![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মে ১১, ১৯৫০। রাওলিন, ওয়াইওমিং, যুক্তরাষ্ট্র। সিডর স্ট্রীটে একটি বাড়ী তৈরির জন্য খোঁড়াখুড়ির সময় কন্সট্রাকশন ওয়ার্কাররা একটি পুরনো আমলের হুইস্কির ব্যারেল এবং তার ভেতরে অসম্পূর্ণ একটি মানব কঙ্কাল আবিষ্কার করে।
অসম্পূর্ণতার দিকটা বেশ ভিবৎস; মাথার খুলির উপরের অংশ নেই, করাত দিয়ে কিন্তু অমসৃণভাবে কপাল বরাবর কেটে নেওয়া, বেশীরভাগ হাড়ই নেই এবং যেগুলো আছে কোনটিই আর আস্ত নেই। আশপাশ থেকে ধীরে ধীরে মানুষ এসে জড়ো হতে লাগলো। একজন খুলিটি দেখে বলল এই মিসিং পার্টটা সে একজনের চেম্বারে ডোরস্টেপ হিসেবে দেখেছে। কার চেম্বারে? ডাঃ লিলিয়ান হিথের চেম্বারে, এই স্টেটের প্রথম নারী ডাক্তার। তিনি তখন অনেক বৃদ্ধ, মৃত্যু শয্যায়। কিন্তু এই সংবাদ পেয়ে ডাঃ লিলিয়ান তার স্বামীকে দিয়ে ডোরস্টেপটি পাঠালেন। ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন দুটি পার্ট কিভাবে মিলে গেছে। তার মানেটিএ উনবিংশ শতকের সবচে ভয়ঙ্কর আউট-ল বিগ নোজ জর্জ। পরবর্তীতে ডিএনএ টেস্টে তা শতভাগ নিশ্চিত হওয়া গেল। এর পর শুরু হয় বিগ নোজ এর ব্যাপারে বিস্তর গবেষণা আর বেরিয়ে আসতে থাকে একের পর এক চমকপ্রদ কাহিনী যা সবার কাছে প্রায় একশত বছর ধরে ছিল সম্পূর্ন অজানা।
জর্জ প্যারট বা বিগ নোজ জর্জ বা ফ্রান্সিস ওয়ার্ডেন এরকম আরও বিভিন্ন ভাষার অন্তত ১৫/২০টি নাম রয়েছে তার। কোথায় কবে জন্ম, অনেক তথ্যের মত এটিও কখনো জানা যায়নি। সে ছিল ঐ সময়ের ইতিহাসের সবচে’ বর্বর “আউট ল” লিডার। এদেরকে সাইকোদের চে’ও ভয়ঙ্কর বলা হয়ে থাকে। তো ১৮৭০-৭১ এর পর থেকেই জর্জ এবং তার সহযোগীরা যত্রতত্র প্রকাশ্য একের পর এক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেই যাচ্ছিল। পুলিশ কিছুতেই তাকে ট্রেস করতে পারছিল না। অন্যদিকে সময়ানুপাতে বাড়তেই থাকল তাদের বর্বরতা। বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ, নারী বা পুরুষ, যাকে যেখানে পাচ্ছে মদপ্য সাইকোর দল হাসতে হাসতে গুলি করে দিচ্ছে বা কারো কারো বেলায় থাকছে অকথ্য যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু। ইনোসেন্ট সাধারন মানুষের উপর নির্বিচারে অত্যাচার, জখম, খুন, বোমাবাজি, লুটতরাজ ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।
