নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এবং সালাহি উদ্দিন গুম কাহিনী অতঃপর

চঞ্চল মাহবুব

মাহবুবুল আলমের জীবন সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত জন্ম ও বংশ: কবি-কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও শিক্ষাবিদ মাহবুবুল আলম, ১৯৫৯ খ্রীষ্টাব্দের ১ জানুয়ারী, কুমিল্লা জেলার তিতাস উপজেলাধীন হাইধন কান্দি গ্রামের সম্ভ্রান্ত মোল্লা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও স্বনামধন্য শিক্ষক সাহেব আলী মাস্টার, মা বিদুষী গৃহিনী রাবেয়া খাতুনের নয় সন্তানের মধ্যে মাহবুবুল আলম তাঁদের ষষ্ঠ সন্তান। শিক্ষা: স্থানীয় ইসলামাবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা, পাঁচ পুকুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি, নিমসার জুনাব আলী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে, তেজগাও কলেজ থেকে বি.এ ও এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন। লেখালেখি: সত্তর দশকের গোড়ার দিকে তিনি সিলেট সমাচার, যুগভেরী, বাংলার বার্তাসহ বিভিন্ন পত্রিকা সাময়িকীতে ছড়া, কবিতা গল্প ফিচার লিখে তার সাহিত্য প্রতিভার বিকাশ ঘটান। সাথে সাথে সাহিত্যাঙ্গণের সম্পাদক হিসাবে মৌলভীবাজারের সমসাময়িক সাহিত্যানুরাগীদের মুখপাত্র সাহিত্যের কাগজ ‘প্রসূন’ সম্পাদনা করেন। একজন শিক্ষাবিদ হিসাবে দেশের শিক্ষা বিস্তারেও তিনি নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, সেই লক্ষ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন-সানমুন ক্যাডেট স্কুল এন্ড কলেজ, হলিল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, মিশো মিউজিক কেয়ার প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা: ৩৮। উপন্যাস-৮, কাব্যগ্রন্থ-৯, ছড়ার বই-৩, কলাম সমগ্র-৫, নাটক-৭, গবেষনা-২, শিশুতোষ-২, প্রবন্ধ-নিবন্ধ-২টা। পুরষ্কার: সাহিত্যক্ষেত্রে অবদানের জন্য তিনি কবিতাঙ্গন এ্যাওয়ার্ড (২০০৭), ড.মমিনুল হক একাডেমি ইউ.কে এ্যাওয়ার্ড (২০০৮) সংশপ্তক বঙ্গবীর ওসমানী পদক, অলইন্ডিয়া চিলরেন্ড লিটারারী ফউন্ডেশন ‘উৎপল হোমরায়’ স্মৃতি পুরস্কার-২০১২ ও ভারতের পূর্ব মেদিনীপুরের কবি ও কবিতা পত্রিকা সন্মাননা-২০১২, দুইবাংলা কবিতা উৎসব সন্মাননা-২০১৩, সাপ্তাহিক কালপুরুষ পত্রিকা সন্মাননা-২০১৩সহ বিভিন্ন পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

চঞ্চল মাহবুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প-বেলাঅবেলা

২৪ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১:১৩



ঘরের বারান্দায় বসে নিমগ্ন হয়ে নানা কথা ভাবছিলেন কাশেম সাহেব। হঠাৎ তার মন ছুটে যায় দুরন্ত শৈশব ও কৈশোরের সেই মধুময় দিনে। মাঠের পাটক্ষেত ও বিভিন্ন ফসলীক্ষেত মাড়িয়ে আবুল কাশেম সাহেব এখন একটা রঙিন ঘুড়ি নিয়ে দৌড়াচ্ছে। তার পিছু পিছু দৌড়াছে আরো কিছু ছেলেপুলে। এই ঢিল ছুড়ছেন কারো বড়ই গাছে, নয়তো চড়ে বসেছেন কারো আম না হয় পেয়ারা গাছে।
লেখাপড়া, শেষ করেন পাশের গ্রামের স্কুলেই। মেট্টিকুলেশন পাশ করার পরই চাকুরী। নিন্মমান কারনীক থেকে উচ্চমান সহকারী, শেষ-মেষ পেনশনের বছর পাঁচেক আগে পারসেজকর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি। তারপর অবসর। বেশ কিছুদিন থেকেই কাশেম সাহেবের মান বড়ই চঞ্চল ও বিক্ষিপ্ত। নিজের শেষ জীবনের চিন্তার পাশাপাশি মরণচিন্তা তাকে পেয়ে বসেছে। তার মনের কেন এমন হাল, আসুন আমরা জেনে নেই আবুল কাশেম সাহেবের জবানীতেই-
বয়স যত বাড়ছে মেজাজটা তার বড় বেশি খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। তার মানে আমার স্ত্রী তৈয়বার। এই কিছুদিন আগে মাত্র ছেলে-মেয়ে মিলে আমাদের বিয়ে বার্ষিকীর চারদশক পালন করলো। আমরা বিশেষ করে আমি নিজে শুধু সাাক্ষীগোপালের মতো জো-হুকুম বলে সব কিছুই মানিয়ে নিয়েছি। আর ছেলে মেয়েরা যা যা করতে বলেছে তা একটা প্রশিক্ষীত ময়না ও বানরের মতো অনুসরণ করে গেছি।
এই যেমন-‘ময়না আল্লা ক’ বা ‘দেখা মুক্তির মরা পাঞ্জাবীর মরা’-এর মতো। অথবা স্কুলের ফিজিক্যাল টিচারের কমান্ডের মতো-‘বায়ে-ঘুর, ডাইনে-ঘুর, বাম-ডান, বাম-ডান বামডান বাম’এর মতো। এছাড়া যে আমার কোনো উপায় নেই। এখন তাদের কথা মতো না চললে ব্যাকডেটেড অমুক তমুক কত যে খিস্তিখেউর শুনতে হয় সে কষ্টের কথা বলার মতো আমার যে কেউ সমব্যাথী নেই। না বউ, না ছেলে-মেয়ে। এ জন্যে তৈয়বার একটা সুক্ষ্ম চাল আছে। আর সে চালটা হলো অগোচরে সে ছেলে-মেয়ে-বউ-ঝিদের কাছে আমার সম্মন্ধে বিরূপ মন্তব্য করে করে সবার মধ্যে একটা ভয় ও নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি করে রেখেছে।
