![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রেজাউল করিম রনি
প্রবেশিকা:এই লেখায় শুরুতেই একটা শোক প্রস্তাব পেশ করতে হচ্ছে। সলিমুল্লাহ খান নামে আপনারা যে বুদ্ধি চর্চাকারি লিখিয়েকে জানতেন তিনি আত্নহত্যা করেছেন। এখন কেবল বেঁচে আছেন সন্ত্রাসী সলিমুল্লাহ খান (নব জন্ম)। তিনি বুদ্ধির চর্চা বাদ দিয়া এখন গালিবাজ মাস্তান হয়েছেন। তার নব জন্ম হয়েছে সন্ত্রাসী সলিমুল্লাহ খান হয়ে। প্রতিপক্ষ বা ভিন্ন চিন্তাকে বুদ্ধি দিয়ে নয়, গালিগালাজ করে দমন করতে চান। দমন করতে চান নিজ পক্ষের লোক লেলিয়ে দিয়ে। দেখাতে চান তার পক্ষে আছে শাহবাগীরা। তিনি আমার শিক্ষক। তার বুদ্ধি চর্চাকারি রুহের মাগফেরাত কামনা করি। তার যেন আবারও বুদ্ধিবৃত্তিক নব জন্ম হয় এটাই আমার কামনা। ফলে তার শিক্ষার ধারই আজ আমাকে লিখতে প্ররোচিত করেছে। উদ্দেশ্য, বুদ্ধির চর্চা করতে এসে আমরা যেন নিম্ন শ্রেণীর গালাগালি বা সন্ত্রাস কে পাশকাটায়া, বুদ্ধির চর্চাকে বুদ্ধির জায়গায় রাখতে পারি। সন্ত্রাসী সলিমুল্লাহ খানের কবল থেকে আমরা যেন রেহাই পাই। আশা করি এতে আমার মরহুম বুদ্ধি চর্চাকারি শিক্ষক বেজার হবেন না। যদি না তিনি বুদ্ধি চর্চা কে স্থায়ী ভাবে ইতিমধ্যে সন্ত্রাসের ধর্ম/খাসলত বলে গ্রহন করে না থাকেন। প্রবেশিকা শেষ করব, আমার শিক্ষকের একটা আর্শীবাদের কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করে।
একবার রাস্তায় তিনার সাথে আমার দেখা (তখনও তিনি বুদ্ধির নামে সন্ত্রাসী জিবন শুরু করেন নাই) নানা কথার পর আমি কইলাম, মহাত্না লোকে তো আমারে বেয়াদব ডিকলার করছে। জনাব খান বুদ্ধিদিপ্ত হাসি বিকিরণ করে উত্তর করলেন, আপনার বেয়াদবি দীর্ঘজিবি হোক। তিনার দোয়া যে অক্ষরে অক্ষরে ফলেছে তার প্রমাণ আপনারা এখন হাতে-নাতে পাবেন।
গালিবাজি ও সন্ত্রাসের বিবরণ:
শাহবাগে মধ্যবিত্তের কালচারাল প্রোগ্রামকে ‘রাজনীতি’ ঠাওরে অনেকেই সেই ইভেন্টের নিধিরাম সর্দার সাজতে চেয়েছিলেন। এদের মধ্যে জনাব খান এককাঠি সরস। জনগন আন্দোলন বিসর্জন দিয়েছে অনেক আগেই কিন্তু তিনি সর্দারির আশায় এখনও ‘সর্বজন’ নামক একটা আত্নপ্রচারপত্র বের করে যাচ্ছেন। পাবলিকের কাছে যেটা বিসর্জন উনার কাছে তা সর্বজন। এবং এই পত্রের মাধ্যমে তার অপছন্দের ব্যাক্তিদের নিন্দা প্রচার করছেন স্ব-দলবলে। শুধু তাই নয় আহমদ ছফার মত একজন গুরুত্বপূর্ণ চিন্তকের সম্মানহানি করেছেন, যিনি ছিলেন ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বজ্রধ্বনি। আওয়ামী নষ্টামীর বিরুদ্ধে আপোশহীন লড়াকু। আহমদ ছফা জীবন গেলেও এই আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের সাথে আপোষ করতেন না। এই ইভেন্ট ‘র’ মদদ পুষ্ট আওয়ামী চাল এটা চাউর হওয়ার পরেও উনার হুশ হয় নাই। এটা নিয়ে অলরেডি নানা কথা উঠেছে। তিনি চালিয়ে যান, তা নিয়ে কথা বাড়িয়ে ফায়দা নাই।
৫ মার্চ ২০১৩ তারিখের প্রচার পত্রে (সর্বজন) তিনি ‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষম পরিণাম’ নামে এক বিষের পটকা ফাটাইছেন। ইট মারলে পাটকেল খাইতে হয় আমরা এই নীতি এখনও নেই নাই।আমরা তাকে ঢিল ছুঁড়ব না। এই নীতি দেশের জটিল ও সংকটময় মুহূর্তে ঠিক কাজ বলে আমরা মনে করি না।‘কুকুরের কাজ কুকুর করেছে কামড় দিয়েছে পায়’ তাই আমরাও তাকে কামড় দিতে যাব না। তাই পটকা বাজির জবাবে আমরা কোন বোমা ফাটাইতেছি না। আমরা কেবল এই পটকা বাজির জবাবে গালিগালাজের খানজাতীয় সাধনা, মাস্তানি ও সন্ত্রাস সম্পর্কে হুশিয়ার করে দিব। সেই উছিলায়, খান সাহেবের কথার সূত্র ধরে বর্তমান বাংলাদেশের তর্কগুলা আসলে কি, তার একটা নোক্তা দেবার চেষ্টা করব। যারা চিন্তাশীলতা বা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় আস্থা রাখেন বাকি কর্তব্য আপনারা নিজগুনেই ঠিক করবেন। এমন ঈমান আপনাদের উপর আছে।
তো সেই লেখায় কি ছিল? প্রথমত তাঁর বুদ্ধির সীমা কতদূর তার একটা সামাজিক দলিল হয়ে রইল এই লেখা। সবচেয়ে নিন্দনীয় দিক হচ্ছে সময়ের সুযোগ নিয়া মূলত ফরহাদ মজহারের নামে নিন্দা ছড়ানোর ইশতিহার লিখেছেন তিনি।
ফরহাদ মজহার এর সাথে তার চিন্তার ফারাক থাকতেই পারে, সেটা সমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চাকে বরং সমৃদ্ধ করত। কিন্তু কুতসা রচনার যে দলিল তিনি হাজির করেছেন এর কলঙ্ক তিলক তার কপালে এখন চিরকাল শোভা পাবে। লেখাটিকে, তার নিজেকে মূর্খ হিসেবে প্রমানের অজ্ঞান চেষ্টা হিসেবেও দেখতে পারেন।
