নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ক্লান্ত চরণ

I

কার্ল মাকর্স

I'm sooo coool

কার্ল মাকর্স › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাতের কলকাতা একেবারেই নিরাপদ নয়

২৩ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:৪৩

ধর্ষণ, নিগ্রহ বা শ্লীলতাহানির ঘটনার জন্য কামদুনি বা পশ্চিমবঙ্গের অন্য কোনো অজপাড়াগাঁ অথবা মফস্বলের কোনো নাম না জানা শহরে যেতে হবে কেন? হাতের কাছেই তো রয়েছে শ্বাপদসঙ্কুল এক জঙ্গল, যার নাম কলকাতা! ডিডব্লিউ, নতুন বার্তা



শনিবার রাত দুটো। এক পুরুষ আর এক মহিলা হেঁটে যাচ্ছেন। হঠাৎই পিছন থেকে তাদের প্রায় ঘাড়ের ওপর এসে পড়ল মোটরবাইকে সওয়ার দুই যুবক। পিছনে বসা ছেলেটি হেঁকে কিছু বলছে। কান পেতে শুনে বোঝা গেল, নেশাগ্রস্ত জড়ানো গলায় সে ওই অপরিচিত তরুণী মেয়েটির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের ইচ্ছা প্রকাশ করছে। আর অতি অবশ্যই সেটা এত মার্জিত ভাষায় বা পরিশীলিত ভঙিতে নয়। হাবেভাবে এবং ভাষায় যতটা কুৎসিত আর অপমানজনক হওয়া সম্ভব তার থেকে বেশিই অশালীন ও বেপরোয়া হতে চাইছে সে।



কিন্তু আরো বড় আতঙ্ক অপেক্ষায় ছিল মেয়েটির জন্য, যখন শরীরের ক্ষিদে মেটানোর জান্তব চাহিদা নিয়ে ওই দুই যুবক এবং তাদের আরও দুই সঙ্গী তরুণীকে তাড়া করল। বেঁচে যাওয়ার কথা নয়, কিন্তু মেয়েটি ও তার সঙ্গীর উপস্থিত বুদ্ধি সেই রাতে ওদের অবিশ্বাস্যভাবে বাঁচিয়ে দিয়েছে নিশ্চিত ধর্ষণ এবং সম্ভাব্য প্রাণহানির হাত থেকে এবং এই ঘটনা কিন্তু প্রহরাহীন নির্জন মফস্বল এলাকা কামদুনিতে ঘটেনি, ঘটেছে দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত যোধপুর পার্ক-লেক গার্ডেন্স এলাকায়।



সেই রাতের আক্রান্ত ওই তরুণী ২২ বছরের এক ফরাসি নাগরিক। তিন মাসের জন্য তিনি কলকাতায় এসেছিলেন অলিয়স ফ্রঁসে-তে শিক্ষানবিস কর্মী হিসেবে। ১৪ জুলাই ফ্রান্সের জাতীয় দিবস উপলক্ষে আগের দিন অলিয়স ফ্রঁসে-তে একটি অনুষ্ঠান ছিল। রাত সাড়ে দশটায় সেই অনুষ্ঠান শেষ হয়, যার পর গড়িয়াহাটে এক বন্ধুর বাড়িতে ওই তরুণী গল্প করতে যান। সেখানে আড্ডা শেষ হয় রাত দুটো নাগাদ এবং অলিয়স ফ্রঁসেরই এক সহকর্মী, যিনি নিজেও ফরাসি, মেয়েটিকে বাড়ি পৌঁছে দিতে ট্যাক্সি করে যোধপুর পার্ক যান। তখনই ঘটে ওই ঘটনা। আক্রান্ত হওয়ার পর দুই মদ্যপ যুবককে কথার ছলে আটকে রেখেছিলেন ওই ফরাসি যুবক এবং নিজেদের ভাষায়, অর্থাৎ ফরাসিতে ওই তরুণীকে বলেছিলেন গা ঢাকা দিতে। ফলে মেয়েটি দৌড়ে গিয়ে এলাকার একটি আবাসনের গেট টপকে ভিতরে ঢুকে আশ্রয় নেয়ার সুযোগ পেয়ে যান। কিন্তু তার পর, শহর কলকাতার লজ্জা বাড়িয়ে ওই ফরাসি তরুণী পরের দিনই দেশে ফিরে গিয়েছেন। তার হয়ে তার ওই সঙ্গী পুরুষটি পরদিন থানায় অভিযোগ জানাতে যান। সেখানে পুলিশ তাকে নানা প্রশ্নের মধ্যে এটাও জিজ্ঞেস করে যে মেয়েটি কেমন ধরনের পোশাক পরে ছিল!



