নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কবি ও সম্পাদক--কুয়াশা

দ্বীপ ১৭৯২

দ্বীপ সরকার। জন্মঃ ১লা মার্চ ১৯৮১ ইং। গ্রাম-গয়নাকুড়ি। বগুড়া জেলার শাজাহানপুর থানা। পিতা-মৃত হাবিবুর রহমান। মাতা-আলহাজ্ব আছিয়া বিবি। মুসলিম পরিবারে জন্ম। গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন ১৯৯৯ ইং। সম্পাদিত লিটেল ম্যাগ, কুয়াশা। প্রকাশিত বই ৫টি। ভিন্নভাষার গোলাপজল ২০১৮। ডারউইনের মুরিদ হবো ২০১৯। ফিনিক্স পাখির ডানা ২০২০। জখমগুচ্ছ ২০২৩। বুবুন শহরের গল্প ২০২৪।

দ্বীপ ১৭৯২ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কবিতা পর্যালোচনাঃ হাওয়ার ধনুক।। শফিক নহোর

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৯

কবিতা পর্যালোচনা: হাওয়ার ধনুক
শফিক নহোর


দ্বীপ সরকার-এর 'হাওয়ার ধনুক' কবিতাটি এক অসাধারণ কাব্যিক অভিজ্ঞতার দলিল। অল্প কিছু পঙক্তির মধ্যে কবি এক গভীর বিষাদ, গোপন ব্যথা এবং অপ্রত্যাশিত বিশ্বাসঘাতকতার গল্প বুনেছেন যা পাঠককে দীর্ঘক্ষণ আচ্ছন্ন করে রাখে। এটি এমন একটি কবিতা যা বারবার পড়লে নতুন নতুন অর্থ এবং অনুভূতির স্তর উন্মোচিত হয়।
বিষয়বস্তু ও বিন্যাস: কবিতাটির শুরুতেই এক মায়াবী ও বিষণ্ণ আবহের সৃষ্টি হয়। "চারপাশ নীল-করূনমেঘ" – এই চিত্রকল্পটি যেন এক সীমাহীন বিষাদের পটভূমি তৈরি করে। "শন শন শব্দে একটা ধনুক আসে" – এই অংশে ধনুকের আগমন এক রহস্যময়তা এবং অলৌকিকতার ইঙ্গিত দেয়। এটি কেবল একটি ধনুক নয়, যেন এক অদৃশ্য শক্তির প্রতীক যা কবির জীবনকে প্রভাবিত করতে চলেছে।
পরবর্তী পঙক্তিগুলোতে ধনুকটির সাথে কবির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রকাশিত হয়: "ধনুক, আমার বুকের সাথে গোপনে কথা কয়"। এই চিত্রকল্পটি অত্যন্ত শক্তিশালী। ধনুক যেন কবির অন্তরঙ্গ বন্ধু বা এক গভীর সম্পর্কের প্রতীক যা তার একান্ত ব্যক্তিগত অনুভূতিগুলোর অংশীদার। কিন্তু এই অন্তরঙ্গতার ফলস্বরূপ আসে চরম আঘাত: "তখনি ঝাঁঝরা হয়ে যায় বুকের পর্দা"। এটি কেবল শারীরিক আঘাত নয়, বরং মানসিক বা আত্মিক ক্ষতকে নির্দেশ করে – এক গভীর ব্যথা যা হৃদয়ের সবচেয়ে স্পর্শকাতর অংশকে বিদ্ধ করে।
এরপর কবি তার টিকে থাকার অসাধারণ ক্ষমতা বর্ণনা করেন। "ঠোঁটে আমার নকশা খচিত অগুন বিড়ির মতো নয়-কিন্তু পুড়ছে নরম সলতের মতো" – এই উপমাটি অত্যন্ত মর্মস্পর্শী। বিড়ির আগুন ক্ষণস্থায়ী এবং তীব্র, কিন্তু নরম সলতের আগুন দীর্ঘস্থায়ী, ধীর এবং নীরবে দহন করে। এটি সেই অব্যক্ত যন্ত্রণা, সেই নিরন্তর জ্বালা যা কবিকে ভেতর থেকে পোড়াচ্ছে, কিন্তু যা সহজে দেখা যায় না বা বোঝা যায় না। "তাতেও আমি টিকে আছি বহু বছর" – এই পঙক্তি কবির অদম্য ইচ্ছাশক্তি, কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা এবং জীবনের প্রতি তার অঙ্গীকারের সাক্ষ্য বহন করে।



এবং ঠিক তখনই, শেষ পঙক্তিতে কবিতাটি এক অপ্রত্যাশিত মোড় নেয়, যা সমগ্র কবিতার অর্থকেই নতুনভাবে ব্যাখ্যা করে: "অথচ, কে জানতো হাওয়ার ধনুকে বিষ থাকে।" এই লাইনটি যেন এক তপ্ত দীর্ঘশ্বাস। আপাতদৃষ্টিতে যা সুন্দর, রহস্যময় বা এমনকি সহায়ক মনে হয়েছিল "হাওয়ার ধনুক", তার ভেতরে লুকিয়ে ছিল প্রাণঘাতী বিষ। এটি জীবনের সেইসব অভিজ্ঞতা বা সম্পর্কের প্রতি ইঙ্গিত করে যা প্রথমে আকর্ষণীয় মনে হলেও শেষ পর্যন্ত ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠে। এই অপ্রত্যাশিত বিশ্বাসঘাতকতা কবিতার মূল সুরকে আরও গভীর ও ট্র্যাজিক করে তোলে।
দ্বীপ সরকার-এর ভাষা সহজবোধ্য কিন্তু গভীরে প্রোথিত। প্রতিটি শব্দ যেন মেপে মেপে বসানো, যা অল্প পরিসরে বিশাল এক অনুভূতির জগৎ তৈরি করে।
ব্যঞ্জনা: কবিতাটি সরাসরি কোনো গল্প বলে না, বরং ইঙ্গিতে ও ব্যঞ্জনায় এক গভীর উপলব্ধির দরজা খুলে দেয়।
'হাওয়ার ধনুক' কবিতাটি পাঠককে এক ধরনের অতল স্পর্শী বিষাদের মুখোমুখি দাঁড় করায়। এটি ভালোবাসা, বিশ্বাস, বা এমনকি জীবনের আপাত নিরীহ দিকগুলো কীভাবে বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে, তার এক করুণ চিত্র। শেষ পঙক্তির আকস্মিকতা পাঠককে স্তম্ভিত করে এবং কবিতাটি শেষ হওয়ার পরও এর রেশ দীর্ঘক্ষণ মনে রয়ে যায়। এটি যেন জীবনের সেই নির্মম সত্যকে তুলে ধরে যে, সবচেয়ে সুন্দর ও অপ্রত্যাশিত জিনিসও মাঝে মাঝে সবচেয়ে বেশি বিষাক্ত হতে পারে।
দ্বীপ সরকার-এর 'হাওয়ার ধনুক' একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু শক্তিশালী কবিতা যা আধুনিক বাংলা কবিতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এর গভীরতা, চিত্রকল্পের ব্যবহার এবং শেষ পঙক্তির অপ্রত্যাশিত মোচড় একে স্মরণীয় করে তুলেছে। যারা গভীর অনুভূতি এবং দার্শনিক চিন্তাভাবনায় সমৃদ্ধ কবিতা পছন্দ করেন, তাদের জন্য এটি একটি অবশ্যপাঠ্য সৃষ্টি।



লেখকঃ কবি,কথাসাহিত্যিক
ঢাকা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.