নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Chinmoy Sarker

chinmoy

আমাকে এনে দাও মিনিপ্যাক ট্রু,মিনিপ্যাক সেলফিশনেস।অথবা এক দ্বীপ আল্বাট্রোস।

chinmoy › বিস্তারিত পোস্টঃ

FAQ : রোহিঙ্গা সমস্যা

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:১৩

রোহিঙ্গারা অনেক আগে থেকেই নির্যাতিত হয়ে আসছে বিভিন্ন শাসক শ্রেণীর কাছে প্রায় একইভাবে। তাই সব প্রশ্নের উত্তরে একি রকম ঘটনা বার বার উল্লেখ না করার এবং বিভিন্ন সময়ে অনেকের সাথে কথাবার্তায় বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরগুলো এফএকিউ আকারে সাজানোর চেষ্টা করেছি।

রোহিঙ্গা কি বা কে বা কারা ?
রোহিঙ্গারা মূলত একটি স্বতন্ত্র মুসলিম জনগোষ্ঠী। তারা মুসলিম ব্যবসায়ী হিসেবে প্রায় এক হাজার বছর আগে মিয়ানমারে বসবাস শুরু করে। বাংলাদশ, সৌদি আরব ও পাকিস্তানেও তাদের আবাস রয়েছে। রোহিঙ্গারা নানানজাতির সংমিশ্রিত সুন্নি মুসলামান। এরা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। নবম শতকে আরব, মোগল, তুর্কি ও পরে পুর্তগিজরা মায়ানমারে বসতি গড়ে। বার্মিজরা তখন এই ভিনদেশীদের মেনে নিতে প্রস্তুত ছিল না। ১৪ শতকে তাদের বংশধরেরা ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে। মোগল আমলে আরাকান ছিলো মোগল সাম্রাজ্যের অধীন স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল। মুঘলদের পতন হলেও আরাকান তার স্বাধীনতা বজায় রাখে। ১৭৭৫ সালে মগরা আরাকানে আক্রমন করে।৩০ হাজার মগ সেনা আরাকানের প্রায় তিন হাজার মসজিদের সবকটিই ধ্বংস করে দেয়। দুই লাখ রোহিঙ্গাকে রেঙ্গুন শাসকদের কাছে দাস হিসেবে বিক্রি করে। নিহত হয় প্রায় দেড় লাখ। ৩০৭ টি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামকে জনশূণ্য করে দেওয়া হয়। রোহিঙ্গারা ১৮২৫ সালে ইংরেজদের বার্মা (বর্তমান মায়ানমার) আক্রমণে অনুপ্রাণিত করে। রোহিঙ্গাদের ধারনা ছিল বার্মা ইংরেজদের অধীনে গেলে তারা ইয়াঙ্গুনের নির্যাতন থেকে রক্ষা পাবে। ইংরেজরা ১৮২৫ সালে প্রায় বিনা বাঁধায় বার্মা দখল করে। বার্মিজ বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিরব শত্রুতা বাড়তেই থাকে। এর প্রকাশ পায় ১৯৪২ সালে। জাপান ওই সময় বার্মা দখল করলে বার্মিজরা রোহিঙ্গাদের কচুকাটা করে। বেসরকারি হিসেবে ১৯৪২ থেকে ১৯৪৪ সাল এই দুই বছরে তিন লাখ রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়। ১৯৪৪ সালে ইংরেজরা আবার বার্মা দখল করে। রোহিঙ্গারা আবার স্বায়ত্বশাসন ফিরে পায়। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা পায় বার্মা। ওই সময় আরাকান পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দিতে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর কাছে আবেদন করে। কিন্তু জিন্নাহ তাতে রাজী না হলে আরাকান বার্মার হয়ে যায়। ৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পরই বার্মা রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে অস্বীকার করে। শুরু হয় সরকারি মদদে রোহিঙ্গা নিধন। তবে ভয়াবহতা লাভ করে ১৯৬২সালে। বার্মায় সামরিক শাসন জারির পর। সেনাবাহিনী, পুলিশসহ সকল সরকারি চাকরিতে রোহিঙ্গাদের নিয়োগ লাভ নিষিদ্ধ হয়। ভূমিতে তাদের অধিকারকে অস্বীকার হয়। ৭১ সালে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়। তাদের বলা হয়- বার্মায় বসবাসকারী কিন্তু নাগরিক নয়। ৭৪ সালে ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। ৭৮ সালে সামরিকজান্তা যে নাগরিক আইন করে তাতে রোহিঙ্গাদের নাগরিক হওয়ার সুযোগ চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

