নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

না... না... না... কিছুই না...

আমার নাই ঠিকানা ঘর...

আগত

জন-মত-সরকার নির্বিশেষে রাষ্ট্র এবং সকলের উর্দ্ধে রাষ্ট্র

আগত › বিস্তারিত পোস্টঃ

নাম কি?

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:১০





১।

ক -

-মোহিনী এমনটা হলেতো আর কোন ক্লায়েন্টই আমাদের তেতোমুখ দেখতে আসবেনা। তোমার এই সভার গুরুত্বের কথা ভেবে হলেও এখানে প্রবেশ করা ঠিক হয়নি। আমি জানি তুমি খুব সমস্যায় আছ, কিন্তু তারাতো আমাদের সমস্যা দেখতে এখানে আসেনি।



১।

খ -

কেন সে ওই চেক-আপ করতে গেলো, করলেওবা আজই তার সেটা নিয়ে আসার কি দরকার ছিল? এবার এবর্শন করলেই তার মা হওয়ার সমস্ত সম্ভাবণার বুকে সীল গালা হবে। এসবের তোয়াক্কা না করেওযে বাকী ৪ মাস কাটিয়ে দিয়ে নিরাপদেই ডাক্তারের ভবিষ্যৎবাণীকে স্বার্থক করে মরে যাওয়া যাবে সেটা মোহিনীও বেশ জানে, আর জানে বলেই মৃত্যুর গুরুত্ব আর বেঁচে থাকার লোভ এ দুটোর চিত্রায়ণে তার কোনো দ্বন্দ্ব নেই।



২।

ক -

--শাহ্‌বাগ আমার স্বপ্ন, দিবা রাত্রির কাব্য, শাহ্‌বাগ সাধারনের নির্ঘুম মিছিলের সুর, শাহ্‌বাগ রাজপথ আর বিপ্লবের জ্যামিতী, শাহ্‌বাগ প্রেমিকার দুস্বপ্নের শেষ দৃশ্য-যেখানে কান্না নেই-প্রলাপ নেই, শাহ্‌বাগ মায়ের শপথ আর শিক্ষার উন্নয়ন, শাহ্‌বাগ মানবতার অস্তিত্ব রক্ষার অক্লান্ত সংগ্রাম, শাহ্‌বাগ অনু পরমাণুর মৌলে মৌলে সাম্প্রতিকতা ও অতীতের জমাট বাঁধা মানুষ হত্যার বিচার।

--আচ্ছা আর কি কি... শাহ্‌বাগ?

শাহ্‌বাগ তাকে মনে করিয়ে দেয় মেশিনগানের ঠাঁঠাঁঠাঁঠাঁঠাঁ..ঠাঁ শব্দের আবহে তার নব বিবাহিতা স্ত্রীর ধর্ষণ যন্ত্রণার আর্ত চিৎকার, তার দুস্বপ্ন আর স্বপ্নহীনতার মাঝে তিলে তিলে দেশ মাতার

অস্তিত্ব রক্ষার জাগরণ বিশাল স্মারক হয়ে দাগ কাটা দেয়ালে মৃত সাথীর দীর্ঘ হতে থাকা সংখ্যা , আর ক্লান্তিহীন ভাবে ক্রমাগত মৃত্যুকে হৃদয়ে ঝুলিয়ে দিয়ে বেঁচে থাকা।

--কিন্তু যত দোষ এই সাম্প্রদায়িকতার... আমাদের মধ্যে এর বীজ বপণ করা হয়েছে আজ থেকে "?" বছর আগে। আমাদের জাতি কলংকিত এই অভিশাপের চাপে পিষ্ট হয়ে যুক্তি জ্ঞান

হারিয়ে নিজেদের মধ্যে বিবাদে লিপ্ত হয়েছে।

--বাবা তুমি যে কি বলতে কি বল(বারবার শুনে ফেলা গল্পের বারবার দিয়ে ফেলা উত্তর)..! তুমি লাঞ্চ করেছ?

