পররাষ্ট্রনীতির কোন বিষয় যার দ্বারা বিদেশি রাষ্ট্রের অথবা আন্তর্জাতিক কোন সংস্থা বা আঞ্চলিক কোন জোট বা সংগঠনের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ক ক্ষুন্ন হতে পারে এরূপ তথ্য।
(গ) কোন বিদেশি সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত কোন গোপনীয় তথ্য।
(ঘ) কোন তথ্য প্রকাশের ফলে কোন তৃতীয় পক্ষের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এরূপ বাণিজ্যিক বা ব্যবসায়িক অন্তর্নিহিত গোপনীয়তা বিষয়ক, কপিরাইট বা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ (Intellectual Property Right) সম্পর্কিত তথ্য।
(ঙ) কোন তথ্য প্রকাশের ফলে কোন বিশেষ ব্যক্তি বা সংস্থাকে লাভবান বা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এরূপ নিম্নোক্ত তথ্য। যথা:
(অ) আয়কর, শুল্ক, ভ্যাট ও আবগারী আইন, বাজেট বা করহার পরিবর্তন সংক্রান্ত কোন আগাম তথ্য।
(আ) মুদ্রার বিনিময় ও সুদের হার পরিবর্তনজনিত কোন আগাম তথ্য।
(ই) ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের পরিচালনা ও তদারকি সংক্রান্ত কোন আগাম তথ্য।
(চ) কোন তথ্য প্রকাশের ফলে প্রচলিত আইনের প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে বা অপরাধ বৃদ্ধি পেতে পারে এরূপ তথ্য;
(ছ) কোন তথ্য প্রকাশের ফলে জনগণের নিরাপত্তা বিঘিœত হতে পারে বা বিচারাধীন মামলার সুষ্ঠু বিচার কার্য ব্যাহত হতে পারে এরূপ তথ্য।
(জ) কোন তথ্য প্রকাশের ফলে কোন ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তা ক্ষুন্ন হতে পারে এরূপ তথ্য।
(ঝ) কোন তথ্য প্রকাশের ফলে কোন ব্যক্তির জীবন বা শারীরিক নিরাপত্তা বিপদজনক হতে পারে এরূপ তথ্য।
(ঞ) আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তার জন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক গোপনে প্রদত্ত কোন তথ্য।
(ট) আদালতে বিচারাধীন কোন বিষয় এবং যা প্রকাশে আদালত বা ট্রাইব্যুনালের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে অথবা যার প্রকাশ আদালত অবমাননার শামিল এরূপ তথ্য।
(ঠ) তদন্তাধীন কোন বিষয় যার প্রকাশ তদন্ত কাজে বিঘ্ন ঘটাতে পারে এরূপ তথ্য।
(ড) কোন অপরাধের তদন্ত প্রক্রিয়া এবং অপরাধীর গ্রেফতার ও শাস্তিকে প্রভাবিত করতে পারে এরূপ তথ্য।
(ঢ) আইন অনুসারে কেবল একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এরূপ তথ্য।
(ণ) কৌশলগত ও বাণিজ্যিক কারণে গোপন রাখা বাঞ্ছনীয় এরূপ কারিগরী বা বৈজ্ঞানিক গবেষণালব্ধ কোন তথ্য।
(ত) কোন ক্রয় কার্যক্রম সম্পূর্ণ হবার পূর্বে বা উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে সংশ্লিষ্ট ক্রয় বা এর কার্যক্রম সংক্রান্ত কোন তথ্য।
(থ) জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিকার হানির কারণ হতে পারে এরূপ তথ্য।
(দ) কোন ব্যক্তির আইন দ্বারা সংরক্ষিত গোপনীয় তথ্য।
(ধ) পরীক্ষার প্রবেশপত্র বা পরীক্ষায় প্রদত্ত নম্বর সম্পর্কিত আগাম তথ্য।
(ন) মন্ত্রিপরিষদ বা, ক্ষেত্রমত, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপনীয় সার-সংক্ষেপসহ আনুষঙ্গিক দলিলাদি এবং উক্তরূপ বৈঠকের আলোচনা ও সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত কোন তথ্য।
তবে শর্ত থাকে যে, মন্ত্রিপরিষদ বা ক্ষেত্রমত, উপদেষ্টা পরিষদ কর্তৃক কোন সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার পর অনুরূপ সিদ্ধান্তের কারণ এবং যে সকল বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্তটি গৃহীত হয়েছে তা প্রকাশ করা যাবে।
আরও শর্ত থাকে যে, এই ধারার অধীন তথ্য প্রদান স্থগিত রাখার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তথ্য কমিশনের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করতে হবে।
তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ এর ধারা ৪ এ বলা হয়েছে, “এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য লাভের অধিকার থাকিবে এবং কোন নাগরিকের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষ তাহাকে তথ্য সরবরাহ করিতে বাধ্য থাকিবে।”