একদিন চায়ের কথা বলতে রান্নাঘরে উঁকি দিতেই শুনি তৈয়বা আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কথা বলে ছোট বউয়ের কান পাকাচ্ছে। কি কথা বলা হচ্ছে শুনার জন্য কান খাড়া করতেই শুনি-
তোমরাতো জাননা বউ মা, এই লোকটা এই জীবনে আমায় কত জ্বালিয়েছে। জা’য়েদের কান কথায় বিশ্বাস করে আমাকে অযথা গালমন্দ করেছে। যা রোজগার করেছে তার সিংহভাগই দিয়ে দিয়েছে মা-বাবা-ভাই-বোনদের জন্য। এ ব্যাপারে কোন কথা তুললেই আমাকে দিয়েছে না না অপবাদ, আমি নাকি চাইনা সে তার পরিবারের জন্য খরচপাতি করুক। এ নিয়ে কত যে ঝগড়া-ঝাটি মনমালিন্য তা বলে শেষ করা যাবে না। এই হলো আমার কপাল। এই বুড়ো বয়সেও যে একটু শান্তিতে থাকবো তারও জো নেই। এটা সেটা নিয়ে একটা না সমস্যার সৃষ্টি করবে।
কান আরো একটু লম্বা করতেই শুনি ছোট বউ বলছে-
কই মা, বাবাকে দেখেতো কিছুতেই এমন মনে হয়না। সহজ সরল মানুষ, কারো সাতেপাঁচে নেই। তাছাড়া বাবার পেনশনের সব টাকাতো ছেলে-মেয়েদের হাতেই তুলে দিল। শুনলাম, আপনার নামেও নাকি এক লাখ টাকা এফডিআর করে দিয়েছে। আর নাতি-নাতনী ও ছেলেদের বউদের জন্যও তো সাধ্য মতো সব কিছুই করেন...।
মলি কথা শেষ করার আগেই তৈয়বা ছোঁ মেরে কথা কেড়ে নিয়ে বলে-
এই দেখ, একেবারে মিথ্যে কথা। ভন্ডামী। আমার নামে পঞ্চাশ হাজার টাকার এফডিআর করে সবাইকে বলে বেড়ায় এক লাখ।
তা হলে মা আমার শুনতে কোন ভুল হয়েছে। স্যরি।
না থাক স্যরি বলতে হবে না। তুমি যা শুনেছ তাই বলেছো এতে স্যরি বলার কি আছে।
কড়াইয়ে খুন্তি দিয়ে মাছ উল্টাতে উল্টাতে আবার বলে-
আরে আমি জীবনে যা কষ্ট করেছি এর তুলনায়তো এ টাকা পানিভাতও না। আমি যদি ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করিয়ে মানুষ না করতাম, তা হলে তার ভাইদের ছেলেদের মতো সব মূর্খ থেকে যেত। সেতো মাসে মাসে বেতনের কিছু টাকা আমার হাতে গুজে দিয়ে মনে করেছে তার কর্তব্য পালন শেষ। আর আমি সারা জীবন ঝি-গিরি করে করে সংসারটা যে এ পর্যন্ত টেনে আনলাম, তার কি কোনো মূল্য নেই।
না মা, মূল্য থাকবে না কেন? অবশ্যই আছে। আপনি কষ্ট না করলেতো সংসারের এতটুকু হতো না।
সেদিন এইসব কথা শুনে চা-খাওয়ার ইচ্ছাটাকে বেত্রাঘাত করে ফিরে এসেছিলাম।
আবার শুরু হয়েছে নতুন যন্ত্রনা। আগে যা ও একটু ভাল মন্দ খেতে পারতাম, রক্তে সুগার ও কোলস্টারেল ধরা পড়ার পর তাও বন্ধ হবার উপক্রম। এ উছিলায় এটা সেটা খেতে চাইলে সবাই শাসন করা শুরু করে। মিষ্টি খেয়না সুগার বেড়ে যাবে। রেডমিট মানে গরু খাসির মাংস খেওনা কোলস্টারেল আরো বেড়ে যাবে। আপনারাই বলুন! ঈদে-চান্দে একটু আধটুও মিষ্টি জাতীয় খাবার বা মাংস টাংস না খেয়ে কী থাকা যায়? ওই গো মাংসটা পছন্দ ছিলো তাও খেতে দিচ্ছেনা এ্যসকিমিক এ্যাটাকের পর। সিগারেট খেওনা হার্ট এ্যাটাক হয়ে যাবে। আরো যে কত কি তা বললে একটা ইতিহাসের বই হয়ে যাবে।
আর আমার মতো মানুষের ইতিহাসের বই ই বা হবে কেন? আমিতো আর রাজা-বাদশা বা দেশের প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট না। আমি হলেম গিয়ে ব্যর্থ জীবনের এক পরাজিত সৈনিক। ঢাল তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দার। আমার কি হলো না হলো তাতে তো কারো কিছু আসে যায় না।
তাই আজ আমি বড় একা, নিজগৃহে পরবাসি এক অনাকাঙ্খিত মানুষ। এক কথায় বলতে গেলে ‘বাতিল মাল’। এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণের পর পেনশন বিক্রি করে এককালীন টাকা উঠিয়ে সব কিছু সবার মধ্যে বিলিয়ে দেবার পর। ছেলের এটা সেটা, মেয়ের বিবাহের যাবতীয় খরচ, নাতি-নাতনীদের আব্দার, পুত্রবধূর সখ মিটিয়ে মাটিয়ে এখন আমি কপর্দকহীন শূন্য এক নিঃস্ব বেকার মানুষ। এক সময় ভেবেছি, শেষ বয়সে ওরাইতো আমার সব। খাওয়াবে। পরাবে। হাত খরচা দেবে। আমার কাছে টাকা পয়সা রেখে কী লাভ। কিন্তু এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি কি ভুলটাই না করে বসে আছি। আমার সব টাকা খরচ করিয়ে এখন সবাই বুড়ো আঙ্গুল দেখাচ্ছে।
বর্তমানে আমি হলাম গিয়া এই সংসারের পেটেভাতের ‘আবদুল’ সকাল হলেই বাজারের থলে নিয়ে বাজারে যাওয়া। বাজার থেকে ফিরে এসে তৈয়বাকে পই পই করে হিসেব বুঝিয়ে দেয়া। একটু এদিক সেদিক হলেও পুলিশী জেরা। এটা এত দাম হলো কেন। এই মালটা এত পঁচা-বাসি কেন। যদিও ছোট লোকের মতো বলতে পারেনা আমি বাজারে গিয়ে টাকা পয়সা মেরে দিই কিন্তু ভাবখানা এমন তা আর বলে বোঝাতে হয়না।
সে’দিন বাজার থেকে ফেরার পরে দশম শ্রেণীর নাতি বিল্টু তার দাদির অব্যাহত জেরা দেখে মুচকি হেসে আমার ঘরের দিকে চলে যায়। হিসেব বুঝিয়ে দিয়ে ঘরে যেতেই বিল্টু বলে-
আচ্ছা দাদু, একটা কথা সত্যি করে বলতো-তুমি কি বাজারের পয়সা মারিং-তারিং করো নাকি? না, এটা আমার কথা না, তবে দাদি তোমাকে যে ভাবে...কথা শেষ করেনা। তবে আমার কঠিন চেহারা দেখে বিল্টু হেসে বলে-
না আমাকে নিশ্চিত বলতে পারো। দাদিকে কিছুই বলবো না। তবে...
তবে কি-রে দুষ্টু?