--হ্যাঁ বাবা।



২।

খ -

--আগামীকাল বাবার ডাক্তারের সাথে সাক্ষ্যাৎকার আছে, তুমি সব সময়মত পরিকল্পণা করেছ?

--না স্যার।

--আর কতবার তোমাকে বলত হবে সাধারণ বিষয়ে? অসাধারণ বিষয়গুলোতো পানশে হয়ে এলো আর তোমার এখনো আঁটি বাঁধা হলোনা, খদ্দের মরে গেলো মুঠো ভর্তি টাকা-মাথা ভর্তি ক্ষুদা নিয়ে!

--স্যার গণজাগরণের মিছিলে একটু দেরী হয়ে গেলো, আমি ১০ মিনিটের মধ্যেই সব ঠিক করে নিচ্ছি।

--রাকীব! আমি সত্যিই খুবই দুঃখিত, আমি বুঝতে পারিনি আপনার বিষয়টা এটা ছিলো। আপনি একটু সময় নিন, শান্ত হয়ে তারপর এই দাপ্তরিক কাজগুলো সেরে নিন। আর হ্যাঁ আপনি যদি নতুন কিছু বুঝতে পারেন আমাকে জানাবেন, আমি নিজেও ঠিক বুঝতে পারছিনা কি হচ্ছে আর হবে সেখানে।

--স্যার আপনি আর কতদিক দেখবেন, আমারই আপনাকে বলে যাওয়া উচিত ছিল, কিন্তু মায়ের কথা মনে পড়ায় খুব উত্তেজিত হয়ে চলে গিয়েছিলাম, তাই খেয়াল ছিলোনা।



৩।

ক -

--সারারাত মাইক বাজিয়ে গানা বাজানা করে মানুষের মৃত্যুকামনা! ঘোর কলীযুগে যেনো এক পাল যুবক যুবতী প্রকাশ্যে যৌন মিলণ আর খুন করতে একসাথে হয়ে গেছে! বেপর্দা মেয়েছেলেরা

কাপড়ের ঠিক নেই মাওলানাদের নাম ধরে গালি গালাজ করে! এদের সকলেই আল্লাহর লানতে মধ্য দুপুরে যেন সুর্য উৎপন্ন তাপে দগদ্ব হয়ে যায়।

--হুজুর আপনার ছেলেওতো ওইখানে আছে। তিনি আপনার জন্য একটা চিঠি লিখে আমার কাছে দিয়া গেছে। আমি তার মুখ দেইখা খুব সুবিধার কিছু বুঝি নাই।

--বলিস কি? ও কি খাওয়ার খেয়ে গেছে?

--তিনি আজকে সকাল খাওয়াতো দূরের কথা তাকায়েও দেখে নাই। আমি জিগাইছিলাম ভাইজান খাইবেন্না? আমারে কয় "এত মানুষ খায় না আর আমি বসে বসে মাংসপোলাও খাবো-

-আমিও তাদের সাথে খেয়ে না খেয়ে থাকবো"



৩।

খ -

লম্বা চিঠির দিকে তাকিয়ে থেকে হাফিজের খুব অসহায় লাগে, সে ফোন বের করে মনিষাকে ফোন করে- যদিও মেয়েটাকে তার বদ মনে হয়(তার ধারণা এ মেয়েই ছেলেটার মাথা খেয়ে বেলেল্লাপণার ফাঁদে ফেলেছে)। ফোনে তিনি প্রবল কান্নাকাটি শুরু করলে মণিষা তার সাথে দেখা করে।

--নিজের যত্ন না নিলে চলবে কিভাবে? আমার এত কিছু কার জন্য? মা তুমি একটু ওকে বুঝিয়ে বল। আমি চাইনা তোমরা ভবিষ্যতকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দাও। তোমরা শিক্ষিত হয়ে দেশের ত্রাণ করবে।

