![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিচিত্র হলেও সত্যি যে সাউথ সুদানের অর্থনীতি অনেকাংশেই গরু নির্ভর। গরুর সংখ্যা এখানে বিত্ত আর আভিজাত্যের নির্ধারক। যৌতুকপ্রথা এখানেও আছে। কনের বাবাকে ন্যুনতম দশটা গরু না দিতে পারলে বিয়ে হবেনা। তাই বলে ভালবাসাবাসিতে বাঁধা নেই। প্রায় অবাধ যৌনাচারের এই দেশে বিয়ের মোজেজাটা কি, সেটা জানতে চেয়েছিলাম এক স্থানীয় যুবকের কাছে। তার উত্তরে যা বুঝলাম তা হল, একমাত্র বিয়ে করলেই সে বউ পেটানোর লাইসেন্সটা পাবে, তখন আর এই কুকর্মেটির জন্য তাকে কারো কাছে জবাবদিহি করতে হবে না! বৈধ হোক আর না হোক, সন্তানের যাবতীয় দায় যথারীতি মায়েদের। কাফ্রী ক্রীতদাসদের কথা আমরা অনেকেই শুনেছি। কাফ্রী মানে কালো, আরবীতে বলে সুদ বা সৌদ। সুদান যুগযুগ ধরেই ক্রীতদাসদের উৎস ছিল, অবাক করার বিষয় হল এখনও আছে!
সাউথ সুদানে গোত্র বা ট্রাইবের সংখ্যা প্রায় গোটা ষাটেক। মুখে আঁকিবুঁকি, কাটাচেরা আর উল্কি এইসব দেখে নাকি এদের আলাদা করে চেনা যায়। আমি অবশ্য আজো জাপানী আর চীনাদের তফাৎ বুঝিনা, তাই এদেরটা নিয়েও কখনও মাথা ঘামাইনি। আদি ধর্মে এরা সবাই 'এনিমিস্ট', খুব দ্রুত খ্রিস্টান আর ইহুদিতে রুপান্তরিত হচ্ছে আজকাল। প্রত্যন্ত এলাকায় এদের নগ্নতা সহজাত। দূর কাপোয়েতার রুক্ষ তপোসারা যেমন, তেমনি হোয়াইট নাইল পাড়ের তেরেকেকা কাঊন্টির আমুদে মুন্দারিরা। ভাগ্যিস এরা বহিরাগতদের নগ্নতা সংক্রান্ত অস্বস্তির ব্যাপারে যথেস্ট সচেতন।
বিষ্ময়ের ব্যাপার হল নীলনদের পাশে থেকেও এরা জালের ব্যবহার তেমন শেখেনি। এদের মাটি খুব উর্বর, আমাদের সৈনিকেরা অবসরে শখ করে দেশি কুমড়া, পেঁপের বীজ বুনে অবিশ্বাস্য ফসল ফলিয়েছে; অথচ এরা চাষাবাদ তেমন জানেই না। তৈরি পোষাক আর ঔষধ ব্যবসাটা প্রায় পুরোটাই নিয়ন্ত্রন করে চীনা আর ভারতীয়রা। এ এক সম্ভাবনাময় বাজার। অন্তত কৃষক উড়িয়ে এনে জমি লিজ নিয়ে বাংলাদেশ সরকার যদি এদের এগ্রো সেক্টরটাও টার্গেট করত, তা হত অত্যন্ত সফল বিনিয়োগ। অথচ অন্যান্য মিশন এলাকার মতই বাংলাদেশ সরকার এখানেও বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের জনপ্রিয়তাটাকে পুজি করে কোন ব্যবসায়িক সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি।
পাক-ভারতীয়দের নিরন্তর অপচেস্টার পরও সাউথ সুদানেও বাংলাদশী শান্তিরক্ষীরা সুনাম কুড়িয়েছে। পুবে ডিংকা-তপোসাদের সাথে যেমন টরিট টিম সাইট তেমনি পশ্চিমে ইয়াম্বিও টিম সাইট চমৎকার মানিয়ে নিয়েছিল স্থানীয় আজান্দেদের সাথে। সবাই বিপদ, উত্তেজনা আর ঝামেলার গল্প শুনতে চায়। অথচ ঝামেলাতেই শান্তিরক্ষীদের ব্যর্থতা। প্রতিটা মুহুর্তের সতর্কতার সমন্বয়েই ঝামেলামুক্ত শান্তিপুর্ন আরেকটা বছরের সাফল্য। আমাদের একটা বছর নিরাপদেই কেটে গেল, নতুন একটা দেশের জন্মগ্রহন দেখার অভিজ্ঞতা অসাধারন নিশ্চয়। শুধু সড়ক দুর্ঘটনায় একজন ক্যাপ্টেন ইফতেখারের মৃত্যু এড়ানো গেলনা শেষ অবধি!
যাহোক কোনরকম ঝামেলা ছাড়াই রাতটা পার হল। সকাল সাতটার ভেতর আরেকটা রাশান হেলিকপ্টার চলে এল। হেলিকপ্টারের ইমার্জেন্সি ডোর খোলা নিয়ে এক পাইলট কিছুক্ষন গজ গজ করল, অবশ্য কারনটা বুঝিয়ে বলতেই বুঝল। ভদকাখেকো এই রাশান পাইলটদের পেশাদারিত্ব সত্যি ঈর্ষনীয়! একজোড়া হেলিকপ্টার নিয়ে ফিরতি পথে আমরা টরিট টিম সাইটে যাত্রাবিরতি নিলাম। মিশনের শুরুর অনেকটা সময় এই টিম সাইটেই কেটেছে আমার। সংক্ষিপ্ত বিরতির পুরোটা সময় তাই ক্যাম্পের উঠানের একলা নিম গাছের তলায় জম্পেশ আড্ডায় কাটিয়ে দিয়ে ফিরতি পথে উড়াল দিলাম। জানিনা নতুন কোন এসাইনমেন্ট অপেক্ষা করছে জুবায়!
২১ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৫
ডি এইচ খান বলেছেন: ভাই অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে
২| ২১ শে জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০১
মুদ্দাকির বলেছেন: সিরিজ চললে ভালোই হত
২২ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:১০
ডি এইচ খান বলেছেন: ভাই, চেস্টা করব অবশ্যই। তবে আপাতত সানজুর একটা বই অনুবাদে হাত দিয়েছি। অইটা আগে গুছায়ে নিব। আপনাকে ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৪৮
রফিকুল ইসলাম বাবু বলেছেন: অসাধারণ আপনার লেখা.. সবগুলোই এক নি:শ্বাসে পড়ে নিলাম..