না, আমাকে মাঝে মাঝে কমিশন দিলে আমি তোমার পক্ষ নিয়ে সব কিছু চেপে যাব।
ঠিক আছে। যে’দিন মারতে পারি সে দিন ভেবে দেখবো। এখন যা আমার সামনে থেকে। এমনিতেই মেজাজ তাওয়ার মতো তেঁতেঁ আছে।
তা হলে একটা ডিম নিয়ে আসি। একটু প্যোচ করে দেবে। দাদির তেলও লাগলো না, গ্যাসও খরচ হলোনা। কি আনবো?
তবে--রে শালা। বলে তেড়ে যেতেই আমাকে ভেংচি কেটে এক দৌড়ে বেড়িয়ে গেল ঘর থেকে।
যদিও তার কথাগুলো দুষ্টমীভরা, এতে যে আমি ভেতরে ভেতরে কতটা অপমানিত হয়েছিল তা বলে আপনাদের বোঝাতে পারবো। এইতো গেল এক দিক। তার পর সকালের নাস্তা হলো কি হলো না, স্কুলের অঙ্ক মাস্টারের মতো আমার দিকে না তাকিয়ে কঠিন সুরে বলবে-
যাও, মিঠুনকে স্কুলে দিয়ে আস। আবার দিয়ে সাথে সাথেই চলে এসেনা। কতক্ষণ বসে থেকে তিতলিকে নিয়ে এসো।
সরকার দুই সিপ্টে স্কুল চালুর পর থেকে এ হয়েছে আরেক বিরম্বনা। আগে দু’ভাই-বোনের এক সাথে ক্লাস বসলেও দুই সিপ্ট চালু হওয়ার পর দুইজনকে দুইবার আনা নেওয়া করতে হয়। কি যে সমস্যা হয়েছে, বুড়ো মানুষ একটু যদি শান্তি পাই। আবার ভাবী, বেকার মানুষ বসে বসে যা গিলছি, একটু আধটু ফুট-ফরমাস খাটিয়ে যতটুকু পারছে উসুল করে নিচ্ছে হয়তো।
তৈয়বার যে কি হলো! নিজের সহধর্মিনী একটা তুচ্ছ কারণেও রাগারাগী করে একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। আর আমার সাথেতো শত্রুর মতো আচরণ করে প্রায়ই। আমি যেন তার অজন্মশত্রু। কোনো কথাই সে আমার সহ্য করতে পারে না। কথায় কথায় কত যে দোষ খুঁজবে! শোবার ঘর থেকে বাথরুম সবত্রই আমার একটা না একটা দোষ খোঁজার জন্য সারাবেলা যেনো দূরবীণ নিয়ে ঘুরে বেড়ায় সে। যে ভাবেই হোক আমার একটা না একট দোষ যেনো তার চাই ই চাই। ঘুম থেকে ওঠে বাথরুমে গেলাম তো শুনছি-
‘বিছানাটা যে গড়ের মাঠ করে রেখেছে তা কি একটু খেয়াল করবে না। নাকি ঘরে যে বিনে পয়সার একজন ঝি আছে তার জন্যে সব এমন করে রাখা হয়েছে?’
বাথরুম থেকে বেড়–তে না বেড়–তেই পুলিশের খানাতল্লাসির মতো খোঁজাখোজি-বাথরুম ভিজিয়ে আসা হলো কি-না? কমোট যথাযথ পরিস্কার করা হয়েছে কি না, নাকি ভাসান দিয়ে আশা হয়েছে। বেসিনটা পরিস্কার হলো না কেশে-কুশে জমিয়ে রেখে আসা হয়েছে; টয়লেট ব্যবহারের পর এয়ার ফ্রেসনার ছিটিয়ে দুগন্ধ নাশ করে আসা হয়েছে কি-না যতসব চেচামেচি কটু কথা।
বলতে গেলে তার ভয়েই সারাবেলা যেনো পোষা সারমেয়র মতো কুইকুই করি। তাই যতটুকু পরিস্কার পরিচ্ছন্ন বা গুছিয়ে গাছিয়ে চলার তার কোনো ত্রুটি কখনো থাকে না আমার; তবু অসতর্কতার কারণে কখনো-সখনো পান থেকে চুন খসলো কি শুরু হলো চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার।
আমি যেহেতু পাথরমানুষ নই রক্তমাংসের মানুষ তাই এসব শুনতে যেয়ে মাঝে মাঝে রিএ্যাক্ট করে আমারও। যেই না আমি এ নিয়ে দু’চার কথা বলেছি, তা হলেতো সেরেছেই। চেচামেচি চিল্লা-চিল্লী করে সারা বাড়ি মাথায় তুলবে; শুরু হবে তুলকালাম কান্ড। একদিন রিএ্যাক্ট করে যেই না বলে ফেলেছি-
সারাদিন তোমার এসব কেচরমেচর চিল্লাচিল্লি শুনতে আমার আর ভালো লাগে না। আমার ঘর আলাদা করে দাও, আমি আমার মতো থাকবো। তোমার মধ্যে যে সুচিবাই দেখা দিয়েছে তাতে তোমার সাথে বিছানা থেকে শুরুকরে বাথরুম ডাইনি টেবিল কোনো কিছুই আর শেয়ার করা ঠিক নয়। তুমি থাক তোমার মতো, আমি আমার মতো। রোজদিন তোমার এসব প্যাঁচাল ক্যাচাল শুনতে আর ভাল লাগেনা।
কথা শেষ করশে পেরেছি কি পারিনি সে বিবেচনায় না গিয়েই শুরু করলো বস্তাপঁচা ডায়লগ-
বুড়োকালে ভিমরতি ধরেছে। আমার সাথে এক বিছানায় শু’তে আর ভাল লাগেনা। হাঙ্গা করার সখ আইছে। রাখ তোমার শখ আমি মিটাবো। অসৎ কোথাকার...।
কিন্তু বেশী এগুতে পারলনা। বিন্তী হঠাৎ করে ঘরে ঢুকে আগুনের চুলায় পানি ঢেলে দিল। আমি নিস্কৃতি পেলাম অনাকাংখিত একটা পরিস্থিতির হাত থেকে। ঘরে ঢুকেই বিন্তী বলে-
কি? আবারো কাঁকরা বিছার ঝগড়া লেগেছো দুইজনে। তোমাদের নিয়ে যে কি করি। না তোমাদের সাথে এক ছাদের নিচে থাকা বোধহয় আর সম্ভব হচ্ছে না। মা, তোমার কি কখনো...। বাবা এক কাজ করো গাজীপুরে একটা ভাল বৃদ্ধাশ্রম আছে, সেখানেই তোমার চলে যাওয়া ব্যাটার। কথাটা মাটিতে পড়ার আগেই তৈয়বার চিৎকার -
এই ব্যারিস্টারের ঘরের ব্যারিস্টার। ব্যালেন্স করে কথা বলতে আসবি না। বাপসোহাগীর, বাপসোহাগী। কোথাকার।
ওমা! এখানে বাপসোহাগীর কি দেখলে। বাবা, আমি কি খারাপ কিছু বলেছি! আমাকে সাক্ষী মানার মতো করে বলে বিন্তী?