মোটে দু'দিন ঝাড়ি দিতেই এই ছেলে একেবারে মিছিলের ভীড়ে ভীড় করা শুড়ু করলো?-ভেবে মণীষার একটু ভালো লাগতে থাকে- এত দিনের বিপ্লবী জ্ঞান তবে ক্ষুদ্রতর অর্থে সফল হতে শুরু করেছে।

--আপনি একদম চিন্তা করবেননা চাচা, ও একটু বোকা মনে হলেও এবার ও বেশ শক্ত হয়ে ঊঠবে। আপনি ওকে নিয়ে বেশী চিন্তা করবেননা- পরে আপনারও শরীর খারাপ করলে ওর মনোযোগ নষ্ট হতে পারে।

হাফিজের রাগে মন চায় এই মেয়ের গালে কষে একটা চড় বসিয়ে দিতে কিন্তু লক্ষ্যে অটুট তিনি আবেগের প্রশ্রয় দিয়ে অতবড় পরিকল্পণা তিনি ভেস্তে যেতে দিতে পারেননা। তিনি কথা বলেন... কিন্তু... মনে হয় তিনি কিছুর অপেক্ষা করছেন।

--আমি কি আর স্বাদে চিন্তা করি, আমি আর কদিনইবা আছি? আমি চলে গেলেইতো... তোমাদের মতো পৃথিবী... আমি অভিযোগ করাতো দূরেরই কথা...

এর মধ্যেই স্টার কাবাবের তৈরী করা আবিদের পছন্দের খাবারের ২০০০ প্যাকেট চলে আসে।

--চলো মা যেতে যেতে কথা বলি, আবিদকে তুমি একবার ফোন করে খোঁজ নাওনা ও কোথায় আছে?



৪।

ক -

--আমি একটা ৫ ট্যাকার কপাল পতাকা কিঞ্ছি এর লাইগা আব্বায় আমারে এত্ত মাইর মারলো!

--হ তুমি জয় বাংলা কইবা আর তোমার বাপে গোয়ায় বাঁশ নিবো- আবার তোমারে ননাই করবো। গতকাইল আমাগোরে হিঁদু কয়া তারা বেবাকের ঘর জ্বালায়ে দিলো আর আইজকা আবার তুমি জয় বাংলা চোদাও। জয় বাংলা সবাই কইলে অইবোনা। জয় বাংলা কইবো শিক্ষিৎরা আর মুসলমানেরা; আমরা কওয়ার আগে পিঠে ছালা বাইন্ধা তার পর কইতে হইবো।

তপণ এখন কিছুটা সঙ্গতি খুঁইজা পায় তার কান্দনের ইতিহাসের। কাইল সব হারানোর দুকখে উডানের কোণ থেইক্কা ১ গ্যালন মদ তুইলা খাইসে তার বাপে আর তার মাশুল দিছে তপন। যদিও এই পতাকা তার ওস্তাদ কাইল ভাড়া বেশী হইছে বইলা তারে কিনা দিছে অর্ধেক দামে আর বেতনের ট্যাকাও দিছে বেশী; এতো মাইনষের মধ্যে পকেটমাইর খানকীর-পোলা তার পকেটই দ্যাখছে, এইডা তার নিজের দোষ হয় ক্যাম্নে।



