![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অভ্যুত্থান ঘটিয়ে প্রেসিডেন্ট মুরসিকে উৎখাত করার প্রতিবাদে ব্রাদারহুড সদস্য ও সমর্থকদের মিসরজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। ব্রাদারহুডের প্রতিবাদ বিক্ষোভকে ‘সহিংসতা ও সন্ত্রাস’ আখ্যা দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী আল সিসি। জনগণকে বিশেষত মুরসি বিরোধীদের ব্রাদারহুডের তথাকথিত সহিংসতা ও সন্ত্রাস রুখবার জন্য সড়কে নেমে বিক্ষোভ জানানোর ডাক দিয়েছেন তিনি।
একজন ডেপুটি প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা ভোগ করছেন আল-সিসি দেশে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় জনগণকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান এজন ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী জানান কিভাবে এটি একটি বিস্ময়কর প্রশ্ন বটে! হানাহানি ও বিশৃঙ্খলা দমন করে দেশকে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা উপহার দেয়ার তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব বিসর্জন দিয়ে উত্তেজনা ও বিক্ষোভ সংঘাতের পথে জনগণকে উসকে দেয়ার অবাঞ্ছিত ভূমিকা নিতে তার আগ্রহ ও উৎসুক্য দেখেও বিস্ময় না মেনে পারা যায় না।
অভ্যুত্থানের পরপরই মুসলিম ব্রাদারহুডের বহু নেতা ও কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রতিবাদী বিক্ষোভে সড়কে নামতে বাধ্য করা হয়েছে মুসলিম ব্রাদারহুডকে। ক্ষমতাচ্যুত মুহাম্মদ মুরসির প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্বহাল ও আটক নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে মিসর জুড়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে মুসলিম ব্রাদারহুড। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে চলমান হানাহানি ও খুনোখুনির অবসান ঘটিয়ে একটি শান্ত সহনীয় পরিবেশ জনগণকে উপহার দেয়ার পরিবর্তে মুরসিবিরোধী জনগণের একাংশকে বিক্ষোভ-সংঘাতে নেমে আসার আহ্বান জানিয়ে দেশজুড়ে অরাজকতা ছড়ানোর অদ্ভুত অবিমৃষ্যকারিতা দেখিয়ে চলেছেন মিসরের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আল-সিসি।
হোসনি মুবারক বিরোধী বিক্ষোভ ও মোবারকের বিদায়ের পর থেকে শুরু করে মিসরীয় রাজনীতির পরবর্তী গতিপ্রবাহ ও ঘটনাবলীর মধ্য দিয়ে একটি বার্তা এ পর্যন্ত স্পষ্ট হয়ে উঠেছেÑ সেটি হচ্ছে একক কোনো পার্টি কোনো একটি মাত্র মতবাদ বা একটি মাত্র শক্তির দ্বারা শাসিত চালিত হওয়ার ব্যাপারে সংখ্যাগরিষ্ঠ মিসরীয় জনগণ মনে হয় যেন অনীহ হয়ে উঠেছেন। এ হচ্ছে একদল পর্যবেক্ষকের অবলোকন। ২০১১ জানুয়ারিতে যে দাবিতে তারা আন্দোলনে নেমেছিলেন, তাদের সে দাবিটি আজো জীবন্ত রয়েছে। খাদ্য, স্বাধীনতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার ছিল সেদিন তাদের দাবি। তাদের ধারণা মুরসি তাদের দাবি পূরণে ব্যর্থ রযেছেন। কিন্তু মুরসি সমর্থকেরা যখন বলেন, একটি মাত্র বছরে জনগণের দীর্ঘদিনের অভাব অভিযোগ পূরণ করা ও দূর করা শুধু মুরসি কেন, কোনো সরকারের পক্ষেই সম্ভব ছিল না।
পর্যবেক্ষকদের অভিমত হচ্ছেÑ নিরাপত্তা নির্বিঘœ রাখার কাজ, অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করার কাজ এবং ‘সুশাসন প্রবর্তনের কাজ’ সড়কে নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে কোনোদিনও কোথাও সম্পন্ন হয়নি এবং মিসরেও হতে পারবে না। উল্টো জান-জীবনে দুর্ভোগ আরো বেশি বৃদ্ধি পাবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মুরসির মুক্তিকামী ব্রাদারহুড সদস্য কর্মীদের বিরুদ্ধে রাস্তায় সংঘাতে নামার অভ্যুত্থান সমর্থকদের যে ডাক দিয়েছেনÑ এমন দুর্বিবেচক আহ্বানের ফলশ্রুতিতে পরস্পরবিরোধী পক্ষগুলোর দ্বারা সৃষ্ট রক্তক্ষয়ী সহিংসতার