রোহিঙ্গাদের উপর মায়ানমারের মানুষদের এতো রাগ কেন?
উপরের প্রশ্নের উত্তরে অবশ্যই খেয়াল করে থাকবেন, ১৯৪৮ সালে মায়ানমার রাষ্ট্রকে অমুসলিম ও মালাউন রাষ্ট্র হিসেবে ত্যাগ এবং মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে রোহিঙ্গারা জেহাদ শুরু করে। সেই থেকে শুরু, বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গা মুজাহিদরা মংডু ও বুছিডংসহ বিভিন্ন জায়গায় সরকারী অফিস আদালতে হামলা করে, নন-মুসলিম লোকজনকে মারে। এইরকম কয়েকদিন চলার পর বার্মিজ আর্মি কড়াকড়ি কয়েকটা অভিযান চালায় আর মুজাহিদরা অস্ত্র শস্ত্র ফেলে আর্মির কাছে আত্মসমর্পণ করে। এইভাবে বেশ কয়েকটা মুজাহিদ গ্রুপ জন্ম হয়েছে, সন্ত্রাস করেছে, আত্মসমর্পণ করেছে। এই সন্ত্রাসী মুজাহিদদের দাবী কি ছিল? ওরা মুসলিম, ওরা মায়ানমারের নাগরিকত্ব মানে না, ওরা রাখাইন প্রদেশ নিয়ে মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতে চায়। রোহিঙ্গাদের হামলায় মায়ানমারের এথনিক বার্মিজরা সবসময় অতিষ্ঠ হয়ে থাকতো। মায়ানমারর বৌদ্ধ ভিক্ষুরা রেঙ্গুনে বিভিন্ন সময়ে অনশন কর্মসূচীতেও নেমেছিল (১৯৫৪ সনের অনশন কর্মসূচীটা বেশ বড় ছিল)। রামু বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার কথা মনে আছে? সেই হামলায় ও নাশকতায় রোহিঙ্গা ভাইদের ভূমিকা প্রশংসনীয়। রুহিঙ্গা মুসলিমরা তালেবান ও জংগি। তারা তো বৌদ্ধদেরকে নাস্তিক মনে করে, কিভাবে ইন্টারন্যাশনাল কম্যুনিটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে যাবে? ২০১২ সালে যে ভয়াবহ রায়ট হলো সেটা শুরু করেছিল কারা? ২৮ মে “মা থিডা টিয়ে” নামে একজন রাখাইন নারীকে রুহিঙ্গা মুসলিমরা গ্যাং র‌্যাপ করে হত্যা করেছিল। সেটার পর অহিংস বৌদ্ধ তথা রাখাইনরা তাৎক্ষণিক ক্ষোভে আক্রমণ করে তাদের উপর। সেখানেই বিষয়টি থেমে যেত, কিন্তু ৯ জুন ২০১২ মসজিদে নামাজের পর রুহিঙ্গা মুসলিমরা মংডু শহরে ব্যাপক আক্রমণ শুরু করে যা ১০ জুন ব্যাপরোয়াভাবে চলে (গুগলে এভাবে আছে) রাখাইনদের ঘর বাড়ীর উপর। ১১৯২টি বাড়ী পুড়িয়ে দেয়। রাখাইনরা ও পুরো দেশ তাদের বিরুদ্ধে চলে গিয়ে রুহিঙ্গাদেরও ১৩৩৪টি ঘর পুড়িয়ে দেয়। রুহিঙ্গা মুসলিমরা বেশি ব্যাপরোয়া ছিল মূলত মনে করেছিল, টিকতে না পারলে পেছনে বাংলাদেশের ভূমি আছে। সেজন্য ওরা কখনো আপোসকামী হয়নি। ওরা সেদিন টিকতে না পেরে কয়েক লাখ বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। নিয়ে জংগিপনা দিয়ে বাংলাদেশকে অশান্ত করতে চেষ্টা করে। ২০১২ সালে ওরা আশ্রয় নিয়ে রামুর ঘটনা ঞটাতে সহায়তা করেছিল। যত প্রকার অপরাধ কক্স বাজার এলাকায় ওরা আমদানী করছে ইয়াবা অপরাধসহ। ওরা বহু ঘাটি করেছে তালেবানের পরিকল্পনায় যে বাংলাদেশের একাংশ, মিজোরামের একাংশ ও রাখাইন রাজ্য নিয়ে আরাকান রাষ্ট্র গঠন করবে। সেজন্যই এখন ৯ জন পুলিশ হত্যার মাধ্যমে কয়েকদিন আগে যুদ্ধ শুরু করেছিল।


