![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আক্কাস মিয়া সেই সকাল থেকে রেললাইনের উপরের বসে আছেন। উদ্দেশ্য ট্রেনে কেটে মরবেন। বয়স ৬২ কি ৬৫ হবে। মাথার চুল গুলো ধপধপে সাদা। চোখে মোটা ফেমের একটি ভারি চশমা। চশমার বাম পাশের গ্লাসটা ফেটে যাওয়া। একটি ট্রেন সোঁ সোঁ শব্দ করে এগিয়ে আসছে। চোখ বন্ধ করে রেললাইনের উপর শুয়ে আছে। ট্রেনের শব্দ একটু একটু করে জোরালো হতে শুরু করেছে। ট্রেনের শব্দে মনে হয় তার কানের পর্দা ফেটে যাবে। খুব চেষ্টা করছে চোখ বন্ধ করে থাকতে। কিন্তু কিছুতেই চোখ দুটি বন্ধ করে থাকতে পারছে না। দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসা ট্রেনের দিকে বার বারই চোখ দুটি চলে যাচ্ছে। ট্রেনের এগিয়ে আসা দেখে বুকের ভিতরে ঢিপ ঢিপ শব্দটা বেড়েই চলেছে। রেললাইনে আর শুয়ে থাকতে পারেনা। লাফিয়ে ওঠে পরে। পাশ দিয়ে দ্রুত গতিতে চলে যাওয়া ট্রেনটির এত শব্দের মাঝেও সে তার বুকের ঢিপ ঢিপ শব্দ শুনতে পাচ্ছে। ট্রেন চলে যায়। সে আবার রেললাইনে বসে পড়ে। চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে।
.
মনে আবার প্রতিজ্ঞা করে এবার যে ট্রেন আসবে সে ট্রেনেই মরবে। অবশ্য এই প্রতিজ্ঞা সকাল থেকে ৫ বার করা হয়ে গেছে। কিন্তু একবারও প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। ৪র্থ বার রেললাইন থেকে নেমে এসেছিল ছেলের মুখে শেষ বারের মত বাবা ডাকটি শুনার জন্য। যদিও ছেলে গত এক বছর থেকে তাকে বাবা বলে ডাকেনি। একই বাড়িতে থাকে, দিনে দুবার দেখা হয়, অথচ এই ৩৬৫ দিনে একবারো বাবা ডাকার সময় পায়নি। এক বছর আগে ছেলে তাকে একবার বাবা বলে ডেকেছিল। কিন্তু সে বাবা ডাকার মাঝে আক্কাস মিয়া কোন ভালোবাসা খুঁজে পায়নি।
.
দুপুর বেলা সে তার একমাত্র ছেলে ইঞ্জিনিয়ার রনি আহম্মেদকে একজনের ফোন থেকে কল দেয়। ছেলে রিসিভ করে আক্কাস মিয়ার গলা শুনার পর কোন কিছু না শুনেই ব্যস্ত আছি বলে রেখে দেয়। তখন আক্কাস মিয়ার বুকের ভিতরটা একদম দুমরে মুচরে ভেঙে যায়। গতকাল রাতে রনি আক্কাস মিয়ার গায়ে হাত তুলেছে। আক্কাস মিয়ার ছেলে বউয়ের সাথে রাগারাগি করে বেশ কিছু কড়া কথা বলেছে, সাথে বকাও দিয়েছে। আক্কাস মিয়ার এত বড় অপরাধ তার ছেলে মেনে নিতে পারেনি। চার বছর প্রেম করে বিয়ে করেছে সে। বউকে খুব ভালবাসে। অথচ বৃদ্ধ আক্কাস মিয়ার এত সাহস তার বউয়ের সাথে রাগারাগি করে বকা দেয়? বউয়ের কান্না সয্য করতে পারেনি। একজন আদর্শ স্বামী, আদর্শ প্রেমিক বলে কথা। বউয়ের চোখে জল দেখে গায়ে আগুন জ্বলে ওঠে। আক্কাস মিয়ার ঘরে গিয়ে শুধু একবার জিজ্ঞেস করে, তুমি হিমা কে কি বলেছ? বৃদ্ধ আক্কাস মিয়া কাঁপতে কাঁপতে বলে তোর বউ কি বলেছে সেটা শুনেছিস?
