নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি চিত্রাঙ্গদা, আমি রাজেন্দ্রনন্দিনী।নহি দেবী,নহি সামান্যা নারী।পূজা করি মোরে রাখিবেউর্ধ্বেখসে নহি নহি,হেলা করি মোরেরাখিবে পিছেখসে নহি নহি।যদি পার্শ্বে রাখ মোরেসঙ্কটে সম্পদে,সম্মতি দাও যদি কঠিনব্রতেসহায় হতে,পাবে তবে তুমি চিন

দেবশ্রী চক্রবর্ত্তী

আমি চিত্রাঙ্গদা, আমি রাজেন্দ্রনন্দিনী।নহি দেবী,নহি সামান্যা নারী।পূজা করি মোরে রাখিবেউর্ধ্বেখসে নহি নহি,হেলা করি মোরেরাখিবে পিছেখসে নহি নহি।যদি পার্শ্বে রাখ মোরেসঙ্কটে সম্পদে,সম্মতি দাও যদি কঠিনব্রতেসহায় হতে,পাবে তবে তুমি চিন

দেবশ্রী চক্রবর্ত্তী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মিড ডে মিল সম্পর্কে দুটো কথা

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৩৮

মিড ডে মিল সম্পর্কে দুটো কথা

দেবশ্রী চক্রবর্ত্তী

বাড়ি ফিরেও শান্তি নেই, ফিরতে না ফিরতেই ফোন । ফোনটা তো সুইচ অফ করে রাখতেই পার ।
বিডিওর ফোন সুইচ অফ করে রাখা যে সম্ভব না, তা জেনেও কথা গুলো সেদিন আমার স্বামীকে বলে ছিলাম ।
ফোনে কথা বলেই সেদিন ও বেরিয়ে গিয়েছিল । ফিরেছিল মাঝ রাতে । পরে জেনেছিলাম কোন এক পঞ্চায়েতের স্কুলে
মিডডে মিলের খাবারে নাকি বিষাক্ত কিছু পড়েছিল, তাই বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পরে এবং তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ।

মিডডে মিল সম্পর্কে যখন লিখতে বসেছি, তখন পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করব । সূচনায় নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতার একটু ঝলক দিলাম ।

ডাল দৌড়চ্ছে। মানে সে যাকে বলে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়। পাতে পড়ই ছুট। ভাতের চেহারা দেখলে মোটাসোটা কুস্তিগিরও লজ্জা পাবেন। বুঝে উঠতে পারবেন না, কে বেশি মোটা! আর মশলাপাতির কথা না হয় বাদই দেয়া গেল। ভারতের বেশিরভাগ প্রাথমিক স্কুলে মিড ডে মিল বলতে সাধারণত এ রকম একটা চিত্র ভেসে ওঠে। কখনও-সখনও এর সঙ্গে একটা ডিম বা ‘ব্লেড দিয়ে কাটা’ এক টুকরো মাছ। তবে ব্যতিক্রম অবশ্যই রয়েছে। দক্ষিণ ভারতের দিকে অনেক স্কুলে দুপুরের খাবার হিসেবে দেয়া হয়, ভাত, সাম্বার, এক রকমের সব্জি, টক দই, কেসরি (এক রকমের মিষ্টি) এবং শেষে ঘোল।
লেখাটা সমালোচনা করার জন্য নয়, বরং এটা দেখানোর জন্য, যে দেশের ভবিষ্যৎ যাদের হাতে আসতে চলেছে তাদের অন্যান্য পশ্চিমী দেশগুলিতে কিভাবে ‘সংরক্ষণ’ করা হয়। আসুন একটা তালিকায় চোখ বোলানো যাক :
প্রথমেই দেখা যাক মার্কিন মুলুকের স্কুলগুলির দিকে। সেখানে দুপুরে স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের খাওয়ানো হয় পপকর্ন চিকেন সঙ্গে টমাটো কেচাপ, খানিকটা ম্যাশড পোটাটো (আমাদের আলু ভর্তার বিদেশী সংস্করণ), সেদ্ধ মটরশুটি, ফ্রুট কাপ এবং একটি ঢাউস সাইজের চকোলেট চিপস কুকি।