অনেকেই বলে রোহিঙ্গারা নাকি নিজেদের বিপদ নিজেরাই তৈরি করেছে ? কিভাবে?
আরাকান জয় করে বৌদ্ধ বার্মিজরা ১৭৮৫ সালে। তখনও প্রায় ৩৫০০০ মুসলিম রোহিঙ্গা অবিভক্ত ভারতে এসে আশ্রয় নেয় ব্রিটিশ রাজ সরকারের শাসনামলে। তারপর থেকে বিভিন্ন সময়ে তাড়া বিভিন্ন বিফল বিদ্রোহ করে আসছে এবং হয়ে আসছে ক্ষতিগ্রস্থ। ১৯৪৬ তারাই শুরু করেছে বিছিন্নতাবাদী আন্দোলন, তারপর যোগ করেছে জংগিবাদী আন্দোলন । ১৯৪৭ ব্রিটিশরা চলে গেলে তাদের ব্যাপারে কোন মিমাংশ করে যেতে পারেনি। স্বাধীন রাষ্ট্র , ইসলামিক রাষ্ট্র , ইসলাম কায়েমের নামে সন্ত্রাস , হত্যা , শহর ধ্বংস কম করেনি রোহিঙ্গা সাধারণ মানুষের আড়ালে বা আশ্রয়েও বলা যায় থাকা রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নতাবাদী, আতঙ্কবাদী জঙ্গিরা। এরা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানী জামাত-শিবিরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত । ইয়াবাতো আছেই । ১৪ মে ১৬ কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গা শরণার্থী এলাকায় আনসার ক্যামেপ মুখোশধারী সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা ক্যাম্প কমান্ডারকে হত্যা করে বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র লুট করেছে। তাদের চিনে ফেলায় স্থানীয় এক বাসিন্দাকে দা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে দুর্বৃত্তরা। তারা ঐ ক্যাম্প থেকে ১১টি আগ্নেয়াস্ত্র ও কয়েকশ রাউন্ড গুলি লুট করে নিয়ে গেছে। এরকম আরও কারণ পাবেন অন্যান্য প্রশ্নের উত্তরগুলোতে।


মায়ানমারের সকল মুসলমানদের উপর অত্যাচার হচ্ছে কেন?
মায়ানমারের মোট জনসংখ্যার ৪% মুসলিম। সকল মুসলিমদের উপর কিন্তু অত্যাচারটা হচ্ছে না। অত্যাচারটা হচ্ছে কেবল এবং মূলত রোহিঙ্গাদের (আরাকান) উপর। এমন কি অনেক মুসলিমরাই বিদ্রোহী মুসলিমদের বিরোধিতা করছে কেননা তারা ইসলামের ছায়া ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ অব্যহত রাখছে। তারচে বরং শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সমস্ত বিশ্ববাসীর কাছে নিজেদের শান্তিকামীতা প্রকাশ করাই শ্রেয় মনে করছেন মায়ানমারের অনেক শান্তিকামী মুসলিম।


