নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য বড়ই কঠিন

সত্য যে কঠিন; কঠিনেরে আমি ভালবাসিলাম

ক্লাউনবয়৮৭

পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী মোবারক হো!!!

ক্লাউনবয়৮৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নবী-রসুলগণ কি আসলেই নিষ্পাপ_______?

১৪ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:০২

সকল নবী-রসূল বা আম্বিয়া আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালামগণই ছিলেন আল্লাহ্‌ পাক-এর খাছ ও মনোনীত বান্দাগণের অন্তর্ভূক্ত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্‌ পাক বলেন, “আল্লাহ্‌ পাক যাকে ইচ্ছা (আম্বিয়া আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস্‌ সালামগণকে) মনোনীত করেন।” (সূরা শুয়ারা ১৩)

আল্লাহ্‌ পাক আরো বলেন, “আল্লাহ্‌ পাক ফেরেশ্‌তা ও মানুষের মধ্যে থেকে রসূল মনোনীত করেন।” (সূরা হজ্জ ৭৫)

অর্থাৎ আম্বিয়া আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালামগণকে আল্লাহ্‌ পাকই খাছভাবে মনোনীত করেন। কারো পক্ষে সাধনা বা রিয়াজত মুশাক্কাত করে কস্মিনকালেও নবী-রসূল (আলাইহিমুস্‌ সালাম) হওয়া সম্ভব নয়। আর তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন ওহীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কুরআন শরীফ-এর একাধিক স্থানে ইরশাদ হয়েছে, “আমি তাঁদের (আম্বিয়া আলাইহিমুস্‌ সালামগণের) প্রতি ওহী পাঠাতাম।” (সূরা ইউসূফ ১০৯, সূরা নহল ৪৩, সূরা আম্বিয়া ৭)

অর্থাৎ আম্বিয়া আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস্‌ সালামগণের যাবতীয় কার্যাবলীই ওহীর দ্বারা পরিচালিত হতো। যার প্রেক্ষিতে আক্বাইদের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে, “সকল আম্বিয়া আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালামগণ মা’ছূম বা নিষ্পাপ।”

আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, “সকল আম্বিয়া আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালামগণই ছগীরা, কবীরা, কুফরী এবং অপছন্দনীয় কাজ হতেও পবিত্র।” (ফিক্বহে আকবর)

এ উছূলের ভিত্তিতে আহ্‌লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর আক্বীদা হলো, কোন নবী-রসূল আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম কখনো ভুল-ত্রুটি, গুণাহ্‌, পাপ, খতা, লগজেশ ইত্যাদি কিছুই করেননি। ইচ্ছাকৃত তো নয়ই, অনিচ্ছাকৃতও নয়। (শরহে আক্বাইদে নসফী, ফিক্বহে আকবর, তাকমীলুল ঈমান, আক্বাইদে হাক্কাহ্‌)

অতএব, যারা নবী-রসূল আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালামগণের গুণাহ্‌ বা ভুল সম্পর্কে বলে থাকে, তারা আক্বাইদ ও ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞ বা মূর্খ থাকার কারণে এবং কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর সঠিক ব্যাখ্যা না বুঝার কারণে আম্বিয়া আলাইহিমুস্‌ সালামগণের শানে এরূপ বেয়াদবীমূলক ও কুফরী কথাবার্তা বলে থাকে। উল্লেখ্য, আম্বিয়া আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালামগণের সাথে কতটুকু আদব রক্ষা করতে হবে, সে প্রসঙ্গে কিতাবে একটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়,