এই যে জয় বাংলা আর এই যে শাহ্‌বাগ এদের প্লটে ঘটনা অথবা গল্প আর কত কত মূহুর্ত পাতায় পাতায় সালোকসংশ্লেষণের মতই অনিবন্ধিত রয়ে যাচ্ছে এবং আরো অজস্র দৃশ্য দেয়ালের বাইরের দেয়াল পেরিয়ে দেখার সুযোগহীনতায় অনুপলুব্ধ থেকে যাচ্ছে আর আমার মত পাতি গল্প লেখিয়ের সুযোগ সন্ধানী ছোঁক ছোঁক কলমের ডগার জন্য এতো যেনো আরো বেশী রসময় হলো। বাক্যের অর্থময়তা নিয়ে যতরকমের জটিলতা সে তো আছেই; লাভের লাভ ঘটনার দ্বান্দিক উত্তেজনা। যতরকম খুশী চরীত্র নির্মাণ আর মজাসে তাদের সংলাপে নিজের দর্শণ আরোপ করে দেওয়া(কিন্তু... যেহেতু ঘটনার সাথে মৃত অথবা জীবিত কোন ব্যাক্তি অথবা প্রতিষ্ঠান অথবা ভাবনা অথবা তত্ব কারো ভাই বোনের সাথেও এই রচনার কোন সাযুজ্যতা নাই; সেহেতু থাকলেও তার জন্য আমি লেখক অথবা ভাবুক অথবা ধার্মিক কোন হিসেবেই দায়ী নই)।



ধরি শাহ্‌বাগ একটি গল্পের নাম। গল্পটি লিখা হচ্ছে? ধরি শাহ্‌বাগ একটি নাটকের নাম। নাটকটির প্রদর্শণী হছে? ধরি শাহ্‌বাগ একটি নদীর নাম। নদীটিতে ১০০ বছর পর জোয়ার এসেছে?

ধরি শাহ্‌বাগ একটি মানুষের নাম। মানুষটি সময়-ভ্রমণ-যন্ত্র ব্যবহার করে ২১০০ সাল থেকে এসেছে? ধরি শাহ্‌বাগ প্রেমের প্রতিশব্দ অথবা সমার্থক। এই প্রেমটি অবৈধ? ধরি শাহ্‌বাগ জীবনের বিপরীত শব্দ। সেই জীবন কার? ধরি শাহ্‌বাগ একটি যথার্থ অথবা ভূলেপূর্ণ গণিত। এমন কোনো গণিতের কি আদৌ কোন অস্তিত্ব আছে? ধরি শাহ্‌বাগ একটি রাস্তার নাম। রাস্তাটিকি হারিয়ে গেছে? ধরি শাহ্‌বাগ একটি ধর্মতত্ব। এটি কি ঈশ্বর প্রেরিত?



৪।

খ -

তপনের বাপ কান্তেছে- সামনে মিনিট কতক আগে উল্টে পড়া কলস আর কলস থেকে গড়িয়ে পড়া চোলাইয়ের মধুর স্পর্শে ভেজা মাটি-সেই মাটি যেনো টাল খেয়ে কাই হয়ে গেছে উপবাসী হাঙ্গরের জালে রঙ্গীন পোনার ঝাঁকের শেষবার সঙ্গম কামনায় পরস্পর প্রত্যেকের দিকে তাকানোর মত উত্তেজনায়। গত দুই দিন ধরে তপন বাড়ি আসে নাই।

--ট্যাম্প্যু ইস্ট্যান্ডেও খুঁইজা আইলাম, তারা কয় কাইলকার আগের দিন টিরিপ শেষে গণজাগরনে গেছে।

তপণের বাপে তখন কেমন না বুঝতে পারা ভোঁতা অনুভূতির মাইনকাতে পইড়া যায়, তার চোখের সামনে অদৃশ্য ঝুইলা থাকে(পাড়ার মোড়ে দেয়ালে টাঙ্গানো পত্রিকার বড় লাল লেখা গুলান)-

"অর্ধদিবস হরতালে তিন জন নিহত আহত তের।"

শেষবার তপনের বাপ এই রকম লাল কালীতে লেখা দেখার পর জহুরুল ভাই অপঘাতে মরছিলো।

যেনো ভাবনার ভেতরে কিন্তু চমৎকারিত্বের মত সত্যেই এলো তপনের খবর, ঢাকা মেডিক্যালে তপন আছে, গুলিতে তার একটা কিডনীতে জখম হইছে; ডাক্তার কইছে যা করার আজকের মধ্যে

