নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছিলাম ভাগ্যবান। তোমায় পেয়ে হয়ে গেছি নিকৃষ্ট হতভাগা।

চিন্ময় আবিদ

ছিলাম ভাগ্যবান। তোমায় পেয়ে হয়ে গেছি আমি নিকৃষ্ট এক হতভাগা।

চিন্ময় আবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জননীর আত্মত্যাগকৃত বিষাদ

১৯ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২০

"মা, তোমায় এক আবদার করব, রাখবে তো?? " হেসে বলে জিসান
"বল বাবা, তোর কোনো আবদার কি আমি অপূর্ণ রেখেছি কখনও? "
"এবারের মৌসুমে ক্যাম্পাস থেকে আমাদের তাজমহল দেখাতে নিয়ে যাবে আগ্রায়। তুমি যেভাবে হোক, বাবাকে বলে খরচের একটা ব্যবস্থা করে দাও না!! "
দুশ্চিন্তার ভাজ পড়ে মায়ের কপালে, "আচ্ছা বাবা, দেখছি।"

বাবা মায়ের একমাত্র আদুরে ছেলে জিসান। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী পরিচয়ে তার বড় হওয়া। সেই ছোট্ট বেলায় মায়ের হাত ধরে হাটিহাটি পা পা করে যেই জিসানের পথচলা, আজ সে স্কুল, কলেজের লেভেল পার হয়ে ভার্সিটির ক্যাম্পাস মাতিয়ে তুলছে। সেই ছোট্টবেলাতেই ক্লাসে ফার্স্ট হওয়া থেকে শুরু করে গান, কবিতা আবৃত্তি, নাটক, সবকিছুতেই প্রথম সারির এক বালক। অবশ্য কখনও সে দুঃখ দেখে নি। তার স্বল্প আয় করা স্কুলশিক্ষক বাবা এবং তার মমতাময়ী মা কখনওই বুঝতে দেয় নি কোনো অভাব। আদরে, কোমলতায় সবসময় চাপা দিয়ে রেখেছে সকল অভাবের স্তুপ।
সবকিছু ঠিকমতোই চলছিল, যতক্ষণ না জিসানের মায়ের জরায়ুতে পাথর শনাক্ত না হলো। বেশ বড় আকৃতির এক পাথর দেহের নিম্নাঞ্চলে এতদিন বয়ে বেরিয়েছেন জিসানের মা। টু শব্দটি করে কাউকে কিছু জানতে দেন নি। পাছে তার পিছনে সবাই চিন্তিত হোক, একগাদা পয়সা খরচ করুক, এটা তিনি কখনোই চান নি। কিন্তু এক সন্ধ্যায় তলপেটের যন্ত্রনায় আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না জাহানারা বেগম। গগণবিদারী চিৎকার তাকে নিয়ে এল হসপিটালের এক জীর্ণ ফ্লোরে। ডাক্তার এক বাক্যে বলে দিলেন, সমস্যা প্রবলভাবে গেড়ে বসায় এখন চিকিৎসা করাটাও মুশকিলের ব্যাপার। উপরন্তু অপারেশনে হাত দিলে জীবনের আশংকা পর্যন্ত হতে পারে!!! পরিশেষে ডাক্তার সাহেব আশার আলো দেখিয়ে প্রেসক্রিপশনে যুক্ত করে দিলেন কিছু ব্যয়বহুল ওষুধের নাম, যা কিনা আবার দেশে খুজে পাওয়াই ভার। প্রতিবেলা ৩ টা ওষুধ খেতে হবে তাকে, প্রতিটার জন্য তাকে গুণতে হবে প্রায় ৫০ টাকা করে।
সামান্য স্কুলশিক্ষক জামিল সাহেবের মাথায় পড়ল হাত। টানাটানির সংসারে এ এক উটকো জ্বালাতন তার কাছে। তার উপরে বাসা ভাড়া, জিসানের ভার্সিটিতে প্রতি মাসে বিশাল অঙকের একেকটা খরচের বোঝা!!! জামিল সাহেব দিশেহারা হয়ে পড়লেও জাহানারা বেগম তাকে গোপনে বুঝিয়ে দেন, তার অসুখের এবং ওষুধ বাবদ খরচের বিষয়টা জিসান যেন কখনোই জানতে না পারে। একমাত্র ছেলেটা খেই হারিয়ে পড়ে গেলে তাদের দুজনের কি হবে!!!!!
তাই হঠাৎ জিসানের ভার্সিটির ট্যুরের খরচাদি শুনে অধিকতর বিমর্ষ হয়ে গেলেন মা। ৫০০০ টাকার মতো খরচ পড়বে তার ছেলের যাত্রাপথের খরচ হিসাবে। কিন্তু এ যে মড়ার উপর খাড়ার ঘা। অবশেষে লৌহ কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন মা। তার ছেলের আবদার যে ভাবেই হোক, তিনি অপূর্ণ রাখবেন না।