আশেক্বে ইলাহী, ইমামুশ্‌ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, ইমাম মারূফ কারখী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রধান খলীফা ও সাইয়্যিদুত্‌ ত্বইফা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি-এর পীর ছাহেব, হযরত ইমাম সাররী সাক্‌‌তী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি যিনি তাঁর যামানায় আল্লাহ্‌-এর লক্ষ্যস্থল এবং ইমামুশ্‌ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত ছিলেন। তিনি একবার আল্লাহ্‌ পাক-এর নবী, হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্‌ সালামকে স্বপ্নে দেখে প্রশ্ন করেছিলেন, হে আল্লাহ্‌ পাক-এর নবী, হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্‌ সালাম! আপনার অন্তরে আল্লাহ্‌ পাক-এর মুহব্বত সত্যিকারভাবেই প্রবল, তারপরেও আপনি কেন আপনার ছেলে হযরত ইউসুফ আলাইহিস্‌ সালাম-এর জুদাইয়ের (বিচ্ছেদের) কারণে তাঁর মুহব্বতে ৪০ বছর যাবত কেঁদে কেঁদে আপনার চক্ষু মুবারক নষ্ট করেছিলেন? এ কথা বলার সাথে সাথে গায়েব থেকে নেদা (আওয়াজ) হলো, “হে হযরত সার্‌রী সাক্‌তী! নবী (আলাইহিমুস্‌ সালাম)দের শানে সাবধানে কথা বল।” এরপর হযরত ইউসুফ আলাইহিস্‌ সালামকে তাঁর সামনে পেশ করা হলে তিনি দেখে বেহুশ হয়ে পড়েন এবং এভাবে একাধারে ১৩ দিন ১৩ রাত বেহুশ থাকার পর হুঁশ ফিরে পান। তখন গায়েব থেকে নেদা হয়, আল্লাহ্‌ পাক-এর নবী (আলাইহিমুস্‌ সালাম)দের শানে এরূপ কথা বললে তাদের অবস্থা এরূপই হয়ে থাকে। (তাযকিরাতুল আউলিয়া)

উপরোক্ত ওয়াকিয়া বা ঘটনার আলোকে প্রতিভাত হয় যে, আম্বিয়া আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস্‌ সালামগণের শানে তাঁদের শানের খিলাফ কথা বলা সম্পূর্ণই নিষিদ্ধ। অতএব, আম্বিয়া আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস্‌ সালামগণের শানে প্রতিক্ষেত্রেই তাঁদের শান ও মর্যাদা রক্ষা করে কথা বলতে হবে। তাঁদের প্রতি সর্বাবস্থায় সুধারণা বা ছহীহ্‌ আক্বীদা পোষণ করতে হবে এবং যে সকল আয়াত শরীফ, হাদীছ শরীফ ও ঘটনাসমূহ বাহ্যতঃ নবী-রসূল আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালামগণের শানের খিলাফ ও ছহীহ্‌ আক্বীদা পরিপন্থী তা পরিহার করতঃ শান ও ছহীহ্‌ আক্বীদাসম্মত অর্থ ও ব্যাখ্যা গ্রহণ করতে হবে। হযরত ইমাম সাররী সাক্‌‌তী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি-এর ঘটনা আমাদের এ শিক্ষাই দেয়।

এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, আম্বিয়া আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস্‌ সালামগণের প্রতি যথাযথ আদব রক্ষা করার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের বরকতময় জীবনীতেও রয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে যে, একদা জনৈক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি বড় না হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বড়? জবাবে বিশিষ্ট ও মর্যাদাবান ছাহাবী হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অত্যন্ত হিকমতপূর্ণ জবাব দিলেন এই বলে যে, তিনি অবশ্যই আমার চেয়ে অনেক বড় (মর্যাদাবান)। তবে আমি দু’বছর আগে বিলাদত লাভ করেছি। (সুবহানাল্লাহ্‌)

অতএব, বিশিষ্ট ও মর্যাদাবান ছাহাবী হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর উপরোক্ত হিকমতপূর্ণ কথা বা বক্তব্য দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, হযরত আম্বিয়া আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস্‌ সালামগণ সম্পর্কে খুব আদব ও সতর্কতার সাথে কথা বলতে হবে। কারণ বেয়াদব সম্পর্কে হযরত জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “বেয়াদব আল্লাহ্‌ পাক-এর রহ্‌মত থেকে বঞ্চিত।” (মসনবী শরীফ)

স্মরণীয় যে, আম্বিয়া আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস্‌ সালামগণ ভুল করা তো দূরের কথা, কোন প্রকার অপছন্দীয় কাজও তাঁরা করতেন না। বরং সর্ব প্রকার অপছন্দনীয় কাজ থেকেও পবিত্র। এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়,

