নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি চিত্রাঙ্গদা, আমি রাজেন্দ্রনন্দিনী।নহি দেবী,নহি সামান্যা নারী।পূজা করি মোরে রাখিবেউর্ধ্বেখসে নহি নহি,হেলা করি মোরেরাখিবে পিছেখসে নহি নহি।যদি পার্শ্বে রাখ মোরেসঙ্কটে সম্পদে,সম্মতি দাও যদি কঠিনব্রতেসহায় হতে,পাবে তবে তুমি চিন

দেবশ্রী চক্রবর্ত্তী

আমি চিত্রাঙ্গদা, আমি রাজেন্দ্রনন্দিনী।নহি দেবী,নহি সামান্যা নারী।পূজা করি মোরে রাখিবেউর্ধ্বেখসে নহি নহি,হেলা করি মোরেরাখিবে পিছেখসে নহি নহি।যদি পার্শ্বে রাখ মোরেসঙ্কটে সম্পদে,সম্মতি দাও যদি কঠিনব্রতেসহায় হতে,পাবে তবে তুমি চিন

দেবশ্রী চক্রবর্ত্তী › বিস্তারিত পোস্টঃ

"বাঙ্গালী কি অন্ধকারে ?"

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৫৪

"বাঙ্গালী কি অন্ধকারে ?"
DEBASREE CHAKRABORTY
টেলিফোনে এই প্রশ্নটা শুনে দারুণ খুশিয়াল হয়ে উঠি, কিছুটা লজ্জিতও । প্রশ্নটা যখন প্রশ্ন কর্তার মাথায় এসেছে, তখন বুঝলাম ব্যাপারটা কিন্তু বেশ চিন্তার ।
তাই একজন বাঙ্গালী হিসাবে আমার মনে হল আমার প্রথম কর্তব্য বিষয়টি নিয়ে একটু চুল ছেঁড়া বিচার বিশ্লেষণ করা । এরই মধ্যে বেশ কিছু বই ও পড়ে ফেললাম,
কিন্তু কোথায় যেন মনে হল বিষয়টির অন্তর্নিহিত অর্থ অনুধাবন করার জন্য পুঁথিগত বিদ্যা খুঁবই কম কাজে লাগছে, তার জন্য বর্তমান পরিস্থিতি ও নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতাকে
কাজে লাগান প্রয়োজন ।
কি মন হয় বাঙ্গালী কি সত্যিই অন্ধকারে ?
ইতিহাস কিন্তু অন্য কথা বলছে । এই বাঙ্গালী জাতির সম্পর্কে মহাত্মা গোখেল বলেছিলেন, "WHAT BENGAL THINKS TODAY,INDIA THINKS TOMORROW ".....
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এই সব উজ্জ্বল বাঙ্গালী নক্ষত্রদের কথা ভেবেই লিখেছিলেন "প্রথম আলো" ।
আজ থেকে ১০০ বছর আগের এই বাঙ্গালী নক্ষত্র কারা ছিলেন যারা সেই সময় ভারতের ইতিহাসকে আলোকিত করেছিলেন ?
