![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আধুনিক যুগের বাংলার ইতিহাসে যে কয়জন হারিয়ে যাওয়া রত্ন আছেন, আবুল হাশিম সম্ভবত তাঁদের মধ্যে একজন। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ প্রতিষ্ঠার বছরেই বর্ধমানের সদর থানার কাশিয়াড়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত ভূস্বামী পরিবারে তাঁর জন্ম। কেবল সম্ভ্রান্তই নয়, উচ্চশিক্ষিত পরিবারের মানুষ আবুল হাশিম। তাঁর পরিবার জোতদার হলেও তিনি স্বীয় রাজনৈতিক জীবনকে বিকশিত করেছিলেন একজন সাম্যবাদী হিসেবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কাশিয়াড়ার বর্তমান নাম কাশেমনগর। এটি আবুল হাশিমের পিতা মৌলভী আবুল কাশেমের নামানুসারে রাখা। মৌলভী আবুল কাশেমের প্রতি পশ্চিমবঙ্গে এহেন দাক্ষিণ্যের কারণ তিনি ১৯০৫ সালে অল্প কয়েকজন মুসলিমের মধ্যে অন্যতম ছিলেন, যিনি নয়া প্রদেশ পূর্ববঙ্গ ও আসামের বিরোধিতা করেছিলেন।
তাঁর নানা নবাব আবদুল জব্বার ছিলেন ভূপাল রাজ্যের এককালীন প্রধানমন্ত্রী। আবুল হাশিমের নানা ও দাদা ছিলেন সহোদর ভাই। তাঁর পিতামহ মৌলভী আবদুল মজিদ ছিলেন একজন প্রথম শ্রেণীর আইএস অফিসার। আবুল হাশিমের পূর্বপুরুষ ছিলেন মধ্যযুগের একজন নামী দরবেশ, নাম মখদুম শাহ বদরুদ্দীন। বিহারে ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজীর স্থাপন করা বিহার শরীফ শহরে সমাহিত মখদুম শাহ বদরুদ্দীনের নাম থেকেই সম্ভবত পরবর্তীকালে আবুল হাশিম তাঁর পুত্রের নাম রাখেন বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর। হ্যাঁ, আমরা যে বদরুদ্দীন উমরকে চিনি, তিনি আবুল হাশিমের পুত্র।
অত্যন্ত মেধাবী, বিচক্ষণ, জ্ঞানী রাজনীতিবিদ আবুল হাশিমের মূলধারার রাজনীতিতে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ পদ বঙ্গীয় মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক। কঠোর নীতিবান এই মহাত্মাকে এদেশের মানুষ মনে রাখেনি। তবে আমার মতে রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাবার পেছনে আবুল হাশিমের অকাল অন্ধত্ব, আর নীতির প্রশ্নে আপোষহীন থাকাই মূল দায়ী ছিল।
আবুল হাশিম মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন ১৯৪৭ সালে স্বাধীন বাংলার রূপরেখা নিয়ে ঘোষিত হয় বসু-সোহরাওয়ার্দী প্রস্তাব। এই প্রস্তাবের পেছনের মূল কুশীলব ছিলেন আবুল হাশিম। মূলত এই প্রস্তাবের বিপরীতে বাংলার বিভক্তি হওয়াতেই রাজনীতি থেকে ব্রাত্য হয়ে পড়েন আবুল হাশিম। শেষের দিকে তিনি খেলাফত রব্বানী পার্টি নামের একটি সংগঠনের জন্ম দিলেও পাকিস্তান আমলের বৃহদাংশ ও ১৯৭৪ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। এই সময় তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ বা প্রায় অন্ধ। আমি মনে করি, এই সময়টা আবুল হাশিমের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিল। ভবিষ্যতে হয়তো প্রমাণিত হবে যে, রাজনৈতিক আবুল হাশিমের চেয়ে তাত্ত্বিক আবুল হাশিম অধিকতর অমূল্য।
ইংরজিতে দক্ষ আবুল হাশিমের বেশ কিছু রচনা আছে। উইকিপিডিয়া থেকে নেয়া তাঁর বইয়ের তালিকায় আছে- Let us go to War, The Creed of Islam, As I see it, In Retrospection ইত্যাদি। রকমারি ডটকম থেকে In Retrospection এর বঙ্গানুবাদ 'আমার জীবন ও বিভাগপূর্ব বাংলার রাজনীতি' বইটি জোগাড় করলাম। সামনে ঈদের বন্ধ আছে, তার সাথে আছে পনেরো দিনের বাধ্যতামূলক ছুটি। ইত্যবসরে বইটি পড়ে, আবুল হাশিম সম্পর্কে আমি মনঃক্ষুণ্ণও হতে পারি। কারণ সত্যি বলতে তাঁর বামপন্থার সলুক সম্পর্কে আমি তেমন কিছুই জানিনা। এই বই পাঠে তা বুঝতে পারবো নিশ্চয়ই।
তবে এতোটুকু জানি, শেষের দিকে তিনি ইসলামের দিকে ঝুঁকে গেছিলেন। এতোই যে তাঁর 'ইসলামী চিন্তাবিদ' সত্ত্বার তলে হারিয়ে যায় সাম্যবাদী চিন্তাবিদের সত্ত্বা। তবে এই বইতে তিনি সেসবের কৈফিয়ত দিয়েছেন বলেই মালুম হয়। আর সেটাই আমার গোগ্রাস গিলবার বিষয়
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৯
ভ্রমরের ডানা বলেছেন: মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে উনার ভূমিকা কেমন ছিল তা জানতে ইচ্ছে করছে!