![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মাহবুবুল আলমের জীবন সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত জন্ম ও বংশ: কবি-কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও শিক্ষাবিদ মাহবুবুল আলম, ১৯৫৯ খ্রীষ্টাব্দের ১ জানুয়ারী, কুমিল্লা জেলার তিতাস উপজেলাধীন হাইধন কান্দি গ্রামের সম্ভ্রান্ত মোল্লা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও স্বনামধন্য শিক্ষক সাহেব আলী মাস্টার, মা বিদুষী গৃহিনী রাবেয়া খাতুনের নয় সন্তানের মধ্যে মাহবুবুল আলম তাঁদের ষষ্ঠ সন্তান। শিক্ষা: স্থানীয় ইসলামাবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা, পাঁচ পুকুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি, নিমসার জুনাব আলী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে, তেজগাও কলেজ থেকে বি.এ ও এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন। লেখালেখি: সত্তর দশকের গোড়ার দিকে তিনি সিলেট সমাচার, যুগভেরী, বাংলার বার্তাসহ বিভিন্ন পত্রিকা সাময়িকীতে ছড়া, কবিতা গল্প ফিচার লিখে তার সাহিত্য প্রতিভার বিকাশ ঘটান। সাথে সাথে সাহিত্যাঙ্গণের সম্পাদক হিসাবে মৌলভীবাজারের সমসাময়িক সাহিত্যানুরাগীদের মুখপাত্র সাহিত্যের কাগজ ‘প্রসূন’ সম্পাদনা করেন। একজন শিক্ষাবিদ হিসাবে দেশের শিক্ষা বিস্তারেও তিনি নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, সেই লক্ষ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন-সানমুন ক্যাডেট স্কুল এন্ড কলেজ, হলিল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, মিশো মিউজিক কেয়ার প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা: ৩৮। উপন্যাস-৮, কাব্যগ্রন্থ-৯, ছড়ার বই-৩, কলাম সমগ্র-৫, নাটক-৭, গবেষনা-২, শিশুতোষ-২, প্রবন্ধ-নিবন্ধ-২টা। পুরষ্কার: সাহিত্যক্ষেত্রে অবদানের জন্য তিনি কবিতাঙ্গন এ্যাওয়ার্ড (২০০৭), ড.মমিনুল হক একাডেমি ইউ.কে এ্যাওয়ার্ড (২০০৮) সংশপ্তক বঙ্গবীর ওসমানী পদক, অলইন্ডিয়া চিলরেন্ড লিটারারী ফউন্ডেশন ‘উৎপল হোমরায়’ স্মৃতি পুরস্কার-২০১২ ও ভারতের পূর্ব মেদিনীপুরের কবি ও কবিতা পত্রিকা সন্মাননা-২০১২, দুইবাংলা কবিতা উৎসব সন্মাননা-২০১৩, সাপ্তাহিক কালপুরুষ পত্রিকা সন্মাননা-২০১৩সহ বিভিন্ন পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
মাহবুবুল আলম //
মাত্র তিনদিন আগে বিভিন্ন মিডিয়ায় “সময়ের আলোচিত ইস্যু জাতীয় ঐক্য এবং এর অন্তরায়” শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেছিলাম। কিন্তু তিনদিন না যেতেই আবার একই বিষয়ে লিখতে বসেছি। কেননা, এখন দেখছি বিষয়টি তমাদি হয়ে যায়নি। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক বেশ জমে ওঠেছে। তাই এ বিষয়ে আবার কলম ধরতে হলো।
১ জুলাই ২০১৬ গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরায় ভয়বহ জঙ্গি হামলার মাধ্যমে ১৭ বিদেশি নাগরিক পুলিসসহ ২০ জনের ( জঙ্গি ৫ জনসহ মোট ২৮ জন) প্রাণহানী এবং এর মাত্র পাঁচদিন পর দেশের সর্ববৃহত ঈদের জামাত শোলাকিয়ার ঈদগাহের নিকটে জঙ্গি হামলায় হতাহতের ঘটনায় সারাদেশে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় বইছে। একই সাথে দেশে জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসের বিস্তাররোধে জাতীয় ঐক্যের বিষয় বা ইস্যুটি বেশ জোরেসোরেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই ইস্যুতে জাতি যেন আবার দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। রাজনীতির মাঠে ও টেলিভিশনের টকশো’ বা গোলটেবিল বৈঠকে এ ইস্যুতে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা অব্যাহত আছে। এর একপক্ষে বর্তমান শাসকদলের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট, সরকারে না থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে ইসলামী দলগুলো (জামায়াত ছাড়া ) কবি-সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী আর অন্যপক্ষে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সমর্থক কিছু রাজনৈতিক দল ও বুদ্ধিজীবী। শেষের পক্ষটি মনে করছে যেভাবেই হোক সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ইস্যুতে সরকারকে জাতীয় ঐকের নামে বিএনপি-জামায়াতের সাথে একই আলোচনার টেবিলে নিয়ে এসে বিএনপির হারানো ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার চেষ্টা করতে হবে। সরকার ও সরকারকে সমর্থনকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন কবি-সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব মানুষ এ ও মনে করছে বিএনপির জাতীয় ঐক্যের ডাক একটি ‘ফাঁদ’ এ ফাঁদে কিছুতেই পা দেয়া যাবেনা।