এই ঘটনার পর কলকাতায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারী বিদেশিনীরা অনেকেই একটু ত্রস্ত। তবে ওরা প্রায় সবাই বলেছেন, কলকাতাকে আলাদা করে বেছে নেয়ার কোনও কারণ নেই। তবে ভারতীয় উপমহাদেশের অনেক শহরই এখন আর গভীর রাতে নিরাপদ নয়। বিশেষ করে উত্তর ভারতে, দিল্লী বা নয়ডায় বসবাস করার অভিজ্ঞতা যাদের আছে, সেই মহিলারা এক বাক্যে বললেন, কলকাতা সেই তুলনায় অনেক নিরাপদ।



কিন্তু একটা নিয়ম সব শহরেই মেনে চলা উচিত, যে অযথা অ্যাডভেঞ্চারাস হয়ে পরিচিত পরিধির বাইরে বেশি এদিক-ওদিক না যাওয়া৷ বললেন দেবত্রি, যিনি দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন ইতালির একটি এনজিও-র সঙ্গে এবং প্রায়ই বিদেশ থেকে তাদের ভলান্টিয়াররা কলকাতায় থাকতে আসতেন। এই ভলান্টিয়াররা, যাদের বেশিরভাগই মহিলা এবং কমবয়সী, কাজের প্রয়োজনে এদের প্রায় রোজই শহরের বাইরে, গ্রাম-মফস্বল এলাকাতে যেতে হয়।



দেবত্রি বলছেন, ওই বিদেশিনীদের একটা কথা ভালোভাবে বুঝিয়ে দেয়া হয় যে, পরিচিত এলাকা মানে নিরাপদ এলাকা। যেসব লোকের সঙ্গে রোজ দেখা হচ্ছে, তাদের পরিচিত যারা, তাদের সঙ্গেও আলাপ-পরিচয় হয়েছে, তাদের থেকে বিপদের সম্ভাবনা কম। সেই চেনাশোনার বৃত্তের বাইরে যাওয়াই উচিত নয়। যদি যেতেই হয়, তাহলে কখনই একা নয় বরং দল বেঁধে যাওয়া উচিত। আর শহরে সামাজিক মেলামেশার ব্যাপারেও দেখা গেল একই নিয়ম মেনে চলেন আমেরিকা থেকে আসা হেদার।



৩২ বছরের হেদার যুক্ত আছেন শহরের এক নামি বেসরকারি হাসপাতালের একটি প্রকল্পের সঙ্গে, গত দেড় বছর হলো কলকাতার অস্থায়ী বাসিন্দা। তিনি বললেন, দক্ষিণ কলকাতার যে পাড়ায় তিনি পেয়িং গেস্ট থাকেন, সেখানেও সচরাচর একা চলাফেরা করেন না। তার কারণ, এটা হেদারের অভিজ্ঞতা যে কলকাতার মানুষজন একটু বেশিই আলাপী। এদের অধিকাংশই আসলে খুব ভালো মানুষ, কিন্তু কিছু লোকের তো অসদুদ্দেশ্যও থাকে! যে কারণে ওরা সবাইকেই এড়িয়ে চলেন।



এ ব্যাপারে খুব কঠোর নিয়ম মেনে চলেন আমেরিকার মেয়ে কোর্টনি স্টিফেনস। ১৯৯৪ সালে কোর্টনি প্রথম কলকাতায় এসেছিলেন বেড়াতে। বছর দুয়েক আগে একটি তথ্যচিত্র তৈরির সূত্রে আবার তিনি কলকাতায় আসেন এবং বেশ কিছু মাস এই শহরের বাসিন্দা হয়ে ছিলেন। তারপর থেকে তার কলকাতায় যাতায়াত লেগেই আছে, কিন্তু কোনোদিন কোনো অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়নি তাকে। তার একটাই কারণ, কোর্টনির কঠোর নিয়ম ছিল নিজের জন্য, ‘নো লেট নাইট, নো পার্টি’।



প্রথমবার ভারত ভ্রমণে এসেই কোর্টনি টের পেয়েছিলেন, মেয়েদের ব্যাপারে এই দেশের পুরুষদের একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়। সেটা নির্দোষ কৌতূহল থেকে ধর্ষণের বাসনা বা নেহাতই শারীরিক নিগ্রহ করে মজা লোটার প্রবৃত্তি, অনেক কিছুই হতে পারে। ফলে লেট নাইট পার্টির মজাটা নিজের দেশের জন্যই তুলে রাখেন কোর্টনি। তবে কেউ যদি সেটা করতে চায়, তার মানেই এই নয় যে তার জন্য কোনো মেয়েকে বিকৃতকাম পুরুষদের লালসার শিকার হতে হবে। কলকাতার মতো আধুনিকমনস্ক শহরের কাছে সেটা প্রত্যাশিত নয়, কোর্টনির সাফ কথা!



রাতের কলকাতায় এই নিগ্রহের ঘটনা হয়ত কিছুদিন পরে লোকে ভুলে যাবে। আক্রান্ত মেয়েটিই যেখানে শহর ছেড়ে, দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছে, সেখানে সংবাদমাধ্যমও খুব বেশিদিন হয়ত আগ্রহী থাকবে না এই খবর নিয়ে। তবে শোনা যাচ্ছে, প্রশাসন বিষয়টি খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। যে চার জন এই ঘটনায় ধরা পড়েছে, তাদের যাতে কঠোর শাস্তি হয়, সেইভাবেই নাকি মামলা সাজাচ্ছে পুলিশ। তবে ওদের শাস্তি হবে কিনা, সেটা জানা না থাকলেও একটা ব্যাপার নিশ্চিত, বিদেশী পর্যটকদের জন্য লেখা গাইড বইতে এরপর লেখা হবে, মহিলারা কলকাতায় সাবধানে থাকবেন! ভারতের স্বঘোষিত সাংস্কৃতিক রাজধানী বলে গর্বিত শহরের পক্ষে সেটা বড়ই লজ্জার বিষয় হবে, তাই নয় কি?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.