ফরহাদের লেখা তার বদ হজম হয়েছে। হতেই পারে। কিন্তু বদহজম সামলাতে না পেরে তিনি পরিবেশ দূষিত করে ফেলেছেন। ফলে আমারা বাধ্য হয়েছি কয়টা কথা সাফ সাফ হাজির করতে। আলোচনা-পর্যালোচনা বা তর্কে ‘ইন্টারপ্রিটেশন অব ভায়োলেন্স’ বলে একটা ব্যাপার আছে। সেটা কখনও কখনও জরুরত আকারেও হাজির হয়। আপসোস জনাব খান সেটা করতে পারলেও তাকে সন্ত্রাসী বলা হত না। তাই তাকে বাধ্য হয়েই গালিবাজ ও সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করতে হচ্ছে। নাইলে তিনাকে অন্তত সাইকো-সফিস্ট বলে পাশ কাটাতে পারতাম। তিনি সেই সুযোগ রাখেন নাই।
যাই হোক, যে লেখার প্রেক্ষিতে আমাদের আলোচনা, ইস্যুটা ছিল চলতি গণহত্যা। তিনি শুরু করেছেন সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্ন দিয়া। তো তিনি যে পলিটিক্যাল ইস্যু বোঝেন না তার নজির হিসাবে মেলা দলিল দেবার দরকার নাই।
তিনি এখানে সাম্প্রদায়িকতার যে খিচুরি পাক করেছেন তা শুরু হয়েছে সরকারের গণহত্যার প্রেক্ষিতে। মানে, গনহত্যার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই শুরু হয়েছে হিন্দু বাড়িতে আগুন দেবার রাজনীতি। কিন্তু এইটা নিয়া তিনি বুদ্ধিজিবি হিসেবে নিরব। মাস্তান হিসেবে শেখ হাসিনার মত সরব। তিনি তার সন্ত্রাস ফলাইছেন খালেদা জিয়ার ভাষ্যকে কেন্দ্র করে।
এখানে আপনে দেখবেন তার যুক্তিবাদি সন্ত্রাস হাসিনা ছাড়া সবাইকে আক্রমণের বৈধতার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মাঝখানে বাড়াবারি যা করেছেন, ফরহাদ মজহারের প্রতি তার সমস্ত ব্যাক্তিগত ক্ষোভ এই প্যাকেজে হাজির করার মধ্য দিয়ে। এবং এইসব করতে যেয়ে আগে তিনি সওয়ার হতেন পশ্চিমের সেকেন্ডারি পাঠ্য লাঁকা বা এইটাইপের লেখকদের কাঁধে। কিন্তুু এই খানে তিনি উকিল হিসেবে ধরেছেন মার্জার নামের তার প্রিয় ‘গুরু’ বিলাইকে। এবং তিনি আমাদের জানাইছেন এই বিলাই নিজের রক্ত নিজেই খাইয়া থাকে। এই পরিচয় উল্লেখ করবার কারণ আছে, একটু পরে আমরা দেখব জনাব খানের রক্ত পিপাসা তার ‘গুরু’ মার্জার বিলাইয়ের চেয়ে হাজারগুন উপরে।
জাতের নামে বজ্জাতি:
যাইহোক এইবার আমরা তিনার লেখার দিকে তাকাই, উনার লেখার শিরোনাম: ‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষম পরিনাম’ উনি শুরু করছেন খালেদা জিয়ার অভিভাষণকে ব্যাবচ্ছেদ করতে করতে। তো তিনি খালেদা জিয়ার কথা থেকে আমাদের বুঝাইলেন যে, দেশে সত্যি সত্যিই হিন্দু বাড়িতে আগুন দেবার মত জঘন্য ঘটনা ঘটেছে। এইটা বুঝাইতে যায়া তিনি বেগমের অভিভাষণ কে দলিল ধরে শুরু করলেন। এই প্রসঙ্গে সার কথা যা বললেন,
‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করিবার চেষ্টা বিভিন্ন সময়ে গণবিচ্ছিন শাসকরা করিয়া আসিয়াছেন- এ সত্যে কাহারও সন্দেহ নাই। তাহা হইলে তিনি কি বলিতে চাহিতেছেন এই মুহূর্তে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজের অপকর্মগুলিও বর্তমান ‘গণবিচ্ছিন্ন’ শাসক অর্থাৎ শেখ হাসিনা সরকার করিয়াছেন? ঘটনা সত্য হইলে তিনি বলবেন না কেন, একশতবার বলিবেন। বলা তাঁহার অধিকার মাত্র নহে, কর্তব্যও।’
কথা অতি মধুর সন্দেহ নাই। কিন্তু মধুর পরতে পরতে বিষ তিনি রাইখা দিছেন। বিরোধী দলের নেত্রী হিসেবে বেগম নিশ্চই খারাপ কাজ করে নাই। কিন্তু খান সাহেব এতে সন্তুষ্ট না। তার আপত্তি হল,‘কে বা কাহারা এই সকল ঘটনা ঘটাইতেছে সে বিষয়ে তিনি কিছু বলিয়াছেন বলিয়া মনে হল না।’ তাহলে খানকে প্রমাণ করতে হবে, বেগম জিয়া জানতেন, ৫ মার্চ এই কুকর্ম কে বা কারা করেছে। কিন্তু তিনি বলেন নাই। বেগম জিয়া হাসিনার মতো ‘গণবিচ্ছিন্ন’ শাসকদের দোষ দেয়ায় সলিমুল্লাহ খান শেখ হাসিনার পক্ষাবলম্বন করার জন্য অস্থির হয়ে উঠলেন। খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সাথে দ্বিমত করার অধিকার জনাব খানের আছে। কিন্তু কথা হল, এই ধরণের ঘটনার দায় কি তাহলে ক্ষমতাসীনদের নয়? যে কেউ বলবে, যারা এই কুকর্ম করেছে তাদেও চিহ্নিত করা, গ্রেফতার করে শাস্তি দেবার দায় তো শেখ হাসিনা সরকারের। কিন্তু খান সেটা চান না। এখানে তিনি স্পষ্ট ভাবে হাসিনা দরদী। আবার একই সাথে তিনি, বেগমের কর্তব্যের প্রতি মনযোগি হইতে যায়া একবারও ম্যাডামকে প্রশ্ন করেন না! তিনার আমলে কি এই ঘটনা ঘটে নাই? আগুন জ্বলে নাই? লুটতরাজ হয় নাই? হিন্দু মেয়েদের শরীরে হাত পড়ে নাই? তিনি কি তার কোন প্রতিকার করেছিলেন? এখন তাইলে কোন লাজে এইসব কথা মুখে তুলেন? হিন্দু ভোটের লোভে?