আমি বিন্তীর এ কথার কোনো উত্তর দিতে পারছি না। সে ই বলে যাচ্ছে-
চুপ আর একটা কথাও বলবি না। তোকে আমার চেনা আছে। যা এক্ষণি ভাগ এখান থেকে।
এই কথায় বিন্তীর বেশ প্রতিক্রিয়া হয় সে একটু উচ্চগ্রামে বলে-
আসলে মা তুমি একটা সাইকো। তোমার মেন্টাল সমস্যা আছে। অতিসত্বর সাইক্রিয়াস্টিক দেখানো দরকার। না হলে...
এই নিমখহারাম। না হলে কি...? বলেই সুপারীর ডিবিটা ছুড়ে মারে বিন্তীর ওপর। অল্পের জন্য রক্ষা, লাগে গিয়ে দেয়ালে। বিন্তী কোন কথা না বাড়িয়ে তার হাতের নোটবুকটি ছুড়ে ফেলে দিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।
ছোট বউ মলি দৌড়ে এসে তৈয়বাকে শান্ত করার চেষ্টা করে-
মা থামুনতো। এ বয়সে ঝগড়া-ঝাটি করলে আশপাশের মানুষ কি ভাববে, বলুনতো। আর দাঁড়ায় না মলি চোখে-মুখে একটা বিরক্তির ভাব প্রকাশ করে মলিও বেরিয়ে যায়।
এই সংসারে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে শুধু বিন্তীর কারণেই আমি বেঁচে আছি, না হয় কবেই এই সংসার ছেড়ে বিবাগী হতাম। একজন মানুষ যখন তার পরিবারের বোঝায় পরিনত হয়, তখন তার বিবাগী হওয়ার ছাড়া আর কি ই বা করার থাকে। নিজের সব কিছু ক্ষুইয়ে আমিও আজ পরিবারের মস্ত বোঝায় পরিনত হয়েছি। কোন কিছু একটা ফরমাইশ করে যদি সময়মত পাওয়া যায়। সে’দিন পেটটা হঠাৎ করেই নেমে গেল। হিসেবের বাইরে তেমনতো কিছু খাইওনি। তবু যে কেন এমন হলো, কিছুতেই কিছু বোঝতে পারলাম না। এ নিয়ে তৈয়বার কত কথা-
এই বুড়া বয়সে মুখ সামলাতে না পারলে এমনই হবে। আমি কারো গু-মুত সাফ করতে পারবো। এখনও একটা কিছু পেলতো গোগ্রাসে গেলা শুরু করলো। বাপ্রে বাপ্।
শরীরেই বা দোষ কি; অসুদ শেষ হয়ে গেলে বার বার অসুদ আনার তাগাদা দিলেও অসুদ আসছে না। এ দেয় ওর ওপর দোষ, আর ও দেয় এর ওপরে দোষ। এই দোষাদোষির ঠেলায় পড়ে আমি আজ চিড়েচেপ্টা। অনিয়মিত অসুদ সেবনের কারণে প্রায়ই বিগড়ে যাচ্ছে শরীর। মাঝে মাঝে মনে হয় ঝুলে যাই। কিন্তু মেয়েটার কথা মনে হলেই আর পারি না। এখন আমার কোনো পিছুটান নেই এই একটাই পিছুটান। শুধু বিন্তী। তা ছাড়া বয়সও তো একটা ফ্যাক্টর। এই বয়সেই নাকি মানুষের তার জীবনের প্রতি মায়া আরো বেড়ে যায়। যদি আর ক’টা দিন এই পৃথিবীর রঙ-রূপ দেখে যাওয়া যায়। এই সময়টাতেই মানুষকে বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছা পেয়ে বসে। হয়তো আমারও হয়েছে তাই। তাছাড়া বললেইতো আর ঝুলে যাওয়া যায় না। এর জন্য মানসিক শক্তিও দরকার। এর পাশাপাশি পরিবারের জন্যও একটা সুক্ষ্ম আবেগ জড়িয়ে থাকে মনে। এই বয়সে আত্মহত্যা করলেও পরিবারের সবাই একেবারে পঁচে মাটির সাথে মিশে যাবে। এই নানাবিদ কারণেই ঝুলে যাওয়ার ইচ্ছেটাকে মুলতবী রাখতে হয়।
তা ছাড়া মেয়েটার একটা বিহিত না করে কোথাও যাই কি করে? অনার্সটাও শেষ হচ্ছে না। চার বছরের অনার্স কোর্স ছয় বছরের শেষ হলো না। অনার্সটা শেষ হলে একটা ভাল ছেলে দেখে ওকে বিয়ে দিতে পারলেই আমার নিস্তার।
স্কুল বোধ হয় বিরতি। ঘরের বারান্দায় বসে একটু দূরের প্রাইমারি স্কুলের মাঠে ছেলে-মেয়েদের খেলাধূলা, দৌড়াদৌড়ি দেখতে দেখতে ভাবেন আবুল কাশেম সাহেব। জুট বোর্ড-এর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। বছর দশেক হতে চললো তিনি চাকুরী থেকে অবসর পেয়েছেন। এখন পুরোপুরি বেকার। পেনসন ও গেইচ্যুয়েটি মিলে বেশ ভাল একটা এ্যামাউন্টই তিনি পেয়েছিলেন। তারপর আরো দুই বছর পরে পেনশন পুরোপুরি বিক্রি করে, ছোট ছেলের ব্যবসা ও দ্বিতীয় মেয়ে বিয়ের কাজ সারেন তিনি। এখন একেবারের কপর্দকহীন। কিন্তু তার স্ত্রী তৈয়বার ধারণা, কাশেম সাহেবের আরো কিছু টাকা পয়সা আছে, যা হয়তো তিনি লুকিয়ে রেখেছেন।
তবে তিনি লুকিয়ে-লাকিয়ে এককানা কড়িও রাখেননি। একটা এ্যামাউন্ট একেবারে নাই করে রেখে দিয়েছেন, ছোট মেয়ে বিন্তীর বিয়ের জন্য। ভাইয়েদের যে অবস্থা তারা নিজেদের অভাব অনটনের কথা বয়ান করে বোনের বিয়েতে কোন টাকা পয়সা দেবে বলে মনে হয়না। তাই মেয়ের জন্য যক্ষের ধনের মতো কিছু টাকা আলাদা করে রেখেছেন।
এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করেই কাশেম সাহেবের সারা শরীর কেমন দুলে ওঠে। তবে কি ভূমিকম্প হচ্ছে? এদিক ওদিক বড় বড় করে তাকান কাশেম সাহেব। না ভূমিকম্পনাতো। এবার আরো বেশী করে দুলে ওঠে শরীর। কেমন চিকন ঘাম দিচ্ছে সমস্ত শরীরে। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে সারা মুখে। কাশেম সাহেব বেশ বুঝতে পারেন শরীরের অবস্থা। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে কেন। এখন নিজেদের বাসাসহ আশপাশের সব বাসায় ঘুরছে। বিন্তী বলেই জোরে ডাক দিয়ে ওঠে দাঁড়াতে চান কাশেম সাহেব। বিন্তী আসতে আসতেই চেয়ারশুদ্ধ উল্টে মাটিতে পড়ে যান কাশেম সাহেব। বিন্তী এসে বাবার এ অবস্থা দেখে চিৎকার শুর করে। চিৎকার শুনে দৌড়ে আসে মলি। তার পিছু পিছু দৌঁড়ে আসে তৈয়বা বেগমও।
তখন কাশেম সাহেবের সারা শরীর ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে যাচ্ছে। তিনি কিছুই বলতে পারছেন না। শুধু চোখ বড় করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখেন সবার মুখ। এক মুহূর্ত দেরি করে না বিন্তী। সে দৌড়ে ছুটে যায় একটা নিকটবর্তী ক্লিনিকে। বিন্তী’র বাবার এ অবস্থাটা বেশ ভাল করে জানা। আগেও এমন হয়েছে দুই বার। ডাক্তাররা এটাকে বলেছে এ্যসকিমিয়া। হার্টএটাকেরই একটা পর্যায়। ডাক্তারসহ এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসে বিন্তী। যদি হসপিটেলাইড করতে হয়?