আর রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিও এই প্রথম জঙ্গিবাদ ইস্যুতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বিতর্কটি বেশ উসকে দিয়েছে। তারা বলছে, সরকারকে আমরা জঙ্গিবাদ ইস্যুতে সাহায্য করতে চাচ্ছি, এ জন্য জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা হওয়া দরকার। বল এখন সরকারের কোটে; আশা করি সরকার আমাদের জাতীয় ঐক্যের ডাকে সারা দিয়ে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের কবল থেকে দেশকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসবে। সরকার যদি সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয় তা হলে সরকারকেই আরো কঠিন মূল্য দিতে হবে। কিন্তু সরকার ও সরকারী দল আওয়ামী লীগ বিএনপির এ কথাকে পরোক্ষ হুমকী বলেই মনে করছে। তারা বলছেন,‘বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জাতীয় ঐক্যের আহ্বানে প্রধান বাধা জামায়াত। দলটির রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে কিছুতেই জামায়াত ছাড়তে পারছে না। এ কারণে সরকার ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ বিএনপির ঐক্যের ডাকে সাড়া দিচ্ছে না। আর সরকারও জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের ‘আতুরঘর’ বিএনপির জাতীয় ঐক্যের ডাকে সাড়া দিয়ে তাদের পাতা ফাঁদে পা দেবেনা।
আর এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন ,“জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে।” মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাটোরে অনুষ্ঠিত একাদশ এশিয়া-ইউরোপ সম্মেলনের (আসেম) বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন,‘ গুলশান হামলার পর জঙ্গি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন অনেক রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। এই ঐক্যের প্রয়োজন আছে বলে তিনি মনে করেন কি না? উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য ইতিমধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। যারা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, যুদ্ধাপরাধ ও আগুন–সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, তাদের কথা আলাদা। এদের বাইরে যাদের মধ্যে ঐক্য দরকার, যাদের সঙ্গে ঐক্য হলে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল হবে, তাদের মধ্যে ঐক্য হয়েছে।’
এদিকে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যে বিএনপি যে খুবই হতাশ তা সোমবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 'জাতীয় ঐক্য ইতিমধ্যে সৃষ্টি হয়ে গেছে' এবং 'যাদের সাথে ঐক্য প্রয়োজন, তাদের সাথে ইতিমধ্যে ঐক্য হয়ে গেছে' বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা জাতিকে হতাশ করেছে। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, 'দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর সমর্থনধন্য বিএনপিকে বাদ দিয়ে কীভাবে জাতীয় ঐক্য সম্ভব? কী করে সম্ভব অন্যান্য দেশপ্রেমিক দলকে বাইরে রেখে জাতীয় ঐক্য গড়া?' এইতো গেল দুইটি পক্ষের কথা।