এই সব প্রশ্ন করতে কেন জনাব খান শরমিন্দা হয়েছেন তা আমরা জানি না। তিনি কেবল, আহ্লাদ করে বললেন, ‘আমরা কেন তাহার কথা বিশ্বস করিব?’ এবং অভিমানি বালকের মত অভিযোগ করলেন, বেগম যা আড়াল করতেছে তার নাম ‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতি।’ আমরা এইখানে এসে হোঁচট খেয়েছি মহাতœা সলিমুল্লাহ খানের ‘সাম্প্রদায়িকতা’ নিরুপনের দৌড় দেখে।
খান লিখেছেন, ‘আমাদের মনে হয় বেগম জিয়া কিছু একটা আড়াল করিতেছেন। যাহাকে তিনি আড়াল করিতেছেন সেই বস্তুর নামই ‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতি’।’ সাম্প্রদায়িকতা সম্পর্কে খান সাহেবের চিন্তার দৌড় আপাতত এতটুকুই। তো বেগম জিয়া কি আড়াল করছেন? সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাগরিক অধিকার হরণ করতে যারা উঠে পড়ে লেগেছেন তারাই এই হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজের জন্য দায়ি। বেগম এই সত্যই আড়াল করেছেন। মহাতœা খানের আড়ালতত্ত্ব নিয়া আমরা হাসাহাসি করতে চাই না। বরং তিনি ইনিয়ে বিনিয়ে কি বলতে চান সেই দিকে যাওয়া যাক।
এইটা তিনি বুঝলেন সংখ্যাগুরুর স্বার্থের দিক থেকে। মানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ট তাই তারা এমন কাজ করতেই পারে। খান লিখতেছেন, ‘যাহারা মুসলমান পরিচয়কে বড় করিয়া হিন্দু বাড়িতে হামলা চালায় তাহারাই ‘সাম্প্রদায়িক মুসলমান।’
পাঠক আপনে নিশ্চয়ই এতক্ষনে ধরে ফেলেছেন এইখানে পৌছায়েই জনাব খান ‘আপন’ সাম্প্রদায়িকতার ঘোমটা খুললেন।
নাচতে যেহেতু নেমেছেন তাই ঘোমটা তো খুললেনই এইবার নিজেরে উলঙ্গও করলেন।এই উলঙ্গ সাম্প্রদায়িক নাচের তালে বেহুশ হয়া- তিনি হিন্দুদের বানায়া দিলেন, বাঙালি জাতিয়তাবাদি। খান থেকে কোট করি,
‘হিন্দুরা এই দেশে ‘হিন্দুরাষ্ট্র’ কায়েম করিতে চান? নহিলে কি চাহেন তাহারা? তাহারা চাহেন (অন্যান্য দ্রব্যের মধ্যে) ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’,তাহারা চাহেন ‘ বাঙালি জাতিয়তাবাদ।’ এই তো তাহাদের অপরাধ?’