ডাক্তার এসে প্রাথমিক পরীক্ষা করে অনেকটা ভয়ার্ত কন্ঠে বলেন-
আর এক মিনিটও দেরি করা যাবে না। এক্ষণি, হাসপাতালে ভর্তি করে অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে হবে।
ঘরহরিয়ে অনেক বমি করেন কাশেম সাহেব। তার চোখ যুগল যেন উল্টে যেতে চাইছে।
কেমন এক ভয়ার্ত চিৎকার করতে করতে কাশেম সাহেবকে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে এ্যাম্বুলেন্সটি।


ঘরের বারান্দায় বসে নিমগ্ন হয়ে নানা কথা ভাবছিলেন কাশেম সাহেব। হঠাৎ তার মন ছুটে যায় দুরন্ত শৈশব ও কৈশোরের সেই মধুময় দিনে। মাঠের পাটক্ষেত ও বিভিন্ন ফসলীক্ষেত মাড়িয়ে আবুল কাশেম সাহেব এখন একটা রঙিন ঘুড়ি নিয়ে দৌড়াচ্ছে। তার পিছু পিছু দৌড়াছে আরো কিছু ছেলেপুলে। এই ঢিল ছুড়ছেন কারো বড়ই গাছে, নয়তো চড়ে বসেছেন কারো আম না হয় পেয়ারা গাছে।
লেখাপড়া, শেষ করেন পাশের গ্রামের স্কুলেই। মেট্টিকুলেশন পাশ করার পরই চাকুরী। নিন্মমান কারনীক থেকে উচ্চমান সহকারী, শেষ-মেষ পেনশনের বছর পাঁচেক আগে পারসেজকর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি। তারপর অবসর। বেশ কিছুদিন থেকেই কাশেম সাহেবের মান বড়ই চঞ্চল ও বিক্ষিপ্ত। নিজের শেষ জীবনের চিন্তার পাশাপাশি মরণচিন্তা তাকে পেয়ে বসেছে। তার মনের কেন এমন হাল, আসুন আমরা জেনে নেই আবুল কাশেম সাহেবের জবানীতেই-
বয়স যত বাড়ছে মেজাজটা তার বড় বেশি খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। তার মানে আমার স্ত্রী তৈয়বার। এই কিছুদিন আগে মাত্র ছেলে-মেয়ে মিলে আমাদের বিয়ে বার্ষিকীর চারদশক পালন করলো। আমরা বিশেষ করে আমি নিজে শুধু সাাক্ষীগোপালের মতো জো-হুকুম বলে সব কিছুই মানিয়ে নিয়েছি। আর ছেলে মেয়েরা যা যা করতে বলেছে তা একটা প্রশিক্ষীত ময়না ও বানরের মতো অনুসরণ করে গেছি।
এই যেমন-‘ময়না আল্লা ক’ বা ‘দেখা মুক্তির মরা পাঞ্জাবীর মরা’-এর মতো। অথবা স্কুলের ফিজিক্যাল টিচারের কমান্ডের মতো-‘বায়ে-ঘুর, ডাইনে-ঘুর, বাম-ডান, বাম-ডান বামডান বাম’এর মতো। এছাড়া যে আমার কোনো উপায় নেই। এখন তাদের কথা মতো না চললে ব্যাকডেটেড অমুক তমুক কত যে খিস্তিখেউর শুনতে হয় সে কষ্টের কথা বলার মতো আমার যে কেউ সমব্যাথী নেই। না বউ, না ছেলে-মেয়ে। এ জন্যে তৈয়বার একটা সুক্ষ্ম চাল আছে। আর সে চালটা হলো অগোচরে সে ছেলে-মেয়ে-বউ-ঝিদের কাছে আমার সম্মন্ধে বিরূপ মন্তব্য করে করে সবার মধ্যে একটা ভয় ও নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি করে রেখেছে।
একদিন চায়ের কথা বলতে রান্নাঘরে উঁকি দিতেই শুনি তৈয়বা আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কথা বলে ছোট বউয়ের কান পাকাচ্ছে। কি কথা বলা হচ্ছে শুনার জন্য কান খাড়া করতেই শুনি-
তোমরাতো জাননা বউ মা, এই লোকটা এই জীবনে আমায় কত জ্বালিয়েছে। জা’য়েদের কান কথায় বিশ্বাস করে আমাকে অযথা গালমন্দ করেছে। যা রোজগার করেছে তার সিংহভাগই দিয়ে দিয়েছে মা-বাবা-ভাই-বোনদের জন্য। এ ব্যাপারে কোন কথা তুললেই আমাকে দিয়েছে না না অপবাদ, আমি নাকি চাইনা সে তার পরিবারের জন্য খরচপাতি করুক। এ নিয়ে কত যে ঝগড়া-ঝাটি মনমালিন্য তা বলে শেষ করা যাবে না। এই হলো আমার কপাল। এই বুড়ো বয়সেও যে একটু শান্তিতে থাকবো তারও জো নেই। এটা সেটা নিয়ে একটা না সমস্যার সৃষ্টি করবে।
কান আরো একটু লম্বা করতেই শুনি ছোট বউ বলছে-
কই মা, বাবাকে দেখেতো কিছুতেই এমন মনে হয়না। সহজ সরল মানুষ, কারো সাতেপাঁচে নেই। তাছাড়া বাবার পেনশনের সব টাকাতো ছেলে-মেয়েদের হাতেই তুলে দিল। শুনলাম, আপনার নামেও নাকি এক লাখ টাকা এফডিআর করে দিয়েছে। আর নাতি-নাতনী ও ছেলেদের বউদের জন্যও তো সাধ্য মতো সব কিছুই করেন...।
মলি কথা শেষ করার আগেই তৈয়বা ছোঁ মেরে কথা কেড়ে নিয়ে বলে-
এই দেখ, একেবারে মিথ্যে কথা। ভন্ডামী। আমার নামে পঞ্চাশ হাজার টাকার এফডিআর করে সবাইকে বলে বেড়ায় এক লাখ।