প্রথমেই যার নাম মাথায় আসে তিনি হলেন যুগাবতার শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব, হুগলী জেলার কামার পুকুর গ্রামের ছোট্ট বালক
গদাধরের সহজ সরল বিচার বিশ্লেষণ উপনিষদ,বেদ,বেদান্তের জটিল রহস্য গুলোর অতি সহজ সমাধান করে দিত, যা মহা পণ্ডিতদেরও মাথা
ঘুড়িয়ে দিত । পরবর্তিকালে জানবাজারের রানী রাসমনী দাসীর প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণেশ্বরের মা ভবতারিণীর মন্দিরের পুরোহিত হিসাবে তিনি নিযুক্ত হন
এবং তাঁর মহিমার কথা চারিদিকে প্রচার হতেই সেই সময়ের অতি সাধারণ মানুষ থেকে ডাঃ মহেন্দ্র লাল সরকার,নাট্যকার গিরিশ ঘোষ,ব্রাহ্ম সমাজের
কেশব সেনের মতন বহু বিশিষ্ট মানুষ তাঁর সংস্পর্শে এসেছিলেন এবং তাঁর জ্ঞানের আলোকে জ্বলে উঠেছিলেন ।
তাঁর সেরা শীষ্য ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ, যিনি হিন্দু ধর্মের মহিমার সাথে সারা বিশ্ববাসীকে পরিচিত করিয়ে ছিলেন ।পরবর্তী কালে তিনি রামকৃষ্ণ মঠ প্রতিষ্ঠা করেন,
যার শাখা বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে রয়েছে । বর্তমান সময়েও কোথাও প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে, আমরা দেখি রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজরা সবার আগে পৌঁছে যান ত্রাণ নিয়ে ।
এ প্রসঙ্গে আমি একটা কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি, উগ্র হিন্দু বাদী কিংবা উগ্র মৌলবাদীরা আমার লেখা পড়ে আবার আমার গলা কাটতেই পারেন, তবুও আমি লিখছি,
আজ থেকে ১০০ বছর আগে কামার পুকুর গ্রামের সেই অশিক্ষিত খ্যাপা ছেলেটা গদাধর, যে কিনা স্বামী বিবেকানন্দের মতন ভারতের শ্রেষ্ঠ সন্তানটির শ্রষ্ঠা হয়েছিলেন,সে
যদি বামুনের ছেলে হয়ে খ্রিস্টান,মুসলিম সব ধর্ম গ্রহণ করে বলতে পারেন সব ধর্মের মূল কথা এক । তাহলে আমরা কেন বলুন তো এটা মেনে নিতে পারি না ?
ধর্মের ভণ্ডামির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললে বর্তমান সমাজে দুরিতদের হাতে প্রাণ হারাতে হয় । সমাজ নির্বাক দর্শকের ভূমিকা নিয়ে দাড়িয়ে থাকেন । আমি কিন্তু দুই বাংলার বাঙ্গালীদের নিয়েই আলোচনা
করব আজ । কারুকে ছেড়ে কথা বলব না । আমার স্বামীর চাকরির জন্য আমি পশ্চিম বঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি, আমি দেখেছি বহু মুসলমানকে হিন্দু পাড়ায় ঘর ভাড়া দেওয়া হয় না,
বর্তমানে আমি যেখানে আছি , সেইখানে একটি পঞ্চায়েত আছে যেখানে কোন মুসলিমকে জায়গা বিক্রি করা হয় না । ভেবে দেখুন একবার আমরা সেই বাঙ্গালী জাতি , যার সন্তান রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব,
বিবেকানন্দ, যারা ১০০ বছর আগে সাম্যের কথা বলে গেছেন একতার কথা বলে গেছেন । আমরা ১০০ বছর পার করে এসেছি, মানুষ চাঁদে পৌঁছে গেছে, মঙ্গলে পৌছেগেছে মানুষের তৈরি মহাকাশযান
কিন্তু মনে হচ্ছে আমরা যেন ২০০ বছর পিছিয়ে আছি মানসিকতার দিক দিয়ে ।
মাঝে মাঝে খুব গর্ব হয় যখন ভাবি ২১ এ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস , আমার মাতৃভাষা বাংলাকে নিয়ে আন্দোলন করেছিল আমার ভাইরা । যখন টেলিভিশনের পর্দায় দেখি বাংলাদেশের
সব বাঙ্গালীরা এক হয়ে একই দিনে একই সময়ে "আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি" গানটি করে গিনেস বুকে নাম তুলেছে, তখন বাঙ্গালী হিসাবে গর্বে বুক ফুলে ওঠে । আবার যখন দেখি সেই
বাংলাদেশেই হিন্দুদের ওপর অকথ্য অত্যাচার চলে,মুক্তমনা মানুষদের দুরিতদের হাতে প্রাণ দিতে হয়, তখন মনে হয় এই কি সেই বাঙ্গালী জাতি , যারা পরাধীন ভারতবর্ষে স্বাধীনতার আন্দোলনে তথা ৭১ এর যুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছিল ?
এদের কথা ভেবেই রবীন্দ্র নাথ রাখীবন্ধন উৎসব করেছিলেন ? এদের কথা ভেবেই কি নজরুল গান লিখেছিলেন "মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান " ?
এ প্রসঙ্গে আরেকটা কথা উল্লেখ করি । আমার এক ড্রাইভার ছিল,সে দাড়ি রাখত আর গলায় একটা কালো কাড়ে চার চৌকো একটা মাদুলি পড়ত । আমি একদিন জিজ্ঞেস করি "ভাই তুমি মুসলিম ?"