যাইহোক, ১৮৭৮ সাল- জর্জ তখন মাল বা যাত্রী বাহী কোচ, স্টেজকোচ, ও ব্যাঙ্ক ডাকাতিতে চারিদিকে হাহাকার সৃষ্টি করে রেখেছে। তার সাথে অন্যান্য কুখ্যাত আউট-ল দের তখন চরম দহররম মহররম। এমনি এক ডাচ আউট-ল চার্লি বুরিস এর টিমের সাথে মিলিত হয়ে জর্জ ‘ইউনিয়ন প্যাসিফিক রেইলরোড’ কোম্পানীর মাসিক পে-রোলের একটি টাকাভর্তি গাড়ী লুট করার জন্য পরিকল্পনা করছিল। এ খবর পুলিশের কানে পৌঁছালে, দুইজন হাই র্যাঙ্কিং ক্রিমিনাল স্পেশালিষ্টকে গোপনে এপয়েন্ট করা হল। একজন কাউন্টি শেরিফ ডেপুটি রবার্ট উইডোফিল্ড এবং অপরজন ইউনিয়ন প্যাসিফিক এর আন্ডার কভার ডিটেকটিভ হেনরি ভিনসেন্ট। কিন্তু ঘটনার দিন, ১৯ আগস্ট ১৮৭৮ সাল। সব ঠিকঠাক এগুলেও শেষমেশ তারা ডাকাতদলের হাতে ধরা পড়ে যান। ডাকাতরা পালিয়ে যাওয়ার আগে রবার্ট ও হেনরিকে র্যাটলস্নেক ক্যানিয়ানের এল্ক পর্বতের উপরে নিয়ে হত্যা করে ফেলে রেখে যায়। দিনকয়েকের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া গেল তাদের মৃতদেহ। তখন জর্জ ও তার দলের কাউকে ধরিয়ে দিতে পারলে প্রথমে ২০ ও পরবর্তীতে পর্যালোচনা করে ২৫ হাজার তৎকালীন ইউএস ডলার পুরষ্কার ঘোষণা করা হয়। ডাকাতরা এই ঘটনার পর চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে এবং বিভিন্নজন বিভিন্ন জায়গায় নির্মমভাবে নিহত হয়। পলাতক বিগনোজ জর্জ তখন মাইলসটাউন (বর্তমান মন্টানার মাইলসিটি)তে এক পাবে মাতাল অবস্থাত তার সমস্ত কুকর্ম নিয়ে দম্ভ ও অহংকার করে যাচ্ছিল। সেদিনই সেখানে থেকে রাউলিন পুলিশ স্টেশনে একটি টেলিগ্রাম আসে। ধরা পরে জর্জ। তাকে রাউলিন ফিরিয়ে নিতে মন্টানা আসেন কার্বনের শেরিফ রবার্ট রেঙ্কিন। ফেরার পথে কার্বন এসে পৌঁছালে সাধারণ জনগণ গাড়ী থামায় এবং আসামীকে ছিনিয়ে নিয়ে যেতে বিক্ষোভ শুরু করলে, র্যাঙ্কিন তাদের কাছ থেকে কোনরকমে বাঁচিয়ে নিয়ে আসেন।
১৮৮০, ডিসেম্বর ১৫। শুরু হয় বিচারকার্য। জর্জ প্যারটকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয় যা কার্যকর করা হবে এপ্রিল ২, ১৮৮১ তে। এই সময়টুকুতে অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে হাত পা শিকলবদ্ধ অবস্থায় তাকে রাখা হয় ওয়াইয়োমিং এর রাওলিন কারাগারে। কিন্তু জর্জ এক টুকরা পাথর আর একটি ছোট্ট একটা পকেট নাইফ দিয়ে তার পায়ের শিকল কেটে ফেলতে সক্ষম হয়। ফাঁসি কার্যকরের দশ দিন পুর্বে ২২ মার্চ কর্তব্যরত রবার্ট র্যাঙ্কিনকে মাথায় আঘাত করে পালিয়ে যাচ্ছিল জর্জ, এমন সময় রিভলবার হাতে নাটকীয়ভাবে এসে হাজির হয় রবার্টের স্ত্রী রসা র্যাঙ্কিন। তিনি জর্জকে পুনরায় তার সেলে ঢুকতে বাধ্য করেন এবং বাইরে থেকে তালাবন্ধ করে দেন। তারপর ফাঁকা গুলির মাধ্যমে লোকজন জড়ো করেন। আসলে সাধারণ নাগরিকদের সবারই খেয়াল ছিল