“একবার আল্লাহ্‌ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুজরা শরীফ-এ বসা ছিলেন। এমতবস্থায় এক ব্যক্তি এসে আল্লাহ্‌ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাৎ করার অনুমতি চাইলেন। এ সংবাদ উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দিক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট পৌঁছালেন। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সে ব্যক্তিকে অপেক্ষা করতে বললেন। এ কথা বলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর পাগড়ী মুবারক, কোর্তা মুবারক ইত্যাদি গুছগাছ করে নিলেন। এমনকি হুজরা শরীফ থেকে বের হওয়ার মুহূর্তে পানির গামলাতে নিজের চেহারা মুবারক দেখে গুছিয়ে নিচ্ছিলেন। তা দেখে সে সময় হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনিও কি এরূপ করেন?’ তিনি বললেন, ‘কিরূপ?’ হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, ‘এরূপ পরিপাটি।’ এর জবাবে আল্লাহ্‌ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আমরা আল্লাহ্‌ পাক-এর নবী ও রসূল। আমাদের কোন কাজ কারো অপছন্দ হলে, সে ঈমানহারা হয়ে যাবে।” (আল মুরশিদুল আমীন)

অতএব, আম্বিয়া আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস্‌ সালামগণ যে, কতটুকু অপছন্দীয় কাজ থেকে বেঁচে থাকতেন, এ হাদীছ শরীফ থেকে বর্ণিত ঘটনা তারই প্রমাণ। তাহলে কি করে এ কথা বলা যেতে পারে বা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে যে, আম্বিয়া আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস্‌ সালামগণ ভুল-ত্রুটি, গুণাহ্‌, নাফরমানী ইত্যাদি করেছিলেন? বস্তুতঃ এরূপ আক্বীদা পোষণ করা সম্পূর্ণই হারাম ও কুফরী এবং ঈমানহারা তথা বেঈমান হওয়ার কারণ।

আরো উল্লেখ্য যে, আল্লাহ্‌ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারীদেরকে “রাবী” বলা হয়। এই রাবীগণের মধ্যে যাঁরা প্রথম শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত, তাঁদেরকে বলা হয় “ছেক্বাহ্‌ রাবী।” হাদীছ শরীফ বিশারদ রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহিমগণ “ছেক্বাহ রাবী” হওয়ার জন্য যে মানদণ্ড নির্ধারণ করেছেন, তার মধ্যে মূল বিষয় হচ্ছে- (১) আদালত ও (২) জব্‌ত।

“জব্‌ত” হলো প্রখর স্মরণশক্তি যা একবার শুনলে আর কখনো ভুলে না। আর “আদালত”-এর মধ্যে চারটি শর্ত। তার মধ্যে প্রধান দু’টি হলো (ক) তাক্বওয়া, (খ) মুরুওওয়াত।

(ক) “তাক্বওয়া” হচ্ছে কুফরী, শেরেকী, বিদ্‌য়াতী, ফাসিকী কাজ থেকে বেঁচে থাকার সাথে সাথে কবীরা গুনাহ থেকে এমনকি ছগীরা গুনাহও বার বার করা থেকে বেঁচে থাকা।

(খ) “মুরুওওয়াত” হচ্ছে অশালীন, অশোভনীয়, অপছন্দনীয় এমনকি দৃষ্টিকটু কাজ থেকে বিরত থাকা। যেমন- রাস্তায় হেঁটে, হেঁটে খাদ্য খাওয়া, রাস্তায় অট্টহাস্য করা, চিৎকার করা ইত্যাদি।

আরো উল্লেখ্য যে, হাদীছ শরীফ বিশারদ রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহিমগণ তাঁদের বর্ণিত হাদীছকে “মওজূ” বা বানোয়াট বলে সাব্যস্ত করেছেন, যারা জীবনে একবার মাত্র ইচ্ছাকৃতভাবে হাদীছ শরীফ-এর ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলেছেন বলে প্রমাণিত হয়েছে। আর যারা জীবনে ব্যক্তিগতভাবে মিথ্যা বলেছেন বলে প্রমাণিত হয়েছে তাদের বর্ণিত হাদীছ শরীফকে “মতরুক” বা পরিত্যাজ্য বলে সাব্যস্ত করেছেন। (তাদরীবুর রাবী, মুকাদ্দামাতুশ শায়খ, মীযানুল আখবার)