ও বলেছিল,"না ম্যাডাম , আমি বাঙ্গালী" ।
তখন নিজে একজন বাঙ্গালী হিসেবে আমি নিজের অস্তিত্ব সঙ্কট অনুভব করেছিলাম ।

এই দেখ , আমি আলোচনা করছিলাম সেই যুগের বাঙ্গালী নক্ষত্রদের নিয়ে, চলে এলাম এই যুগের অন্ধকারের প্রসঙ্গে । দাদাভাই, দিদি ভাইরা আমাকে ক্ষমা করবেন, নতুন লেখিকা তো তাই ভুল হয়ে গেছে, কথা দিচ্ছি আর এই ভুল হবে না ।
স্বামী বিবেকানন্দের লেখাপড়া সেই যুগের ভারতবাসী দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন । তাঁর লেখা পড়ে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস,ঋষি অরবিন্দ, ভগৎ সিং এর মতন ভারতমাতার সন্তানরা । ভারতবর্ষের প্রথম গ্রাজুয়েট ছিলেন দুই বঙ্গ সন্তান
একজন বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আর আরেক জন ছিলেন যদু নাথ বসু ।
বঙ্গ সন্তান বঙ্কিম চন্দ্রের আনন্দমঠের "বন্দেমাতরম" ধনীতে উদ্বুদ্ধ হয়ে ভারতে বিপ্লবী আন্দোলন শুরু হয়েছিল । এপ্রসঙ্গে একটা কথা বলে রাখি , বাংলায় প্রথম বিপ্লবী আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল । সেই সময়টা বাঙ্গালী জাতির জন্য যেন স্বর্ণ যুগ ।
নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসের কথাই ধরলাম, ICS পরীক্ষায় ৪র্থ স্থান দখল করেছিলেন, সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ, কিন্তু তাঁর কাছে দেশমাতার শৃঙ্খল মোচনের কর্তব্যটা
সব থেকে বড় মনে হল , ঝাঁপিয়ে পরলেন স্বাধীনতা আন্দোলনে, ক্ষমতাপ্রিয়ো নেতাদের সঙ্গে মতের মিল খেল না সুভাষের, তিনি বুঝে ছিলেন এভাবে স্বাধীনতা আসবে না ।
সুভাষ দেশ ছাড়লেন, বিদেশী শক্তির সাহায্য নিলেন, রাসবিহারী বসুর সাহায্যে গঠন করলেন "আজাদ হিন্দ বাহিনী" । আমি আজ গর্বের সাথে জানাচ্ছি আমার ঠাম্মির জন্ম কুয়ালালামপুর এ,
আমার ঠাম্মি সুভাষকে দেখেছে, তাঁর দুই দাদা আজাদ হিন্দ বাহিনী তে যোগ দিয়েছিল । ঠাম্মির মুখে শুনেছি, হাজার হাজার বাঙ্গালী মায়েরা তাদের সন্তান,অলঙ্কার,অর্থ নেতাজীর হাতে সোপে দিয়েছিল । নারায়ণ সান্যালের স্নেহ ধন্যা পড়ে জেনেছি নেতাজী কত মহান নেতা ছিলেন । পাকিস্তানের
আমির খান খটক, যিনি নেতাজীকে কাবুল পৌঁছে দিয়েছিলেন, তাঁর ইন্টারভিউ পড়ে জেনেছি সেই মানুষরূপী ভগবানের কথা । নেতাজী পালিয়ে গেছেন এই খবর বেতারে শুনে আফগানিস্তানের একটা দোকানে সেদিন ফ্রিতে সবাইকে হালুয়া খাওয়ান হয়েছিল ।
এখনও নেতাজীর জন্য আমরা কাঁদি, এখন কোন নেতার জন্য আমরা কি এরকম অনুভব করি ? আমার তো মনে হয় এরা কোন অর্থে নেতাই না । এরা সবাই সমান, এদের প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে ক্ষমতায় এসে যতদিন পার রাজ্য ও রাজ্যবাসীকে কে লুটে খাও । যারা সন্ত্রাসবাদীদের অর্থের
বিনিময়ে আশ্রয় দেন, কিংবা মানুষখেকো চিট ফান্ড গুলোর দালালি করে অর্থের বিনিময়ে তাঁরা কোন অর্থে নেতা ?