এখন জনাব খানের সাম্প্রদায়িক চরিত্র আবিস্কার করার জন্য অপনাদের কোন জটিল সাইকো এনালাইসিস করতে হবে না। যে কোন সাধারণ হিন্দু ধর্মের মানুষের সাথে কথা বললেই বুঝবেন। আপনে যদি তাকে অফার করেন, ভাই তোমার হিন্দুত্ব দিয়া আমার বাঙ্গালিত্ব নিবা? এবং এতে যদি সে আপনাকে জানোয়ার বলে গালিদেয় তার দায় আপনার না, এর দায় সলিমুল্লাহ খানের আর শেখ হাসিনার।
সরল ভাবে বললে, যারা ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দেয় না যারা বাঙ্গালি জাতিয়তাবাদে বিশ্বাস করে না (জনাব খান তো ভাল মেটনমি বুঝেন, ‘জয়বাংলার’ মেটনমি তো আর বলতে হবে না)। তারাই এই দেশে সাম্প্রদায়িক। খান সাহেব যে আওয়ামীলীগের নিম্ন পর্যায়ের লাঠিয়াল, মোটামুটি এটাও পরিস্কার হল। সাম্প্রদায়িকতা অনেক বড় একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়। এই বিষয়ে তার সঙ্গে তর্ক করা বৃথা। পাঠককে বিনয়ের সাথে জানিয়ে রাখি আলাদা একটা লেখায় বিষয়টি পরিস্কার করার চেষ্টা করব। তো খান একটি দলের পক্ষাবলম্বন করে প্রমাণ করতে চাইছেন যারাই আওয়ামী রাজনীতির বিরোধী তারাই সাম্প্রদায়িক। আমরা তার এই সরলীকরণের দোষটাই মাত্র এখানে আলোচনা করার সুযোগ পাব। সাথে স্পষ্ট হবে জনাব খানের ক্যাডারগিরি। এটাও দেখবার বিষয় যে, যারা এই ধরণের হামলার শিকার তারা গরিব বা নির্যাতীতি শ্রেণীর মানুষ। ফলে সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্ন শ্রেণীর প্রশ্নের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। একে শুধু হিন্দু মুসলমান ভাববার কোন কারণ নাই।
বাংলাদেশে হিন্দু বাড়িতে আগুন বা কোন ছোট গোষ্ঠির উপর নির্যাতনের সময় এখানকার শাসক শ্রেণীর লোক গুলো সব সময়ই তাদের পিঠ চাপড়ায়। মায়ার অশ্রু ঝরায়। এখন যেমন জনাব খান হাসিনার সাথে কন্ঠ মিলিয়ে হিন্দু দরদি হয়ে গেছেন। সাম্প্রদায়িকতার সামাজিক-অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কারণ নিয়া কোন কথা না বলে জনাব খান ক্ষমতাসীনদের পক্ষাবলম্বন করেছেন। যারা ভুক্তভোগি তারা কিন্তু এসব মায়া কান্নার অর্থ ঠিক ঠিক বুঝেন। এই সব অভিনেতারা রাষ্ট্র গঠনের মধ্যেই যে এ ধরণের অপরাধের আয়োজন সম্পন্ন করে রেখেছে সেই ব্যাপারে কোন রা করেন না। শুধু তাই নয় রাষ্ট্রের এই বর্বরতাকে আরও পোক্ত করতে ব্যতি-ব্যাস্ত।
আসল কথায় আসি, ধর্মনিপেক্ষতা কি কোন ব্যাক্তির চাইবার বিষয় মাত্র? না ব্যাক্তি তার সামাজিক পরিমন্ডলে নাস্তিক/হিন্দু/মুসলমান/পাহাড়ি ইত্যাদি নানা পরিচয়ে বিরাজ করে? গণতান্ত্রিক বা ধর্মনিরপেক্ষ হয় রাষ্ট্র। সেটা হাওয়ার জোরে বা কোন পন্ডিতের নামের গুণে হয় না, সেটা কায়েম করতে হয়। যা আমরা এখনও করতে পারি নি। কিন্তু সলিম খান জোর করে হাসিনার সাথে মিলে তাকে ‘বাঙালি’ বানায়া ছাড়বেন। এই যে ব্যাক্তির নিজ পরিচয়কে মুছে ফেলার জবরদস্তি এটাকেই হাসিনা ভায়া সলিমুল্লাহ খানের সন্ত্রাস বলেছি। আর এই খাস্লতের জন্যই হাসিনা বা তার মত শাসকরা হলেন ফ্যাসিস্ট। তিনি এটা এখন করছেন অস্ত্র দিয়া মুসলমানদের বুকে গুলি করে। আর সলিম খানরা হলেন এই প্রকল্পের কাগুজে সন্ত্রাসী। এখানে হাসিনা-সলিম গলায় গলায় না শুধু কলিজায় কলিজায় মিল।
কথাটা আবার ভেঙ্গে বলি, আমাদের বক্তব্য হল,সম্প্রদায় হিসেবে মুসলমান যেমন সাম্প্রদায়িক হতে পারেন ঠিক তেমনি সম্প্রদায় হিসেবে ‘বাঙালি’রাও ঘোরতর সাম্প্রদায়িক হতে পারেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদ আসলে সাম্প্রদায়িক রাজনীতিরই অপর নাম। সেটা বাঙালিরা না বুঝলেও পাহাড়ি জনগন ঠিকই বোঝেন। বাংলাদেশের একজন নাগরিক সে একই সঙ্গে হিন্দু এবং বাঙালি হতে পারেন। বা মুসলমান ও একই সাথে ‘বাঙালি’ পরিচয়কে প্রধান না করে তিনি মুসলমান পরিচয়েই সমাজে বিরাজ করতে চাইতে পারেন। কিন্তু মহাত্না খান চান সবাই ‘বাঙালিত্ব’ কে তাদের একমাত্র পরিচয় হিসেবে গ্রহণ করুক। আর ঠিক এখানেই সকল সমস্যার গোড়া নিহিত।
আমরা বলি, সমাজে যে যার আত্মপরিচয় নিয়া থাকুক। সেটা ভাষা হোক, সংস্কৃতি হোক বা ধর্ম হোক- সামাজিক পরিসরে সবই থাকতে পারে। কিন্তু কোন একটি বিশেষ পরিচয়কে সকলের একমাত্র পরিচয় বানাবার যে রাজনীতি তা ভয়ংকর। এরাই বাংলাদেশকে সম্প্রতি ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। সলিমুল্লাহ খান তাদের বরকন্দাজ হয়েছেন।