এখন ফিকিরের বিষয় এই যে, হাদীছ শাস্ত্র বিশারদ রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহিমগণ আল্লাহ্‌ পাক-এর বান্দা ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মত হওয়া সত্ত্বেও তাদের মতে আল্লাহ্‌ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করার ক্ষেত্রে রাবীগণকে “বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী বা ছেক্বাহ রাবী” হিসেবে মনোনীত বা চিহ্নিত করতে ছেক্বাহ রাবীর যদি এত শর্ত-শারায়েত ও যোগ্যতার প্রয়োজন হয়, অর্থাৎ যদি কেউ জীবনে একবার মিথ্যা বলে তাহলে ছেক্বাহ রাবী হওয়া তো দূরের কথা তার কোন হাদীছই গ্রহণযোগ্য নয় বলে শর্তারোপ করা হয়েছে। এরপর ছগীরা গুণাহ্‌ তো দূরের কথা যা সাধারণ মুরুওয়াতের খিলাফ, যেমন রাস্তায় হেঁটে হেঁটে যদি কেউ খাদ্য খায় সেও ছেক্বাহ্‌ রাবীর অন্তর্ভূক্ত হতে পারে না। তবে যিনি হাদীছ বিশারদ রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহিমগণসহ সকলেরই রব ও খালিক, তিনি তাঁর পবিত্র কালাম বর্ণনা করা বা পৌঁছে দেয়া বা ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে যাঁদেরকে নবী ও রসূল (আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস্‌ সালাম) হিসেবে মনোনীত করেছেন, তাঁদের জন্য কি মানদন্ড নির্ধারণ করেছেন বা কতটুকু শর্তারোপ করেছেন? তাঁদেরকে কতটুকু যোগ্যতা দান করেছেন? আর তাঁরা কতটুকু মাহ্‌ফুজ ও মা’ছূম হওয়া শর্তারোপ করেছেন? আর ছেক্বাহ্‌ রাবীর তুলনায় তাঁদের কত বেশী যোগ্যতা, মা’ছূম ও নিষ্পাপ হওয়া প্রয়োজন? বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, আম্বিয়া আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস্‌ সালামগণ ছেক্বাহ্‌ রাবীগণের চেয়েও বহু বহু গুণে যোগ্যতা সম্পন্ন মাহ্‌ফুজ ও মা’ছূম। অতএব, তাঁদের দ্বারা ভুল-ত্রুটি, গুণাহ্‌ ইত্যাদি প্রকাশ পাওয়ার প্রশ্নই উঠে না।

মূলতঃ তাদের এ কথা সঠিক নয় বরং ভুল ও কুফরীযুক্ত। প্রকৃত ঘটনা হলো- আল্লাহ্‌ পাক যখন হযরত আদম আলাইহিস্‌ সালাম ও হযরত হাওয়া আলাইহাস্‌ সালামকে আদেশ করেছিলেন যে,“আপনারা এই (গন্দম) গাছের নিকটবর্তী হবেন না।" (সূরা বাক্বারা ৩৫)

তখন তাঁরা আল্লাহ্‌ পাক-এর আদেশ অনুযায়ী সে গাছের নিকটবর্তী হননি। বরং উক্ত গাছের অনুরূপ বিপরীত দিকের অন্য একটি গাছ দেখিয়ে ইবলিস শয়তান এসে হযরত হাওয়া আলাইহাস্‌ সালামকে মিথ্যা কছম খেয়ে বলেছিল যে, যদি আপনারা এই গাছের ফল খান, তবে আপনারা ফেরেশ্‌তা হয়ে যাবেন অথবা স্থায়ীভাবে বেহেশ্‌তে বসবাস করতে পারবেন। কোন কোন বর্ণনা মুতাবিক তখন হযরত হাওয়া আলাইহাস্‌ সালাম সে গাছ হতে ফল এনে শরবত বানিয়ে হযরত আদম আলাইহিস্‌ সালামকে খাইয়েছিলেন। অপর বর্ণনায় ফল কেটে খাইয়েছিলেন। এ ঘটনা হযরত আদম আলাইহিস্‌ সালাম-এর অজান্তে সংঘটিত হয়েছিল। সুতরাং যা অজান্তে সংঘটিত হয়, তা কি করে ভুল বা অপরাধ হতে পারে? বাস্তবিক তা কখনোই ভুল হতে পারে না।(সমূহ তাফসীরের কিতাব)