৩৫ বছরে সমস্ত কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে । ক্ষমতা পরিবর্তের পর একটু আশার আলো দেখেছিলাম । কিন্তু কিছু কি পরিবর্তন হল ? ওঁরা লুকিয়ে চুড়ি করত । এরা খোলাখুলি করে । ওঁরা ধরা পরত না , এরা ধরা পরে গেছে । খবরের কাগজ খুললেই
রেপের ভয়াবহ চিত্র দেখে আঁতকে উঠি , কিন্তু তখনও রেপ হত, গনধর্ষন হত, আমরা এখন ভুলে গেছি । কোন এক নেত্রীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, যে রেপ এত বেরে গেছে কেন ?
সে উত্তরে রেপকে আধুনিকতার সঙ্গে তুলনা করেছেন ।
কথা হচ্ছিল নেতাজী, অরবিন্দ ঘোষ,বাঘা যতীন সম্পর্কে । এদের দেশ প্রেম ছিল নিঃস্বার্থ । আমরা যাদের ওপর দেশ রক্ষার ভার দিয়ে আরামে দিবা নিদ্রা দিচ্ছি, তাঁদের মধ্যে প্রচুর বাঙ্গালী আছেন ।
সেদিন একটা রিপোর্ট পড়ে আঁতকে উঠেছিলাম । বহরমপুরের একটি ছেলে ইন্ডিয়ান আর্মিতে ছিল, সেই ছেলেটি অর্থের বিনিময়ে পাকিস্তানকে অনেক গোপন খবর পাঠাত । সর্বনাশ, তখন একজন বাঙ্গালী হিসাবে
লজ্জায় আমি মুখ ঢেকেছিলাম ।
সাহিত্য,বিজ্ঞান,রাজনীতি,রঙ্গমঞ্চ সব জায়গায় বাঙ্গালি প্রথম স্থান দখল করে আছেন । প্রথম মহিলা গ্রাজুয়েট ছিলেন দুই বাঙ্গালী নারী , একজন হলেন কাদম্বিনী গাঙ্গুলি, আরেকজন ছিলেন চন্দ্রমুখী বসু । কাদম্বিনী গাঙ্গুলি ছিলেন এই দেশ তথা সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মহিলা ডাক্তার ।
তার মানে বুঝে দেখ সমগ্র এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বাঙ্গালী মেয়েরা শিক্ষায় কতটা এগিয়ে ছিল । আমরা ঠাকুর পরিবারের মেয়েদের এবং বৌদের মধ্যে সেই সময় শিক্ষার বিস্তার লক্ষ্য করেছি ।সেই সময় বাঙ্গালী অভিজাত পরিবারের মেয়েরা কিন্তু গৃহ শিক্ষকের গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে স্কুল কলেজে
ভর্তি হওয়া শুরু করে দিয়েছেন । এ প্রসঙ্গে ঠাকুর বাড়ীর দুই কন্যার নাম না বললেই নয়, একজন সরলা দেবী এবং আরেকজন ইন্দিরা দেবী ।দুজনেই উচ্চ শিক্ষিতা ছিলেন এবং সেই সময়ের তুলনায় বেশ স্বাধীন চিন্তাধারার পরিচয় রেখে
গেছেন । সরলা দেবী চৌধুরানী ইংরাজিতে অনার্স নিয়ে সব থেকে বেশি নম্বর পেয়ে তিনি কলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে লাভ করেছিলেন "পদ্মাবতী স্বর্ণপদক"।
সুদূর মহীশুরে গিয়ে "মহারানী বিদ্যালয়ে" শুরু করলেন শিক্ষকতার জীবন । কিন্তু বানী বন্দনায় তৃপ্ত থাকতে পারলেন না ।ফিরে এলেন বাংলায় ।খর্পরধারিনীকে বুক চিরে রক্ত দান করতে । প্রচলন করলেন "প্রতাপাদিত্য উৎসব,বীরাষ্টমী ব্রত ।"সরলা দেবীর নির্বন্ধাতিশয্যের আখড়ায় মেয়েদের পৃথক
ভাবে শুধু লাঠিখেলা না, ছোরাখেলা , এমনকি তলোয়ার চালানর শিক্ষা দিতেন ।