এস্তোনিয়ায় মিড ডে মিল হিসেবে দেয়া হয় ভাত, এক টুকরো মাংস, বেগুনি বাঁধাকপি এবং এক কাপ চকোলেট শেক।

ইতালিতে দেয়া হয়, পাস্তা, মাছ, দুই রকমের সালাড, ব্রেড রোল, কালো আঙুর। ফ্রান্স থেকে ব্রাজিল, কোরিয়া থেকে ইংল্যান্ড, স্কুলের এ রকম দীর্ঘ তালিকা রয়েছে, যেখানকার মিড-ডে মিলের বিবরণ শুনে রীতিমতো ভিরমি খেতে হয়। তবে এর পরও এ সব দেশের মিড-ডে মিল নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। কারণ, সেখানকার স্কুলের খাদ্য তালিকায় তাজা শাকসব্জি এবং ফল নেই।
ফারাক যে বিস্তর তা আলাদা করে লেখার প্রয়োজন নেই। ফারাকটা দেখানোর জন্যেও এই লেখা নয়। লেখার মাধ্যমে শুধু এক বার মনে করিয়ে দেওয়া, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুস্থ-সবল হলে দেশও সুস্থ-সবল হবে।

এবার আসি বিহারের ছাপরা জেলায় একটি প্রাথমিক স্কুলে বিষাক্ত মিড-ডে মিল খেয়ে মারা গেছে ৬ থেকে ১০ বছর বয়সের ২৩টি বাচ্চা৷ মানব-সৃষ্ট এই ট্র্যাজিডির সান্ত্বনা হয়না৷ চলছে দোষারোপ পাল্টা দোষারোপ, রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি৷
ফরেনসিক রিপোর্টে এবং মতদেহগুলির পোস্ট-মর্টেম রিপোর্টে বলা হয়েছে বিহারের ছাপরা জেলার একটি গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের মিড-ডে মিলে ছিল ‘অরগ্যানোফসফোরাস‘ নামে বিষাক্ত কীটনাশক রাসায়নিক তেল, যা ব্যবহার করা হয় ইঁদুর ও অন্যান্য পোকামাকড় মারার জন্য খেতে খামারে৷ মিড-ডে মিল রান্নার তেল রাখা হয়েছিল ঐ বিষাক্ত কীটনাশকের টিনে, যা খেয়ে ঢলে পড়লো ২৩টি নিষ্পাপ শিশু৷ এসেছিল স্কুলে পড়তে, কিন্তু ঘরে আর ফেরা হলোনা৷
দেশের সুশীল সমাজ জানতে চায়, কেন এমনটা হলো? মিড-ডে মিল স্কিমের গলদটা আসলে কোথায়? গলদটা দিনের আলোর মত পরিষ্কার৷ রান্নার আগে মিড-ডে মিলে যে সব খাদ্যসামগ্রী ব্যবহার করা হয়, যেমন চাল, ডাল, তেল, সবজি ইত্যাদির গুণগত মান পরীক্ষা করা হয়না৷ রান্নার পরেও তা করা হয়না৷ কাগজে-কলমে যেটা করা বাধ্যতামূলক৷ নিয়মবিধি অনুসারে মিড-ডে মিলে প্রোটিন, ক্যালরি-র পরিমাণ ঠিক আছে কিনা তাও পরীক্ষা করার কথা৷ কিন্তু তা কখনই করা হয়না৷ এমনকি মিড-ডে মিল রান্নার স্বাস্থ্যসম্মত জায়গা নেই বেশির ভাগ স্কুলে৷