নাগরিক হিসেবে কেউ রোহিঙ্গাদেরকে মেনে না নেয়ার নেপথ্যে সবচে বড় কারণ কি?
১৯৪৭ বৌদ্ধ ধর্মের দেশ বলে আবারও মায়ানমার ত্যাগ করার ঘোষণার সাথে সাথে পাকিস্তান ইউনিয়নে যোগ দিতে ব্যর্থ হয়ে তারা নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষনা করে । দেশভাগের ডামাডোলের মাঝে মুসলমানের নিরাপদ ভুখন্ড সার জামিনে পাকিস্তানে পাকিস্তানের জনক কওম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ রোহিঙ্গাদের ঠাঁই দেন নাই। ততদিনে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেছে এবং রোহিঙ্গাদেরও আর রাখাইন প্রদেশ নিয়ে মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানে যোগ দেওয়ার সুযোগ থাকলো না। ওরা তখন বিশ্বব্যাপী ইসলামি বিপ্লবের লাইনে রওনা দিল। সিওর থাকেন যুদ্ধের আগে যদি রোহিঙ্গারা পূর্ব পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতে পারত, বাংলাদেশের জন্ম হওয়া আরও অনিশ্চিত হয়ে যেত, কেননা রাজাকারদের সংখ্যা মুক্তিযোদ্ধাদের চে বেশীই হত। ১৯৭১ এ বাংলাদেশ জন্ম হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সরকার গঠিত হোলেও রোহিঙ্গাদের নাগিরকত্ত নিয়ে উল্লেখযোগ্য কিছুই তেমন ফলপ্রসূ হয়নি। এসবের পেছনে সবচে বড় কারণ তাদের ভীরে মিশে থাকা জঙ্গি, ইয়াবা ব্যাবসা, সাধারণ মানুষের উপর বিভিন্ন সময়ে সাম্প্রদায়িক আক্রমণ, সেনাবাহিনী ক্যাম্প আক্রমণ, সরকারী অস্ত্র ও গোলাবারুধ চুরি, অবৈধ টেলিনেটওয়ার্ক ব্যাবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন সন্দেহমূলক যোগাযোগ, অবৈধ পাসপোর্ট ব্যাবহার , অবৈধ ভাবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া ইত্যাদি ইত্যাদি।


সাধারণ রোহিঙ্গারা কেন এর শিকার হচ্ছে?
প্রতিবার মায়ানমারর সেনাবাহিনী যখন মুজাহিদদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় তখন কিছু সংখ্যক নিরীহ রোহিঙ্গাও অত্যাচারের শিকার হয়। এইভাবে চলতে থাকে বছরের পর বছর। কারণ জিহাদিরা সবসময় সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যেই মিশে থাকে, সাধারণ রোহিঙ্গারা জানলে বলে না কারণ সবাই সবার কোন না কোন রকম আত্মীয়, ভাই, বন্ধু ও সর্বোপরি তাড়া ইসলামের জন্য কাজ করছে মনে করে তাদেরকে সেইভ করা হয়। ঠিক আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদেরকে যেভাবে সেইভ করা হত ১৯৭১ এ। যদিও তা ছিল তৎকালীন পাকিস্তান তথা ইসলামের বিরুদ্ধে। আমাদের স্বাধীনতার পর পর একটা বড় জ্বেহাদি গ্রুপ গঠিত হয়েছিল জাফর কাওয়ালের নেতৃত্বে । বেশ বড় সংগঠন ছিল জাফর কাওয়ালের। কয়েক বছর পরে ওরা যখন সারেন্ডার করে তখন সারেন্ডারকারীদের সংখ্যাই ছিল তিনশ নাকি চারশ।
জাফর কাওয়ালের নাম কেন বলছি, কারণ এই জাফর কাওয়ালের সময় থেকেই রোহিঙ্গাদের মধ্যে মুসলিম মৌলবাদী লাইনে (আমাদের দেশের রাজাকার ও জামাতিদের লাইনে) রাজনৈতিক মেরুকরণ হতে থাকে। সবচে সাম্প্রতিক উদাহরণ, গতমাসের হামলাতে অংশ নেওয়া ১২ জন জঙ্গি বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের একটি ক্যাম্পে শরণার্থী ছদ্মবেশে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করেছিল l