জর্জের ওপর, যেন সে পালিয়ে যেতে না পারে। মব সাইকোলজি যে কত সাঙ্ঘাতিক জিনিস, সেদিন বুঝা গিয়েছিল। মুহুর্তের মধ্যেই প্রায় ২০০র ও বেশী লোকজন জমায়েত হয়ে গেল কারাগার প্রাঙ্গণে। ঝরের মতই তারা ফুঁসে উঠছে থেকে থেকে। উপস্থিত ক্রুদ্ধ জনগণ এক সময় জর্জকে জেল প্রাঙ্গণ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে হাত পা বেঁধে মারতে মারতে রাস্তায় বের করে নিয়ে আসে। অবস্থার এতটা দ্রুত অবনতি হচ্ছিল যে পুলিশেরও কোন কিছু করার কোন সুযোগই ছিল না।
উন্মত্ত জনগণ একসময় জর্জকে নিয়ে বর্তমান সেকেন্ড স্ট্রীট এ আসে এবং হুইস্কির ব্যারেলের ওপর দাঁড় করিয়ে একটি টেলিগ্রাফ পোস্টের সাথে দড়ি বেঁধে ফাঁসি লাগিয়ে দেয়। কিন্তু বিধি বাম! টেলিগ্রাফ পোস্ট ভেঙ্গে পড়ে গেল, বিগ নোজ ইভিল মরল না। জনগণ তখন আরও ক্ষিপ্ত হয় এবং তাকে নিয়ে অপেক্ষাকৃত মজবুত ও উচ্চতর পোস্টের সাথে ঝুলিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। বিজয়োল্লাসে ফেটে পড়ে সাধারণ জনগণ, জঘন্য জর্জ ঝুলতে থাকে শহরের উচ্চতম টেলিগ্রাফের একটি খুঁটি থেকে। (পরবর্তীতে চার্লি বুরিশ ও ফ্রাঙ্ক ম্যাককিনিকেও ‘লিঞ্চ মব’ এর স্বীকার হতে হয়।) ঘণ্টার পড় ঘণ্টা ঝুলে থাকার পর মৃতদেহ যখন নামানো হলো, “কুৎসিৎ পশু”র দেহ আখ্যা দিয়ে সবাই তখন তা সৎকারের অস্বীকৃতি জানাল। এ অবস্থায় ওয়াইওমিং হাসপাতালের সার্জন ডক্টর থমাস ম্যাঘি এবং জন ইউজিন অসবর্ন তখন “ক্রিমিনাল ব্রেইন রিসার্চ” এর উদ্দেশ্যে তা সংরক্ষণ করেন।
ডঃ ম্যাঘি আর তার টিনেজ সহকারী লিলিয়ান হিথকে রিসার্চ শুরু করার জন্য ডেডবডিটি দিয়ে দেবার আগে মৃত্যুর সময়কার চেহারার ডেথ মাস্ক তৈরি করে রাখেন ডঃ অসবর্ণ। এবার ছবিতে লক্ষ্য করুন, ডেথ মাস্কে জর্জের কোন কান নেই। মাস্কটি তৈরী করার সময় ডঃ অসবর্ণ খেয়াল করেন এটি। তিনি মনে করেন, জেল থেকে সেকেন্ড স্ট্রীট পর্যন্ত রাস্তায় কোথাও হয়ত পড়ে গিয়ে থাকবে।
__________________________ ডক্টর জন ইউজিন অসবর্ন
তারপর ডঃ অসবর্ণ তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আলাদা করতে শুরু করেন। অন্যদিকে ডঃ ম্যাঘি তার সহকারী মিস হিথকে ক্যাপের মত করে কাটা ওই খুলিটি প্রেজেন্ট করেন, যা প্রথমে কলমদানি ও পরবর্তীতে তার অফিসের দরজার ডোরস্টেপ হিসেবে এবং বিয়ের পর তার স্বামীর অ্যাশট্রে হিসেবে ব্যাবহৃত হয়েছে। তখনো আমরা অর্গান ট্রান্সপ্লান্টেশন জানতাম না বিধায় এছাড়া জর্জের আর বিশেষ কিছুই কোন কাজে লাগাবার মত ছিল না। কিন্তু ডঃ অসবর্ন এত সহজে হাল ছাড়বেন কেন?
