![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"এইইই, গাড়ি থামাও, গাড়ি থামাও, ঐ বুড়োলোকটার জন্য একজোড়া জুতা কিনে নিয়া আস।" বউএর হঠাত বায়না শুনে কিছুটা বিরক্তই হলাম। কারন পাহাড়ি রাস্তা পেছনে ফেলে হাটহাজারী রোডে উঠতেই হতচ্ছারা ট্যাক্সির ভীড়ে গাড়ি অলরেডি কচ্ছপগতি, তাছাড়া এই ভীড় ঠেলে গাড়ি থামাবটা কই, সেইটাও এক প্রশ্ন।
যাহোক কোন রকমে গাড়ি পার্ক করে বয়সের ভারে ন্যুব্জ বৃদ্ধকে ভাল করে খেয়াল করলাম; একটা পুরাতন থলে আড়ায়াড়ি কাঁধে ঝুলিয়ে, প্রায় অর্ধেক নুয়ে পড়ে লাঠিতে ভর দিয়ে খালিপায়ে এগিয়ে চলেছেন পিচঢালা পথ ধরে। সত্যি প্রায় অমানবিক এক দৃশ্য! পড়ন্ত দুপুরের উত্তাপে গাড়ির এসিতে বসেও ঘামছি, তাই এই বৃদ্ধের জন্য বউএর কস্টটা সহজেই অনুভব করতে পারলাম।
মনে পড়ল এই সেদিনও মিরপুর ডিওএইচএস এ এমনই এক বুড়ো রিক্সা টানছিল, নিজের শরীর টানতেই যার কস্ট সে পেটের দায়ে রিক্সা টানছে, দৃশ্যটা সত্যি করুন। সেবার বউ গাড়ি থামিয়ে সেই বুড়োর হাতে কিছু টাকা তুলে দিয়েছিল। বউএর বয়েস কম, আর এইবয়েসী মেয়েরা কিছু প্রগলভতা দেখাবে, এ আর নুতন কী? ঢাকার রাস্তায় ভিক্ষুক দেখে সে এখনও ব্যথিত হয়, পথশিশুদের দেখে গাড়ি থামিয়ে চকলেট দেয়া আইস্ক্রিম খাওয়ানো যেন তার নিত্য অভ্যাস; আমারো মজা লাগে, আর আমার মেয়েটা তো চরম আনন্দ পায়। অথচ এই ঢাকায় ভিক্ষাবৃত্তিকে লালন করা হয়, পথশিশুদের দিয়ে বানিজ্য করা হয়, কিন্তু সে এতসব বোঝেনা। যাহোক এবারো তাই কিছু টাকা দিয়ে দিতে বললাম, কিন্তু বউ বলল যে, টাকা দিলে উনি বাসার অন্যদের জন্য খাবার কিনে ফেলবেন, স্যান্ডেল আর কিনবেন না।
অগত্যা গজগজ করতে করতে ছুটলাম বুড়োর জন্য স্যান্ডেল খুঁজতে। পায়ের মাপ আন্দাজ করে নিয়ে একজোড়া স্যান্ডেল কিনে এনে দেখি বউ নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে, যেন বুড়োটাকে না আবার হারিয়ে ফেলে।
অতঃপর বৃদ্ধকে স্যান্ডেল ও টাকা দেয়া হল। স্যান্ডেল পায়ে বৃদ্ধের হাসি আর চোখের পানির দৃশ্য বর্ননা করা কঠিন! বউএর কথাই বোধহয় ঠিক, স্রেফ নগদ টাকা দিলে একজোড়া নুতন জুতা কেনার বিলাসিতা (!) এই বৃদ্ধ হয়ত কখনই দেখাতেন না।
কথায় আছে...
চ্যারিটি বিগিন্স এট হোম...বউকে ধন্যবাদ আমার কন্যার সামনে প্রায়শই এমনসব মানবিক উদাহরন তুলে ধরার জন্য। একমাত্র মানবিক মুল্যবোধ সম্পন্ন একটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাতেই শিশু রাজনরা অন্তত প্রানে বেচে থাকার নিশ্চয়তা পেতে পারে। আমাদের সবারই বোধহয় পারিবারিক পরিসরে এমন উদ্যোগকে আরো বেশি বেশি উতসাহ দেয়া উচিত।
পুনশ্চঃ
সব কিছুতেই আমরা কেমন জানি এক্সট্রিমিস্ট হয়ে যাচ্ছি, শাস্তি মানেই ন্যুনতম ফাসি চাই, সিরিজ জিততে হোয়াইট ওয়াশ ছাড়া চলবে না, মতের অমিল হলে কুপিয়ে না মারা পর্যন্ত ক্ষান্তি নেই। সামাজিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত পরিনতি দেখছি আমরা, ব্যাপারটা সত্যি দুঃখজনক। তারচেয়ে ভয়ের কথা হল আমাদের আশেপাশেই পিটিয়ে মেরে ফেলবার উদগ্র মানসিকতা নিয়ে অনেকেই লুকিয়ে আছে। আবার একথাও সত্যি যে নিরবে অন্যের উপকার করে যাচ্ছেন অনেকেই।
পুনঃ পুনশ্চঃ
আমাদের সবার মাঝেই নাকি দুইটা নেকড়ে নিরন্তর যুদ্ধ করে চলে, একটা সাদা আরেকটা কালো। শেষপর্যন্ত নাকি সেই নেকড়েটাই জেতে, যে যেটাকে ক্রমাগত খোরাক যুগিয়ে যায়।একটু একটু করে শ্বেত নেকড়েটাকে জেতাতে হবে ভাই।
ভাল থাকুক সাদামনের এই মানুষগুলো... ভাল থাকুক ভাল মনের মানুষগুলো...
২| ১৭ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১:১১
ডি এইচ খান বলেছেন: নিশ্চয় ভাই
৩| ২১ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৪৬
হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লিখেছেন।
১০ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:৫৯
ডি এইচ খান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই।
৪| ১৪ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৫১
সায়ান তানভি বলেছেন: এই লেখাটা স্রেফ তুলনাহীন, অমূল্য।
১৪ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:৩১
ডি এইচ খান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৯
ইয়ার শরীফ বলেছেন: আমাদের সবার মাঝেই নাকি দুইটা নেকড়ে নিরন্তর যুদ্ধ করে চলে, একটা সাদা আরেকটা কালো। শেষপর্যন্ত নাকি সেই নেকড়েটাই জেতে, যে যেটাকে ক্রমাগত খোরাক যুগিয়ে যায়।একটু একটু করে শ্বেত নেকড়েটাকে জেতাতে হবে ।
দারুন বলেছেন। আপনার এই কথাটা খুব ভালো লেগেছে। অনুমতি দিলে শেয়ার করতাম