বাংলাদেশ কি এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিয়েছে এ পর্যন্ত?
তিন দশক ধরে আসছে এই শরণার্থীরা। সরকারি হিসাবে যা পুশইন হচ্ছে, বেসরকারি হিসাব তার কয়েক গুণ বেশি। কেননা মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের ২৭৪ কিলোমিটার সীমান্তের অনেক জায়গায় অনুপ্রবেশই নিরাপত্তারক্ষীর নজরদারির বাইরে। তারা মিশে যাচ্ছে স্থানীয় সাধারণ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে। ২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট মিয়ানমার-বাংলাদেশ পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন অচিরেই শুরু হবে। দীর্ঘদিন পর মিয়ানমারের এই আশ্বাস আশ্বস্ত করেছিল বাংলাদেশকে। প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে মিয়ানমার কয়েকটি শর্ত দিয়েছিল। তার মধ্যে প্রধান হলো, সেই সব নাগরিককেই তারা ফিরিয়ে নেবে, যাদের বাবা ও মা দুজনই মিয়ানমারের। এ নিয়ে বাংলাদেশ আপত্তি করেনি। তার পরও এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি মিয়ানমার। সাম্প্রতিক যা হলো, মিয়ানমার সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে, এ কারণে অনেক রোহিঙ্গা আতঙ্কিত হয়ে বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিপি। বিকেলে কক্সবাজারে সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন বিজিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফরিদ হাসান। তিনি জানান, খুব শিগগিরই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হবে বলে নিশ্চিত করেছে বিজিপি, বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। দুদেশের আঞ্চলিক অধিনায়ক পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। এতে মিয়ানমারের পক্ষে নেতৃত্ব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সন লুইন এবং বিজিবির পক্ষে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফরিদ হাসান নেতৃত্ব দেন। আলোচনায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে চোরাচালান ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ ঢালাওভাবে সীমান্ত না খুললেও আশ্রয় দিচ্ছে রোহিঙ্গাদের। সাম্প্রতিক ফার্স্ট পোস্ট জানায়, কমপক্ষে ৮৬ জনকে হত্যা ও ৩০ হাজার মানুষকে উচ্ছেদ করেছে মিয়ানমার সরকার। তাদের অনেকেই জীবন বাঁচানোর তাগিদে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এ ক্ষেত্রে আহত বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের সেনাবাহনী বিভিন্ন ক্যাম্প ও হাসপাতালে আশ্রয় দিয়েছে বলে জানায় তারা।


মায়ানমার কি এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিয়েছে এ পর্যন্ত?
মায়ানমার রাষ্ট্রীয়ভাবে ১৯৭৮ সালে বিভিন্ন দেশে চরিয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় ২,০০০০০ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে পারে বলে আলোচনা করলেও প্রবর্তিতে তাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সবাই জানে যে, তাদের যতটুকু করার তা তাড়া করছে না। উল্টো মিয়ানমার কর্তৃক ১৯৮২ সালে প্রণয়ন করা নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগের নাগরিকত্ব নিয়েই এখন প্রশ্ন তুলছে সে দেশের সরকার। একইভাবে ১৯৮৯ সালে মায়ানমার সরকার মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বৌদ্ধ পরিবার প্রতিস্থাপনের উপর জোড় দেয়। ৯০ সালে আবার রাখাইন-রোহিঙ্গা দাঙ্গা শুরু হয়। এই সময়েও প্রচুর রোহিঙ্গা দেশ ছাড়ে। তারপরও বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে দুই লাখ ৬০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয় বার্মা, প্রবর্তিতে তাও আমারা দেখতে পাচ্ছি যে তাদের কপালে দুর্ভোগই ছিল। ২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট মিয়ানমার-বাংলাদেশ পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন অচিরেই শুরু হবে। দীর্ঘদিন পর মিয়ানমারের এই আশ্বাস আশ্বস্ত করেও সে অনুযায়ী কোন পদক্ষেপ নেয়নি।


জাতিসংঘ বা অন্যান্য দেশ কি এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিয়েছে এ পর্যন্ত?
অনেকেই ধারনা করে থাকেন, মায়ানমার ধীরে ধীরে ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে। রাশিয়া থেকে চীন মার্কিন থেকে ইইউ আরব বিশ্ব সবাই মায়ানমারের লোভনীয় রিসোর্স ব্যাবহারে আগ্রহী। ইনভেস্টে আগ্রহী। আগামী দশ বছরের মধ্যে মায়ানমারে ইকোনোমি ফ্লারিস করবে। এমন একটা অবস্থায় ব্যাবসা বান্ধব আন্তর্জাতিক রাজনীতি রোহিঙ্গা ইস্যুতে মায়ানমারকে কখনোই চাপ দিবে না বরং ক্ষমতাধর দেশগুলি রোহিঙ্গা ইস্যু ঝুলায়ে রাখবে যাতে ভবিষ্যতে গনতান্ত্রিক (!), ব্যাবসা-বান্ধব আর সুখে অভ্যস্ত মায়ানমারকে বাগে আনা সহজ হয়। যার কারনে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রোহিঙ্গা ইস্যু অলরেডি ফ্রিজিং পয়েন্টে আছে। কিন্তু ইতিমধ্যে মিয়ানমারে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানও এসে ঘুরে গেছেন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিহত হওয়া এবং সেখানে চলমান অন্যান্য সহিংসতার ঘটনায় ‘গভীর উদ্বেগ’ জানিয়েছেন তিনি। কফি আনানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিশন রাখাইন রাজ্যে গেছেন। স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমাধানের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করেছেন। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের স্থানীয় ও সেনাবাহিনীর অত্যাচারে পালিয়ে বেড়ানো রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৩ হাজার জন আশ্রয় পেয়েছে চীনে। দেশটির গণমাধ্যমে সরকারের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের কিছু নাগরিককে চীনের মিয়ানমার সীমান্তাঞ্চলে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এদিকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি মিয়ানমার সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে চীন। তাছাড়া চলতি মাসেই মালয়শিয়া ও ইন্দোনেশিয়া আরও কিছু রোহিঙ্গা আশ্রয়ের ঘোষণা দিয়েছে।