কি দুঃখের কথা-কি অপরিসীম দুঃখের কথা, আজকের কোন জননেত্রীএরকম আত্মরক্ষার দল গঠনে উৎসাহী নন । তাঁদের কর্তব্য শুধুমাত্রই বুদ্ধিজীবীদের সন্তুষ্ট রাখা এবং গৌরি সেনের অর্থ লুটে খাওয়া ।
বর্তমান বছর গুলোতে IAS পরীক্ষার রেজাল্ট দেখলে খুব খারাপ লাগে । বাঙ্গালী ছেলেমেয়েদের নাম প্রায় খুঁজেই পাওয়া যায় না । কিন্তু, ব্রিটিশ প্রিয়োডে ICS পরীক্ষায় প্রথম স্থান গুলো বাঙ্গালীদের দখলেই ছিল । ভারতবর্ষের মধ্যে প্রথম ICS ছিলেন সত্যেন্দ্র নাথ ঠাকুর । সুরেন্দ্র
নাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস সবাই ছিলেন ICS পরীক্ষায় সফল বাঙ্গালী ।
একবার ভেবে দেখুনতো , সেই সময় কত বড় মাপের বিজ্ঞানীরা ছিলেন বাঙ্গালীদের থেকে, যারা বিশ্বের মাঝে নিজেরা ছিলে এক একটি উজ্জ্বল তারকা । জগদীশ চন্দ্র বোস , যিনি আবিষ্কার করেছিলেন গাছের প্রন আছে, তিনি বেতার তরঙ্গও আবিষ্কার করেছিলেন, কিন্তু পরাধীন দেশের
নাগরিক বলে তাকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হল না, সে পুরস্কার পেলেন ইটালির মার্কিনি সাহেব । কিন্তু জগদীশ চন্দ্র বোস লন্ডন বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে ডক্টর অফ সায়েন্স এবং ট্রাইপাস উপাধি পেয়েছিলেন । আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় বেঙ্গল কেমিক্যাল প্রতিষ্টা করলেন । সেই সময় মেঘনাদ
সাহা, সত্যেন বোস ছিলেন স্বনাম ধন্য বিজ্ঞানী ।
একবার ভেবে দেখুনতো, এখন কি বঙ্গ মাতারা বুদ্ধিমান সন্তানের জন্ম দিতে অপারগ হয়ে পড়েছেন ? না গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর জন্য বাঙ্গালীর বুদ্ধি লোপ পেয়েছে ?
আমি বলব এর কোনটাই না । এখন বাবা মারা সন্তানদের ইঁদুর দৌরে সামিল করে ফেলেছেন । একে তো নিউক্লিয়র ফ্যামিলির যুগে বেশির ভাগ বাবা মা কর্মরত, ছেলেমেয়েদের জন্য তাঁদের কোন সময়ই নেই, খোলা মাঠ নেই খেলার , যেখানে বাচ্চারা প্রানখুলে খেলবে । তাছাড়া বাঙ্গালী বাবা মারা
আমার মনে হয় একটু বেশি আত্মকেন্দ্রিক হন । তাঁদের মধ্যে বর্তমান যুগে ইগো টা ভয়ঙ্কর রকম বেড়ে গেছে । তাই ছেলেমেয়েদের পাশের ফ্ল্যাটের বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে দিতেও তাঁদের অসুবিধা । এই ধরুন এই ফ্ল্যাটের টুকি ঐ ফ্ল্যাটের বুবুন সোনার সাথে খেলতে যেত, কিছু দিন যাবার পর টুকি
আর গেল না । কারণ জিজ্ঞাসা করতেই টুকি কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, মাম্মি না করেছে । কারণ, এতে মাম্মির সম্মান কমে যাচ্ছে ।
দেখ কাণ্ড বাচ্চা খেলবে, তাতেও সম্মান কমছে । এতই ঠুনকো সম্মান !