শিশুদের এই মৃত্যু মিছিলে ইন্ধন জুগিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি৷ ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা ভাঙচুর চালায় স্কুলে, মিড-ডে মিলের অফিসে৷ রাস্তা অবরোধে নামে৷ ভবিষ্যতে মিড-ডে মিল বর্জনের ডাক দেয়৷ বিহারের শাসক দল সংযুক্ত জনতা দলের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের ইস্তফা দাবি জানায় রাজনৈতিক দলগুলি৷
শাসক দলের শিক্ষামন্ত্রী বিরোধী দল লালু প্রসাদের আরজেডি দলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করায়৷ অভিযোগ, ঐ প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা আরজেডি দলের সদস্যা এবং যে মুদিখানার দোকান থেকে তেল কেনা হয়েছিল, তার মালিক প্রধান শিক্ষিকার স্বামী, যিনি আরজেডি দলের সক্রিয় সদস্য৷ বিহার সরকারের বদনাম করাই এর উদ্দেশ্য৷
বিশ্বের বৃহত্তম স্কুল মিল প্রকল্পে সাড়ে দশ কোটি বাচ্চা অন্তর্ভুক্ত৷ উদ্দেশ্য সাধু সন্দেহ নেই৷ সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা প্রসারে গ্রামগঞ্জের গরিব পরিবারের স্কুল-বিমুখ বাচ্চাদের স্কুলমুখী করা এবং শিশুদের পুষ্টিকর আহার জোগানো৷ এই কাজে যুক্ত করা হয় স্বনির্ভর মহিলা গ্যোষ্ঠীগুলিকে, যাতে তাঁরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে৷ এর জন্য বিপুল ব্যয়ভার নির্বাহে বিশেষ কর বসিয়ে সরকার ২০১১-১২ সালে সংগ্রহ করে সাড়ে সাতাশ হাজার কোটি টাকা৷ কিন্তু গোড়ায় গলদ৷ বাস্তবায়নের প্রতি স্তরে লক্ষিত দুঃখজনক গাফিলতি আর ঔদাসীন্য৷
যথারীতি কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার ঘুম থেকে উঠে খাদ্যসামগ্রীর গুণগত মান পরীক্ষার জন্য একটি মনিটারিং কমিটি গঠনের কথা ঘোষণা করেছে৷ রাজ্য সরকারের তরফে বিজ্ঞাপন দিয়ে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের মিড-ডে মিল দেবার আগে স্কুলের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং রাধুঁনিকে আগে তা চেখে দেখতে হবে৷

মিড-ডে মিল খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ল পাঁচ পড়ুয়া। পিংলার গোবর্ধনপুর ব্রাহ্মণীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘটনা। বন্‌ধের দিনে স্কুলে বেশি পড়ুয়া উপস্থিত ছিল না। মাত্র ৬১জনের জন্য রান্না করা হয়েছিল। খাওয়াদাওয়া চলাকালীন তরকারিতে টিকটিকি দেখতে পান স্কুলের শিক্ষকেরা। এর পরেই অসুস্থ হয়ে পড়ে পাঁচজন। তাদের নিয়ে যাওয়া হয় পিংলা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। তাদের অবস্থা স্থিতিশীল। জেলা পরিষদ সদস্য অজিত মাইতি বলেন, “কোনওভাবে খাবারে টিকটিকি পড়ে থাকতে পারে।’’

একের পর এক শিশুর মৃত্যু হচ্ছে মিডডে মিলের বিষাক্ত খাবার খেয়ে । স্কুলে মিড-ডে মিলের খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ল ৬৪ জন শিশু। লখনউয়ের ঘটনা। চিনহাটের জু্গ্গাউরে এক সরকারি প্রাথমিক স্কুলে খাওয়ার পরই অসুস্থ হয়ে পড়ে ৬৪ জন ছাত্রছাত্রী। কারও পেটে অসহ্য যন্ত্রণা। কেউ বমি করতে শুরু করে। অ্যাম্বুল্যান্সে সকলকে নিয়ে যাওয়া হয় রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা জানান, খাদ্যে বিষক্রিয়ার ফলেই এমন হয়েছে। তিন জন হাসপাতালে ভর্তি।
যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ওই স্কুলে মিড-ডে মিল সরবরাহ করে, তার দায়িত্বে থাকা অক্ষয় পাত্রের কাছ থেকে খাবারের নমুনা সংগ্রহ করবে খাদ্য সুরক্ষা বিভাগ। গত জুলাইয়েও লখনউয়ের আর্য নগর এলাকার এক প্রাথমিক স্কুলে মিড-ডে মিলের দুধ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল জনা পঞ্চাশেক শিশু।