ধর্ম নিরপেক্ষতার প্রশ্নে আসি। আমরা বলি গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র মানেই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র কায়েম করতে হলে আমাদের গনতান্ত্রিক বিপ্লব করতে হবে। সলিমুল্লাহ খান যেহেতু সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করতে চান, তিনি সেটা চান না। তিনি চান, সাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতিয়তাবাদি রাষ্ট্র। আর তার সঙ্গে বাড়তি জুড়ে দিতে চান ধর্ম নিরপেক্ষতা। যারা বাঙালি জাতিয়তাবাদি রাষ্ট্র কয়েম করতে চান, সেখানে পাহাড়িদের যেমন দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বানাতে চান, তেমনি ধর্মকেও নির্মূন করতে আগ্রহী। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রত্যেকে শুধু নাগরিক। এখানে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান হবার যেমন সুযোগ নাই, তেমনি এখানে কারো ‘বাঙালি’ হবারও সুযোগ নাই। এই ধরণের আতœপরিচয় সামাজিক ক্ষেত্রে থাকুক, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তাতে বাগড়া দিবে না। কিন্তু সামাজিক পরিচয় যখন রাজনৈতিক ভাবে প্রতিষ্ঠা করবার দাবি ওঠে তখন তা ভয়ংকর রুপ পরিগ্রহণ করে। যার পরিণতি বাংলাদেশে আমরা ভোগ করছি। গলদটা দেখেন, সমাজে আমি মুসলমান হতে পারি কিন্তু রাষ্ট্রের চোখে তো আমি নাগরিক। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র মানেই এমন একটি রাষ্ট্র যা বিশেষ কোন জাতির আত্নপরিচয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। ধর্ম, জাতি ইত্যাদি এখানে রাষ্ট্র থেকে আলাদা। কিন্তু খান সাহেব এটা বুঝেন বলে মনে হয় না। যে কারেণে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলার পরও তাকে ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলতে হয়। আসলে রাষ্ট্র, গনতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা বলতে কী বোঝায় এবং এসবের পারস্পরিক সম্পর্ক কী তা মালুম হইতে মহাত্না খান সাহেবের মারত্নক ঘাটতি আছে। আমরা এতটুকুই আপাতত বলছি।
তো এই কাগুজে সন্ত্রাসী এর পর ঢুকে পড়বেন কিতাবে। ফলাইবেন অবিদ্যার ইতিহাস গরিমা। পন্ডিত ধরোতক্তা মারো পেরেক স্টাইলে বলতেছেন, ‘সমাজে নানা ধর্ম আছে কিন্তু রাষ্ট্র আছে মাত্র একটি। তাই রাষ্ট্রের ক্ষেত্র হবে ধর্মনিরপেক্ষ। সোজা কথা।’
এই যে অনুমান তিনি করলেন, এর পর এই অনুমানের তলোয়ার নিয়া তিনি নিজেরে অসাম্প্রদায়িক প্রমাণ করতে ঝাপায়া পড়বেন মুসলমানদের ওপরে। রাষ্ট্র ধর্ম নিরেপক্ষ হবে আর ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র কায়েম করতে কি কি কাজ আমরা রাজনৈতিকভাবে করব এই দুইটা যে আকাশ পাতালের ফারাক তা উনি মানলেন না। সমাজে যেন কোন শ্রেণী নাই। কোন সাংস্কৃতিক বিপরীত প্রবণতা নাই, অর্থনৈতিক বৈষম্য নাই, তার কাছে এইটা কেবল ‘সোজা কথা’র মামলা। এই হোল তার রাষ্ট্র বোঝার দৌড়। পাঠক হাসবেন না। কৌতুক আরও বাকি আছে।
এইবার এই কিতাবি তার স্বস্থানে ফিরবেন, তিনি ডুকে গেলেন, মুজাফ্ফর আহমেদ এর বইয়ে। এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়া আমি কথা বলছি না। কিন্তু তিনি কেন সেখানে গেলেন তা তার কাছে যেমন স্পষ্ট না। আমাদের কাছেও তেমনি অস্পষ্ট। কেননা মুজাফফর আহমদ ধর্মে ধর্মে যে ভিন্নতার কথা বলেছেন। এবং এটাকে যে নিরিখে বুঝেছেন। পরে সঙ্কটটাকে রাষ্ট্রের মধ্যে পুরে দিয়ে যে ভাবে অবলোকন করেছেন, তা বর্তমান বাংলাদেশের চলমান গণহত্যার প্রেক্ষিত ও তার হাত ধরে যে আগুন আমাদের ঘরে লেগেছে তা বুঝবার ক্ষেত্রে ভীষণ রকম মিসগাইড করে। এই মিসগাইডটা জনাব খান পরে কাটায়া উঠতে চাইবেন ফরহাদ মজহারকে নিন্দা করে। ফাঁকে ধর্মের সমস্যাটা পাশকাটায়া তিনি আর্থনীতিবাদি সলিউশন টানলেন। মার্কস এই সব টেনডেনসিকেই বলেছেন, ভালগার মেটেরিয়ালিস্ট।
তিনি যুক্তি দিলেন, হিন্দু-মুসলমান যেহেতু একত্রে ব্যবসা করতে পারে, ফলে রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও তা হবে? কিন্তু কেন তা হল না এর দোষ এবার চাপাইলেন গান্ধির ওপর। পাঠক এবার বুঝে দেখেন পন্ডিতি তারে কই তুলছে। আগুন জ্বলছে ঘরে সে গেছে পানি আনতে দিল্লি। রাষ্ট্র সলিমুল্লাহ খানের কাছে অর্থনৈতিক ক্ষেত্র মাত্র। এই ধরণের চিন্তা নিয়া আমাদের বিশেষ কিছু বলবার নাই। বিচারের ভার পাঠকের উপর ছেড়ে দিচ্ছি। এখন পাঠককে মনযোগ দিতে বলব ফরহাদ মজহারের লেখা নিয়া মিথ্যাচার ও কুতসিত আক্রমনের দিকে।
এবার তিনি কংগ্রেস আর বাংলাদেশকে একাকার করে ঝাপায়া পড়লেন, ফরহাদ মজহারের ওপর। বেছে নিলেন, ফরহাদ মজহারের একটি অভিভাষণ। তিনি ‘বাঙ্গালি জাতিয়তাবাদি রাজনীতির পরিণতি’ নামে যে ভাষণ দিয়েছেন তাকে জালিয়াতি কায়দায় ব্যবহার করে ফরহাদের চিন্তার ক্রিটিক করবার বদলে নিজেকে কম-শিক্ষিত দাবি করে, ফরহাদের শিক্ষা নিয়া বিচলিত হয়ে গেলেন। যেই লোক এখনও শিক্ষা-অশিক্ষার ভেদ মিটাইতে পারে নাই তার কাছ থেকে এখন আমাদের (অ)সাম্প্রদায়িকতা শিখতে হবে?
