![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চৈত্র শেষে নতুন দিনের প্রখর অপেক্ষায়...
তখন আমরা একতলার ভাড়া বাসায় থাকতাম। এর আগে একতলায় কখনো থাকিনি, তাই একতলায় থাকলে কিছু বিশেষ সুবিধা-অসুবিধা পাওয়া যায় সেসব আগে জানা ছিলনা। অসুবিধাগুলোর মধ্যে প্রধান ছিল চোরের ভয়, মানুষের চেঁচামেচির প্রাবল্য, পোকামাকড়ের উপদ্রব। সুবিধা ছিল একতলা বলে গাছ লাগানোর মত কিছু জায়গা পাওয়া। শহরতলীতে উঠান পাওয়া কল্পনাতীত সৌভাগ্য, হোক না সে উঠানের আয়তন বারান্দার সমান। সেখানে আগে থেকেই লাগানো ছিল ফুলগাছ, আমাদের সংযোজন পালং শাক, গাঁদাফুল। বর্ষাকালে উঠানে একহাত পানি জমে যেত। সেটা বাড়ির বড়দের জন্য অসুবিধা, আর আমার জন্য বিস্তর সুবিধা। অতটুকু পানিকেই আমার পুকুর ভাবতে ভালো লাগত। জানলার পাশে ছিল পড়ার টেবিল, সেখানকার চেয়ারটায় বসে পুকুরপাড়ে বসে আছি ভাবতাম। কাগজের নৌকা তখন কার কাছ থেকে শিখেছিলাম মনে নেই। কাগজের নৌকা আর প্লেন, এ দুটো অরিগামি যে কেউ জানে, কার কাছ থেকে শেখা সেটা হয়ত অনেকেই আমার মত মনে করতে পারবেনা। কাগজের নৌকা বানিয়ে পুকুরে ভাসাতাম। জানালার গ্রিল থেকে নৌকা ছাড়ার সময় অনেক সময় উল্টে পড়ত। ঠিকঠাক যেগুলো পড়ত তারা ভাসতে ভাসতে এধার থেকে ওধার চলে যেত। অদ্ভুত সেই দৃশ্য, অদ্ভুত সেই আনন্দ। মফস্বলে বেড়াতে গেলে যেখানে সেখানে পানি জমে যেত। রঙ্গন ফুলের গুচ্ছ থেকে কিছু ফুল ছিঁড়ে ঐসব পানিতে ভাসাতাম। রঙ্গন কে তখন শাপলা মনে হত। একতলা ছেড়ে আসার সাথে সাথে পুকুরকেও ছেড়ে আসতে হয়েছে। একবার গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম অনেক কাগজ সাথে নিয়ে। সত্যিকারের পুকুরে ভাসাবো নৌকা। বাস থেকে নেমে রিক্সা করে গ্রামের বাড়ি পৌঁছাতে হয়। বাড়ি পৌঁছানোর আগেই ঘনঘন চিৎকার শুনছিলাম। পৌঁছানোর পর শুনলাম গ্রামের এক ছেলে পুকুরে গোসল করতে নেমে ডুবে মারা গেছে। সেদিন পুকুরের ধারেকাছেও যেতে দেওয়া হয়নি আমাকে। এরপর একদিন কি মনে করে নৌকা বানাতে গিয়ে দেখি, বানাতে পারছিনা, কাগজের ভাঁজ কোথায় দিতে হবে কিছু মনে নেই। আজ অনেকদিন পর নৌকা বানাতে ইচ্ছা করছে। ইন্টারনেটের কল্যাণে সাম্পান, ডিঙি আরো কতরকমের নৌকা শেখার সুযোগ আছে। কিন্তু একতলার অভাবে ছোট্ট পুকুরটা নেই।
©somewhere in net ltd.