এই সব রিপোর্ট গুলো বেশ কিছু দিন পর পর আমাদে চোখে পড়ে । কিন্তু আপনারা কি জানেন সারা ভারতের কথা তো বাদ দিলাম,পশ্চিম বঙ্গের কোন না কোন স্কুলে রোজই মিডডে মিলের বীষক্রীয়ার শিকার হয় এক দল নিরিহ শিশুকে ।
হ্যাঁ,আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি । গত কয়েক বছরে এরকম বহু ঘটনার সাক্ষী হতে হয়েছে আমাকে । নন্দীগ্রামে যখন আসি, একদিন আমার হাসবেন্ডের মুখে শুনেছিলাম যে নন্দীগ্রামে লাল বাচ্চার সংখ্যা প্রচুর । শিক্ষায় যে জেলা এত এগিয়ে আছে,সেই জেলার এক অংশে অপুষ্টির শিকার এতজন বাচ্চা । পরে স্কুলে স্কুলে গিয়ে অনুসন্ধান করে জনা যায় বহু স্কুলে মিডডে মিল বহু দিন বন্ধ । এমন একটি স্কুলের কথা আজ খুব মনে পড়ছে,যেখানে মিডডে মিল বন্ধ রেখে
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহাশয় শিক্ষকদের ব্যবহারের জন্য বাথরুম তৈরি করেছেন । সেই মাস্টারের কাছে যখন বিডিও সাহেব কৈফিয়ত চান, তখন তিনি বলেন যে তিনি বিডিওকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নন । এখন তার চুরির সব প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং তার চাকরি যাবার পথে । বাচ্চারা খেতে পায় না,আর মিড ডে মিলের টাকা যাচ্ছে শিক্ষক তথা নেতাদের পকেটে । যারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নতুন পথ দেখাবে,তারাই যদি দুর্নীতি গ্রস্ত হয়, তা হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কি শিক্ষা পাবে ?

মিডডে মিলে যে চুরি হয় সেই চুরির পেছনে লম্বা একটা চেন আছে । চালের দোকানের মালিক,শিক্ষক,নেতা,রাঁধুনি সবাই এই দুষ্কর্মের সাথে জড়িত । রান্না ঘরে যেটুকু চল,ডাল,তরিতরকারি পৌছায় তার ভাগ নেয় রাঁধুনিরা । যার ভয়ঙ্কর পরিণতি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অপুষ্টি তথা মারণ রোগের শিকার । এর দায় কে নেবে ? শিক্ষক, নেতা না চালের দোকানের মালিক ?
না কেউ নেবে না এই দায় ।

আমার শ্বশুর মশাই এর কথা বলি । তিনি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন । তিনি তার স্কুলে মিড ডে মিলে রোজ ডিম নয়তো মাছ খাওয়াতেন আর সপ্তাহে একদিন মাংস । এই কথাটা যখন মাননীয় শিক্ষকদের বলা হয়, তখন তারা বলে এ সম্ভব না , আমরা করতে পারব না ।

এখনও খুব দেড়ি হয় নি , মাস্টার মশাইদের কাছে আমার অনুরোধ আপনারা পথ প্রদর্শক হয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অন্ধকারে ঠেলে দেবন না । যে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অপুষ্টির শিকার, সেই দেশের উন্নতি কি কখনও সম্ভব ?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:২০

লেখোয়াড়. বলেছেন:
ব্লগে সুস্বাগতম।

প্রথম পোস্টিতেই একটি ভাল লেখা দিয়েছেন। লেখালেখি করেন কি?
আশা করি নিয়মিতই ভাল লেখা পাব।

অনেক ভাল থাকুন এই শুভকামনা।

২| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:২২

দেবশ্রী চক্রবর্ত্তী বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাদের ।:)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.