এর মেছাল বা উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায়, হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর শাহাদাত-এর ঘটনা। তিনি শাহাদাত বরণ করেছিলেন, এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। উনাকে ইসলামের শত্রুরা শহীদ করার জন্য একে একে পাঁচবার বিষ পান করায়। কিন্তু আল্লাহ্‌ পাক-এর রহ্‌মতে তিনি প্রত্যেক বারই বেঁচে যান। ষষ্ঠবার তাঁকে শহীদ করার জন্য তাঁর পানির কলসিতে, যে কলসির মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখতেন, যেন তার ভিতরে কিছু ফেলা না যায়, সেই কাপড়ের উপর শত্রুরা হিরক চূর্ণ বিষ তাঁর অজান্তে মিশিয়ে দিয়েছিল। তিনি গভীর রাতে হিরক চূর্ণ বিষ মিশ্রিত পানি কলস থেকে ঢেলে পান করেন, যার ফলশ্রুতিতে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। যা তাঁর অজান্তেই সংঘটিত হয়েছিল। (সিররুশ্‌ শাহাদাতাঈন, শুহাদায়ে কারবালা, সীরাতে ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা)

এখন প্রশ্ন উঠে, শরীয়তের দৃষ্টিতে তাঁর শাহাদাতকে আত্মহত্যা বলতে হবে, না ভুল করার কারণে ইন্তিকাল করেছেন তা বলতে হবে? মূলতঃ উপরোক্ত দু’টির কোনটাই বলা যাবে না। যদি কেউ কোন একটি বলে, তবে সে মিথ্যা তোহমত দেয়ার গুনাহে গুনাহগার হবে, যা কুফরীর শামিল হবে। তদ্রুপ হযরত আদম আলাইহিস্‌ সালাম-এর ঘটনাও। যা তাঁর অজান্তে সংঘটিত হয়েছিল। অনুরূপ অন্যান্য নবী-রসূল আলাইহিমুস্‌ সালামগণের ঘটনাও। কাজেই এক্ষেত্রে হযরত আদম আলাইহিস্‌ সালাম-এর গুণাহ্‌ হওয়া তো দূরের কথা প্রকৃতপক্ষে তাঁর কোন ভুলও হয়নি।

এখন কেউ বলতে পারে, যদি হযরত আদম আলাইহিস্‌ সালাম-এর কোন ভুলও না হয়ে থাকে তবে, وَعَصٰٓي اٰدَمُ رَبَّهُ এ আয়াত শরীফ-এর সঠিক অর্থ কি?

মূলতঃ এ আয়াত শরীফ-এর সঠিক অর্থ হলো, “(মহান আল্লাহ্‌ পাক-এর হিকমত হেতু) হযরত আদম আলাইহিস্‌ সালাম-এর দ্বারা (তাঁর অজান্তেই) তাঁর রবের হুকুমের খিলাফ কাজ সংঘটিত হয়ে গেল।”

অনুসণীয় মুহাক্কিক ও মুদাক্কিক্বগণ উক্ত আয়াত শরীফ-এর এরূপ অর্থই করে থাকেন। আর এরূপ অর্থই নবী-রসূল আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস্‌ সালামগণের শান ও আহ্‌লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর আক্বীদাসম্মত। অর্থাৎ হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর অজান্তেই তাঁর দ্বারা বিষ পানের ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কারণে যেরূপ একথা বলা জায়িয নেই যে, তিনি ভুল ও আত্মহত্যা করেছেন। ঠিক তদ্রুপ হযরত আদম আলাইহিস্‌ সালাম-এর দ্বারা তাঁর অজান্তে গন্দম খাওয়ার কাজ সংঘটিত হওয়ার কারণে এ কথা বলা জায়িয হবে না যে, হযরত আদম আলাইহিস্‌ সালাম ভুল-ত্রুটি, খতা, লগজেশ, নাফরমানী, গুণাহ্‌, পাপ, আদেশ অমান্য ইত্যাদি করেছেন।

মানুষ সঠিক ইতিহাস না জানার কারণে এবং কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর সঠিক ব্যাখ্যা না জানার ও না বুঝার কারণে নবী-রসূল আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস্‌ সালামগণের শানে বেয়াদবীমূলক কুফরী কথাবার্তা বলে থাকে। আর উনাদের শানের বিন্দুমাত্র খিলাফ কথাবার্তা বলা সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরী। এ ধরনের কুফরী আক্বীদা থেকে বেঁচে থাকা সমস্ত মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.