না করলে ডাক্তারদের আর কিছুই করার থাকবেনা যদিও যমদূতের সঙ্গে লড়াইয়ে গত দুই দিন তাদের ক্রিয়াদি অত্যন্ত নিবেদিত এবং এ উপলক্ষ্যে যথাযথ মহল তাদেরকে অভিনন্দিতও করেছে।



৩।

গ -

হাফীজ আজকে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললো যে এই ছেলেকে আর না। মাত্র ৩০০ প্যাকেট বিলি করতেই আবীদ এসে খাবারের প্যাকেট গুলো উপরে শূন্যতার নীলের দিকে ছুঁড়ে দিতে দিতে

চিৎকার করে হাসির তীক্ষ্ণ শর নিক্ষেপে বিদীর্ণ করে ফেলতে চাইলো হাফিজকে। পিতা হয়ে পুত্রের থেকে এমন আচরণ তিনি কখনই আশা করেনি। এত লম্বা মানুষের লাইন সব রকমের

মানুষের একটা মাত্র লাইন সে মাত্র ৭১ এ তার মৃত ভাইয়ের রোদ চশমা সহ হাসি হাসি মুখটা মনে করতে পারছিলো। নিজেরে নিজের ভাইয়ের মত মনে হতে হতে আত্ম অভিমূখে(হাফীজের হাতের প্যাকেট অভিমুখে) এত লম্বা মানুষের সারী তাকে মূহুর্তের জন্য অসীম ক্ষমতাধর করে তুলেছিল। কিন্তু নিজ পুত্র হওয়া সত্ত্বেও সে মূহুর্তটিকে সেই সোনালী অনুভূতির মূহুর্তকে(যেখানে সময়, স্থান লীন হয়ে গিয়ে শুধুমাত্র অনুভূতি বেঁচে থাকে-শাশ্বত-শুধু রঙ সেখানে) আস্তাকূঁড়ে ঠেলে দিতে পারলো?



২।

গ -

--ভাগ্যিস সবকিছু সময় মত ঠিক করা গেলো...

আয়ানায় নিজের চোখে প্রচ্ছন্ন ক্লান্তি আর মুক্তি দেখে এই গতানুগতিকতার জীবনে সফলতার উত্তেজিত উল্লাসে আনন্দিত মনে হলো রাকীবেরই। তার ফোন বাজে, বেজেই চলে- আজ সে কারো ফোনই আর তুলবেনা - কিন্তু বার্তা তাকে পড়ে ফেলতে হয়ই; "শাহবাগে ককটেল বিষ্ফোরণ।"

--স্যার আপনি দেখেছেন খবরটা, মাত্র টিভিতে খবরে দেখালো!

ফোন থেকে আবার চোখের দিকে তাকিয়ে একটু আগের আর কোন দ্যুতি খেলা করতে দখেনা কিন্তু সে প্রাণপণে চাইছে সেই আলোকে, তার উৎসটিকে খুঁজে পেতে; পেছনের টিক টিক ঘড়ির

তাতে কিইবা আসে যায়।



১।

গ -

--ওটা ফলস রিপোর্ট ছিল।

--ওটা ফলস রিপোর্ট ছিল?

--আমি সত্যিই দুঃখিত ভূল হওয়ায়, কিন্তু আপনি কি রিপোর্টের গায়ে ডেস্টিনেশান ফর্ম পড়ে দেখেননি?

--আর বলবেন না আপা, বিষয়টা নিয়ে আমি এত বেশী উত্তেজিত ছিলাম যে আমি আরো অনেক কিছুই এলোমেলো করে ফেলেছি।

--আপনার হয়রানির জন্য আমাকে মাফ করবেন, আমি ওই ডেলিভারী ম্যান কে ছাটাই করে দিয়েছি।

মারুফের সাথে ছাড়া ছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর যে বিপদে মোহিনী পড়েছে তার ত্রাণ এমন হবে এটা সে কল্পনাই করতে পারেনি। মারুফের দায়িত্বশীলতার পরিচয় তার কাছে পরিষ্কার হওয়াতে ভালোই হলো, যদিও অমূলক বিষয়ের জের ধরে ঘটনাটা ঘটলো।