তিনি জানাইতেছেন,‘‘কবি ফরহাদ মজহারকে আমি এতদিন মোটামুটি ‘শিক্ষিত’ লোক বলিয়াই জানিতাম। কথাটা এমন ফলাও করিয়া বলিবার বিষয় হইত না।(পাছে কেহ অপরাধ লইবেন ভয়েই বলিতেছি আমি নিজে বড় শিক্ষিত ব্যাক্তি নহে। তিনি সম্প্রতি এক বক্তৃতায় দাবি তুলিয়াছেন রাজনীতির ক্ষেত্রে (তাঁহার ভাষায় ‘রাজনৈতিকতা ও রাষ্ট্রের স্তরে’) এসলামকে স্বীকার করিতে হইবে। কারণ দেশের মানুষ ‘ধর্মপ্রাণ’। মানুষ মানে মাত্র কি তাহা হইলে মুসলমান? এই প্রশ্নে উত্তর নাই।’’
প্রথম কথা হলো এটা হলো একটি জালিয়াতি ও চরম মিথ্যাচার। ফরহাদ মজহার একথা কোথাও বলেন নাই। ফরহাদ মজহার বলেছেন ভাষা ও সংস্কৃতি হোক, কিম্বা হোক ধর্মীয় আত্মপরিচয়- এ সবই সামাজিক ক্ষেত্রের বিষয়, সামাজিক পরিসরের ব্যাপার। সমাজে নানা ধর্মের নানা জাতের, নানান ভাষার বা নানান সংস্কৃতির মানুষ থাকতে পারে। কিন্তু সামাজিক পরিসরের পরিচয়কে যদি আমরা রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় পরিসরে টেনে তুলি, তাহলে আমরা একটা রাজনৈতিক সংকট তৈরি করি। সমাজে আমি নিজেকে বাঙালি না ভেবে মুসলমান ভাবতে পারি, সেই অধিকার আমার নাগরিক হিসেবে অবশ্যই থাকতে পারে। কিন্তু যদি তার ‘রাজনীতিকরণ’করি, আর বলি যে মুসলমান পরিচয়ই আমার এক মাত্র পরিচয় আর রাষ্ট্রকে এটাই মানতে হবে, তখন সমাজের অন্যান্য পরিচয় গুলোও তাদের আত্নপরিচয়ের ‘রাজনীতিকরণ’ করবে।
তাদের নিজ নিজ আত্নপরিচয়কেই রাজনীতির ঝান্ডা হিসেবে ঘোষণা করবে।উদাহরণ হিসেবে এখনে ফরহাদ মজহার ‘বাঙালি’ জাতীয়তাবাদের কথা বলেছেন। তিনি কখনই বলেন নি রাজনৈতিকতা ও রাষ্ট্রের স্তরে ‘ইসলামকে স্বীকার করিতে হইবে।’ তিনি ব্যাখ্যা করছিলেন বাঙালিত্বের রাজনীতিকরণের ফলে, এরই প্রতিকৃয়া হিসেবে ইসলামি রাজনীতির ঝান্ডা কি ভাবে বাংলাদেশে হাজির হয়েছে। খান এই সত্যকে সম্পূর্ণ বিকৃত করে মিথ্যাচারের যে নমুনা দেখালেন তার কোন জুড়ি নেই।
পড়েই মনে হল,এই সন্ত্রাসী কয় কি? ফরহাদ এমন কথা কোথাও তো কয় নাই। প্রমান দেই। ফরহাদ মজহারের কথাটা হল,
“যখনই আপনি আপনার ভাষা বা সংস্কৃতিকে-আপনার ভাষিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের মধ্যে ও সামাজিক পরিমন্ডলে সীমাব্ধ না রেখে তার ‘রাজনীতিকরন’ করেন তাকে পলিটিসাইজ করেন,তখনই আপনি দেশে একটি সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরি করেন” পরের প্যারায় তিনি আরও খোলাসা করে বলছেন,“আমাদের দেশে বাঙ্গালি আছে,চাকমা আছে,মান্দিরা আছেন আরও অনেক ভাষা ও সংস্কৃতি আছে। তাদের মধ্যে সামাজিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বজায় রাখা ও পরস্পরের মধ্যে আদানপ্রদানের ভিত্তিতে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধকরে তোলা সহজেই সম্ভব। পরস্পরের প্রতি ভালবাসা,শ্রদ্ধা, এবং পরস্পরের ভাষা,সংস্কৃতি ও জীবন যাপনের সামাজিক স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে সেটা খুবই সম্ভব।কিন্তু যদি ‘বাঙ্গালি’রা বলে, তাদের সংস্কৃতিই রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে একমাত্র জাতীয় পরিচয়, এটকে রাষ্ট্রের ভিত্তি হিসেবে সকলকে স্বীকার করতে হবে,তখনই সেটা অন্য ভাষা,সংস্কৃতি ও জাতিসত্ত্বাকে রাজনৈতিক ভাবে চ্যালেন্জ করে। অথচ বাঙ্গালি আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠের আত্নপরিচয় এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। এবং সেই পরিচয় অস্বীকার বা ত্যাগ করারও কোন প্রশ্ন ওঠে না। কিন্তু আপনি বাঙ্গালি বলে যদি দাবি করেন যে বাঙ্গালি জাতিয়তাবাদই আপনার রাজনৈতিক আদর্শ, একে সাংবিধানিক ভাবে রাষ্ট্রনীতির অন্তভূক্ত করতে হবে। তাহলে আপনি চাকমা সহ পাহাড়ি ও সমতলের অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বাকে রাজনৈতিক ভাবে চ্যালেন্জ ছুড়লেন। পাহাড়িরা তা মানবে না। মানে নি। মানবার কথাও নয়। তাদের আর্জি,আকুতি কিছুই অপনি শুনলেন না। বাঙ্গালিজাতিয়তাবাদকেই রাজনৈতিক,রাষ্ট্রনৈতিক ও সাংবিধানিক ভাবে প্রতিষ্ঠা করলেন। তখন কি হবে? প্রথমে তাঁরা প্রতিবাদ করবে। মানবেন্দ্রনাথ লারমা প্রতিবাদ করলেন, আপনি শুনলেন না। তারা আন্দোলনে নামলেন,আপনি তারপরেও শুনলেন না।