এ পর্যায়ে খুবই প্রাসঙ্গিক বলেই বিশিষ্ট সাংবাদিক জনাব আবদুল গফফার চৌধুরী ও স্বদেশ রায়ে-এর জাতীয় ঐক্য বিষয়ে দুইটি লেখা থেকে কিছু অংশ উদ্ধৃত করছি। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ২০ জুলাই এক সহযোগী দৈনিকে এক নিবন্ধে বলেছেন,‘বাংলাদেশে সন্ত্রাস দমনের জন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার রব উঠেছে। রবটা বেশি তুলছে বিএনপি। ঐক্যের জন্য নয়, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদেই এই রবটা বিএনপি তুলেছে বলে আমার মনে হয়। বিএনপি এখন দেশের রাজনীতির ঘরে-বাইরে কোথাও নেই। তারা গত সাধারণ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ভুলের খেসারত দিচ্ছে। সংসদে তারা নেই। সংসদের বাইরে জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আন্দোলনের নামে নিরীহ মানুষ পুড়িয়ে মারার সন্ত্রাস চালিয়েও কোন লাভ হয়নি। বরং দলটি গণবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এখন বাঘ তাই মোষ সেজে সন্ত্রাস দমনের নামে ঐক্য চাই, ঐক্য চাই বলে চিৎকার জুড়েছে। যদি সন্ত্রাস দমনে ঐক্যের সংলাপে সরকারী দল তাদের ডাকে তাহলে বিএনপি আবার রাজনীতির পাতে উঠতে পারে। তাতে সন্ত্রাস দমন না হোক, বিএনপির অস্তিত্ব রক্ষা পাবে। সে জাতে উঠবে। …এই সত্যটা বিএনপির পোঁ ধরা বুদ্ধিজীবীরাও এখন বুঝতে পারছেন। তাই তারা জাতীয় ঐক্যের ধুয়া তোলার সঙ্গে সঙ্গে তাদের নেত্রীর কাছে জামায়াতের সংশ্রব ত্যাগেরও আবেদন জানাচ্ছেন। এমন যে বর্ণচোরা বুদ্ধিজীবী ডাঃ জাফরুল্লা, তিনিও ভাসানী অনুসারীদের মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানাচ্ছেন, তিনি যেন সন্ত্রাসবিরোধী সংগ্রামে নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। এই ডাকটি তিনি তার পছন্দের নেত্রী খালেদা জিয়াকে দেননি ”।আর
আজ (২১ জুলাই) দৈনিক জনকন্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায় তার উপসম্পাদকীয়’র নিবন্ধে বলেছেন,“গুলশানের জঙ্গী হামলার পর গোটা জাতি শোকাহত, জঙ্গীর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ- এ সময়ে বাংলাদেশের নষ্ট একটি শ্রেণী এই জঙ্গী হামলাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের কিছু নষ্ট বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও তথাকথিত সুশীলসমাজ তারা এই সুযোগে বাংলাদেশের জঙ্গীমাতা খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছে, তথাকথিত জাতীয় ঐক্যের নামে। জাতীয় ঐক্য বাংলাদেশের মানুষের কাছে অনেক পরিচিত। ১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলনের সময় এ দেশের মানুষ জাতীয় ঐক্য দেখেছে। সেদিন ইয়াহিয়া খান, ভুট্টো, নেজামে ইসলামী বা জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য হয়নি। সেদিন মানুষই জাতীয় ঐক্য তৈরি করেছিল। সেদিনও যেমন জাতীয় ঐক্যের সঙ্গে ইয়াহিয়া, ভুট্টো, নেজামে ইসলামী বা জামায়াতে ইসলামীর কোন সম্পর্ক ছিল না, আজও খালেদা, জামায়াতে ইসলামী বা ইসলামী ঐক্যজোট, হেফাজতে ইসলাম এদের নিয়ে জঙ্গীবিরোধী জাতীয় ঐক্য হয় না। … তবে হায়রে আমাদের মিডিয়ার একটি অংশ! বুঝতে পারি না। এরা বোঝার ওপারে, না হয় আমাদের মতো মূর্খদের পক্ষে এদের বোঝা সম্ভব নয়। তবে ওয়েস্টার্ন কোন মিডিয়া তো বোগদাদীর পক্ষে যে সব বুদ্ধিজীবী তথাকথিত ইসলামিক স্টেটে আছে তাদের নিয়ে টকশো করে না। তাদের বক্তব্য প্রকাশ করে না। আমাদের এদের এত বাংলাদেশের বোগদাদী খালেদার পক্ষের বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে টানাটানি কেন? রশিটি কোথাকার? গুলশান ঘটনার পরদিন একটু আকার ইঙ্গিতে কিছু কথা বলেছেন শেখ হাসিনা। এখন এই রশিটি কোথায় সেটা তাকে অবশ্যই দেখতে হবে। এই রশিটির উৎস না দেখলে কিন্তু বাংলাদেশে জঙ্গী তৎপরতা বন্ধ করা কষ্টকর।”
তাই আমার কথা হলো আজ যারা যারা জাতীয় ঐক্য জাতীয় ঐক্য বলে বলে গলা শুকিয়ে ফেলছেন, তাদের হয়তো জানা থাকার কথা ১৯৭০-এর নির্বাচনের আগেও কম্যুনিস্ট পার্টি ও ন্যাপ বঙ্গবন্ধুকে আহ্বান জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে সংলাপে বসতে বলেন। তারা বঙ্গবন্ধু বোঝাতে চেষ্টা করেন যে, তিনি যে আন্দোলনের প্রস্তুতিগ্রহণ করছেন তাতে সফলতা অর্জন করতে হলে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই কেবল সফল হতে পারে এর বাইরে নয়। তখন কমিউনিষ্ট পাটিসহ প্রগতিশীল বিভিন্ন দলের ঐক্যের ডাকে পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ, জামায়াত নেজামে ইসলামী প্রভৃতি দলতো সাড়া দেয়ইনি বরং তারা বালাদেশের স্বাধীকার