পিঁপড়ের চলনের ম্যাপ- ঝরা পাতা সেখানে কল্পনা আর বাস্তবতা যাই হোক বিশাল বপুর নতুনত্ব নিয়ে কত গতিকে নতুন নিয়ন্ত্রণের বৃত্তে পুরে দেয়।



১।

ঘ -

--আপা আমার রিপোর্টটা নিতে এলাম।

--আপনি বসুন, আমি আনিয়ে নিচ্ছি।

মিসেস রুবির অফিস কক্ষের বাহিরের দেয়ালে নিরবে ঝুলে থাকা বেলের হঠাৎ ঝংকার শুনে রিপোর্ট নিয়ে রুমে ঢোকে সোহানা। রিপোর্ট দেখে রুবি পূর্ব অভিব্যাক্তিটিকে এক প্রকার জোর

করেই টেনে ধরে রাখেন। রুবি অনেক অনেক দৃশ্য সামাল দিয়েছেন কিন্তু এত রুপবতী একটা বালিকা মেয়েকে এমন কথা তিনি কিভাবে বলবেন? এতদিন ধরে তিলে তিলে গড়ে তোলা একটা

প্রাণ মাত্র সে পাপড়ি মেলবে অথচ তার হাতে যে চার মাস সময় ছিল তা এখন আরো কমে যাচ্ছে। নির্ভূল ভাবে বললে বলতে হবে সে ক্রমাগত মারা যাচ্ছে একটি স্বল্প বেড়ে ওঠা মৃত প্রাণকে গর্ভে

ধারন করে। দ্বিদা যাই হোক তার এই শিক্ষিত এবং আধুনিক মেয়েটির এটি নাগরিক এবং মানবিক অধিকার, সে জানবে কি হচ্ছে তার নিজের ভেতর- কেমন আছে নিজের নিজে এবং সে কারণেই তো সামনে বসে থাকা উদ্বিগ্ন মেয়েটি তার কাছে এসেছে এবং প্রবল উৎকন্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করছে; তার চোখ যেন অনবরত নীরব প্রশ্ন ছুঁড়ে যাচ্ছে রুবীর দিকে। বলা না বলায় দুলতে দুলতে এক সময় সে বলেই ফেলে যা যতটুকু বলা দরকার এমন কোন সময়ে।

--কী?

স্থানুর মতো নিথর দেখাচ্ছে মোহিনীকে। কেবল চোখের পানিই গড়িয়ে পড়ছে গন্ড বেয়ে। নিজের দেহের প্রতি যে অভিশাপ তাকে ছুঁড়ে দিতে হচ্ছে, তার আর কি গতিমুখ সে সন্ধান করতে পারে?

একটি শিশু, নিরপরাধ শিশু, মায়ের দেহে বাসরত ক্যান্সার জীবাণু তাকে পৃথিবীর আলোই দেখতে দিলোনা; এবং তার মা বিষয়টা টেরই পেলোনা।



২।

ঘ -

রাকীব আজ কোথাও যাবেনা এই চত্বর ছেড়ে। আজ না, মায়ের শত্রুদের নিশ্চিহ্ন না করে সে আর কোথাও কখনোই যাবেনা। তার রক্তকণাদের ঝড়োয়া গতি আর হৃদয়ের দেয়ালে সে গতির আঁছড়ে পড়া প্রচন্ড ভাবেই টের পাচ্ছে। কতক্ষণ এভাবে চলছে সে যানেনা, সে শুধু জানে সে তার মায়ের দিকে ধেয়ে আসা পঙ্গপালকে অনবরত শর নিক্ষেপ করে যাচ্ছে; তার শরীরে তাদের কুমন্ত্র লাফিয়ে এসে অবশ করে ফেলতে চাইছে কিন্তু মায়ের প্রতিরক্ষায় এসব মন্ত্রকে সে তার দেয়াল পেরিয়ে এগুতে দিচ্ছেনা। তার খুব ক্লান্ত লাগে; কোন ঝড় এসে তার হাতে ভর করে সেখান থেকে এক শর লক্ষ শর হয়ে যায়, লক্ষ শরের আঘাতে লক্ষ ছিটা রক্ত- রক্ত নাকি ক্লেদ -বোঝা যায়না ক্লেদ নাকি ক্লেদের সমুদ্র। সে দেখে উপরে আকাশ থেকে মা তার দিকে তাকিয়ে হাসছে- হাসছে নাকি কাঁদছে?