অতি সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা নির্যাতনের নেপথ্য সমস্যা কি?
গত ৯ই অক্টোবর মায়ানমারের কিকানপিন বর্ডার গার্ড হেড কোয়ার্টার সংলগ্ন দুটি পুলিশ চেকপোষ্টে এক অতর্কিত হামলাতে মিয়ানমার পুলিশের ৯ জন সদস্য নিহত হয়, ৪৮টি অস্ত্র ও ৬৬২৪ রাউন্ড গুলি খোয়া যায়। সেই হামলাতে দুই জন হামলাকারীকে মায়ানমারের পুলিশ জীবিত ধরতে সমর্থ হয়। রোহিঙ্গাদের আকামুল মুজাহিদিন নামের একটি সংগঠনের জঙ্গিরা এই হামলা করেছিল l এই হামলার জের ধরে অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। রাখাইন প্রদেশে সম্প্রতি শুরু হওয়া বিদ্রোহ দমনের অংশ হিসেবে এই অভিযান চালানো হয়েছে বলে উল্লেখ করছে সেনাবাহিনী। এর পর থেকেই সেখান থেকে নাফ নদী পার হয়ে বাংলাদেশের টেকনাফে ঢোকার চেষ্টা করে অনেকে।


এ অবস্থায় আমাদের কী করনীয়?
এটা নিশ্চয় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের সঠিক পথ নয়। বরং সবাই মিলে ধর্মের ভিত্তিতে নয়, মানবতার খাতিরে মিয়ানমারের উপর রাষ্ট্রীয় এবং আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারলে রোহিঙ্গাদের উপকারে আসবে নিঃসন্দেহে। তবে এই সমস্যার সুরাহা করতে হবে মিয়ানমার এবং বাংলাদেশকে যৌথ উদ্যোগে। কারণ মিয়ানমার বলছে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে সেখানে গিয়েছে। তাই বাংলাদেশ একেবারে চুপ থাকতে পারে না। কূটনৈতিক শিষ্টাচার এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বজায় রেখে রোহিঙ্গা বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের স্পষ্ট ভাষায় কথা বলা উচিত। প্রয়োজনে জাতিসংঘের দ্বারস্থ হতে হবে। আমাদের সবারই মনে রাখা উচিত, সবার আগে মানবতা।


অপপ্রচার এর ব্যাপারে কিছু লিখুন।
এ ব্যাপারে যেতে চাচ্ছিনা। এটা খুবই লজ্জাজনক। একটি বিশেষ মহল সমপ্রতি ঘটে যাওয়া তুলনামূলক একটা ছোট সহিংসতা কে অনেক বড় করে দেখিয়ে যাচ্ছে এবং যোগে যোগে ঘটে যাওয়া সহিংসতার স্পর্শকাতর রগরগা ছবি গুলো পোস্ট করছে আর সাম্প্রদায়িক উস্কানি অব্যাহত রাখছে । যেন রোহিঙ্গাদের এই কষ্ট তাদের জন্য যথেষ্ট নয়। এই মর্মে সচেতন থাকতে হবে সকলকে। আমাদের উচিত কোন কিছু বিশ্বাস করার আগে গুগল করে হলেও ছবি বা তথ্য যাচাই করে নেয়া। এ বিষয়ে কিছুটা আলো পেতেঃ Click This Link

সুত্রঃ বিভিন্ন দেশী বিদেশী ব্লগ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.