এরপর তারা দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য অন্ত্র ধারণ করলেন। আপনি যেমন পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে বাঙ্গালি জাতির রাজনৈতিক সত্তা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ভারত থেকে সহায়তা পেয়েছিলেন তারাও ভারত থেকে সহযোগিতা পেলেন। বাঙ্গালিজাতিয়তাবাদের রণধ্বনী বাংলাদেশকে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিল। যার ক্ষত আমরা এখনও শুকিয়ে উঠতে পারিনি। নতুন করে ১৫ দশ সংশোধনীতে একালে সেই বিষফোঁড়া আবার গাড়া হয়েছে।সামাজিক, ভাষিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের ‘রাজনীতিকরণ’ বলতে কি বোঝায় তা আশা করি পরিস্কার। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জায়গা থেকে না বুজলেও অভিজ্ঞতার জায়গা থেকেই আপনারা জানেন ভাষা, সংস্কৃতি ইত্যাদির রাজনীতিকরণের অর্থ কি। এমনকি সেকুলার বনাম ইসলাম এভাবে রাষ্ট্রের ভিত্তির তর্ক তুলেও এই আকাম আপনি করতে পারেন। যদি বলেন বাঙ্গালি ছাড়া আমরা আর কোন জাতিসত্ত্বাকে রাজনৈতিক ও রাষ্টীয় ভাবে স্বীকার করি না,তাহলে অন্যদের আপনি দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করলেন। তারা তখন প্রতিবাদ জানাবে,শক্তি থাকলে অস্ত্র হাতে আপনার মতোই নিজেদের আত্নপরিচয় রক্ষার জন্য আপনার বিরুদ্ধে লড়বে।আপনার রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়বে। পারলে রাষ্ট্রকে দুই ভাগ করে ফেলবে। তাই বলছিলাম, বাংলাদেশের প্রথম গৃহ যুদ্ধের কথা ভাবুন। বাঙ্গালি জাতিয়তাবাদ কি প্রখম গৃহযুদ্ধের উস্কানিদাতা হিসেবে হাজির হয় নি? বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে কি রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করা হয় নি? কিন্তু এরাই আবার ধর্মকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করা যাবে না এই দাবি তুলে, ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে।মনে রাখবেন গৃহযুদ্ধ আওয়ামী লীগ লাগাতে জানে। আওয়ামী লীগই দেশের একমাত্র সকল ক্ষমতার মালিক? এখন তারা দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধ শুরু করেছে। নতুন যে পরিস্থিতি তারা তৈরি করেছে তাতে সমাজকে তারা দুই ভাগে ভাগ করে ফেলেছে। একদিকে আছে বাঙ্গালি জাতিয়তাবাদিরা আর অন্যদিকে আছে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ। (মুসলমানের কথা আলাদা ভাবে কিন্তু বলা নাই-রনি) যারা অবশ্যই ভাষা ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে বাঙ্গালি একই সঙ্গে ধর্মও তাদের সংস্কৃতির অংশ। তাদের আত্নপরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিন্তু আপনি নিরন্তর আর বারবার দাবি করেন ভাষা ও সংস্কৃতিই আপনার মূল পরিচয়,ধর্ম নয় তখন,নতুন এক বিরোধ আপনি তৈরী করেন। সমাজ ও সংস্কৃতির ক্ষেত্র ত্যাগ করে ভাষা ও সংস্কৃতিকে যদি রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রের স্তরে উন্নীত করে যদি আপনি দাবি করেন এই স্তরে শুধু ‘বাঙালিত্বই’ স্বীকার করা হবে ইসলামকে স্বীকার করবেন না। তখন আপনি যেমন ভাষা ও সংস্কৃতিকে রাজনৈতিক ঝান্ডা বানিয়ে সামনে দাঁড়ান, তখন আপনি চান বা না চান প্রতিপক্ষ হিসেবে ইসলামও তার ধর্মের ঝান্ডা নিয়া সামনে দাঁড়ায়। দাঁড়াতে বাধ্য।দাঁড়াবার শর্ত তৈরি হয়ে যায়। বাঙ্গালিকে আপনি বিভক্ত করেন। একদিকে থাকে বাঙালি জাতিয়তাবাদিরা অন্যদিকে থাকে ইসলাম ও ধর্মের মর্যাদা রক্ষাকরার জন্য ধর্মপ্রাণ মানুষ। আপনি তখন তাদের ধর্মান্ধ,গোঁড়া,পশ্চাদপদ এবং খুব অপছন্দ হলে রাজাকার বলে গালি দিয়ে থাকেন। এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্য বিশ্বের সহযোগিতায় তাকে ‘সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে নেমে পড়েন। আজ শেখ হাসিনা সেই দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধ শুরু করেছে। বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদি রাজনীতি বাংলাদেশের মানুষকে ‘বাঙালি’ ও মুসলমানে ভাগ করে গৃহযুদ্ধ লাগিয়ে দিয়েছে। মানুষের ধর্মানুভূতিকে আহত করা হয়েছে।’