শফিক সাহেব কেবিনে ঢুকেই জানালেন আর বিপদ নেই, দুটো ব্লক এখন এক্কেবারেই পরিষ্কার। এখন শুধু শুয়ে বসে এক সপ্তাহের ছুটি উপভোগ করা। শফিক হাসতে হাসতেই লক্ষ করলেন তার বার্তা এসেছে। তিনি রাকীব কে বিদায় দিয়ে বাইরে এসে ডাক্তারের কক্ষের দিকে যাচ্ছেন বার্তা দেখতে দেখতে।



নিজের কর্মচারীর প্রতি এত দায়িত্বশীল লোক এর আগে দেখেনি সোহানা। জানেনা চিনেনা তবু এই মানুষটা গত দুই দিনেই তার মনে কেমন শক্ত ছবি এঁকে দিয়েছে নিজের। সে পেছন থেকে ডাকবে এমন সময়েই লোকটা ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যায়। সে দৌঁড়ে গিয়ে ধরে তাকে স্ট্রেচারে শোয়ায়, চারপাশের সবাই তাকিয়ে আছে তার দিকেই। তার খুব অসহায় মনে হচ্ছে- এত মানুষ এই করিডোরে একজনেরও এগিয়ে এসে হাত লাগানোর সময় নেই - একটা মানুষ অসুস্থ হয় পড়েছে! এমন কেন হয় এমন কেন হয় এই সব ভাবতে ভাবতে ডিউটি ডাক্তারের কাছে ছুটে যায়। স্ট্রেচারের চাকার দ্রুত ঘর্ষণ আওয়াজেই সে বেরিয়ে আসে ডাকতে হয়না, স্টেথোস্কোপ যন্ত্রের কাঁটায় কোন অভিব্যাক্তি দেখা যায়না। সোহানার চোখ দেখে চমকে উঠে মারুফ, এই মেয়ে কাঁদতে পারে এটা তার জানা ছিলোনা। কয়েক মূহুর্তের জন্যে সোহানার মুখে মোহিনী

ভাসতে থাকে। মারুফের সহ্য হয়না সে দৃশ্য। নিজেকে প্রচন্ড অপরাধী মনে হতে থাকে, কথা না বলে সে ছাদে চলে যায়। উপর থেকে নিচের সব কিছু এত ছোটো আর গতিময় দেখায় কেনো সে বুঝতে পারেনা। কিন্তু এই এত উপরে এত বড় নিজেকে মারুফের খুব জঘন্য মনে হয়; আর তাই নিচের দিকে গতির দিকে ভেসে ভেসে ছোটো হওয়ার দিকে লাফিয়ে যেতে তার ভালো লাগছে।