তথ্য অধিকার আইন পাস হওয়ায় জনগণের তথ্যের অধিকার আইনগত ভিত্তি পেয়েছে। এরপরও তথ্য পাওয়ার ‘সহজলভ্যতা’ কখনও কখনও ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। তথ্য অধিকার আইনের দোহাই দিয়ে সরকারি ও বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান সাধারণ একটা তথ্যের জন্য তথ্য গ্রহীতাকে দরখাস্ত করাসহ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় বাধ্য করাছে। এ কারণে জনগণ তথ্য গ্রহণে অনুৎসাহিত হচ্ছে। সাধারণ একটা তথ্যের জন্য দরখাস্ত করা, অপেক্ষা করা বা তথ্য না দিলে অভিযোগ করা প্রভৃতি জটিলতা তথ্যের সহজপ্রাপ্যতাকে করছে বাধাগ্রস্থ। আবার এতসব আনুষ্ঠানিকতা পালন করার পর অনেক ক্ষেত্রে কাঙ্খিত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ সরকারি ও বেসরকারি বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের তথ্য ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া অত্যন্ত দুর্বল ও জটিল। তথ্যের আপডেটও থাকে না। তাই সাংবাদিকরা তাৎক্ষণিকভাবে সঠিক ও আপডেটেড তথ্য পাচ্ছেন না। তথ্য অধিকার আইনের বেড়াজালে পড়ে জনগণকে প্রয়োজনীয় তথ্য জানাতে পারছেন না গণমাধ্যম কর্মীরা। তাই জনস্বার্থের দিকটি বিবেচনা করে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে অবশ্যই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যাতে তথ্য অধিকার আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা যায়।
২| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:৪৮
আত্মমগ্ন আিম বলেছেন: সংবাদ সংগ্রহ করবেন ভাল কথা,মিথ্যা-বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ করার অধিকার আপনাদের কোন আইন দিয়েছে?
কোন ধরনের যোগ্যতা না থাকা স্বত্তেও প্রমানের আগেই চিকিৎসক এর ভুল ধরার অধিকার কোন আইনে আছে?
গঠনমূলক সাংবাদিকতা করেন,কেউ আপনাদের আটকাবে না,মিথ্যা সংবাদ বানাবেন,জনগণ এর সেন্টিমেন্ট ব্যবহার করে হলুদ সাংবাদিকতা করবেন,আইন দ্বারা সাইজ হবেন।
৩| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৫১
ছটিক মাহমুদ বলেছেন: ধন্যবাদ আ.মগ্ন। মিথ্যা-বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ করার অধিকার কারও নেই। এটার জন্য মামলা করেত পারেন। আর ভুল চিকিৎসায় মারা গেলে তা ক্রিমিনাল অফেন্স। সাংবািদক নিজে লিখতে পারেন না, রোগির অভিেযাগ ও সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের সাথে কথা বলে অবশ্য্ই রিপোট করতে পারেন।
৪| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:১৩
আত্মমগ্ন আিম বলেছেন: আপনার উত্তরের জন্য ধন্যবাদ।
ভুল চিকিৎসা শুধু রোগীর লোকের কথায় আর সংশ্লিষ্ট ডাক্তার এর কথায় প্রমান হয় না।
বিশেষজ্ঞ প্যানেলের বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে প্রমান করে এর পর সেই চিকিৎসাকে ভুল চিকিৎসা বলতে হয়।
আপনারা তো তার আগেই লিখে ফেলেন,"ভুল চিকিৎসায় রোগীর ম্রিত্যু!"
যেখানে আপনাদের লিখার কথা,"রোগীর ম্রিত্যু,চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ স্বজনদের।"
দয়া করে আপনার বন্ধুদের শিরোনাম লিখা ও রিপোর্ট লিখা শেখান।
চিকিৎসার ভুল ধরার যোগ্যতা না থাকা স্বত্তেও তা নিয়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ ও এক ধরনের দন্ডনীয় অপরা।
৫| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:১৩
ছটিক মাহমুদ বলেছেন: আবশ্যই যারা সাংবাদিকতার নিয়ম জানেন বা মানেন তারা লিখবেন: চিকিৎসায় অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ স্বজনদের। হাতুড়ে ডাক্তারদের মতো হাতুড়ে বা ভুয়া সাংবাদিকের পরিমাণ এদেেশ অনেক বেশি।
৬| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৮
আত্মমগ্ন আিম বলেছেন: আপনার কথা একদম সততি।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:০৭
মহান অতন্দ্র বলেছেন: চমৎকার দরকারি পোস্ট । ভাল লাগলো।