আগেকার সময়ে বাঙ্গালীর যৌথ পরিবার ছিল, ভাইবোনরা সবাই এক সাথে খেলতে পারত, তাছাড়া বাইরে র বাচ্চাদের সঙ্গেও তাঁরা খেলতে পারত । পড়াশুনার সিস্টেমটাও অনেক বেশি সহজ সরল ছিল । এখনকার বাচ্চাগুলোর একে তো পড়ার চাপ, সঙ্গে আমরা একদম ওঁদের স্পেস দিই না ।
এই জন্য এরা এক একটা রোবট তৈরি হচ্ছ । আমরা বাঙ্গালী বাবা মারা তাঁর ইচ্ছার কোন মূল্য না দিয়ে তাদের অর্থ উপার্জনের এক একটা মেশিন তৈরি করছি । সেই সময়ের ভারত সেরা বাঙ্গালীদের জীবন পড়লে দেখা যায় তাঁদের বেড়ে ওঠার পিছনে তাঁদের উদার পারিবারিক পরিবেশ কতটা দায়ী
ছিল । তাঁদের ওপর কোন কিছু চাপিয়ে দেওয়া হয় নি তাঁরা স্বেচ্ছায় নিজেদের পথ বেছে নিয়েছিলেন ।
প্রথম আধুনিক মানুষ বলা হয় রাজা রামমোহন রায়কে, তিনি সেই সময় বড়লাট উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের সহায়তায় "সতীদাহ প্রথার" অবসান ঘটিয়েছিলেন, আমাদের কাছে আরেক নমস্য বাঙ্গালী হলেন ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, তিনি নারী শিক্ষার বিস্তার ঘটিয়েছিলেন , বিধবা বিবাহের প্রচলন করে ছিলেন ।
এরা ছিলেন সেই সময়ের আধুনিকতার প্রতীক । কিন্তু আমি আজ থেকে ২৫০ বছর পিছিয়ে যেতে চাই । বর্ধমানে দামোদর নদীর তীরে সোঞ্জাই গ্রাম । আমি রাজা রামমোহনের জন্মের ৭০ বছর আগের কথা বলছি, আমি যে সময়ের কথা বলছি সেই সময় পলাশীর প্রান্তরে সিরাজের পরাজয় হয় নি,
আমি যে সময়ের কথা বলছি, তখন ফরাসী দেশে বিপ্লব শুরু হয়নি । সেই সময় সোঞ্জাই গ্রামের রূপেন্দ্র নাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এমন একটি পুকুর খনন করিয়েছিলেন, যে পুকুর থেকে শুধু পানিয় জল শুধু সংগ্রহ করা হত, অন্য কোন কাজে সেই পুকুরের জল ব্যবহার করা হত না । সেই সময় সমগ্র ভারত দেশ শুধু নয়
সমগ্র পৃথিবীতে এমন পুকুর আর একটিও ছিল নাকি সন্দেহ । রূপেন্দ্র নাথ রাজা রামমোহনের থেকে ৫০ বছর আগে জন্মেছিলেন, তাহলে আমরা বুঝতেই পারছি যে সেই সমাজটা কতটা অন্ধকারে ছিল, সেই সময়ে রূপেন্দ্র নাথ গ্রামে প্রসূতিদের জন্য হাসপাতাল খুলেছিলেন , মেয়েদের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, বহু বিধবাকে
সতীদাহের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন ।
কি আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না ? একটা কা করুন একবার বর্ধমানের সোঞ্জাই থেকে ঘুরে আসুন । আমার মতে রূপেন্দ্র নাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ই ছিলেন ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ । এই রূপেন্দ্র নাথের মেয়েই হচ্ছে আমাদের হটি বিদ্যালঙ্কার । যে পুরুষদের মতন পোশাক পড়ে মস্তক মুণ্ডন করে,
মাথার পিছে টিকি ঝুলিয়ে কাশীতে টোল খুলে বসেছিলেন, শুধু কি তাই ? সংস্কৃত ভাষায় যুক্তিতর্কে কাশীর পণ্ডিতদের হারিয়ে দিয়েছিলেন । এই হটি বিদ্যালঙ্কার স্ব শরীরে ৮০ বছর বয়স অব্ধি কাশীতে ছিলেন ।
আরেকজনের কথা বলব, তিনি হচ্ছেন হটু বিদ্যালঙ্কার । হটুও বর্ধমান জেলার মেয়ে ছিল । হটুকে হটুর বাবা বিয়ে দেন নি, নিজের কাছে রেখে ভেষজাচার্য বানিয়ে ছিলেন । হটু সারা জীবন গ্রামের মানুষের সেবা করেছেন । আমি বলব ভারতবর্ষের প্রথম মহিলা ডাক্তার ছিলেন হটু ।
আমার মনে হয় হটি,হটুদের সময়ে সমাজে অনেক বেশি আলো ছিল, এখন বাঙ্গালী সমাজ ঘোড় অন্ধকারে । রূপেন্দ্র নাথের মতন প্রতিবাদী পুরুষদের এই যুগে প্রাণ হারাতে হয় । হটু,হটিদের মতন সোনার মেয়েদের দেশ ছাড়া হতে হয় , ধর্ষিতা হতে হয় । বর্তমান সমাজ গান্ধীজীর তিন বাঁদরের
মতন চোখ, কান,মুখ বন্ধকরে বসে থাকে ।
বর্ধমান জেলারই মেয়ে সীমা দাশ, যার বাল্য বিবাহ বন্ধ করার জন্য এক সময় আমাকে রাস্তায় নামতে হয়েছিল । একটা প্রতিবন্ধী ছেলের সঙ্গে বিয়ে হচ্ছিল মেয়েটার । এবছর সীমা মাধ্যমিক দিয়েছে । আমার আশা ওঁকে আমি রক্ষাকরতে পারব । ২০১৫ সালে বর্ধমানের ভাতারের সীমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে
আমরা বাঙ্গালীরা আলোতে আছি না গভীর অন্ধকারে চলে যাচ্ছি ?