এবারে তিনি ডেডবডির বুক, পিঠ ও উরুর চামড়া আলাদা করেন। তারপর সেই চামড়া কলারাডোর ডেনভারে এক ট্যানারিতে পাঠালেন। সাথে অর্ডার লিখে দিলেন একটা মেডিসিন ব্যাগ ও তার পায়ের একজোড়া জুতা। বিশেষ ভাবে লিখে দিলেন, জুতাগুলো যেন বুকের চামড়া দিয়ে এমনভাবে বানানো হয় যে নিপলগুলো জুতার সামনের দিকে থাকবে। কিন্তু অর্ডার রিসিভ করার পর তিনি যথেষ্ট বিরক্ত হলেন নিপল ইনক্লুড করা হয়নি দেখে। কিন্তু কি আর করা, তিনি সেই জুতা নিয়মিত ব্যবহার করতে লাগলেন। ক্রমে এ কথা ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু দুর্নাম হিসেবে নয়, বীরত্ব হিসেবে। ফলে তখন ডাক্তারের প্রতি সাধারণ মানুষের এক ধরনের ভালোবাসা তৈরী হয় যার প্রভাব আমরা দেখতে পাই ওয়াইয়োমিং স্টেটের পলিটিক্যাল ফিল্ডে, যার ধারাবাহিকতায় ১৮৯২ সালের ডেমোক্রেটিক নির্বাচনে, তিনি গভর্নর নির্বাচিত হন এবং পরবর্তী সময়ে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৮তম প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের প্রধান সহকারীও নিযুক্ত হন।
যাইহোক এরপর একটি হুইস্কির ব্যারেলে লিকুইডে ডুবিয়ে জর্জের ডেডবডি পুরো একবছর সময় ধরে রিসার্চ করলেন তারা। তারপর সেই ব্যারেল নিয়ে পুঁতে রাখলেন ডঃ ম্যাঘির বাড়ীর পেছনের জঙ্গলে; যা বর্তমান সিডর স্ট্রীট।
এখনও রাউলিনের কার্বন কাউন্টি মিউজিয়ামে গেলে দেখতে পাবেন সেই খুলি, ডেথ মাস্ক আর জুতা জোড়া। আরও আছে মিসেস রসা রাস্কিনকে দেওয়া কাউন্টি কমিশনারের উপহার একটি ঘড়ি। ফাঁসির সময় জর্জের হাত বাঁধা শেকলগুলো আছে নাব্রাস্কার ওমাহার ইউনিয়ন প্যাসিফিক মিউজিয়ামে। তবে মেডিসিন ব্যাগটি আর পাওয়া যায়নি।
ভিডিও দেখতেঃ https://goo.gl/zZEfc3
০১ লা জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:০১
chinmoy বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
২| ০১ লা জুলাই, ২০১৭ রাত ৩:০৯
নাইম রাজ বলেছেন: ধন্যবাদ এমন একটি পোস্টের জন্য ।
০১ লা জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:০২
chinmoy বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই।
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা জুলাই, ২০১৭ রাত ২:৫২
তপোবণ বলেছেন: উফঃ কি যঘণ্য! ইতিহাসের বর্বরতম উপাখ্যান। অনেক তথ্যে সমৃদ্ধ পোষ্টটি পড়ে ভালো লাগল।
ধন্যবাদ