ইচ্ছা করেই একটু লম্বা কোট করলাম। উদ্দেশ্য দুইটা। এক. সলিম খান যে কোন লেখা পাঠকরবার যোগ্যতাও রাখে না তা হাতে নাতে ধরা বা সে যে সন্ত্রাস করতেছে তা কে উদাম করা দুই. এই কথাগুলা যে এখন আমল করা অতি জরুরী তা আবার স্বরণ করিয়ে দেয়া। পাঠক এখন সলিমকে কি আপনে মূর্খ বলবেন? মূর্খ তো বটেই। এবং এই মূর্খতা নিয়া তিনি যে যুক্তিবাদিতা ফলাইছেন তা ছাত্রলীগের হাল আমলের সন্ত্রসী কর্ম-কান্ডের সমগোত্রিয়। ফরহাদ মজহার যেখানে স্পস্ট করে বলছেন ‘রাজনীতিকরণ’ এর বিপদের কথা সেখানে তিনি আবিস্কার করে বসলেন, মুসলমান কে। এখানে সলিম যে শুধু মূর্খ,সন্ত্রসী তাই নয় নিজেকে সাম্প্রদায়িকও প্রমাণ করলেন। তার যুক্তির বিকার আর এখানে আড়াল রইল না। পাঠক খুব কইরা খেয়াল করেন, তিনি কোট করার সময় কি চতুর ভাবে একটা লাইন ডুকায়া দিছেন, লাইটা হল,‘ ‘তিনি সম্প্রতি এক বক্তৃতায় দাবি তুলিয়াছেন রাজনীতি ক্ষেত্রেও (তাঁহার ভাষায় রাজনৈতিকতা ও রাষ্ট্রের স্তরে) ইসলামকে স্বীকার করিতে হইবে।’আপনারা তো উপরে ফরহাদ মজহারের বক্তব্যটা পড়লেন, সেখানে কোথায় উনি রাষ্ট্রে ইসলামকে স্বীকার করার কথা বললেন? সলিমের বিকারগ্রস্ত মাথা এটা আবিস্কার করেছে। তারপর এটা কে প্রতিষ্ঠার জন্য বলতেছেন, ‘কেন করিতে হইবে। কারণ দেশের মানুষ ‘ধর্মপ্রাণ’। মানুষ মানে কি তাহা হইলে মাত্র মুসলমান? এই প্রশ্নের উত্তর নাই।’ এইটাই হল সলিম খানের সন্ত্রসবাদি যুক্তিবিদ্যা। সে যে একটা গন্ড মূখের মত ফরহাদেরকথাটা বুঝলেন বা বুঝে থাকলে ইচ্ছা করে শুধুমাত্র নিজের পারসোনাল ক্ষোভকে কে জাহির করার জন্য মিসকোট করলেন এবং এটা সন্ত্রাসবাদি যুক্তি দিয়া প্রমান করার চেষ্টা করেই ফরহাদকে ‘অশিক্ষিত’ ঠাওরালেন। এর দ্বারা আমরা কি বুঝতে পারলাম? এক. তার বিন্দু মাত্র ইনটেলেকচুয়াল অনেস্টি নাই. দুই. একটা লেখাকে পাঠ করবার কোন তরিকা তিনি আজও রপ্ত করতে পারেন নি।তিন. ব্যাক্তিগত অপছন্দ কে বাদ রেখে কোন তর্ক করবার শালীন স¦ভাবটাও তার নাই। চার. তিনি বুদ্ধিবৃত্তিকে ব্যাক্তিগত হার-জিতের ব্যাপার মনে করেন ( তাই তিনি রাজনৈতিক ভাবে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যালোচনাকে সন্ত্রসী কায়দায় হত্যাকারী লীগের পজিশন নিলেন). পাচ. তিনি গনবিরোধী কুটক্যাচাল প্রিয় সাইকো।খান হাসিনার এই জালেম রাষ্ট্রকেই জান্নাতুল ফেরদাউস ভাতেছেন। তাই ফরহাদ মজহার যখন বলতেছেন বাঙ্গালিজাতিয়তাবাদের এই ফ্যাসিস্ট কালচারাল উত্থান ঘটছে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতির বিন্দু মাত্র তোয়াক্কা না করে তখন এর পরিণাম গৃহযুদ্ধ। শাহবাগ ফেনোমেনার পর এটা একটা শিশুও এখন বুঝে হাসিনা কি চিজ। ফলে ফরহাদ মনে করেণ যেহেতু আমাদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েমে, জনগণের ক্ষমতার প্রশ্নে আমাদের নতুন বয়ান তৈয়ার করতে হবে। ফলে মুসলমানদের উপর হাসিনা যদি রাজাকার বা জঙ্গি বলে যুদ্ধ অব্যাহত রাখে তাইলে কি ঘটনা ঘটবে এটা এখনও সলিম দিশ-পাইতেছে না। সলিম এখানে ফরহাদ প্রসঙ্গে হাসিনার গেইমটাই ফলো করছে। উল্টা ব্লেম গেইম আর কি।
এবার আলোচনা আমরা অন্যদিকে আগাই, খান লিখতেছেন, ‘বাঙালি জাতিয়তাবাদি হইলেই কি মানুষ অমুসলমান হয়ে যায়?’ সলিম যে শুধু নিম্ন মানের সাম্প্রদায়িকই নন। চরম প্রতিক্রিয়াশীল। তার কাছে বাঙ্গালি জাতিয়তাবাদকে মোকাবেলার প্রশ্নটা হিন্দ-মুসলমানের বিষয় মাত্র। তার কাছে শ্রেণীর কোন প্রশ্ন নাই। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বা ক্ষমতার কোন তর্কই যেন নাই? তাকে মূর্খ বলতে এখন আর আমি কোন দ্বিধা রাখছি না। জাহেলি রাষ্ট্রের তরফে যে ধারা একাট্টা জাতিয়তাবাদের বয়ান যে ভাবে মানুষকে কমিউনাল পজিশন নিতে বাধ্য করে সলিম এক্ষেত্রে তাই করছেন।
এই জালেমী বয়ানের জন্য তিনি বাঙালি জাতিয়তাবাদকে প্রশ্নহীন ভাবে একটা ঐতিহাসিক ভিত্তির উপর দাঁড়করানোর কাগুজে পন্ডিতির দোহাই দিয়া আবারও ফরহাদ মজহারের ইতিহাস বুঝ নিয়া প্রশ্ন তুললেন। হিন্দ-মুসলমান-পাহাড়ি ও অন্য ধর্ম বা সংস্কৃতি কে তিনি বাঙ্গালি বলে হজম করে নিতে চান। এর বাইরে গেলে, যে যার নিজ আতœপরিচয় দাবি করলে তিনি তাকে ‘রক্তখোর’ বলছেন। হাসিনা তাকে সন্ত্রাসী বলে গুলি করে মারছেন। সলিমের সাথে জর্জ বুশের এখানে কোনই তফাত নাই। তাকে আমি সন্ত্রসী বলেছি জর্জবুশের সাথে তুুলনা করে। বুশ বলেছেন,
Every nation, in every region, now has a decision to make. Either you are with us, or you are with the terrorists.
-George W. Bush, Address to a Joint Session of Congress and the American People, United States Capitol, Washington, D.C., September 20, 2001
©somewhere in net ltd.