অভিজ্ঞতায় দু’-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া মিসরসহ মধ্যপ্রাচ্যের সবগুলো দেশকে কয়েক দশক ধরে ভুগে আসতে হয়েছে। জেনারেল সিসির কথাবার্তায় দায়িত্বহীনতা ও ঔদ্ধধ্য দু’টোই পাওয়া যাচ্ছে। নিজে ভুলে যাচ্ছেন এবং জনগণকেও তিনি ভোলাতে চাচ্ছেন যে, সৈনিকের শাসনে সুশাসন কোথাও কায়েম হয়নি এবং সেনাবাহিনী তাদের শাসিত সবক’টি দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজিয়েছে। মিসরের দুর্ভাগ্য বলতে হয়, দেশকে সমস্যামুক্ত করে জনগণকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেয়ার যোগ্যতা রাখেন যেÑ মানুষগুলো, সেনাবাহিনী তাদের ক্ষমতায় আসতে দিচ্ছে না এবং জনগণের ভোটে তারা ক্ষমতাসীন হলে তাদের ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হচ্ছে।
ব্রাদারহুড আন্দোলন করে যাচ্ছে মুহাম্মদ মুরসিকে প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্বহাল দেখার দাবিতে। প্রতিবাদ বিক্ষোভের মাধ্যমে আরো গুরুত্বপূর্ণ যে বার্তাটি দেশবাসী এবং বিশ্ববাসীকে তারা পৌঁছে দিতে চাচ্ছে সেটি হচ্ছে, জনগণের বৈধ ভোটে নির্বাচিত একজন জননেতাকে অগণতান্ত্রিক একটি পক্ষ অস্ত্রের জোরে ক্ষমতা থেকে অপসারিত করেছেÑ গণতন্ত্রবাদী বিশ্ব কোনোদিনও যা মানতে পারে না। পেছনের কদিনের আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী তাদের শ’য়ের বেশি নিরস্ত্র নেতাসদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকা-ের প্রতিবিধানও চেয়েছে মুসলিম ব্রাদারহুড। একটি শক্তিশালী দেশী-বিদেশী জোটবদ্ধ কুচক্রী মহল মোবারক পরবর্তী মিসরে ইসলামপন্থী ও সেক্যুলারিস্ট নামের দু’টি পরস্পর বিরোধী মতবাদের ভিত্তিতে মিসরীয় জনগণের মধ্যে অত্যন্ত গভীর ও বৈরী বিভাজন সৃষ্টি করেছে।
দেশের প্রশাসনে প্রচলিত প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতির অপসারণে মিসরীয় রাজনীতিতে সৃষ্ট বিভক্তি ও বৈরীতার ধার ও তেজ অনেকখানি হ্রাস পাবে মনে করেন বহু মিসর হিতৈষী রাজনীতিবিশ্লেষক। বলা হয় শুধু উদরপূর্তি হন মানুষের জীবনের জন্য যথেষ্ট নয়। কিন্তু তারপরও বলতে হয় যে খাবর বাদ দিয়ে জীবন বাঁচে না। মিসরীয় রাজনীতির ডামা ডোলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শহুরে গরীবেরা দেশটির অর্থনীতির অবস্থা শোচনীয়। মিসরের মোট ঋণের পরিমাণ হচ্ছে জিডিপির ৮৭ শতাংশ এবং দেশটির অভ্যন্তরীণ ঋণ হচ্ছে ৭৪ শতাংশ। দেশে অস্থিতিশীলতা ও অসুরক্ষা বেড়ে চলার পাশাপাশি নিয়মিত ১২ শতাংশ হারে সুদসহ দেশটির ঋণের বোঝা আকাশ ছুঁতে চলেছে।
২০১২-২০১৩ অর্থবছরে বাজেটে বরাদ্দ সরকারি খরচের একচতুর্থাংশ অর্থাৎ ৬১৫ বিলিয়ন মিসরীয় পাউন্ডের মধ্য থেকে ১৪৭ বিলিয়ন শুধু সুদ বাবদ দেশটিকে পরিশোধ করতে হচ্ছে। জ্বালানি ও খাদ্য ও সরকারি ভর্তুকির পরিমাণ দিয়ে পৌঁছেছে ১৬৭ বিলিয়ন মিসরীয় পাউন্ডে। এই বাশিটিও হচ্ছে সরকারি বাজেটে বরাদ্দ মোট পরিমাণ এক চতুর্থাশের বেশি। এক কথায় সুদ পরিশোধ বেতন এবং ভর্তুকি খাতেই ব্যয় হয়ে যাচ্ছে মিসরীয় বাজেটের মোট অংশের ৭৫ শতাংশ। জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য মিসরীয় সরকারের হাতে অবশিষ্ট থাকছে যে পরিমাণÑ তা হচ্ছে মোট বাজেট বরাদ্দের এক-চতুর্থাংশেরও কম।
ওদিকে দেশে অস্থিতিশীলতার কারণে উৎপাদন কমছে এবং রাজস্ব সংগ্রহও হ্রাস পাচ্ছে। মিসরের যে কোনো সরকারের জন্য এই দুর্বিষহ আর্থিক দুরবস্থা সামাল দেয়া হবে খুবই কঠিন কাজ।
সত্য বলতে কি মুরসির পূর্ববর্তী সরকারের অব্যব্যবস্থাপনার কারণে মিসরের অর্থনীতি দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে এবং দেশ হিসেবে মিসর অকার্যকর ঘোষিত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে এসে উপস্থিত হয়েছে। আল-জাজিরা।
©somewhere in net ltd.