৩।

ঘ -

হাফীজ যদিও তার ভাইয়ের সাথে যুদ্ধে যায়নি, যদিও সে শান্তি বাহিনীতে ছিলো, যদিও সে মারা যায়নি; সে তার ভাইয়ের নামে মন্যুমেন্ট গড়েছে, নিজের নামে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছে, দেশের জন্য রাজনীতির জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে। গোলাপী আপা তাকে না চিনলেও তার কদর না করে পারেনা। গোলাপী আপাকে স্বপ্নে দেখার কথা বলবে বলবে চিন্তা করেও হাফিজ তা চেপে যায়, আর গোলাপী আপার করে ফেলা প্রস্তাবে বোকাটে সম্মতির হাসি দেয়। মুখ ফসকে মনে হলেও আসলে পরিকল্পিত ভাবেই সে উদ্বেগ জানায় তার পুত্রের না ফেরা প্রসঙ্গে। সে তো আগেই জানতো আপা কত্ত ভালো- নইলে তার পুত্রের অপরাধ সত্ত্বেও ক্ষমার এই বিরল গুণ অন্তত হাফিজের সামনে তার প্রকাশ না করলেও চলতো। হাফীজ তার পুত্রকে ওখান থেকে নিরাপত্তার ঢেঁরায় ফিরিয়ে আনতে চায়। আর তা করা যাবে কেবল খেলা ঘর ভেঙ্গে দিলেই। গোলাপী আপাকে

তার হাওয়া মনে হয় গোপণে নিজেকে আদমও।



চোখ খুলে মণিষা দেখে তার কোলের কাছে কুন্ডুলি পাকিয়ে শুয়ে আছে স্বপন। আজ পাঁচ দিন পর ঘুমুচ্ছে ছেলেটা। মণিষার স্লোগানগুলো স্বপনের কন্ঠে যেনো অবয়ব পায়, নেচে বেড়ায়। ওকে নিয়ে ভাবতে তার ভালো লাগছে, দুশ্চিন্তাও কম হচ্ছেনা। মণিষা আহত না হলেতো বাসায়ই ফিরতোনা। মঞ্চ নিয়ে, তাকে নিয়ে, তপনকে নিয়ে এত দৌঁড়াদৌঁড়ি! নিজেকে না ভূলে গেলে এসব করা যায়না, সে কারণেই বুঝি তার চিন্তা মণিষাকে করতে শুরু করতে হচ্ছে...



৪।

গ -

--তপণের ওস্তাদে আইসা টেম্পু ঈস্টান্ডের মালিকের লগে কথা কওয়ে দিছে ডাক্তারের। তারা কইছে আর কোন সমস্যা নাই। লও তুমি আমার লগে বাড়ি লও।

--আমার তপণে যেখানে গিয়া নিজেরে বাজী ধরছে সেখানে আমিও একবার ঘুইরা আসতে চাই। আপনে আমার লগ নিবেন?

--চলো, তয় আমারে আবার আজানের আগেই মসজিদে যাইতে হইবো। এহনো গোসলই করি নাই, আমার লাইগা কি মুসল্লিরা বাইরে খাড়ায়া থাকবো নাকি?



এতো মানুষ, এতো গান, এতো আন্দোলন; তপণের বাপের মাথা ঘুরায়। সে একদিকে বইসা পড়ে না তাদের মতো, ঘুইরা ঘুইরা দেখতে থাকে।

--মোল্লা সাব আপনে চইলা যান। আমি আর একপাক হাসপাতালে ঘুইরা তারপর যামু।

--আর থাইকা কি হইবো চলো। আমি মিলাদ পড়ায়ে দেবো মসজিদে, এবদত বন্দেগী কইরা আল্লার কাছে দোয়া করলে সব ঠিক হইয়া যাইবো।

--কিন্তু মন যে মানেনা...

--আইচ্ছা ঠিক আছে, তুমি পরে আইসো, কিন্তু... দেরী কইরোনা, দিন কাল সুবিধার না।



৪।

ঘ -

তপণের বাপে হাসপাতালের গেইটে দাঁড়ায়ে টেলিভিশন দেখতে দেখতে চা খাইতেছে আর ভাবতেছে ভগবানের জগৎ কত বিচিত্র- এমন সময় খবরে দেখে মোল্লা সাবেরে কতগুলা পুলিশে ঘিইরা ধরছে আর তারে জিগাইতেছে---

--ওই নাম কি? তোর নাম কি?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.