![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এটি একটি মৌলিক সাহিত্য সমালোচনা। কারণ এ লেখাটি লেখকের নিজ হাতে টাইপ করা এবং নিজ হাতে পোস্ট করা হয়েছে, অন্য কোন হাতের সংস্পর্শ এতে কোনভাবেই আসে নি। এটি অনেক উচ্চমার্গীয় রচনা, ফলে সাধারণ পাঠকের মাথার উপর দিয়ে গেলে লেখক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না। আর কোন পাঠক যদি এখানে গঠনমূলক কিছু আশা করেন তবে তিনি সম্পূর্ণরূপে হতাশ হবেন, কারণ এখানে শুধুমাত্র অঘটন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আগেই বলেছি এটি সাহিত্য সমালোচনা, সাহিত্য আলোচনা নয়।
বাংলা সাহিত্যে আর কারো নাম না জানলেও আমরা যাদের নাম জানি তারা হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং নজরুল ইসলাম। এই দুজনকে দিয়েই আমাদের দেশের স্কুলগুলোতে বাচ্চা ছেলেমেয়েদের সাহিত্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ শুরু হয়। রবীন্দ্রনাথের আমাদের ছোট নদী কিংবা নজরুলের সংকল্প ঐ বাচ্চাদের মনে কতটুকু প্রভাব ফেলে তা বিতর্কের বিষয়, কিন্তু যখন তারা জানতে পারে যে, রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুল কেউই প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যার প্রতি আন্তরিক ছিলেন না এবং সুযোগ পেলেই স্কুল কামাই দিতেন তখন তারা অন্তত এই একটা বিষয়ে হেমচন্দ্রের সেই অমর বাণী ‘মহাজ্ঞানী মহাজন যে পথে করে গমন হয়েছেন প্রাতঃস্মরণীয়’ কে অনুসরণ করার চেষ্টা করে। রবীন্দ্রনাথ নিজমুখে স্বীকার করেছেন ছোটবেলায় স্কুলের প্রতি তার কী পরিমান অনীহা ছিল, কত অজুহাত তিনি দাঁড় করিয়েছেন স্কুল কামাই দেয়ার জন্য। পেট ব্যাথা পিঠ ব্যাথার মত অদর্শনীয় রোগ যে স্কুল কামাই দেওয়ার অজুহাত হতে পারে এই সত্য তো রবীন্দ্রনাথই প্রথম বাচ্চাদের ভাবনাতে ছড়িয়ে দেয়। আর নজরুল তো স্কুল পালিয়ে গিয়ে রীতিমত অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন। এখন প্রতিভাবান ছাত্র মাত্রেই বিশ্বাস করে, কবি হতে চাও তো স্কুল পালাও। ফলে দেখা যায় সাহিত্য পাঠে বাচ্চাদের অনুপ্রাণিত করতে না পারলেও স্কুল পালানোতে রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুল উভয়েই সেই কচি বাচ্চাদের মনে একটা দারুণ প্রভাব তৈরি করতে সক্ষম হন।
আর যারা স্কুল পালানোতে আগ্রহ বোধ করে না কিংবা পালানোর সুযোগ পায় না, তারা প্রতি সকালে স্কুল শুরু হওয়ার আগে বেলা নয়টার রোদে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রনাথের অমর সৃষ্টি আর দেশপ্রেমের অকাট্য প্রমাণ জাতীয় সংগীত গায়। এতে করে যে দেশের প্রতি তাদের অগাধ ভালবাসা প্রকাশ পায় তা নিঃসন্দ, এমনকি পরবর্তী জীবনেও জাতীয় সংগীত এর কথা শুনলেই তাদের চোখের সামনে সেই দিনগুলো ভেসে উঠে, যখন আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি গাইতে গাইতে শরীর গরম হয়ে উঠত কড়কড়ে রোদের তাপে। তখন তারা ক্লাশরুমে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে, শিক্ষকেরা বুঝতে পারেন ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনার প্রতি কত আকর্ষণ। তারা বাইরে দাঁড়িয়ে না থেকে ক্লাশরুমে গিয়ে বিদ্যা অর্জন করতে কতই না অস্থির। এভাবেই রবীন্দ্রনাথ কচি বাচ্চাদের জীবনে তার সুদূর প্রসারী প্রভাব বিস্তার করেন।