এবার আসা যাক সাহিত্যের প্রসঙ্গে । রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের সম্পর্কে নতুনকরে কিছু বলর স্পর্ধা আমার নেই । একটা কথা বলব , তিনি সমগ্র এশিয়ানদের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পেয়েছিলেন । কিন্তু তিনি কোথাও অতিথি হিসাবে গেলে কি আহ্বায়কদের কাছ থেকে টাকার অঙ্কটা ভালো করে
বুঝে নিতেন ?
গত কয়েক বছর বইমেলা করার সুবাদে বেশ কিছু নামী সাহিত্যিক কে আমন্ত্রণ করার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছে । কিন্তু তারা আসার আগে টাকার অঙ্কটা ভালো করে বুঝেনিয়ে তার পর এসেছেন । শুধু কি তাই রাস্তায় কটা বিড়ি কিংবা চা খেয়েছে
সেই টাকাটাও নির্লজ্জের মতন চেয়ে নেন। এতে আমার চোখে এঁনারা অনেক ছোট হয়ে গেছেন । সুকান্ত খালি পেটে কবিতা লিখতে লাখতে মরেই গেল । আর আজকের ছেলে ছোকরার দল ফেস বুকে দুই লাইন কবিতা লিখে কবি হয়ে গেল । তাঁদের ফেসবুকে আঁতলামো দেখলে
গাঁ জ্বলে যায় । বর্তমান প্রজন্মের লেখার মধ্যে নিজেকে জাহিরকরা আর আঁতলামো ছাড়া আমি কিছুই খুঁজে পাই না । হাংরি জেনারেশানের লেখা গুলো সেদিন পড়তে পড়তে ভাবছিলাম, এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি থেকে কি আরেকজন শৈলেশ্বর ঘোষ কিংবা সুবো আচার্য উঠে আসতে পারে না ?