তা হলে মা আমার শুনতে কোন ভুল হয়েছে। স্যরি।
না থাক স্যরি বলতে হবে না। তুমি যা শুনেছ তাই বলেছো এতে স্যরি বলার কি আছে।
কড়াইয়ে খুন্তি দিয়ে মাছ উল্টাতে উল্টাতে আবার বলে-
আরে আমি জীবনে যা কষ্ট করেছি এর তুলনায়তো এ টাকা পানিভাতও না। আমি যদি ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করিয়ে মানুষ না করতাম, তা হলে তার ভাইদের ছেলেদের মতো সব মূর্খ থেকে যেত। সেতো মাসে মাসে বেতনের কিছু টাকা আমার হাতে গুজে দিয়ে মনে করেছে তার কর্তব্য পালন শেষ। আর আমি সারা জীবন ঝি-গিরি করে করে সংসারটা যে এ পর্যন্ত টেনে আনলাম, তার কি কোনো মূল্য নেই।
না মা, মূল্য থাকবে না কেন? অবশ্যই আছে। আপনি কষ্ট না করলেতো সংসারের এতটুকু হতো না।
সেদিন এইসব কথা শুনে চা-খাওয়ার ইচ্ছাটাকে বেত্রাঘাত করে ফিরে এসেছিলাম।
আবার শুরু হয়েছে নতুন যন্ত্রনা। আগে যা ও একটু ভাল মন্দ খেতে পারতাম, রক্তে সুগার ও কোলস্টারেল ধরা পড়ার পর তাও বন্ধ হবার উপক্রম। এ উছিলায় এটা সেটা খেতে চাইলে সবাই শাসন করা শুরু করে। মিষ্টি খেয়না সুগার বেড়ে যাবে। রেডমিট মানে গরু খাসির মাংস খেওনা কোলস্টারেল আরো বেড়ে যাবে। আপনারাই বলুন! ঈদে-চান্দে একটু আধটুও মিষ্টি জাতীয় খাবার বা মাংস টাংস না খেয়ে কী থাকা যায়? ওই গো মাংসটা পছন্দ ছিলো তাও খেতে দিচ্ছেনা এ্যসকিমিক এ্যাটাকের পর। সিগারেট খেওনা হার্ট এ্যাটাক হয়ে যাবে। আরো যে কত কি তা বললে একটা ইতিহাসের বই হয়ে যাবে।
আর আমার মতো মানুষের ইতিহাসের বই ই বা হবে কেন? আমিতো আর রাজা-বাদশা বা দেশের প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট না। আমি হলেম গিয়ে ব্যর্থ জীবনের এক পরাজিত সৈনিক। ঢাল তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দার। আমার কি হলো না হলো তাতে তো কারো কিছু আসে যায় না।
তাই আজ আমি বড় একা, নিজগৃহে পরবাসি এক অনাকাঙ্খিত মানুষ। এক কথায় বলতে গেলে ‘বাতিল মাল’। এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণের পর পেনশন বিক্রি করে এককালীন টাকা উঠিয়ে সব কিছু সবার মধ্যে বিলিয়ে দেবার পর। ছেলের এটা সেটা, মেয়ের বিবাহের যাবতীয় খরচ, নাতি-নাতনীদের আব্দার, পুত্রবধূর সখ মিটিয়ে মাটিয়ে এখন আমি কপর্দকহীন শূন্য এক নিঃস্ব বেকার মানুষ। এক সময় ভেবেছি, শেষ বয়সে ওরাইতো আমার সব। খাওয়াবে। পরাবে। হাত খরচা দেবে। আমার কাছে টাকা পয়সা রেখে কী লাভ। কিন্তু এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি কি ভুলটাই না করে বসে আছি। আমার সব টাকা খরচ করিয়ে এখন সবাই বুড়ো আঙ্গুল দেখাচ্ছে।
বর্তমানে আমি হলাম গিয়া এই সংসারের পেটেভাতের ‘আবদুল’ সকাল হলেই বাজারের থলে নিয়ে বাজারে যাওয়া। বাজার থেকে ফিরে এসে তৈয়বাকে পই পই করে হিসেব বুঝিয়ে দেয়া। একটু এদিক সেদিক হলেও পুলিশী জেরা। এটা এত দাম হলো কেন। এই মালটা এত পঁচা-বাসি কেন। যদিও ছোট লোকের মতো বলতে পারেনা আমি বাজারে গিয়ে টাকা পয়সা মেরে দিই কিন্তু ভাবখানা এমন তা আর বলে বোঝাতে হয়না।
সে’দিন বাজার থেকে ফেরার পরে দশম শ্রেণীর নাতি বিল্টু তার দাদির অব্যাহত জেরা দেখে মুচকি হেসে আমার ঘরের দিকে চলে যায়। হিসেব বুঝিয়ে দিয়ে ঘরে যেতেই বিল্টু বলে-
আচ্ছা দাদু, একটা কথা সত্যি করে বলতো-তুমি কি বাজারের পয়সা মারিং-তারিং করো নাকি? না, এটা আমার কথা না, তবে দাদি তোমাকে যে ভাবে...কথা শেষ করেনা। তবে আমার কঠিন চেহারা দেখে বিল্টু হেসে বলে-
না আমাকে নিশ্চিত বলতে পারো। দাদিকে কিছুই বলবো না। তবে...
তবে কি-রে দুষ্টু?
না, আমাকে মাঝে মাঝে কমিশন দিলে আমি তোমার পক্ষ নিয়ে সব কিছু চেপে যাব।
ঠিক আছে। যে’দিন মারতে পারি সে দিন ভেবে দেখবো। এখন যা আমার সামনে থেকে। এমনিতেই মেজাজ তাওয়ার মতো তেঁতেঁ আছে।
তা হলে একটা ডিম নিয়ে আসি। একটু প্যোচ করে দেবে। দাদির তেলও লাগলো না, গ্যাসও খরচ হলোনা। কি আনবো?