এ তো গেল তাদের প্রভাবের কথা, এবার আসি তাদের লেখার মানের বিবেচনায়। রবীন্দ্রনাথকে দিয়েই শুরু করি। বাংলা সাহিত্যের প্রবাদ পুরুষ, কবিগুরু, বিশ্বকবি, সব্যসাচী লেখক যত উপাধীতেই তাকে ভূষিত করা যায় কিছু কিছু ভক্ত তাতেও সন্তুষ্ট হতে পারেন না,তাদের ভাষায় রবীন্দ্রনাথ উপাধীর উর্দ্ধে অবস্থান করেন। বাংলা সাহিত্যে তার অবদানকে গণ্ডীবদ্ধ করার কোন সুযোগ নেই, তাই তাকেও একটি উপাধীতে আবদ্ধ করার সুযোগ নেই। একথা সত্য যে রবীন্দ্রনাথ কবিতা বা গানের মুটামুটি সবগুলো ধারায় লেখার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তার ভক্তরা ভুলে যান যে রবীন্দ্রনাথ এখনও পর্যন্ত কোন মহাকাব্য রচনা করতে পারেন নি। ধারণা করা হয় তিনি তাতে একবার চেষ্টা চালিয়েছিলেন কিন্তু কুলিয়ে উঠতে না পেরে শেষ পর্যন্ত এই প্রচেষ্টাকেও তিনি অপপ্রচার বলে উড়িয়ে দেন, আর মহাকাব্যের খণ্ডিত অংশ পুড়িয়ে দেন। তবে তিনি অন্যান্য লেখা থামিয়ে দেন নি। সারাজীবনে এই একটা কাজই তিনি করেছেন। শুধু লেখালেখি।রবীন্দ্রনাথ এত বেশি লেখা লিখেছেন যে তার মধ্যে দু একটা ভাল লেখা থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়, এক অখ্যাত কবি মনের দুঃখে এমন মন্তব্যও করেছিলেন।
আসলেই রবীন্দ্রনাথের সব লেখাই যে ভাল, মানসম্মত কিংবা সার্থক একথা কিন্তু ঠিক নয়। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন আমাদের বাংলা সিনেমার নায়ক সাকিব খানের মত নাম্বার ওয়ান, তাই তিনি যা করতেন, যা বলতেন তাই নতুন নিয়মে পরিণত হতো। আর এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে তিনি ব্যকরণে যাচ্ছে তাই ভুল করতেন। ব্যকরণে তার কেমন ভুল হত সাধারণ দু একটা উদাহরণ দিলেই তা বেরিয়ে আসবে। যেমন ব্যকরণে অশ্রুজল শব্দটি একসাথে ব্যবহার হতে পারে না কারণ অশ্রু শব্দের অর্থই হলো চোখের জল, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ অনায়াসে লিখেছেন তারি লাগি যত ফেলেছি অশ্রুজল। তুই তুমি সম্বোধনেও কবির ছিল দূর্বলতা। এই সর্বনামের ব্যপারে তার ঔদাস্য উল্লেখযোগ্য। তার বিখ্যাত গান ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে, এখানে তুই করে উল্লেখ করলেও পরের লাইনেই তিনি বলছেন, ও বন্ধু আমার না পেয়ে তোমার দেখা....। রাহুর প্রেম কবিতাটির শুরু হয়
শুনেছি আমারে ভালই লাগে না, নাই বা লাগিল তোর
কঠিন বাধনে চরণ বেড়িয়া চিরকাল তোরে রব আকরিয়া
লোহার শিকল ডোর..।
লাইন দিয়ে। কিন্তু মাঝামাঝি এসে তার হঠাৎ সুর পাল্টে যায়। আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন
দুঃস্বপ্নের মতো , দুর্ভাবনাসম , তোমারে রহিব ঘিরে —
দিবস-রজনী এ মুখ দেখিব, তোমার নয়ননীরে ।
এমন অহরহ ভুল তার লেখায় নিয়মিতই দেখা যায়।
চলবে............।
©somewhere in net ltd.