স্বামীর কাছ থেকে চেয়ে নিলেন তিনি তার এ মাসের ওষুধের টাকাটা।
"ওগো, টাকা এবার আমার হাতে দাও, আমিই কিনে নিতে পারব ওষুধ। তোমাকে শুধু শুধু কষ্ট করতে হবে না।"
"ঠিক আছে, সাবধানে রেখো। কোনো অনিয়ম করো না এসবে। মারাত্মক ক্ষতি হবে কিন্তু!!
জাহানারা বেগম টাকাটা হাতে নিয়েই ফোন করেন তার আদরের সাত রাজার ধনকে "বাবা, আমি টাকা এই মুহুর্তে পাঠিয়ে দিচ্ছি, তুই কোনো চিন্তা করিস না রে!! "
"আচ্ছা মা, তুমি পৃথিবীর বেস্ট মা। তোমায় অনেক ভালোবাসি মা। "
মা কথার জবাব দিতে পারে না। ফোনটা কেটে দিয়ে অঝোর ধারায় কাদতে থাকে। মনের আয়নায় তার ভাসতে থাকে ছেলের হাসিমাখা মুখটা, যরই মুখটা তিনি জীবিত থাকতে কখনোই অমলিন হতে দেবেন না। কখনোই না.....

মায়ের তলপেটে ব্যথা বেড়েছে...তবু তিনি হাসিমুখে রান্না করছেন রান্নাঘরে...পেটের সবকিছু যেন উগলে বের হয়ে যেতে চাইছে। কিন্তু টু শব্দটি করবে না মা। একটু আগে ফোন দিয়েছে ছেলে..তাজমহলের সামনে দাড়িয়ে সে বন্ধুদের সাথে ছবি তুলেছে। শুনে মায়ের পেটের যন্ত্রণা কবেই চলে গেছে....কিন্তু কেউ জানে না...এসনকি জাহানারা বেগম নিজেও জানেন না, কয়েকদিনের মাথাতেই তিনি মা জাতিকে উচু করে তুলবেন কতটা তীব্রভাবে.....
আর সওয়া যাচ্ছে না পেটের ব্যথাটা....শুয়ে এক হাতে পেট চাপড়ে, আরেক হাতে বালিশ চেপে ধরে যন্ত্রণায় নীল হয়ে গেছেন মা।অস্ফুট আর্তনাদকে অনেক কষ্টে দীর্ঘশ্বাসে পরিণত করার আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নিরন্তর.....এক পর্যায়ে বিষাদের কাছে হার মেনে নিলেন তিনি.....
ছেলের কল বাজছে মায়ের ফোনে...মায়ের সেদিকে জ্ঞান নেই...ছেলের ফোনটা মায়ের আর ধরা হলো না। সেদিনই প্রথম, জিসান তার মায়ের মুখে শুনতে পেল না, " বাবা, তুই ভালো আছিস তো?? "

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.