তবে--রে শালা। বলে তেড়ে যেতেই আমাকে ভেংচি কেটে এক দৌড়ে বেড়িয়ে গেল ঘর থেকে।
যদিও তার কথাগুলো দুষ্টমীভরা, এতে যে আমি ভেতরে ভেতরে কতটা অপমানিত হয়েছিল তা বলে আপনাদের বোঝাতে পারবো। এইতো গেল এক দিক। তার পর সকালের নাস্তা হলো কি হলো না, স্কুলের অঙ্ক মাস্টারের মতো আমার দিকে না তাকিয়ে কঠিন সুরে বলবে-
যাও, মিঠুনকে স্কুলে দিয়ে আস। আবার দিয়ে সাথে সাথেই চলে এসেনা। কতক্ষণ বসে থেকে তিতলিকে নিয়ে এসো।
সরকার দুই সিপ্টে স্কুল চালুর পর থেকে এ হয়েছে আরেক বিরম্বনা। আগে দু’ভাই-বোনের এক সাথে ক্লাস বসলেও দুই সিপ্ট চালু হওয়ার পর দুইজনকে দুইবার আনা নেওয়া করতে হয়। কি যে সমস্যা হয়েছে, বুড়ো মানুষ একটু যদি শান্তি পাই। আবার ভাবী, বেকার মানুষ বসে বসে যা গিলছি, একটু আধটু ফুট-ফরমাস খাটিয়ে যতটুকু পারছে উসুল করে নিচ্ছে হয়তো।
তৈয়বার যে কি হলো! নিজের সহধর্মিনী একটা তুচ্ছ কারণেও রাগারাগী করে একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। আর আমার সাথেতো শত্রুর মতো আচরণ করে প্রায়ই। আমি যেন তার অজন্মশত্রু। কোনো কথাই সে আমার সহ্য করতে পারে না। কথায় কথায় কত যে দোষ খুঁজবে! শোবার ঘর থেকে বাথরুম সবত্রই আমার একটা না একটা দোষ খোঁজার জন্য সারাবেলা যেনো দূরবীণ নিয়ে ঘুরে বেড়ায় সে। যে ভাবেই হোক আমার একটা না একট দোষ যেনো তার চাই ই চাই। ঘুম থেকে ওঠে বাথরুমে গেলাম তো শুনছি-
‘বিছানাটা যে গড়ের মাঠ করে রেখেছে তা কি একটু খেয়াল করবে না। নাকি ঘরে যে বিনে পয়সার একজন ঝি আছে তার জন্যে সব এমন করে রাখা হয়েছে?’
বাথরুম থেকে বেড়–তে না বেড়–তেই পুলিশের খানাতল্লাসির মতো খোঁজাখোজি-বাথরুম ভিজিয়ে আসা হলো কি-না? কমোট যথাযথ পরিস্কার করা হয়েছে কি না, নাকি ভাসান দিয়ে আশা হয়েছে। বেসিনটা পরিস্কার হলো না কেশে-কুশে জমিয়ে রেখে আসা হয়েছে; টয়লেট ব্যবহারের পর এয়ার ফ্রেসনার ছিটিয়ে দুগন্ধ নাশ করে আসা হয়েছে কি-না যতসব চেচামেচি কটু কথা।
বলতে গেলে তার ভয়েই সারাবেলা যেনো পোষা সারমেয়র মতো কুইকুই করি। তাই যতটুকু পরিস্কার পরিচ্ছন্ন বা গুছিয়ে গাছিয়ে চলার তার কোনো ত্রুটি কখনো থাকে না আমার; তবু অসতর্কতার কারণে কখনো-সখনো পান থেকে চুন খসলো কি শুরু হলো চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার।
আমি যেহেতু পাথরমানুষ নই রক্তমাংসের মানুষ তাই এসব শুনতে যেয়ে মাঝে মাঝে রিএ্যাক্ট করে আমারও। যেই না আমি এ নিয়ে দু’চার কথা বলেছি, তা হলেতো সেরেছেই। চেচামেচি চিল্লা-চিল্লী করে সারা বাড়ি মাথায় তুলবে; শুরু হবে তুলকালাম কান্ড। একদিন রিএ্যাক্ট করে যেই না বলে ফেলেছি-
সারাদিন তোমার এসব কেচরমেচর চিল্লাচিল্লি শুনতে আমার আর ভালো লাগে না। আমার ঘর আলাদা করে দাও, আমি আমার মতো থাকবো। তোমার মধ্যে যে সুচিবাই দেখা দিয়েছে তাতে তোমার সাথে বিছানা থেকে শুরুকরে বাথরুম ডাইনি টেবিল কোনো কিছুই আর শেয়ার করা ঠিক নয়। তুমি থাক তোমার মতো, আমি আমার মতো। রোজদিন তোমার এসব প্যাঁচাল ক্যাচাল শুনতে আর ভাল লাগেনা।
কথা শেষ করশে পেরেছি কি পারিনি সে বিবেচনায় না গিয়েই শুরু করলো বস্তাপঁচা ডায়লগ-
বুড়োকালে ভিমরতি ধরেছে। আমার সাথে এক বিছানায় শু’তে আর ভাল লাগেনা। হাঙ্গা করার সখ আইছে। রাখ তোমার শখ আমি মিটাবো। অসৎ কোথাকার...।
কিন্তু বেশী এগুতে পারলনা। বিন্তী হঠাৎ করে ঘরে ঢুকে আগুনের চুলায় পানি ঢেলে দিল। আমি নিস্কৃতি পেলাম অনাকাংখিত একটা পরিস্থিতির হাত থেকে। ঘরে ঢুকেই বিন্তী বলে-
কি? আবারো কাঁকরা বিছার ঝগড়া লেগেছো দুইজনে। তোমাদের নিয়ে যে কি করি। না তোমাদের সাথে এক ছাদের নিচে থাকা বোধহয় আর সম্ভব হচ্ছে না। মা, তোমার কি কখনো...। বাবা এক কাজ করো গাজীপুরে একটা ভাল বৃদ্ধাশ্রম আছে, সেখানেই তোমার চলে যাওয়া ব্যাটার। কথাটা মাটিতে পড়ার আগেই তৈয়বার চিৎকার -
এই ব্যারিস্টারের ঘরের ব্যারিস্টার। ব্যালেন্স করে কথা বলতে আসবি না। বাপসোহাগীর, বাপসোহাগী। কোথাকার।
ওমা! এখানে বাপসোহাগীর কি দেখলে। বাবা, আমি কি খারাপ কিছু বলেছি! আমাকে সাক্ষী মানার মতো করে বলে বিন্তী?
আমি বিন্তীর এ কথার কোনো উত্তর দিতে পারছি না। সে ই বলে যাচ্ছে-
চুপ আর একটা কথাও বলবি না। তোকে আমার চেনা আছে। যা এক্ষণি ভাগ এখান থেকে।
এই কথায় বিন্তীর বেশ প্রতিক্রিয়া হয় সে একটু উচ্চগ্রামে বলে-
আসলে মা তুমি একটা সাইকো। তোমার মেন্টাল সমস্যা আছে। অতিসত্বর সাইক্রিয়াস্টিক দেখানো দরকার। না হলে...