সবাই ভয়ে চুপ করে আছে , কোথাও কোন প্রতিবাদ নেই । কিছু চিত্রকার, নাট্যকার এই সুযোগে আখেড় গুছিয়ে নিচ্ছেন । একটা সার্কাসের জোকারকে মহানায়ক শিরপা দেওয়া হচ্ছে । দু দুটো জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত উত্তমকুমারের স্ট্যাচুর মাথায় কাকে পটি করে চলে যাচ্ছে । আমরা সব দেখেও
চুপকরে বসে আছি । কারণ আমরা ভয় পাচ্ছি ।
প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই দেখতে পাব বঙ্গে কোথাও না কোথাও একটা করে ধর্ষণ হচ্ছে । রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনের মেয়েদের সামরিক বিদ্যায় পারদর্শী করে তোলার জন্য তাকাগাকি কে তিন বছর শান্তিনিকেতনে রেখেছিলেন । পরে অর্থাভাব দেখা দিলে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
এবং করপরেশনের কাছে সাহায্য চান । কিন্তু তারা এগিয়ে আসে নি । তাই তাকাগাকিকে জাপানে চলে যেতে হয় । তাকাগাকির যাবার পর বহু বছর কেটে গেছে । হিন্দ অথবা ম্যাজেস্টিক সিনেমায় নুন শোতে দেখান হচ্ছে "এন্টার দ্যা ড্রাগন " ছবিখানি ।চারটি মেয়ে আর বাকি ৫০জন পুরুষ ।
দুজন পুরুষ উঠে আসলেন নিজের পুরুষত্ব দেখাতে । সঙ্গে সঙ্গে একটি মেয়ে উঠে ক্যারাটে চালিয়ে পুরুষ দুটিকে শুইয়ে দিলেন মেঝেতে । পরে জানা গেছিল মেয়েটির দিদু ছিলেন শান্তিনিকেতনে তাকাগাকির ছাত্রী ।
আমি মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, হাজার হাজার টাকা খরচা করে রবীন্দ্র সঙ্গীত না বাজিয়ে, রবীন্দ্র নাথের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রত্যেক গার্লস স্কুলে সামরিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করুন । তা হলে মেয়ে গুলোকে অকালে প্রাণ দিতে হয় না ।
একজন চোর জেল গেলে বুদ্ধিজীবীরা তার প্রতিবাদে বন্দেমাতরম ধনী তোলে । কিন্তু নেতাজীর অন্তর্ধান রহস্যের রিপোর্ট কিংবা শ্যামা প্রসাদ মুখার্জীর রহস্যজনক মৃত্যুকে নিয়ে কেন বাঙ্গালীর গলা থেকে প্রতিবাদের আওয়াজ ওঠে না ?
এবার একটু ঐ বাংলার কথা বলি, রোজই কিছু মুক্তমনা বাঙ্গালীর প্রন যাচ্ছে একদল দস্যুর হাতে । সোনার বাংলা চুপ, সেরম কোন প্রতিবাদ নেই । কেন নেই তবে কি সোনার বাংলা একটি মৌলবাদী রাষ্ট্র হতে চলেছে ?
সেদিন একটা ঘটনা আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে । world cup cricket match এ ভারতের কাছে বাংলাদেশের পরাজয়ের পর যেভাবে নোংরা ভাষায় আমার বাঙ্গালী ভাই বোন রা ভারতকে আক্রমণ করছে তা সত্যি মনে নেওয়া যায় না ।
বাংলাদেশের মহম্মদ ইউনিস যখন গ্রামীন ব্যাঙ্ক নিয়ে তাঁর কর্মকান্ড শুরু করেছেন তখন পৃথিবীর অন্যকোনদেশের মানুষ তানিয়ে ভাবতেই পারেননি । যখন উনি নোবেল পেলেন বাঙ্গালী হিসেবে নিজের প্রতি গর্ব হচ্ছিল । এমন একজন সক্রিয়
মানুকে বাংলাদেশ পেয়েও, তাঁকে বাঙ্গালীর নোংরা রাজনীতর শিকার হতে হল ।
অনেক কথা মনে পড়ছে । লিখতে বসলে লেখা দীর্ঘ হতেই থাকবে, তাই আজ এখানেই শেষ করতে হচ্ছে । এত ক্ষণ যা আলোচনা আমরা করলাম, তাতে বোঝাই যাচ্ছে বাঙ্গালী অন্ধকারে চলে যাচ্ছে । আমার কাকিমা একবার বলেছিল নিজেকে বাঙ্গালী হিসাবে পরিচয় দিতে ঘেন্না করে । কি করেছে
বাঙ্গালীরা ?
তখন উত্তর দিতে ইচ্ছা করে তোমাকে স্বাধীনতা দিয়েছে, নারীদের শিক্ষার আলো দেখিয়েছে, বিধবা বিবাহের প্রচলন করেছে, সতীদাহের অবসান ঘটিয়েছে ।দেশে প্রথম আধুনিকতার বার্তা নিয়ে এসেছে ।
আমার কাকিমার মতন কিছু মানুষের জন্য আমরা অন্ধকারে চলে যাচ্ছি । যারা নিজেদের সন্তানদের হাসজারু বানাতে গিয়ে নিজের অস্তিত্বটা ভুলে গেছে ।
এখনও সময় আছে বাঙ্গালী, ওঠো, জাগো, নিজের শিরদাঁড়া শক্ত কর, নিজের সত্ত্বাকে পুন প্রতিষ্ঠিত কর ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.