রনি কঠিন ভাবে বলে,আমার শোনার দরকার নাই। তুমি হিমা কে গালি দিয়েছ?
আক্কাস মিয়া রেগে গিয়ে বলে, হ্যাঁ দিয়েছি। কি করবি?
আক্কাস মিয়াঁ কিছু বুঝে ওঠার আগেই রনির একটা চড় তার গালে ঊপর পরে। বৃদ্ধ পড়ে যায় খাঠের উপর।
.
আক্কাস মিয়া তখন যৌবনে। ছেলের বয়স কেবল চার বছর তখন যক্ষ্ণা হয়ে বউ মরে যায়। অনেকেই বলেছিল বিয়ে কর। কিন্তু আক্কাস মিয়া বিয়ে করেনি। বিয়ে না করার প্রধান কারণ ছোট ছেলেটার ভবিষ্যৎ চিন্তা। সৎ মা এসে যদি ছোট ছেলেটার জীবনকে বিষিয়ে তোলে? ছেলের উপর নির্যাতন করে।
অনেক কষ্ট করেছে জীবনে। অনেক কষ্ট করেই ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার বানিয়েছে। নিজের শেষ সম্বল বসত ভিটা টুকুও বিক্রি করে দিয়েছিল ছেলের পড়াশুনার জন্য। অথচ আজ তার ছেলে তার গায়ে হাত তুলেছে, এ যন্ত্রনা কিভাবে তিনি মেনে নিবেন? যে ছেলেকে হাত ধরে হাঁটতে শিখিয়েছেন, নিজের হাতে প্রতি বেলা খাইয়ে দিয়েছেন সে ছেলে আজ তার গায়ে হাত তুলেছে।
.
রেললাইনে শুয়ে বঊ এবং ছোট রনির ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া ছবিটা দেখছে। বার বার হাত দিয়ে ছেলের ছবিটার উপর হাত বুলাচ্ছে। একটি ট্রেন আসার শব্দ শুনতে পাচ্ছে। আক্কাস মিয়াঁ মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেছে এবার মরবেই। আর সে জন্যে নিজের পায়ের সাথে একটা মোটা দড়ির এক প্রান্ত বেধে অপর প্রান্ত রেললাইনের সাথে বেঁধে রেখেছে। এমন ভাবে বেঁধেছে যাতে হাত দিয়ে সহজে না খুলতে পারে। এ কাজটি করার কারণ, ট্রেন যখন তার কাছাকাছি চলে আসে এক অজেনা ভয়ে সে বার বার রেললাইন থেকে নেমে যায়। কিন্তু এবার যেন চাইলেও নেমে যেতে না পারে সে জন্যে এমনটা করেছে।
ট্রেনের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে। মনে মনে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়। ছবিটা বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে। ট্রেনের শব্দে তার গা কাঁপছে। ট্রেনটি তার বুকের উপর দিয়ে চলে যাবার আগে সে একবার তার ছোট্ট ছেলে রনির বাবা ডাকটি শুনতে পায়। চোখ মেলে তাকাবার আগেই সব শেষ। শরীর দুদিকে দু খন্ড হয়ে যায়।।
।
বিঃদ্রঃ কয়েকদিন আগে জয়পুরহাটে টেনে কেটে এক বৃদ্ধ মারা যায়। যত টুকু শুনেছি তিনি নাকি ইচ্ছে করেই সুইসাইড করেছেন। এই গল্পটা তার জীবনের নয়। আমার কল্পনা মাত্র।
©somewhere in net ltd.