আন্দোলনের বিরোধীতা করতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “আমি নেতায় নেতায় ঐক্য চাই না, চাই জনতার ঐক্য। নেতায় নেতায় ঐক্য হলে তার পরিণতি কি হয় তা আমরা ৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে দেখেছি। সেই ভুল আর করব না। এবার চাই জনতার ঐক্য। বাংলার স্বাধিকারের প্রশ্নে একমাত্র সাম্প্রদায়িক ও ধর্মান্ধ রাজনৈতিক গোষ্ঠী ছাড়া দলমত নির্বিশেষে বাংলার মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। জনতার এই ঐক্যই জাতীয় ঐক্য। এই ঐক্যই আমাদের শক্তি। এই শক্তির বলেই আমরা সংগ্রামে জয়যুক্ত হবো।”
কি আশ্চর্য দীর্ঘ ৪৫/৪৬ বছর পর এসেও আমরা দেখতে পাই “নেতায় নেতায় জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রায় একই কথা বলছেন একেই বোঝি বলে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি কী অপূর্ব মিল বাপ-বেটির কথায়। কেননা বঙ্গবন্ধুর মতো শেখ হাসিনা বুঝতে পারছেন, এ মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যের রব তোলা এক ধরনের কুটিল ফাঁদ। বিএনপি যে এই সন্ত্রাস দমনের কাজে সরকারের সঙ্গে জাতীয় ঐক্য গড়ার নামে সংলাপে বসতে চাইছে, এটা তাদের আরেক রাজনৈতিক কৌশল। রাজপথে সন্ত্রাস সৃষ্টি দ্বারা সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটাতে না পেরে এখন সংলাপে বসে একই উদ্দেশ্য হাসিলের কৌশল গ্রহণ করেছে। আমরা মনে করি আওয়ামী লীগ সংলাপে বসলেই তারা দাবি তুলবে, বিএনপির নেতাদের মুক্তির পাশাপাশি মামলা তুলে য়ো হোক। বিশেষ করে তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার সব মামলা প্রত্যাহার করা হোক। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করা হোক সর্বোপরি সন্ত্রাস দমনের স্বার্থে অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচন দেয়া হোক। তারা আরও বলবে গণতান্ত্রিক সরকারের অনুপস্থিতিতেই দেশে সন্ত্রাস বাড়ছে। বলেই সন্ত্রাস বাড়ছে, নির্বাচন হলেই সব ফকফকা হয়ে যাবে। আর তখনই সংলাপ ভেস্তে যাবার সব দায় শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের ওপর চাপিয়ে মাঠ গরম করা চেষ্টা করবে।
লেখার পরিধি আর বাড়াতে চাইনা। গণফোরামের প্রেসিডেন্ট ড. কামাল হোসেন-এর একটি বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে লেখাটি শেষ করবো। সম্প্রতি রাজধানীর বেইলি রোডে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘বিভেদের রাজনীতি থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় সুস্থ রাজনীতির পক্ষে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা। গোটা জাতির মধ্যে একটি প্রচ্ছন্ন ঐক্য ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে। এখন ওই ঐক্যকে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির আওতায় এনে সংগঠিত করা প্রয়োজন। ‘কার্যকর গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মূলে রয়েছে জনগণের ক্ষমতায়ন। অথচ সংবিধানের এই ঘোষণা আজ প্রহসনে পরিণত হচ্ছে। মানুষের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা জনগণের ক্ষমতায়নের পথে এগিয়ে যেতে পারি। জনগণের অংশগ্রহণে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।’ ড. কামাল সাহেব সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ বাদ রেখে ‘জনগণের ক্ষমতায়নের পথে এগিয়ে যেতে পারি। জনগণের অংশগ্রহণে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।’ তাঁর এ জতীয় বক্তব্য ও বিএনপির বক্তব্যের মধ্যে কি কোন অমিল বা পার্থক্য আছে! তা হলে স্বাভাবিকভাবেই যে কেউ প্রশ্ন করতে পারে দেশের এই ক্রান্তিকালে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ ইস্যুকে উছিলা করে কেউ যদি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে সেখানে সন্ত্রসীদের মামলা তুলে নেয়াসহ জাতীয় নির্বাচনের দাবি তোলে ঘোলা পানি মাছ শিকার ও নিজেদের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় জাতীয় ঐকের ফাঁদ পাতে; তবে কি সেই পাতা ফাঁদে সরকার পা দেবে? এটি এখন ওয়ান মিলিয়ন ডলার কোশ্চেন।
©somewhere in net ltd.