এই নিমখহারাম। না হলে কি...? বলেই সুপারীর ডিবিটা ছুড়ে মারে বিন্তীর ওপর। অল্পের জন্য রক্ষা, লাগে গিয়ে দেয়ালে। বিন্তী কোন কথা না বাড়িয়ে তার হাতের নোটবুকটি ছুড়ে ফেলে দিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।
ছোট বউ মলি দৌড়ে এসে তৈয়বাকে শান্ত করার চেষ্টা করে-
মা থামুনতো। এ বয়সে ঝগড়া-ঝাটি করলে আশপাশের মানুষ কি ভাববে, বলুনতো। আর দাঁড়ায় না মলি চোখে-মুখে একটা বিরক্তির ভাব প্রকাশ করে মলিও বেরিয়ে যায়।
এই সংসারে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে শুধু বিন্তীর কারণেই আমি বেঁচে আছি, না হয় কবেই এই সংসার ছেড়ে বিবাগী হতাম। একজন মানুষ যখন তার পরিবারের বোঝায় পরিনত হয়, তখন তার বিবাগী হওয়ার ছাড়া আর কি ই বা করার থাকে। নিজের সব কিছু ক্ষুইয়ে আমিও আজ পরিবারের মস্ত বোঝায় পরিনত হয়েছি। কোন কিছু একটা ফরমাইশ করে যদি সময়মত পাওয়া যায়। সে’দিন পেটটা হঠাৎ করেই নেমে গেল। হিসেবের বাইরে তেমনতো কিছু খাইওনি। তবু যে কেন এমন হলো, কিছুতেই কিছু বোঝতে পারলাম না। এ নিয়ে তৈয়বার কত কথা-
এই বুড়া বয়সে মুখ সামলাতে না পারলে এমনই হবে। আমি কারো গু-মুত সাফ করতে পারবো। এখনও একটা কিছু পেলতো গোগ্রাসে গেলা শুরু করলো। বাপ্রে বাপ্।
শরীরেই বা দোষ কি; অসুদ শেষ হয়ে গেলে বার বার অসুদ আনার তাগাদা দিলেও অসুদ আসছে না। এ দেয় ওর ওপর দোষ, আর ও দেয় এর ওপরে দোষ। এই দোষাদোষির ঠেলায় পড়ে আমি আজ চিড়েচেপ্টা। অনিয়মিত অসুদ সেবনের কারণে প্রায়ই বিগড়ে যাচ্ছে শরীর। মাঝে মাঝে মনে হয় ঝুলে যাই। কিন্তু মেয়েটার কথা মনে হলেই আর পারি না। এখন আমার কোনো পিছুটান নেই এই একটাই পিছুটান। শুধু বিন্তী। তা ছাড়া বয়সও তো একটা ফ্যাক্টর। এই বয়সেই নাকি মানুষের তার জীবনের প্রতি মায়া আরো বেড়ে যায়। যদি আর ক’টা দিন এই পৃথিবীর রঙ-রূপ দেখে যাওয়া যায়। এই সময়টাতেই মানুষকে বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছা পেয়ে বসে। হয়তো আমারও হয়েছে তাই। তাছাড়া বললেইতো আর ঝুলে যাওয়া যায় না। এর জন্য মানসিক শক্তিও দরকার। এর পাশাপাশি পরিবারের জন্যও একটা সুক্ষ্ম আবেগ জড়িয়ে থাকে মনে। এই বয়সে আত্মহত্যা করলেও পরিবারের সবাই একেবারে পঁচে মাটির সাথে মিশে যাবে। এই নানাবিদ কারণেই ঝুলে যাওয়ার ইচ্ছেটাকে মুলতবী রাখতে হয়।
তা ছাড়া মেয়েটার একটা বিহিত না করে কোথাও যাই কি করে? অনার্সটাও শেষ হচ্ছে না। চার বছরের অনার্স কোর্স ছয় বছরের শেষ হলো না। অনার্সটা শেষ হলে একটা ভাল ছেলে দেখে ওকে বিয়ে দিতে পারলেই আমার নিস্তার।
স্কুল বোধ হয় বিরতি। ঘরের বারান্দায় বসে একটু দূরের প্রাইমারি স্কুলের মাঠে ছেলে-মেয়েদের খেলাধূলা, দৌড়াদৌড়ি দেখতে দেখতে ভাবেন আবুল কাশেম সাহেব। জুট বোর্ড-এর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। বছর দশেক হতে চললো তিনি চাকুরী থেকে অবসর পেয়েছেন। এখন পুরোপুরি বেকার। পেনসন ও গেইচ্যুয়েটি মিলে বেশ ভাল একটা এ্যামাউন্টই তিনি পেয়েছিলেন। তারপর আরো দুই বছর পরে পেনশন পুরোপুরি বিক্রি করে, ছোট ছেলের ব্যবসা ও দ্বিতীয় মেয়ে বিয়ের কাজ সারেন তিনি। এখন একেবারের কপর্দকহীন। কিন্তু তার স্ত্রী তৈয়বার ধারণা, কাশেম সাহেবের আরো কিছু টাকা পয়সা আছে, যা হয়তো তিনি লুকিয়ে রেখেছেন।
তবে তিনি লুকিয়ে-লাকিয়ে এককানা কড়িও রাখেননি। একটা এ্যামাউন্ট একেবারে নাই করে রেখে দিয়েছেন, ছোট মেয়ে বিন্তীর বিয়ের জন্য। ভাইয়েদের যে অবস্থা তারা নিজেদের অভাব অনটনের কথা বয়ান করে বোনের বিয়েতে কোন টাকা পয়সা দেবে বলে মনে হয়না। তাই মেয়ের জন্য যক্ষের ধনের মতো কিছু টাকা আলাদা করে রেখেছেন।
এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করেই কাশেম সাহেবের সারা শরীর কেমন দুলে ওঠে। তবে কি ভূমিকম্প হচ্ছে? এদিক ওদিক বড় বড় করে তাকান কাশেম সাহেব। না ভূমিকম্পনাতো। এবার আরো বেশী করে দুলে ওঠে শরীর। কেমন চিকন ঘাম দিচ্ছে সমস্ত শরীরে। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে সারা মুখে। কাশেম সাহেব বেশ বুঝতে পারেন শরীরের অবস্থা। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে কেন। এখন নিজেদের বাসাসহ আশপাশের সব বাসায় ঘুরছে। বিন্তী বলেই জোরে ডাক দিয়ে ওঠে দাঁড়াতে চান কাশেম সাহেব। বিন্তী আসতে আসতেই চেয়ারশুদ্ধ উল্টে মাটিতে পড়ে যান কাশেম সাহেব। বিন্তী এসে বাবার এ অবস্থা দেখে চিৎকার শুর করে। চিৎকার শুনে দৌড়ে আসে মলি। তার পিছু পিছু দৌঁড়ে আসে তৈয়বা বেগমও।
তখন কাশেম সাহেবের সারা শরীর ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে যাচ্ছে। তিনি কিছুই বলতে পারছেন না। শুধু চোখ বড় করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখেন সবার মুখ। এক মুহূর্ত দেরি করে না বিন্তী। সে দৌড়ে ছুটে যায় একটা নিকটবর্তী ক্লিনিকে। বিন্তী’র বাবার এ অবস্থাটা বেশ ভাল করে জানা। আগেও এমন হয়েছে দুই বার। ডাক্তাররা এটাকে বলেছে এ্যসকিমিয়া। হার্টএটাকেরই একটা পর্যায়। ডাক্তারসহ এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসে বিন্তী। যদি হসপিটেলাইড করতে হয়?
ডাক্তার এসে প্রাথমিক পরীক্ষা করে অনেকটা ভয়ার্ত কন্ঠে বলেন-
আর এক মিনিটও দেরি করা যাবে না। এক্ষণি, হাসপাতালে ভর্তি করে অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে হবে।
ঘরহরিয়ে অনেক বমি করেন কাশেম সাহেব। তার চোখ যুগল যেন উল্টে যেতে চাইছে।
কেমন এক ভয়ার্ত চিৎকার করতে করতে কাশেম সাহেবকে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে এ্যাম্বুলেন্সটি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.